Recent Tube

কুরআন ও হাদীসের আলোকে সফলতা ও ব্যর্থতা; --শামীম আজাদ।

কুরআনহাদীসের আলোকে সফলতা ব্যর্থতা;
------------------------------------------------------------

  আমরা যেভাবে সফলতা আর ব্যর্থতাকে দেখি প্রকৃত পক্ষে তা সে রকম নয় ৷ একজন মুসলিম কুরআন আর সুন্নাহর মানদণ্ড দিয়ে সফলতা ও ব্যর্থতা বিচার করবে ৷ আল্লাহর চোখে যা সফলতা ও ব্যর্থতা একজন মুসলিমের চোখেও সেটাই সফলতা ও ব্যর্থতা ৷

সফলতা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, 
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا 
وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا 
“যে নিজেকে শুদ্ধ করে সেই সফল, যে নিজেকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ”। 
সূরা শামসঃ ৮-১০

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা দরকার যারা মানুষকে ভালোর দিকে আহবান করে এবং সৎ কাজের আদেশ করতে থাকে ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করতে থাকে, আর এরাই হবে সফলকাম”। সূরা আল ইমরানঃ ১০৪

দুনিয়াতে শান্তি এবং আখিরাতে নিরাপত্তা লাভ করতে পারাটাই সফলতা

حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ عِيسَى، حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ وَرْدَانَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَجُلاً، جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ الدُّعَاءِ أَفْضَلُ قَالَ ‏"‏ سَلْ رَبَّكَ الْعَافِيَةَ وَالْمُعَافَاةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ أَتَاهُ فِي الْيَوْمِ الثَّانِي فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ الدُّعَاءِ أَفْضَلُ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ أَتَاهُ فِي الْيَوْمِ الثَّالِثِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ فَإِذَا أُعْطِيتَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَأُعْطِيتَهَا فِي الآخِرَةِ فَقَدْ أَفْلَحْتَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ سَلَمَةَ بْنِ وَرْدَانَ ‏.‏

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কোন দু’আ সবচেয়ে ভালো? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার রবের নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা কর। তারপর সে দ্বিতীয় দিন তাঁর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন দু’আ সর্বোত্তম? তিনি তাকে আগের মতই উত্তর দেন। তারপর সে তাঁর নিকট তৃতীয় দিন এলে তিনি আগের মতই উত্তর দেন এবং বলেনঃ যদি তুমি দুনিয়াতে শান্তি এবং আখিরাতে নিরাপত্তা লাভ করতে পার তাহলে মনে রেখো তুমি সফলতা লাভ করলে। 
জামে' আত-তিরমিজি ৩৫১২

ব্যর্থতা:

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন, 

وَمن يَكْفُرْ بِهِ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
“যারা এর সাথে (আল্লাহর বিধানের সাথে) কুফরী আচরণ করে মূলতঃ তারাই ক্ষতিগ্রস্ত”। 
সূরা আল-বাকারাঃ ১২১

حَدَّثَنَا أَبُو كَامِلٍ، فُضَيْلُ بْنُ حُسَيْنٍ الْجَحْدَرِيُّ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عِمْرَانَ الْجَوْنِيُّ قَالَ كَتَبَ إِلَىَّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَبَاحٍ الأَنْصَارِيُّ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو قَالَ هَجَّرْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا - قَالَ - فَسَمِعَ أَصْوَاتَ رَجُلَيْنِ اخْتَلَفَا فِي آيَةٍ فَخَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُعْرَفُ فِي وَجْهِهِ الْغَضَبُ فَقَالَ ‏ "‏ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِاخْتِلاَفِهِمْ فِي الْكِتَابِ ‏"‏ ‏.‏

আবদুল্লাহ ইবনু ‘ আম্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, কোন একদিন ভোরে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। তিনি বলেন, একদা তিনি কুরআনের একটি আয়াতের ব্যাপারে দু’ লোকের মতপার্থক্যের আওয়াজ শুনতে পেয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে আসলেন, এ অবস্থায় তাঁর চেহারায় রাগের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছিল। তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তীরা একমাত্র আল্লাহর কিতাবে দ্বিমত করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। (ই. ফা. ৬৫৩৪, ই. সে. ৬৫৮৬)
সহিহ মুসলিম ৬৬৬৯

قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُواْ بِلِقَاء اللّهِ
“ক্ষতিগ্রস্ত হলো সেসব লোক, যারা আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হওয়ার খবরকে মিথ্যা মনে করেছে”। 
সূরা আনআ’মঃ ৩১

قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلَا ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ
“বলো প্রকৃত দেউলিয়া তারাই যারা কিয়ামতের দিন নিজেকে এবং নিজের পরিবার, পরিজনকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ভালো করে শুনে নাও, এটিই হচ্ছে স্পষ্ট দেউলিয়াপনা"। 
সূরা আয্‌ যুমারঃ ১৫

قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا 
الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
“হে রাসূল! এদেরকে বলো, আমি কি তোমাদের বলবো নিজেদের কর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত কারা? তারাই, যাদের পৃথিবীর জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম সবসময় সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত থাকতো এবং যারা মনে করতো যে, তারা সবকিছু সঠিক পথেই করে যাচ্ছে”। 
সূরা কাহ্‌ফঃ ১০৩-১০৪

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، حَدَّثَنَا أَبُو رَافِعٍ، - هُوَ إِسْمَاعِيلُ بْنُ رَافِعٍ - عَنْ سُمَىٍّ، - مَوْلَى أَبِي بَكْرٍ - عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ لَقِيَ اللَّهَ وَلَيْسَ لَهُ أَثَرٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَقِيَ اللَّهَ وَفِيهِ ثُلْمَةٌ ‏"‏ ‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাত করবে যে, তার মধ্যে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের) কোন চিহ্ন নাই সে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে।
সুনানে ইবনে মাজাহ ২৭৬৩

اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ
“শয়তান তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে বসেছে এবং সে তাদের অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। এরা শয়তানের দলভুক্ত লোক। জেনে রাখো, শয়তানের দলভুক্ত লোকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” 
সূরা মুজাদালাঃ ১৯

ইহুদি খৃস্টানদের দুনিয়াবী সফলতা নিয়ে অনেকে আফসোস করে এবং মুসলিমদের পিছিয়ে পড়াকে ব্যর্থতা বলে কটাক্ষ করে ৷ একজন কাফেরকে আল্লাহ্ পুরো পৃথিবীর সকল ক্ষমতা দিলেও সে একজন মুমিন মুসলিমের পায়ের ধূলিকণার সমানও হবে না ৷

وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: لَوْ كَانَت الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ الله جَنَاحَ بَعُوضَةٍ، مَا سَقَى كَافِراً مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ . رواه الترمذي وقال:حديث حسن صحيح

সাহল ইবনে সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার (মূল্য বা ওজন) থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।’’
তিরমিযী ২৩২০, ইবনু মাজাহ ৪১১০, রিয়াদুস সলেহিন ৪৮১

আল্লাহ তাআলা বলেন, 

مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لاَ يُبْخَسُونَ 
أُوْلَـئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَاطِلٌ مَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
“যেসব লোক শুধু এই পৃথিবীর জীবন এবং এর চাকচিক্যের অনুসন্ধানী হয়, তাদের কাজ-কর্মের যাবতীয় ফল আমি এখানেই তাদেরকে দান করি আর সেক্ষেত্রে তাদের প্রতি কোনরূপ কম করা হয় না। কিন্তু পরকালে তাদের জন্য আগুন ব্যতীত আর কিছুই নেই। (সেখানে তারা জানতে পারবে যে) তারা পৃথিবীতে যা কিছুই বানিয়েছে, তা সবই বিলীন হয়ে গিয়েছে এবং তাদের যাবতীয় কৃতকর্ম সম্পূর্ণরূপে নিষ্ফল হয়েছে”। 
সূরা হূদঃ ১৫-১৬

সুতরাং একজন মুসলিমর জেনে রাখা উচিৎ পরকালেই তার প্রকৃত সফলতা এবং যারা জান্নাতী হবে তারাই চূড়ান্তভাবে সফল।

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ
“প্রত্যেক প্রাণকেই মরণের স্বাদ নিতে হবে। কিয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পুরো করে দেয়া হবে। যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে যেতে দেওয়া হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছুই নয়”। সুরা আল-ইমরানঃ ১৮৫

আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা দান করুন। দুনিয়া যদি ধরা না যায় এতে কোন আফসোস নেই কিন্তু আখিরাত যেন হাত ছাড়া না হয়।
------------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments