Recent Tube

মরুভূমির হাতছানি--২৮ --মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী


    মরুভূমির হাতছানি  ;
                    পর্ব--২৮;

হজ্ব ভ্রমণ'১৭
জমজম কূপের পানি পান করে অামরা গেলাম সাফা মারওয়া পাহাড়ের কাছে । হযরত হাজেরা (অা) এর স্মৃতিকে ধারণ করে সারা দুনিয়ার হাজীরা সাফা মারওয়া সায়ী করেন। যা হজ্জ ও উমরার অবিচ্ছেদ্য অংশ । 
হযরত ইব্রাহীম (অা) যখন বার্ধক্যে উপনিত হলেন তখন মহান অাল্লাহ তাঁকে একটি পুত্রসন্তান দান করলেন । 
জীবনের শেষ বয়সে মহান প্রভূর করুনায় অন্ধের জষ্টি হিসেবে পেলেন হযরত ইসমাঈল (অা) কে । অাদরে অাদরে সন্তানকে লালনপালন করছেন নবী ইব্রাহিম (অা) ও নবী পত্নী হযরত হাজেরা (অা)। এরই মধ্যে ইব্রাহিম (অা) এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হলেন! 
অাল্লাহ তায়ালা স্বপ্বে অাদেশ করলেন ইব্রাহীম তুমি বিবি হাজেরাসহ তোমার সন্তান ইসমাইলকে ঐ পাহাড়ের কাছে রেখে অাসো । এখানে বলে রাখি এই অাদেশ কিন্তুু ওহী ছিলোনা,ছিলো স্বপ্ন ।  তবে নবীদের স্বপ্নটাও এক ধরনের ওহী ।  এ ব্যাপারে সকল মুফাসসিরীন একমত । 
অাল্লাহর অাদেশে ইব্রাহিম (অা) শিশুপুত্র ইসমাইলসহ তাদের অবস্থানস্থল ইরাক থেকে বেরিয়ে জর্ডান এবং সিরিয়া পাড়ি দিয়ে  চলে এলেন সৌদী অারবের এক নির্জন পাহাড়ের কাছে । যে জায়গাটি তাঁর স্বপ্নে দেখা জায়গার সাথে মিলেছিল । 
তখনও অামাদের মা হযরত হাজেরা জানেননা নবীর স্বপ্নের কথা । 
বাড়ী নেই,ঘর নেই,খাবার নেই, পানি নেই, নেই কোন জনমানব । এমনই এক পাহাড় অার মরুময় বিরানভূমিতে যখন পরিবারকে একা রেখে চলে অাসছেন তখন মা হাজেরা বলছেন ইব্রাহিম, অাপনি অামাদেরকে এখানে একাকি ফেলে যাচ্ছেন কেন? জবাবে ইব্রাহিম (অা) কিছু বলেননা। অাবার ও হাজেরা বলেন অামাদেরকে ফেলে যাচ্ছেন কেন?অামরা কী কোন অন্যায় করেছি? তখনও কোন জবাব দেননা ইব্রাহিম (অা)। অতঃপর অাবারও মা হাজেরা জানতে চান অাপনি অামাদেরকে এখানে রেখে যাচ্ছেন এটা কী অাল্লাহর হুকুম?  এবার মুখ খুললেন ইব্রাহিম (অা)।  বললেন হ্যাঁ এটা অামার প্রতিপালকের হুকুম। 
হযরত হাজেরা কায়মনোবাক্যে অাল্লাহর হুকুম মেনে নিলেন এবং বললেন এটা যদি অামার প্রভূর হুকুম হয়ে থাকে তাহলে অাশা করি তিনি অামাদেরকে রক্ষা করবেন। 
স্বীয় পরিবারকে অাল্লাহর হাওয়ালা করে নবী ইব্রাহিম (অা) কা'বা ঘরের অাড়ালে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে  জাবালে নূরের কাছে  এসে চোখের পানি ফেলে দু'হাত উঁচু করে স্বীয় পরিবারের জন্য রহমতের দোয়া করলেন।
বললেন,হে অাল্লাহ, অামি তোমার হুকুমে অামার পরিবারের কতেক সদস্যকে এখানে রেখে যাচ্ছি যেখানে পানি নেই,খাবার নেই,ফলফলাদি নেই । তুমি বলেছ এখানে কা'বা অাছে! তোমার ঘরের উছিলায় এই এলাকায় যারা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত বসবাস করবে তাদেরকে তুমি উত্তম রিজিক দিও । 

হযরত হাজেরা শিশুপুত্র ইসমাঈল (অা) কে বুকে জড়িয়ে দিনাতিপাত করতে লাগলেন। সামান্য খাদ্য,পানীয় যা ছিল তা ফুরিয়ে গেল । শিশু ইসমাইল পিপাসা কাতর হয়ে পড়লেন। পাথুরে পাহাড় অার সমতলে মরুময় বিরাণভূমিতে কোথায় পাবেন পানি। চিন্তিত হাজেরা জাবালে অাবি কুবাইসের পাশে সাফা পাহাড়ের সীমানায় দাঁড়িয়ে মারওয়া পাহাড়ের দিকে তাকান । সূর্যের কিরণ বালুকার মধ্যে পড়ে চিকচিক করছে দেখে মা হাজেরা মনে করলেন ঐ বুঝি পানি অাছে। শিশু ইসমাইলকে রেখে মারওয়ায় গিয়ে দেখেন কিছুই নেই। অাবার সাফা পাহাড়ের পাদদেশে ফিরে অাসেন । সাফা মারওয়ার উঁচুতে যখন উঠেন তখন শিশু ইসমাইলকে দেখা যায় কিন্তু মাঝখানের সমতল ভূমি থেকে তাঁকে দেখা যায়না তাই সন্তানকে কোন নেকড়ে খেয়ে ফেলবে এই ভয়ে মাঝখানের সমতল জায়গাটুকু দৌড়ে পার হন । এভাবে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করেন নবী মাতা । 
মহান অাল্লাহ তাঁর নবী পত্নী হাজেরার পানির জন্য হাপিত্যেশ সহ্য করতে পারেননি। এক পর্যায়ে শিশু নবী ইসমাইল (অা) এর গড়াগড়ি বা নড়াচড়ার স্থান থেকে হযরত জিবরাঈল (অা) এর পদাঘাতে পানির অলৌকিক ঝর্ণা সৃষ্টি করে দিলেন। 
এদিকে পানির ঝর্ণা দেখে মা হাজেরা দৌড়ে ছোটে এসে  চারদিকে বাধ দেন এবং বলতে থাকেন ''জাম জাম জাম'' মানে থাম থাম থাম । সেই থেকেই অলৌকিক সেই কূপের নাম জমজম কূপ । 
হুজুর (স)বলেন,অাল্লাহ ইসমাইল (অা) এর মায়ের উপরে রহম করুন,সেদিন যদি তিনি বাঁধ না দিতেন তাহলে সারা পৃথিবী সাগর মহাসাগরে পরিনত হয়ে যেত । 

হজ্বের সময় হাজীরা মা হাজেরার স্মৃতিকে ধারণ করে সাফা মারওয়া সাতবার সায়ী করেন। বর্তমানে সায়ীর এ জায়গাটুকু প্যসেজের মত করে হারাম শরীফের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সায়ীর সময় শুধু পুরুষেরা সবুজ বাতির জায়টুকু দৌড়ে পার হন। 
সাফা এবং মারওয়া অাজ অার পাহাড় নেই। অাছে শুধু  গ্লাসে অাবৃত অবিশিষ্টাংশ। 

পবিত্র কাবার খুব কাছে অবস্থিত এই সাফা ও মারওয়া পাহাড়। কাবা শরিফ থেকে সাফা পাহাড় এর থেকে প্রায় ১০০ মি. (৩৩০ ফুট) দূরে অবস্থিত। মারওয়া কাবা থেকে ৩৫০ মি. (১১৫০ ফুট) দূরে অবস্থিত। সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী দূরত্ব ৪৫০ মি. (১,৪৮০ ফুট)। সাতবার আসা-যাওয়া করার পর মোটামুটি ৩.১৫ কিমি (১.৯৬ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়।(চলমান)
----------------------
জমজ কূপ এবং সাফা,মারওয়া সায়ীর বিধান নিয়ে অাছে অনেক কথা ।  সে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
----------------------------------------------- 
লেখকঃ প্রবন্ধ, ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments