Recent Tube

খোলা চিঠি: হে যুবক-১; জিয়াউল হক।


খোলা চিঠি: হে যুবক -১
--------------------------------- 
বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ উল্লেখযোগ্য একটা অংশের মধ্যে একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও পড়াশোনা করা ও জ্ঞানার্জনের একটা ক্ষীণধারার বিকাশ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এরকম প্রেক্ষাপটে আজকের এ লেখাটা তাদের জন্য।

 পৃথিবীতে জ্ঞান ‘রেডিমেড‘ আসে না। ‘জ্ঞান’ একটা আইসক্রিম নয়, কিংবা দোকানের শো কেসে সাঁজানো কোন এক পিস ‘কেক’ কিংবা কোন ব্যাংকের সিকিউিিরট ভল্টে রক্ষিত মহামূল্যবান হীরার টুকরো নয় যে আপনি গিয়ে পকেট থেকে ক’টা টাকা ফেলে দিয়ে তার মালিক বনে যাবেন। 

  জ্ঞান ঐসব মহুমূল্যবান রতেœর চেয়েও অনেক অনেক দামী। বস্তুত বিশ্বের কোন বস্তু, তা যতোই দামী হোক না কেন, তার মুল্য দিয়ে জ্ঞানের মুল্যায়ন হয় না, হওয়া উচিৎও নয়। জ্ঞান অমূল্য এক সম্পদ। একে অর্জন করতে হয় শ্রম, আগ্রহ আর নিষ্ঠা দিয়ে। এর পেছনে ব্যায় করতে হয় নিজের জীবনের স্বর্বস্ব, জীবনের একটা বড়ো অংশ, কোন কোন ক্ষেত্রে পুরো সময়টুকুই দিতে হয়। অর্থ বিত্ত খরচ করতে হয়, অথবা তা অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া করতে বা বঞ্চিত রয়ে যেতে হতে পারে। 

জ্ঞান কেবল দূর্মূল্যই নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে দূর্লভও বটে। এ দুটো সত্য যখন কোন ব্যক্তি নিজের মনের কোণে বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস করবেন, কেবল তখনই তিনি জ্ঞানার্জনের পথে আল কুরআনকে যথাযথভাবে মুল্যায়ন করতে পারবেন। তার পূর্ব পর্যন্ত তার মনে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যভাবে ধারণা ও আত্মবিশ্বাস থাকবে যে, তিনি নিজের চেষ্টা ও শ্রমে জ্ঞানের সন্ধান পাবেন।

কিন্তু তা হবার নয়। কারণ জ্ঞান আল্লাহর সম্পদ। তিনি দান করেছেন মানুষকে। হযরত আদম আ: কে সৃষ্টির পরে তাকে 'সকল জ্ঞান' শিখিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীেেত আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে তার সৃষ্টি। অতএব প্রতিনিধি হিসেবে বসবাস ও দায়িত্ব পালনের জন্য যতো জ্ঞানের প্রয়োজন হবে প্রতিটি উন্নত বা অনুন্নত যুগে, তার প্রতিটি তাকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে মানুষের জেনেটিক সিস্টেমে সকল জ্ঞানই বিদ্যমান। শুধু তাকে খুঁজে বের করতে হয়, এটাই হলো গবেষণা।  

জ্ঞানের মৌলিক ধারা নিজেদের জেনেটিক সিস্টেমে ধারন করেই তার আগমন এ পৃথিবীতে। এর পরে সময়, পরিবেশ,  প্রয়োজন ও প্রচেষ্টার উপরে নির্ভর করে কোথাও কোথাও, কোন কোনে ক্ষেত্রে এবং কারো কারো দ্বারা সেই জ্ঞানের প্রকাশ ও উন্মেষ ঘটেছে। এই প্রকাশ যে সব সময়ই নির্ভূল হবে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। খনি থেকে সোনা বের হলেই তা খাঁটি সোনা হয় না, মাটি ও বর্জতে মিশে থাকে। সেটাকে পরিশোধন করে বর্জমুক্ত করে নিতে হয়।

ঠিক একইভাবে কোন ‘জ্ঞানী ব্যক্তি’র নিকট থেকে জ্ঞান এলেই সেটা খাঁটি জ্ঞান নয়, যদিও তার মধ্যে কম বেশি জ্ঞান থাকতে পারে। এ জন্যই ঐ জ্ঞানকে কুরআন ও হাদিস নামক কষ্টিপাথরের মানদন্ডে পরিশোধন করে নিলেই কেবলমাত্র ‘খাঁটি জ্ঞান’ পাওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে বড়ো কথা, যেকোন জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রেই আল কুরআনকে সামনে রাখতে হয়। তা না হলে এক সময় জ্ঞান অনুসন্ধানে নিয়োজিত ব্যক্তি ‘জ্ঞানের দাস’ বা ‘জ্ঞানদাস’ হয়ে পড়ে। 

‘জ্ঞানদাস’ বলতে জ্ঞানের কোন এক বা একাধিক শাখাকেই সকল শক্তি ও সৃষ্টির উৎস জেনে মেনে তার দাসত্ব করা। একসময় এটা তার বিশ্বাস, তথা, ঈমানেরই অংশ হয়ে দাঁড়ায়। এরকম ঘটনা আশে পাশে অহরহ দেখতে পাই। 

আধুনিক বিশ্ব নিজেই এরকম 'জ্ঞানদাসে' পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের অবিশ্বাস্য অগ্রযাত্রা, বিজ্ঞানের উপরে অতিমাত্রায় ঈমান পোষণের কারণে বহু মানুষ বিজ্ঞানকেই সকল সৃষ্টি ও শক্তির উৎস ভেবে ধর্ম ও আল্লাহকে অস্বীকার করার সাহস দেখিয়েছে। সে ভেবেছে, বিজ্ঞান তাকে সকল প্রশ্নের জবাব দিয়েছে, অবশিষ্ঠ অজানা উত্তরগুলোও এক সময় সে এই বিজ্ঞানের মাধ্যমেই পাবে, আল্লাহ, গড বা ইশ্বরের কোন প্রয়োজন নেই। 

শুধু বিজ্ঞানই নয়, ইতিহাসকেও কেউ কেউ ইশ্বরের আসনে বসিয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো কমিউনিস্ট গুরু কার্লমার্ক্স। তার ব্যাপারে বলা হয়েছে; Marx believed in a God, but called him History.অর্থাৎ মার্ক্স একজন ইশ্বরকে বিশ্বাস করতেন, তিনি সে ইশ্বরকে ডাকতেন 'ইতিহাস' বলে! 

জ্ঞানের শত্রুও আছে। তার দু’ধরনের শত্রু হয়। প্রথম শত্রু এক্সটার্নাল বা বহি:শত্রু। এরা জ্ঞানীর কোন ক্ষতি করতে পারে না, যদি জ্ঞানী ধৈর্যের উপর অটল থাকেন। আর প্রত্যেক প্রকৃতজ্ঞানীই তেমনটা থাকেনও বটে। তাই বহি:শত্রু বা বাইরের শত্রু ধৈর্যশীল জ্ঞানীর কোনরকম ক্ষতি করতে পারে না।

দ্বিতীয়টা হলো ভেতরের শত্রু। সেটাই সবচেয়ে বড়ো শত্রু। সেটা হলো; অহংকার। একজন জ্ঞানী যদি নিজের মনের কোণে আত্মগরীমাকে লালন করেন, তা হলে তার ধ্বংসের জন্য আর কোন শক্তির প্রয়োজন নেই। ঐ আত্মগরীমা, গর্বই তাকে তার ভেতর থেকে ধ্বসিয়ে দেবে এক সময়।

এ পরিণতি থেকে বেঁচে থাকার জন্যই আল্লাহ শর্তহীনভাবে তার নির্দেশ ও নির্দেশনার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করার শর্তারোপ করেছেন আমাদের জন্য। এই মৌলিক শর্তটির ব্যাপারে যে ব্যক্তির বোধে-বিশ্বাসে, আচারে ও আচরণে দ্বিধা থাকবে, সে জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে পথ হারাবেই, যতোই জ্ঞানী হোক না কেন।

এ কারণেই বলছি, যুবক ভাইয়েরা, আপনারা যদি বিনা যাচাইয়ে ও শর্টকার্ট পথে ‘রেডিমেড’ জ্ঞানে নিজেকে সমৃদ্ধ ও ঋদ্ধ করতে চান, তবে তা আপনার জন্য সর্বনাশ বয়ে আনবে। এমনকি, তা ঈমানহারা পর্যন্ত করে ফেলতে পারে। জ্ঞানার্জন করতে  ধৈর্যসহ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া এবং বৈষয়িক ত্যাগ স্বীকারের মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। (সংক্ষেপকৃত)।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক। 

Post a Comment

0 Comments