Recent Tube

খোলা চিঠি: হে যুবক- শেষ পর্ব; জিয়াউল হক।

        খোলা চিঠি: হে যুবক
                -শের্ব;

জ্ঞান কি? জ্ঞানের সুত্র কি?

জ্ঞান সবাই খোঁজে। কিন্তু সমস্যা হলো জ্ঞান কি? কাকে বলে? এটা থাকে কোথায়? কোথায় মেলে তাকে, কোথায় পাওয়া যায়? কার কাছেই বা পাওয়া যায়? জ্ঞান কি? জ্ঞান কাকে বলে? উপাদানই বা কি? জ্ঞান, যার ইংরেজিতে; নলেজ (Knowledge)। নলেজের সংগায় বলা হয়েছে; 

Facts, information, and skills acquired through experience or education; the theoretical or practical understanding of a subject.
(তথ্য, উপাত্ত ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও হাতে কলমে শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে কোন বিষয় বা বস্তুকে যথাযথভাবে জানাটাই হলো জ্ঞান।) 

জ্ঞানের নামে আজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষয়ভিত্তিক কিছু তথ্য ও নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। ফলে এ প্রজন্ম প্রকৃত জ্ঞানী হয়ে উঠছে না। এটা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার দূর্বলতা। আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তথ্যের উপস্থাপনাও নির্দেশনামূলক হয়ে গেছে। বলা হয়েছে; Instruction is the transmission of ready knowledge by the teacher to his pupil.

অর্থাৎ শিক্ষকের কাছে থেকে রেডিমেড কিছু জ্ঞান ছাত্রের মধ্যে সঞ্চারিত করা হয় (Transmission), জ্ঞানের উন্মেষ (Exposition) ঘটে না। 

আর Education is a creative process. The personality of the individual is being ‘educated’ throughout life, is being formed, grows richer in content, stronger and more perfect.

(শিক্ষা হলো; জ্ঞান, তথ্য উপাত্ত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠার সারা জীবনকালব্যাপী দীর্ঘ প্রক্রিয়া।) ঠিক এ কারণেই একজন মুসলমানের জন্য দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা ফরজ। পুৃরো জীবনই শিক্ষাকাল। বিশ্বের সবকিছুতেই শিক্ষার উপকরণ বিদ্যমান। 

ইসলামে জ্ঞানের উৎস তিনটা; এক- অহি ও ইলহাম (কুরআন, হাদিস সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস),  দুই- ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা, এবং তিন- প্রকৃতি।

১. অহি ও ইলহাম (কুরআন, হাদিস সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস)- মানুষের কাছে জ্ঞান পৌছেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী রাসুলদের কাছে আগত অহির মাধ্যমে, সে জ্ঞানকে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে নবী-রাসুলগণ। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা: কর্তৃক উপস্থাপিত জ্ঞানই চুড়ান্ত। 

সাধারণ মানুষ অহি নয়, ইলহাম পেয়ে থাকে। সেটা যথার্থ কিনা, তা যাচাই করতে হয় অহির জ্ঞানের মাধ্যমে। তদুপরি রয়েছে প্রিয় রাসুল সা: এঁর অনুসারীগণের ঐক্যমত স্বিদ্ধান্ত। ইসলামই সকল জ্ঞানের উৎস ও সত্যায়নকারী (আল কুরআন ৩৪:৩, ১০:১, ৪: ৮২)।

(২) ইতিহাস জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস। সত্য ইতিহাসের জ্ঞান ছাড়া কেউ জ্ঞানী হতে পারে না। কুরআনেও আল্লাাহপাক ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন। ইতিহাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
খৃষ্টপূর্ব ২৩০০ বসর আগেকার আদ জাতির ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে (৮৯: ৬-৭), কুরআন ইরাম ও আদ জাতির ইতিহাস বর্ণনা করেছে। ১৯৭৫ সালের আগে তার কোন বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক রেকর্ডই ছিল না।  

ফেরাউনের মৃতদেহ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে কুরআনে (১০:৯২)। মুসলমানরা কোনরকম প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করেছে। কেউ চোখেও দেখেনি, বিশ্বের সামনে দেখানোর মতো কিছুই ছিল না। পরিশেষে সেই মৃতদেহ ১৮৯৮ সালে লোহিতসাগর থেকে উদ্ধার হয়েছে, ৩০০০ বসর আগেকার সে লাশ ১৯৭৬ খৃষ্টাব্দে মরিস বুকাইলি তার গবেষণায় প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। এরকম বহু ঘটনা কুরআনের বিবৃত হয়েছে।

ইতিহাস জানতে ঐতিহাসিক গ্রন্থসমূহ পড়া ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ হলো ভ্রমণ। আল কুরআনই সেটা বলছে (৩০ : ৯)। ভ্রমণের হুকুম দেয়া হয়েছে (আলে ইমরান : ১৩৬)
ভ্রমণে অভিজ্ঞতা বাড়ে, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন; অভিজ্ঞতা ছাড়া কেউ প্রকৃত জ্ঞানী হয় না। ভ্রমণ ও অভিজ্ঞতার ফল দেখতে হলে ইবনে খালদুনের জীবনকে দেখতে হবে। 

ইবনে খালদুন দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শতাব্দিকাল পদব্রজে ৭৫০০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এক দেশ থেকে ভিন্ন এক দেশে ঘুরে মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, সমাজ থেকে সমাজের ভিন্নতা, তাদের মধ্যে পার্থক্য, বৈপারিতকে ভেতর থেকে জানতে ও নিজ চোখে দেখতে। 
পৃথিবীর কোন ইউনিভার্সিটি থেকেই তিনি কোন ডিগ্রি নেন নি। অথচ সমাজ ও সভ্যতা, রাজনীতি নিয়ে তার লেখাগুলো আজ বিশ্বের প্রতিটি ইউনিভার্সিটিই পড়াচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানে কোন পাঠ’ই পূর্ণাঙ্গ হয় না ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমা ছাড়া!

৩. প্রকৃতি বা নেচার (অভিজ্ঞতা)- প্রকৃতি আমাদের জন্য এক বড়ো শিক্ষালয়। শিক্ষার উৎস ও সুত্র দুটোই। বিষয়টা বারবার কুরআনের পাতায় বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিতে এব সে জন্য চোখ কান এবং বিবেক ও অনুভুতিকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। (সুরা নাহল : ৭৮)।’

এবার ভাবতে বসুন, ভাবুন। দৃষ্টি দিন পাহাড়ের দিকে, দেখুন তাকে কিভাবে গাঁথা হয়েছে মাটির সাথে। আকাশের দিকে নজর দিন, উড়ন্ত পাখি, জ্বলজ্বলে সূর্য দেখুন, পূর্ণিমা চাঁদ দেখুন, দিনের বা রাতের আকাশ দেখুন। ভেঁসে চলা মেঘ দেখুন। বৃষ্টির ধারা দেখুন। বাস্প বরফ দেখুন, সবুজের দিকে তাকান, বন জঙ্গলের দিকে, পাখপাখালি দিকে তাকান। নদীর দিকে , সমুদ্রের দিকে তাকান। এসবের পরতে পরতে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য জ্ঞান।স্মরণ করুন কুরআনের আয়াত; আফালা তাদাব্বারুণ? আফালা তাফাক্কারুন? আফালা তুবসিরুন?  শুধু নিতে জানলেই হলো।

জ্ঞানের উৎস চেনা থাকলে জ্ঞান খুঁজে পেতে সুবিধা হবে তাই চোখদু’টো খুলে রাখুন। নীরবে চারিদিকে দেখুন , ভাবুন আর সকল জ্ঞানের মালিক আলিমুল খাবিরের কাছে জ্ঞান কামনা করুন, অন্তরের আঁধার দূর হবে, মনের চোখেও খুলবেই ইনশাআল্লাহ। (সমাপ্ত, শিঘ্রই গ্রন্থাকারে প্রকাশ হবে ইনশাআল্লাহ)
---------------------------------- 
লেখকঃ  ইসলামি  চিন্তাবিদ  গ্রন্থপ্রনেতা  গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments