Recent Tube

কুরআন ও সুন্নাহই লক্ষ্য, বাকি সব ব্যাখ্যা ও মতাদর্শ স্রেফ উপলক্ষ ইসলামই মূল, বাকি সব মাসলাক-মাশরাব এটার বোঝার ও মানার সহায়ক। ---মিযান হারুন।

কুরআন সুন্নাহই লক্ষ্য, বাকি সব ব্যাখ্যা ও মতাদর্শ স্রেফ উপলক্ষ ইসলামই মূল, বাকি সব মাসলাক-মাশরাব এটার বোঝার ও মানার সহায়ক। 


   ইসলামের বেঁচে থাকার জন্য কোনো বিশেষ মতাদর্শ কিংবা মানহাজ বেঁচে থাকা জরুরি নয়। উদাহরণত যদি পৃথিবী থেকে হানাফী মাযহাব সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়, ইসলাম স্বমহিমায় টিকে থাকবে। মুসলমানরা শাফেয়ী, হাম্বলী ও মালেকী মাযহাব অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করবেন। একই কথা অন্যান্য মাযহাবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সালাফী মতাদর্শ এই তুলনায় আরও ছোট, ক্ষুদ্র ও অগুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানগণ হাজার বছর আল্লাহর ইবাদত করেছেন এই মতাদর্শ ছাড়াই। সুতরাং সালাফী মতাদর্শ যদি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়, ইসলামের কিছু হবে না। কারণ এই মতাদর্শের অস্তিত্বের ওপর কুরআন-সুন্নাহর অস্তিত্ব নির্ভরশীল নয়। 

তাহলে দেখা যাচ্ছে ইসলামই মূল, বাকি সব মাসলাক-মাশরাব এটার বোঝার ও মানার সহায়ক। কুরআন ও সুন্নাহই লক্ষ্য, বাকি সব ব্যাখ্যা ও মতাদর্শ স্রেফ উপলক্ষ। এখন যদি এসব মাসলাক-মতাদর্শের অনুসরণ ইসলামী শরীয়তের হুদূদ-হাইবত ইত্যাদি রক্ষায় সহযোগী হয়, তবে এগুলোর অনুসরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। কিন্তু এসব মানহাজ-মাসলাক আঁকড়ে ধরার ক্ষেত্রে যদি অতিরঞ্জন সৃষ্টি হয়, মাকাসেদে শরীয়াহর বিপরীত ফলাফল দেখা দেয়, কুরআন সুন্নাহর চিরন্তন নির্দেশ- মুসলমানদের ইত্তিহাদ ও  ঐক্যে ফাটল ধরায়, তবে সেটা নিন্দনীয় 'তাআসসুব' এ পরিণত হবে  এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে সেগুলোর বর্জন অত্যাবশ্যক পরিগণিত হবে। 

মাকাসেদে শরীয়াহর একটা আবশ্যকীয় মূলনীতি হলো  درء المفاسد مقدم على جلب المصالح অর্থাৎ ভালো করতে গেলে খারাপ হওয়ার আশংকা থাকলে সেই ভালোটা করা বাদ দিতে হবে। উদাহরণত একটা সুন্নাত কিংবা মুস্তাহাব আমল যা সমাজে করতে গেলে মানুষের হারামে লিপ্ত হওয়ার শংকা থাকবে (যেমন মুসলমানদের পারস্পরিক বিবাদ, অনৈক্য, গিবত, দুশমনি, এমনকি জান ও মালের ক্ষতি ইত্যাদি) তখন সেই সুন্নাত আমলটা বাদ দেয়া আপনার জন্য ওয়াজিব। কারণ সুন্নাত পালন করতে গিয়ে হারাম ডেকে আনা যাবে না। এই জায়গাতে আমরা অনেকে ভুল করি। ফলে অনেক তিক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। একটা মুস্তাহাবকে জোর-জবরদস্তি করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবণতা আপনার মাঝে তখনই  আসবে, যখন আপনি আমলটা চান না, সমাজে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে চান। এটা আপনার জন্য, দীনের জন্য, সমাজের জন্য সবার জন্য ক্ষতিকর। এই আমল করাটা তখন আপনার জন্য ইবাদত নয়; প্রবৃত্তির অনুসরণের পর্যায়ে চলে যাবে, শিরকে খফীতে পরিণত হবে। 

মাকাসিদে শরীয়াহর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো وحدة الأمة। অর্থাৎ ছোট-ছোট মতভেদের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও মুসলমানদের ঐক্য ধরে রাখা। সমাজে একজন আপনার মতাদর্শের বিপরীতে একটা সুন্নাত কিংবা মুস্তাহাব আমল করছেন, সেটা বন্ধ করতে গিয়ে যদি উম্মাহ হানাহানিতে লিপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে, তবে আপনার জন্য সেটা বন্ধ করা বৈধ নয়। কারণ সেটা বন্ধ করার উদ্দেশ্য ছিল স্রেফ উম্মাহর কল্যাণ কামনা, কিন্তু উম্মাহর ঐক্য ভেঙে যাবে এমন পরিণতির কথা জেনেও সেটা করতে যাওয়ার মাঝে উম্মাহর কল্যাণ কামনা থাকলো না। তাতে ঢুকে গেলো ধর্মীয় বাকশাল, অর্থাৎ আপনি ছাড়া সমাজে আর কারও অস্তিত্ব থাকবে না, কাউকে কথা বলতে হলে আপনার ভাষাতেই কথা বলতে হবে। এর চেয়েও দুঃখজনক হলো আপনার লোকদেখানো উদারতা। আপনি সময়ে সুযোগে অমুসলিমকে ভাই বলে সম্বোধন করেন তাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে। আপনার ইসলামের উদারতা দেখাতে আপনি মন্দির পাহারা দেন অর্থাৎ আপনার ধর্মের সবচেয়ে বড় দুশমন শিরককে মেনে নিচ্ছেন না কেবল, শিরকের সুরক্ষা দিচ্ছেন। আপনার সামনে কবরপূজার মতো শিরক হচ্ছে, আপনি নবীজীর মক্কী জীবনের কথা মনে করে নীরব থাকছেন, বিপরীতে আপনার মুসলিম ভাইয়ের স্রেফ একটা মুস্তাহাব আমল আপনার মতবিরুদ্ধ হওয়ায় মেনে নিতে পারছেন না! তখন হুট করে মাদানী জীবনে চলে যাচ্ছেন। লাঠি-সোটা নিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দিচ্ছেন। 

আমাদের দীনদারী নিয়ে ভেবে দেখার সময় হয়েছে আবারও। তলিয়ে দেখার সময় হয়েছে আমরা কি দীনের অনুসরণ করছি নাকি নফসের? আমরা কি দীনের প্রতিষ্ঠা চাচ্ছি নাকি নিজেদের মতাদর্শের?
-----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা আলোচক গবেষক, পর্যালোচক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments