Recent Tube

যুগেযুগে মানুষ বিভিন্ন বাহানায় মূর্তিপূজার দিকে ধাবিত হয়েছে। মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী।



যুগেযুগে মানুষ বিভিন্ন বাহানায় মূর্তিপূজার দিকে ধাবিত হয়েছে।
--------------------------------- 

 এই পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল এসেছেন তাঁরা কেউই মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ এবং সংরক্ষণের বৈধতা দেননি । তবুও মানুষ বিভিন্ন বাহানায় মূর্তিপূজার দিকে ধাবিত হয়েছে । 
এমন অনেক ভাস্কর্য বা মূর্তি অাছে যেগুলোকে মানুষ পূজো দেওয়ার জন্য বানায়নি কিন্তু একসময় তা পূজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে । 
বলা হচ্ছে অাজকে যে ভাস্কর্যগুলো নির্মাণের কথা অামাদের সামনে এসেছে তা পুজা করার জন্য বানানো হচ্ছেনা।  এগুলো শ্রদ্ধা এবং স্মৃতিকে ধারণ করার জন্য । অামরা পরিস্কার বলতে চাই, মানুষের হাতে নির্মিত কোন ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করাটাইতো প্রকাশ্য শির্ক । অার এটিই মূর্তিপূজার দিকে ফিরে যাওয়ার (Royal road) রাজপথ ।

 দেখুন কোরঅান কি বলছে অার রাঈসুল মুফাসসীরীন হযরত ইবনে অাব্বাস (রা) কোরঅানের সেই অায়াতের কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন ! 

قَالُوْا لَا تَذَرُنَّ اٰلِهَتَكُمْ وَ لَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَّ لَا سُوَاعًا ۙ۬ وَّ لَا یَغُوْثَ وَ یَعُوْقَ وَ نَسْرًاۚ۝۲۳

‘এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে।’ -সূরা নূহ : ২৩

এখানে কাফের সম্প্রদায়ের দুটো বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে : ১. মিথ্যা উপাস্যদের পরিত্যাগ না করা। ২. মূর্তি ও ভাস্কর্য পরিহার না করা।
 তাহলে মিথ্যা উপাস্যের উপাসনার মতো ভাস্কর্যপ্রীতিও কুরআন মজীদে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত। অতএব, এটি বিনা প্রশ্নে পরিত্যাজ্য । 

উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তিগুলো সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, এগুলো হচ্ছে নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু পুণ্যবান লোকের নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করেছে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রনা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হল। -সহীহ বুখারী হাদীস : ৪৯২০

। জ্বীন জাতি হযরত সুলাইমান (অা) এর  প্রতিকৃতি নির্মাণ করেছিল তাই বলে সুলাইমান (অা) তাঁর বৈধতা দিয়েছিলেন এমনটি নয় । 
জ্বিনেরা হল মহান অাল্লাহর এক ভিন্ন সৃষ্টি । নবী সুলাইমান (অা) এর ভাস্কর্য বানানোটা ছিল ভিন্ন জাতির ভিন্ন খেয়াল । 

প্রকৃতপক্ষে নবী রাসূলদের কর্মক্ষেত্র ছিল মানব জাতিকে ঘিরে। যদিও সুলাইমান (অা) এর অনুগত ছিল জ্বিন জাতিরা। তথাপি তিনি তাদের খেয়ালের অবমূল্যায়ন করেননি । 

তাছাড়া তাঁর শরীয়ত ছিল ভিন্ন । তিনি যদি মানব সম্প্রদায়কে প্রতিকৃতি নির্মাণে দূর্বলতা প্রাদর্শণ করতেন তবে দুনিয়াতে তাঁর অনুসারীরা বহু প্রতিকৃতি নির্মাণ করতো । 

সূতরাং, জ্বিনদের তৈরী প্রতিকৃতি,মূর্তি নির্মাণের পক্ষে দলীল হতে পারেনা । 
জ্বিনদের নির্মিত ভাস্কর্যের কথা অবশ্য কোরঅানে অাছে । 

তারা সোলায়মানের (আ.) ইচ্ছানুযায়ী দূর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।” (সুরা সাবা, আয়াত ১৩)

অাজও যদি কেউ প্রানীর প্রতিকৃতি ব্যাতিরেকে  ভাস্কর্য বানায় তাহলে সেটা দোষনীয় হবেনা । অামরা বলছি প্রানীর মূর্তির কথা ।  

অনেক নবীর উম্মতেরা অনেক নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়েছিল তাই বলে সেটি জায়েজ হয়ে যায়নি । 

হযরত মুসা (আ.) মানুষকে সেই এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টার দিকে ডেকেছেন তাঁর জাতি বাছুরের মূর্তির আরাধনা করেছে।
 যে ঈসা (আ.) মানুষকে এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টার দিকে ডেকেছেন তাঁর বিশ্বাসীরা তাঁর তো বটেই, তাঁর মায়েরও (মাতা মেরি) মূর্তি বানিয়ে আরাধনা শুরু করেছিলো। 

অাম্বিয়া (অা) দের কাজই ছিল মানুষকে সৌরপূজা,অগ্নীপূজা,প্রস্তর পূজাসহ সমস্ত দৃশ্যমান মূর্তি এবং অদৃশ্য মূর্তির পূজা থেকে বিরত রাখাএবং এক অাল্লাহর প্রতি ইবাদাতের দিকে মানুষকে ডাকা । 

কেউকেউ মূর্তী এবং ভাস্কর্য অালাদা বিষয় প্রমান করতে গিয়ে এমন অযৌক্তিক কথাবার্তা বলেন যা শুনে তাদের জ্ঞানের দৈন্যদশা দেখে অামাদের শুধু করুনাই হয় ।
এ ব্যাপারে অামি একটি ছোট নিবন্ধ সেদিন লিখেছিলাম যা ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধের কিয়দাংশ অাবারো তুলে ধরছি । 
 
মূর্তি( Statue) আর ভাস্কর্যের (Sculpture) মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই । সমস্ত মূর্তিকেই অাল কোরঅানে অপবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে । 
তবে ভাস্কর্য বা স্মৃতিস্তম্ভকে (Monument)   আমরা চাইলেই মূর্তি থেকে অালাদা করতে পারি । যখন একটি নির্মাণকে কোন প্রানীর পূর্ণাঙ্গ অবয়ব দেয়া হয় তখনই এটা মূর্তী হয়ে যায় । 
অথচ ভাস্কর্য তৈরী করার বিভিন্ন শৈল্পিক পদ্ধতি আছে যেগুলোকে কেউ মূর্তি বলতে পারবেনা । 
যেমন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধারণ করার জন্য একজন যুদ্ধার একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত,যে হাতে তিনি ধরে অাছেন বন্দুক অথবা কোন যুদ্ধাস্ত্র । তখন সেটিকে অাপনি ভাস্কর্য অথবা মনুমেন্ট যে নামেই ডাকুন না কেন সেটিকে অামরা মূর্তি বলবোনা । 
এভাবে অামাদের দেশ,অামাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ,অামাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে জীবন্ত করে রাখতে পারি নির্দোষ নির্মাণ শিল্পের মাধ্যমে । 

সেদিন একটি লিখা পড়ে বিস্মিত না হয়ে পারলামনা ।  জনৈক লেখক লিখেছেন, স্বয়ং রাসুলের (স) এর ঘরে নাকি মূর্তি ছিল। 
প্রমান হিসেবে তিনি হাদীসটির উদ্ধৃতি দিয়েছেন । উম্মত জননী হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, যখন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাবুক অথবা খাইবার যুদ্ধ হইতে ফিরিলেন তখন বাতাসে তাঁহার কক্ষের সামনের পর্দা সরিয়ে গেলে তাঁহার কিছু পুতুল দেখা গেল।  রাসুল (সা.) বললেন, “এইগুলি কী?” তিনি বললেন, “আমার পুতুল।” ওইগুলির মধ্যে তিনি দেখিলেন একটি ঘোড়া যাহার ডানা কাপড় দিয়া বানানো হইয়াছে এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইহা কি যাহা উহার উপর রহিয়াছে?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “দুইটি ডানা।” তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “ডানাওয়ালা ঘোড়া?” তিনি উত্তরে বললেন “আপনি কি শোনেননি যে সুলেমানের ডানাওয়ালা ঘোড়া ছিল?” তিনি বলেনন, এতে আল্লাহর রাসুল (সা.) এমন অট্টহাসি হাসলেন যে আমি উনার মাড়ির দাঁত দেখতে পােলাম।”

এখানে বলে রাখি হযরত অায়েশা সিদ্দীকা রা যখন পুতুল খেলা খেলেছিলেন তখন তিনি সাবালিকা ছিলেননা।  অার এটা সর্বজনবিদিত যে,শিশুদের জন্য শরীয়াতের কেন বিধান প্রযোজ্য নয় । 
হযরত অায়েশা (রা) গানও গেয়েছেন । সেটি ছিল শিশুসুলভ তাই রাসুল (স) বাঁধা দেননি । 

 ‘ফতহুল বারি’র লেখক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর উদ্ধৃতি: “পুতুল ও একই রকম ইমেজ অবৈধ কিন্তু ইহা বৈধ করা হইয়াছিল তখন আয়েশার (রা.) জন্য। কারণ তিনি ছিলেন ছোট বালিকা, তখনও তিনি বয়স্কা হননি।” (ফতহুল বারি, পৃষ্ঠা ১৪৩, ১৩ খণ্ড)

হুজুর (স) মূর্তির বিরুদ্ধে অাক্রোশ প্রদর্শণ করেছিলেন
 ।  
আলী ইবনে আবী তালেব রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোনো প্রাণীর মূর্তি পাবে তা ভেঙ্গে ফেলবে, যেখানেই কোনো সমাধি-সৌধ পাবে তা ভূমিসাৎ করে দিবে এবং যেখানেই কোনো চিত্র পাবে তা মুছে দিবে?’ আলী রা. এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্ত্তত হলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ পুনরায় উপরোক্ত কোনো কিছু তৈরী করতে প্রবৃত্ত হবে সে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি নাযিলকৃত দ্বীনকে অস্বীকারকারী।’
 -মুসনাদে অাহমদ
সূতরাং, ইসলাম যেহেতু কোনভাবেই ভাস্কর্য বা মূর্তি নির্মাণকে সমর্থন করছেনা সেহেতু পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম দেশে মূর্তি নির্মাণের কর্মসূচি থেকে ফিরে অাসুন । মূর্তি বা ভাস্কর্য কোন কল্যান বয়ে অানবেনা বরং অাল্লাহর অাজাবকে ত্বরান্বিত করবে।
--------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল, প্রবন্ধ লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments