Recent Tube

রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মক্কার জীবন। ; মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রহঃ।

হযরত আবু বকরের (রা.) উপর অমানুষিক নির্যাতন;

. নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে একদিন হযরত আবু বকর (রা.) দারে আরকাম থেকে মসজিদে হারামে যান। সেখানে হঠাৎ হযরত আবু বকর (রা.) দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখা শুরু করেন এবং উপস্থিত লােকদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) দিকে আহবান জানান। এভাবে প্রকাশ্যে ঘােষণা দিয়ে মসজিদে হারামে ইসলামের দাওয়াত প্রদানের এটাই ছিল প্রথম ঘটনা। মুশরিকগণ হযরত আবু বকরের (রা.) এ বক্তৃতা শােনার সাথে সাথে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে পদদলিত করতে থাকে। ওৎবা বিন রাবিয়া তার মুখে জুতা দিয়ে এমনভাবে আঘাতের পর আঘাত করে যে তার মুখমণ্ডল ফুলে যায়। রক্তে নাক ঢেকে যায়। এহেন করুণ অবস্থায় তার গােত্রের (বনু তায়েম) লােক এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং বাড়ীতে পৌছে দেয়। তারা এ ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত হয় যে, তিনি মারা যাবেন। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হযরত আবু বকরকে (রা.) বাড়ী রেখে পুনরায় তার গােত্রের লােকেরা মসজিদে হারামে গিয়ে এই মর্মে ঘােষণা দেয় যে, খােদার কসম! যদি আবু বকর মারা যায় তাহলে আমরা
.   ওত্বাকে জীবিত রাখব না। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত হযরত আবু বকর (রা.) সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকলেন। সংজ্ঞা ফিরে আসতেই তিনি জানতে চাইলেন, মুহাম্মদ (সা.) এর অবস্থা কী? কথাটা তার গােত্রের লােকদের পছন্দ না হওয়ায় তারা আবু বকর (রা.) কে গালিগালাজ করল । এর পর তারা চলে
  গেল। যাবার আগে হযরত আবু বকরের (রা.) মায়ের কাছে তারা বলে গেল তার প্রয়ােজনীয় পানাহারের ব্যবস্থা করতে। যখন হযরত আবু বকরের (রা.) কাছে তার মা ছাড়া আর কেউ রইল না, তখন আবার তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তার মা বললেন, তােমার বন্ধুর খবর আমার জানা নেই।

.   তখন হযরত আবু বকর (রা.) তার মাকে ফাতেমা বিনতে খাত্তাবের কাছে পাঠালেন রাসূলের (সা.) অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার জন্যে। ফাতেমা ইসলাম কবুল করেছিলেন, কিন্তু তার মুসলমান হবার কথা তখনও গােপন ছিল। হযরত আবু বকরের (রা.) মা তার কাছে গিয়ে বললেন, আবু
বকর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর খবর জানতে চেয়েছে। উত্তরে ফাতেমা (রা.) বললেন, আমি তাে ঐ দু'জনের কাউকে চিনি না। তবে আমাকে আবু বকরের (রা.) কাছে নিয়ে চলুন। তিনি বললেন, আচ্ছা চল। ফাতেমা বিনতে খাত্তাব (রা.) আবু বকরের (রা.) বাড়ীতে গিয়ে দেখলেন তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় পড়ে আছেন। দেখামাত্র তিনি আর্তনাদ করে বললেন, খােদার কসম, যারা আপনার সাথে এভাবে দুর্ব্যবহার করেছে তারা নিঃসন্দেহে কাফির এবং ফাসিক। আশা করি আল্লাহ তাদের ওপর প্রতিশােধ নেবেন। হযরত আবু বকর (রা.) ফাতিমা বিনতে খাত্তাবের (রা.) কাছে জানতে চাইলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অবস্থা কি? ফাতিমা (রা.) চুপে চুপে বললেন, আপনার মা- তাে শুনছেন। আবু বকর (রা.) তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, তার পক্ষ থেকে ভয়ের কোন কারণ নেই। তখন উম্মে জামিল ফাতিমা বিনতে খাত্তাব (রা.) বললেন হুজুর (সা.) পরিপূর্ণভাবে সুস্থ
আছেন। এর পর জানতে চাইলেন, তিনি কোথায় আছেন? ফাতিমা (রা.) এর উত্তরে বললেন, তিনি দারে আরকামেই আছেন। এরপর হযরত আবু বকর (রা.) বেশ আবেগ জড়িত কণ্ঠে বললেন, খােদার কসম! আল্লাহর রাসূলের (সা.) কাছে না যাওয়া পর্যন্ত আমি পানাহার করব না। উম্মে জামিল ফাতিমা (রা.) বললেন, একটু ধৈর্য ধরুন। এর পর শহরের অবস্থা শান্ত হলে আবু বকরের (রা.) মা উম্মুল খায়ের ও ফাতিমা (রা.) দু'জনে ধরাধরি করে হযরত আবু বকর (রা.) কে দারে আরকামে নিয়ে গেলেন।

.  আবু বকরের (রা.) অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লেন। তাকে চুম্বন করলেন। সেই সাথে উপস্থিত সকলেই তার অবস্থা দেখতে এগিয়ে এলেন। হযরত আবু বকর (রা.) রাসূলে পাক (সা.)-কে সম্বােধন করে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার বাপ-মা আপনার জন্যে কোরবান হােক। আমার তেমন কোন কষ্ট হয়নি। ঐ পাষণ্ড ও বিন রাবিয়া তার জুতার আঘাতে যে কষ্ট দিয়েছে ওটাই ছিল বড় কষ্টের ও যন্ত্রণার। এছাড়া আর তেমন কোন অসুবিধা হয়নি। এরপর তিনি নবী করিম (সা.)-এর সাথে তাঁর মাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ইনি আমার মা। আপনি আমাদের পরম শুভাকাক্ষী। তাকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিন এবং দো’আ করুন। যেন আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে হেফাজত করেন। এরপর আল্লাহর রাসূল (সা.) তার জন্যে দো'আ করলেন। তাকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিলেন। তিনি সাথে সাথেই ইসলাম কবুল করলেন।

  রাসূলুল্লাহর (সা.)  মক্কার জীবন বইয়ের ১০১,১০২ পৃষ্ঠা. । 
--------------------------------- 

Post a Comment

0 Comments