Recent Tube

খোলা চিঠি: হে যুবক - ৪; জিয়াউল হক।


   


খোলা চিঠি: হে যুবক - ৪;
----------------------------
 আধুনিক ও ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা: মৌলিক পার্থক্য:- - - আধুনিক (Contemporary) ও ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভংগী এবং মতামত বিদ্যমান । ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থাতে সর্বপ্রথমে মানুষের মনে চিন্তা ও বিশ্বাসের একটা উৎস নির্ধারণ করা হয়; মানুষ ও জানা অজানা সকল কিছুই সৃষ্টি করেছেন একজন সৃষ্টিকর্তা এবং তাদের কার্যবিধিও তিনিই নির্ধারণ করেছেন । এই মৌলিক সুত্রটিকে আবর্তন করেই ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়, ফলে, ব্যক্তি বিভ্রান্ত না হয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক রেখে এগুতে পারে।

   অপরদিকে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষসহ বিশ্বের উৎস সন্মন্ধ্যে সুষ্পষ্ট তথ্য নেই, তাকে খুঁজে নিতে বলা হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুত্র উপস্থাপন করা করে কখনো বলা হয়, এ বিশ্ব আপনা আপনিই সৃষ্টি হয়েছে, এর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। কখনও বলা হয় মানুষ একটা বিশেষ প্রাণী হতে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট। ফলে সে ধোঁয়াশায় পড়ে জীবনের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য খুঁজে পায় না। বার বার দিক পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।

   ফলে এ  শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তকরা দয়াপরবশ (!) হয়ে শিক্ষার্থীর মন মগজে 'শিক্ষা' ঢেলে দেন। শিক্ষার্থীর কাজ সহজ (?) হয়ে যায়! তার কাজ হলো শিক্ষাকে মুখস্থ করা, আর চাহিবামাত্র তা উগরে দেয়া ।

   অর্থাৎ আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা Imposition of knowledge ভিত্তিক। মন ও মননে  শিক্ষার নামে কিছু তথ্য, উপাত্ত, ধ্যান, ধারণা, চিন্তা ও দর্শনকে Impose করা হয়, চাপিয়ে দেয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীর মনে স্বাধীন চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে না।

   ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর মনে চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটানো হয়, ফলে Exposition of knowledge বা জ্ঞান ও চিন্তাশক্তির উন্মেষ ঘটে, চিন্তা গবেষণা করতে তাকে উৎসাহ দিতে কুরআনে 'আফালা তাতাফাক্কারুন'? (তোমরা কী ভেবে দেখবে না?) 'আফালা তাযাক্কারুন'? (তোমরা কী স্মরণ করবে না?) 'আফালা ত্বা'ক্বিলুন'? (তোমাদের কী বোধোদয় হবে না?) 'আফালা ত্বুসিরুন'? (তোমরা কী খেয়াল করে দেখবে না?) বার বার বলা হয়েছে!

    জ্ঞানের উন্মেষ ঘটাতে শিক্ষার্থীর মনে স্বাধীন চিন্তাশক্তি বিকাশ (Exposition of Thoughts) হতে হবে, ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থায় সেটাই ঘটে । এ কারণেই মুসলিম মণীষীরা একই সাথে একাধিক বিষয়ে পান্ডিত্যের অধিকারী (Polymath) ছিলেন। ইবনে সীনা একইসাথে বিশ্ববরেণ্য চিকিৎসাবিজ্ঞানী, সঙ্গীতজ্ঞ, কেমিষ্ট, মহাকাশবিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবীদ, ভেষজবিজ্ঞানী কুরআনের হাফেজ ও ইসলামি চিন্তাবীদ ছিলেন।

    জাবির ইবনে হাইয়ান একইসাথে একজন পদার্থবিজ্ঞানী, মহাকাশবিজ্ঞানী, রসায়নবীদ, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, দার্শনিক, জোতির্বিজ্ঞানী, ভূগোলবীদ, সঙ্গীতজ্ঞ, ইসলামি চিন্তাবীদ এবং লেখক ছিলেন (১৯২ টি গ্রন্থ রচনা করেছেন)!

   প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সত্যকে খুঁজে বের করতে বলা হয় (Seeking the truth)। মানুষ নিজের জ্ঞানকে ভিত্তি করে সত্য খুঁজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থায় চুড়ান্ত ও প্রকৃত সত্যটাকে অহির মাধ্যমে জানিয়ে বলা হয়; এগুলো হলো সত্য, একে প্রতিষ্ঠা করতে হবে (Establishing the truth)। ইসলামি শিক্ষার্থীকে সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুত ও পরিচালিত করে।

    একটা উদাহারণ দেই, মানুষের শরীরেও যে বিদূৎ এর উপস্থিতি আছে ও প্রয়োজনের মহুর্তে বিদূৎ উৎপন্ন করা যায়, সেটা কুরআন আমাদের সামনে তুলে ধরেছে হযরত মুসা আ: এর ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে, সেখানে মুসা আ: নিজের শরীর থেকে বিদূ্ৎ উৎপন্ন করে, আলো জ্বালিয়ে দেখিয়েছেন (সুরা আরাফ- ১০৮)।

    আজ বিশ্ব এ পৃথিবীর বাইরে জীবন আছে কী না, সেটা নিয়ে গবেষণা করছে। কুরআন আমাদের জনিয়ে দিয়েছে এ সত্যটা যে, পৃথিবীর বাইরেও পৃথিবী আছে, সেখানে জীবন আছে (এর সঠিক রুপ আমাদের জানা নেই, কুরআন সে ব্যাপারে কিছুই বলে নি)। সুরা ফাতেহাতেই বলা হয়েছে ; তিনি ‘বিশ্বসমূহের মালিক’।

    হযরত ইসা আ: কে তুলে নিয়ে এরকমই কোনো এক গ্রহে রাখা হয়েছে, আবার এরকমই কোনো এক পৃথিবী হতে বনী ইসরাইল জাতির জন্য খাবারও আনা হয়েছিল, মান্না এবং সালওয়া, কুরআনই তা জানাচ্ছে!
পৃথিবীর বাইরে জীবন আছে কি না, সেটা মুসলমানদের কাছে প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হলো, কোথায় আছে? কী ভাবে আছে? এ ক্ষেত্রে মুসলমানরা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে। এ ব্যর্থতা ইসলামের নয়, মুসলমানদের।

      আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা জীবন, সমাজ ও সৃষ্টির সকল বিষয়ে তথ্য ও ত্বত্ত নিজের মত করে ব্যখা করে (Designing the fact)। ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা জীবন ও জগতের উৎস, সৃষ্টি ও পরিচালনার প্রকৃত রুপ, উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি জানতে আরও বেশি গবেষণার জন্য (Discovering the fact) বলে ।

   আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ধরেই নেয়া হয়, শিক্ষিত হলেই  মানুষ নীতিবান হয়ে উঠবে। কারণ, এ শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বাস করে যে; Knowledge brings Virtue অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরিত!  অপরদিকে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থায় বলা হয়; Faith brings Virtue অর্থাৎ বিশ্বাস মানুষকে স্বৎ বানায়।

    মানব প্রকৃতি ও সামাজিক বাস্তবতার সাথে এর শতভাগ মিল আশে পাশে চোখ মেললেই বুঝতে পারি। সমাজে ( দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া) যে যত বড় শিক্ষিত, সে তত কূশলী দূর্ণীতিবাজ।  উচ্চ শিক্ষা তাকে স্বৎ ও নীতিবান বানাতে পারে নি। একথা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত, মানুষের চরিত্রে সততা জাগ্রত হয় শিক্ষা থেকে নয়, বরং তার বিশ্বাস থেকে।

   কীসের বিশ্বাস? এবং কিসের উপরে বিশ্বাস? অসততা, পাপ, অন্যায় বা দূর্ণীতির জন্য একদিন জবাবদীহি করতেই হবে, শাস্তি নিতেই হবে। কোনো শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না। কে শাস্তি দেবেন? কখন দেবেন? এগুলোকে বোধগম্য, যুক্তিগ্রাহ্যভাবে তুলে ধরাটাই ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার মূল প্রতিপাদ্য। 

     বিশ্বসমাজকে বাঁচতে ও বাঁচাতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ধারন করে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা অনুসরণের কোন বিকল্প নেই।
-----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক। 

Post a Comment

0 Comments