Recent Tube

বংশ ও বর্ণের কোন গৌরব নেই; --শামীম আজাদ।

        
      
      বংশবর্ণের কোন গৌরব নেই;


       বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত বিলাল হাবশী ও আবূ যর গিফারী (রা) দুজনেই প্রাথমিক কালের সাহাবী। দুজন পরস্পরের ওপর ক্রোধান্ধ হয়ে গালাগাল করতে শুরু করেন। ক্রোধের তীব্রতায় হযরত আবূ যর (রা) হযরত বিলাল (রা)-কে সম্বোধন করে বললেনঃ - ‘হে কালোর পুত্র’। হযরত বিলাল নবী করীম (সা)-এর কাছে এ কথা বলে অভিযোগ করলেন। তিনি হযরত আবূ যরকে বললেনঃ
 তুমি ওর মাকে মন্দ বললে? দেখা যায় তোমার মধ্যে জাহিলিয়াতের স্বভাব-চরিত্র এখনও অবশিষ্ট কয়েছে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَىٰ أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَىٰ أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
 মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।
সূরা আল হুজরাতঃ ১১

হযরত আবূ যর (রা) থেকেই বর্ণিত, নবী করীম (সা) তাঁকে বলেছেনঃ 
তুমি নিজ সম্পর্কে ভেবে দেখ। লাল বা কালো বর্ণের লোকদের অপেক্ষা তুমি কোন অংশেই উত্তম ব্যক্তি নও। তুমি ওর ওপর কেবল মাত্র তাক্ওয়ার ভিত্তিতেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পার। (আহমদ)

নবী করীম (সা) বলেছেনঃ 
তোমরা সকলেই আদমের সন্তান। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি দিয়ে।

এ সবের সাহায্যে মুসলমানের বংশ বর্ণ পিতৃপুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার ভিত্তিতে গৌরব করা ও অন্যদের তুলনায় নিজেদের বড়ত্ব প্রমাণ করতে চেষ্টা করাকে ইসলাম সম্পূর্ণ হারাম করে দিয়েছে। কেননা এগুলোই হচ্ছে জাহিলিয়াতের উপকরণ। নিতান্ত লালসার দাসত্ব করতে গিয়েই মানুষ এ কাজ করতে পারে। কাজেই আমি অমুকের ছেলে, আমি অমুকের বংশধর আর তুমি অমুক হীন বংশের লোক, আমি শ্বেতকর্ণ, আর তুমি কৃষ্ণাঙ্গ, আমি আরব আর তুমি অনারব ইত্যাদি ধরনের বিদ্বেষাত্মক ও হিংসাত্মক কথাবার্তা পরস্পরে বলার কোন অবকাশ ইসলামে নেই।

বস্তুত সমস্ত মানুষ যখন এক ও অভিন্ন মূল থেকে উৎসারিত, তখন পরবর্তী লোকদের পক্ষে বংশ গোত্র বা রক্ত নিয়ে গৌরব করার ও অপরের তুলনায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানর কোন অর্থ হয় না, তার অধিকারও কারো থাকতে পারে না। বংশের কোন গুরুত্ব আছে যদি ধরেও নেয়া যায়, তবু তার বংশে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তির নিজের কি শ্রেষ্ঠত্ব থাকতে পারে বা তার কি অপরাধ মনে করা যেতে পারে? নবী করীম (সা) ওজস্বিনী কণ্ঠে ঘোষণা করেছেনঃ 

তোমাদের এসব বংশ নিয়ে অপরের ওপর কোন শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পার না। কেননা তোমরা সমস্ত মানুষই আদমের সন্তান- বংশধর। দ্বীনদারী ও আল্লাহ্ ভীতি ছাড়া তোমাদের কারো কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই অপর লোকদের ওপর। (আহমদ)

তিনি আরও বলেনঃ 
সমস্ত মানুষই তো আদম-হাওয়ার বংশধর। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তোমাদের বংশ বা আভিজাত্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন না। আসলে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহ্ ভীরু।

বাপ-দাদার বা বংশের উচ্চতা নিয়ে গৌরবকারী লোকদেরকে কঠোর ভাষায় সাবধান করে দিয়ে নবী করীম (সা) বলেছেনঃ

হে লোকেরা! বাপ-দাদাদের নিয়ে গৌরব করা ত্যাগ কর-সেসব বাপ-দাদা যারা মরে জাহান্নামের কয়লা হয়ে গেছে। নতুবা তারা পোকা-মাকড়ের তুলনায়ও অধিক দীন ও লাঞ্ছিত হবে। আল্লাহ্ তা’আলা জাহিলিয়াতের আত্মম্ভরিতা ও বংশ গৌরব নির্মূল করে দিয়েছেন। এক্ষণে মানুষ হয় মুমিন মুত্তাকী হবে অথবা হবে পাপী দুশ্চরিত্র। সব মানুষই আদমের সন্তান। আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বায়হাকী)

এ হাদীসে বড় গুরুত্বপূর্ণ দিক্ষা রয়েছে তাদের জন্যে, যারা নিজেদের প্রাচীন বাপ-দাদা পূর্ববংশ, আবরী-আজমী জাহিলিয়াতের অগ্রনায়ক ফিরাউন ও কাইজার কিসরাকে নিয়ে গৌরব করে অথচ নবী করীমের ঘোষণার দৃষ্টিতে তারা জাহান্নামের কয়লা ছাড়া আর কিছুই নয়।

হুজ্জাতুল বিদা’র সময় হজ্জের মাসে সম্মানিত মক্কা নগরে লক্ষাধিক মুসলিম সমবেত হয়ে রাসূলে করীমের উদাত্ত ভাষণ শুনছিলেন। তিনি শুরুতেই ঘোষণা করলেনঃ 

হে জনগণ! তোমাদের আল্লাহ্ এক। কোন আরববাসীর কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই কোন অনারবের ওপর, কোন অনারবের কোন শ্রেষ্টত্ব নেই কোন আরবের ওপর। লাল-ধলা বর্ণের লোকের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই কালো বর্ণের লোকের ওপর। কালো বর্ণের লোকেরও কোন শ্রেষ্ঠত্ব-বৈশিষ্ট্য নেই লাল-ধলা লোকদের ওপর তাকওয়া ছাড়া। আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে সেই লোক আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাবান, যে তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহ্-ভীতি সম্পন্ন। (বায়হাকী)
-----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments