Recent Tube

আল্লাহর গজব কেন আসে? শামীম আজাদ।


      
আল্লাহর গজব কেন আসে?

মানুষের উপর যেসব বালা-মুসিবত আসে তা তাদের কৃতকৃর্মের কারণে,পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআ'লা ইরশাদ করেন,

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ 
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।  
 সূরা আর রূমঃ ৪১

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ
"তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন"। 
সূরা আস শুরাঃ ৩০

অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে 
وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَإِنَّ الْإِنسَانَ كَفُورٌ
‘যখন তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের উপর বিপদ-আপদ আসে (মানুষের ব্যক্তিগত বা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কর্মদোষে সাধারণত বিপদ-আপদ ঘটে) তখন মানুষ হয়ে পড়ে অকৃতজ্ঞ’। 
সূরা শূরাঃ ৪৮

পবিত্র কুরআনে আরও ইরশাদ করেন যে,

مَّا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللّهِ وَمَا أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ
"কল্যাণ যা তোমার হয় তা আল্লাহর নিকট হতে এবং অকল্যাণ যা তোমাদের হয় তো তোমার নিজের কারণে"। 
সূরা আন নিসাঃ ৭৯

হযরত নূহ (আ:) হইতে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণের উম্মতের উপর যেসব আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছে তা সেসব উম্মতগণের অন্যায়-অপকর্ম ও আল্লাহর অবাধ্যতার কারণেই হয়েছে।
হযরত নূহ (আ:) তাঁর উম্মতগণ তাঁকে অস্বীকার করে নানা ধরণের অপকর্মে লিপ্ত হলে আল্লাহপাক তাদেরকে গজব দিয়ে ধ্বংস করেন।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন যে,

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَلَبِثَ فِيهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِينَ عَامًا فَأَخَذَهُمُ الطُّوفَانُ وَهُمْ ظَالِمُونَ
"আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম হাজার বছর (৯৫০ বছর) অবস্থান করেছিল।
অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে।কারণ তারা ছিল চরম সীমালঙ্গনকারী"। 
সূরা আনকাবুতঃ ১৪

হযরত নূহ (আ:) এবং উম্মতগণের মধ্যে যারা তাঁর অনুসারী ছিল তাদের উপর আল্লাহ গজব নাজিল করেননি বা তাদেরকে ধ্বংস করেননি।
ইরশাদ হচ্ছে 
فَأَنجَيْنَاهُ وَأَصْحَابَ السَّفِينَةِ وَجَعَلْنَاهَا آيَةً لِّلْعَالَمِينَ
"অতঃপর আমি তাঁকে (নূহকে) এবং যারা নৌকায় আরোহণ করেছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম এবং বিশ্বজগতের জন্য ইহাকে করলাম একটি নিদর্শন"। 
সূরা আনকাবুতঃ ১৫

হযরত নূহ (আ:) তাঁর উম্মতের মধ্যে যারা অবাধ্য ও অপকর্মে লিপ্ত ছিল তাদেরকে আল্লাহপাক গজব দ্বারা ধ্বংস করেছিলেন।
এর দ্বারা প্রমাণ হলো,আল্লাহর অবাধ্যতা ও সীমাহীণ অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হলে আল্লাহর গজব আসে।

আ’দ,সামুদ,লুত (আ:) এর সম্প্রদায়,শুয়াইব (আ:) এর সম্প্রদায় তাদের নবীদেরকে অস্বীকার করায় এবং লাগামহীণ পাপে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহপাক তাদেরকে গজব দ্বারা ধ্বংস করেছিলেন। সূরা শু’আরা (১০৫-২০৯)

গজবের দ্বারা পাপীদের ধ্বংসের কথা পবিত্র কুরআনে বার-বার উল্লেখ করা হয়েছে মানুষকে সতর্ক করার জন্য।
ব্যক্তিগত, সামাজিক ভাবে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অপকর্ম করার কারণে পূর্ববর্তী জাতিকে যে গজব দ্বারা ধ্বংস করেছিলেন সে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,

وَقَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَلَقَدْ جَاءهُم مُّوسَى بِالْبَيِّنَاتِ فَاسْتَكْبَرُوا فِي الْأَرْضِ وَمَا كَانُوا سَابِقِينَ 
আমি কারুন, ফেরাউন ও হামানকে ধ্বংস করেছি। মূসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আগমন করেছিল অতঃপর তারা দেশে দম্ভ করেছিল। কিন্তু তারা জিতে যায়নি।  
 
فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنبِهِ فَمِنْهُم مَّنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُم مَّنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُم مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُم مَّنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ 
আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জত। আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুম করার ছিলেন না; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে।
সূরা আনকাবুতঃ ৩৯-৪০

দূর্ভিক্ষ মহানাদ শীলাবৃষ্টি মহামারী পানিতে নিমজ্জন অগ্নিকান্ড বন্যা এডিস মশা ডেঙ্গু এসব হচ্ছে আল্লাহর গজবের অন্তর্ভুক্ত।
এসব আল্লাহর গজব আসে মানুষের লাগামহীণ পাপের কারণে।
মানুষের অপরাধের কারণে আল্লাহর গজব নাজিল হয় সত্য কিন্তু সবচেয়ে বেশি গজব নাজিল হয় সমাজপতি বা শাসকগোষ্ঠীর অপরাধের কারণে। দূর্বল লোক বা অধীনস্থ লোকের পাপের কারণে আল্লাহর গজব নাজিল হয় না।

হাদীসঃ
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ فِى هذِه الْاُمّةِ خَسْفٌ وقَذْفٌ وَمَسْخٌ وذلِكَ اِذَا شَرِبُوْا الْخُمُوْرَ واتَّخَذُوْا القَيْنَاتِ وَضَرَبُوْا بِالْمَعَازِفِ.
আনাস (রাঃ)
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গজবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্য যন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া।
হাদিসে কুদসী

عَن عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِى قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِى لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِى أَسْلاَفِهِمُ الِّذِينَ مَضَوْا وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللهُ  عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِى أَيْدِيهِمْ وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللهُ  إِلاَّ جَعَلَ اللهُ  بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে (উপযুক্ত শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে)। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, যাতে তোমরা তা প্রত্যক্ষ না কর।
   যখনই কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে, তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না।
 যে জাতিই মাপ ও ওজনে কম দেবে, সে জাতিই দুর্ভিক্ষ, কঠিন খাদ্য-সংকট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হবে।
   যে জাতিই তার মালের যাকাত দেওয়া বন্ধ করবে, সে জাতির জন্যই আকাশ হতে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদি অন্যান্য প্রাণীকুল না থাকত, তাহলে তাদের জন্য আদৌ বৃষ্টি হত না।
   যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, সে জাতির উপরেই তাদের বিজাতীয় শত্রুদলকে ক্ষমতাসীন করা হবে; যারা তাদের মালিকানা-ভুক্ত বহু ধন-সম্পদ নিজেদের কুক্ষিগত করবে।
   আর যে জাতির শাসকগোষ্ঠী যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর কিতাব (বিধান) অনুযায়ী দেশ শাসন করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাদের মাঝে গৃহদ্বন্দ্ব অবস্থায়ী রাখবেন।” (বাইহাকী, ইবনে মাজাহ ৪০১৯, সহীহ তারগীব ৭৬৪)

এ বিষয়টি পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,

وَإِذَا أَرَدْنَا أَن نُّهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُواْ فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا

যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে।তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।
সূরা বনী ইসরাইলঃ ১৬

উক্ত আয়াত দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত,দূর্বল লোক বা অধীনস্থ লোকের অপরাধের কারণে আল্লাহর গজব নাজিল হয় না; বরং ক্ষমতাবানদের অপরাধের কারণে দেশের উপর,আমজনতার উপর আল্লাহর গজব নাজিল হয়।
প্রশ্ন হলো, শাসকের পাপের কারণে শাসিত বা আমজনগণ শাস্তি পাবে কেন?
এ স্পষ্ট জবাব হাদিসে রয়েছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আমাদের মধ্যে সৎ লোকগণ থাকা অবস্থায়ও আমরা কি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবো?” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেছিলেন, “হ্যা, যখন খারাপের পরিমান বৃদ্ধি পায়”। 
মুসলিম

হযরত জাবের (রা:) বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা:) ইরশাদ করেন যে,
আল্লাহপাক হযরত জিব্রাইল (আ:) কে নির্দেশ দিবেন, অমুক অমুক শহরকে তার আদিবাসীদের উপর উল্টিয়ে দাও।
জিব্রাইল (আ:) বলবেন, হে আল্লাহ! তাদের মধ্যে আপনার অমুক এক বান্দা আছেন, যিনি এক মুহূর্তের জন্যও আপনার সাথে নাফরমানি করেননি। তখন আল্লাহ বলবেন,
তার ও তাদের সকলের উপর শহরটিকে উল্টিয়ে দাও। কারণ,তার সম্মুখে পাপাচার চলছিল কিন্তু সেই পাপাচার দেখে তার চেহারা মুহূর্তের জন্যও মলিন হয়নি’। বায়হাকী,মিশকাত পৃষ্ঠা (৪৩৮-৪৩৯)

আল্লাহর গজব থেকে বাঁচতে হলে প্রকাশ্যভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।
আপদ-বিপদ ও আল্লাহর গজব আসে অপরাধের কারণে বিশেষ করে শাসকদের অপরাধের কারণে। তাই আল্লাহর গজব থেকে মুক্তির জন্য সকল প্রকার পাপ বর্জন করা আমাদের সকলের উচিত। মহান আল্লাহ তাআ'লা আমাদের সকলকে বুঝার তাওফীক দান করুন, মুমিনদের হালাল রুজির ব্যবস্থা করে দিন।

Post a Comment

0 Comments