Recent Tube

ইসরা ও মিরাজের শিক্ষা এবং তাৎপর্য: আজকের প্রেক্ষিত। ড. বি এম মফিজুর রহমান।



ইসরা ও মিরাজের শিক্ষা এবং তাৎপর্য: 

আজকের প্রেক্ষিত। 
২য় পর্ব
 ড. বি এম মফিজুর রহমান। 

১ম পর্বের পর

আট. 

জিহাদের  প্রেরণায়  উজ্জীবিতকরণ:
জিহাদ বাতিলের চোখের কাঁটা, পথের বাঁধা, প্রাণের শত্রু ও মহা আতঙ্ক। কারণ, জিহাদের নির্ভীক চেতনাই মুমিনকে বাতিলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়তে উজ্জীবিত রাখে। এজন্য দুনিয়ার তাগুত বাতিল শক্তি জিহাদী চেতনার বিরুদ্ধে সর্বদাই একযোগে অপ্রপ্রচারে লিপ্ত। মিরাজের একটি অন্তর্নিহিত শিক্ষা হল মুমিনকে জেহাদী চেতনায় উজ্জীবিত রাখা। রাসূল (স.) সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে বাইতুল মামুর দেখলেন। এটি হচ্ছে আসমান জগতের কাবা। ফেরেশতারা যার হজ্জ করে।
((رأى النبي عليه الصلاة والسلام جند الله عز وجل من الملائكة يدخلون البيت المعمور في كل يوم سبعون ألف ملك لا يعودون إليه إلى يوم القيامة)) رواه احمد
রাসূল দেখলেন প্রতিদিন সেখানে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করছে। তারপর চলে যাচ্ছে। কিয়ামত পর্যন্ত আর ফিরে আসবে না। তাহলে আসমান-যমীনে আল্লাহর সৈন্যবাহিনী ফেরেশতাদের সংখ্যা যে কত তা কেবল তিনিই জানেন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে এই অগণিত সৈন্য দিয়ে ‘কুন’ (হয়ে যাও) প্রক্রিয়ায় যমীনে তাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে পারতেন। আমাদের উপর জিহাদ ফরজ করতেন না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার সাহায্য ঐ সব অলস, দায়ীত্বজ্ঞানহীনদের উপর পাঠান না, যারা আল্লাহর জন্য নিজের জান-মাল কুরবানী করতে অনাগ্রহ প্রদর্শন করে। রাসূলের (স.) সাহাবীরা এ সত্য কিভাবে অনুভব করেছিলেন, তার একটি নমুনা দেখুন।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন জাহশ (রা.) উহুদ যুদ্ধের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছেন:
((اللهم إنك تعلم أنه حضر ما أرى (أي من التقاء الجيشين) فأسألك ربي أن تبعث إلي رجلا كافرا صنديدا قويا يقتلني ويجدع أنفي وأذني ويضعها في خيط (زيادة في النكال والتمثيل) ثم آتيك ربي بدمي فتقول: فيما ذاك يا عبد الله؟ فأقول: فيك يا رب، فيك يا رب قد تمزق جسدي وسال دمي))
হে আল্লাহ! তুমিতো জান (যুদ্ধের ময়দানে) কি অবস্থানে আমরা আছি। তোমার দরবারে আমার ফরিয়াদ, হে রব! আমার কাছে এমন একজন শক্তিশালী কাফিরকে পাঠিয়ে দাও, যে আমাকে হত্যা করবে। আমার নাক-কান কেটে ফেলবে। তারপর তা সুতায় বেঁধে রাখবে। অর্থাৎ আমার মৃত দেহকে সম্পূর্ণ বিকৃত করে দেবে। যাতে আমি কিয়ামত দিবসে তোমার কাছে রক্তমাখা দেহ নিয়ে আসতে পারি। তুমি আমাকে বলবে, হে আব্দুল্লাহ! তোমার এ অবস্থা কেন? আমি বলব, হে আমার রব! আমার এ অবস্থা শুধু তোমারই জন্য। হে আমার রব! তোমার জন্যই আমার দেহ ক্ষত-বিক্ষত, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়েছে, তোমার জন্যই আমার রক্তধারা প্রবাহিত হয়েছে”। এই ছিল আল্লাহর পথে জিহাদ করে সাহাবীদের শহীদ হওয়ার অকৃত্রিম তামান্না।
এজন্য রাসূল (স.) বলেছেন,
((من سأل الله الشهادة بصدق بلغه الله منازل الشهداء وإن مات على فراشه))
“যে আল্লাহর কাছে নিষ্ঠার সাথে শাহাদাতের প্রার্থনা করেন, আল্লাহ তাকে শহীদদের আসনমূহে পৌঁছিয়ে দেন, যদিও সে মারা যায় বিছানায় বসে”।

নয়. 

আল্লাহর দাসত্ব মানবতার শ্রেষ্ঠ সম্মান:
ইসরা ও মিরাজের  আরেকটি  মহাশিক্ষা  হচ্ছে,
أن العبوديةَ له هي أسمى المراتب التي يصل إليها الإنسان، فالعبودية لله عزة ما بعدها عزة ، كفى بالمرء عزا أن يكون عبدا لله، كفى بالمرء فخرا أن الله له ربا.
আল্লাহর দাসত্ব মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান। মর্যাদার সর্বোচ্চ সোপান বা শীর্ষচূড়া। এর উপর কোন মর্যাদা নেই। এর চেয়ে সম্মানের আর কি থাকতে পারে একজন মানুষের জন্য যে, সে একমাত্র আল্লাহর বান্দা! তদ্রƒপ একজন মানুষের গর্ব ও গৌরবের জন্য কি এতটুকুই যথেষ্ট নয় যে, আল্লাহর তার রব? আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তার সর্বাধিক প্রিয় বান্দাদের পরিচয় দিতে গিয়ে ইরশাদ করছেন,
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الأَرْضِ هَوْنًا
“আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে” (আল-ফুরকান:৬৩)।
নবী-রাসূলদের আল্লাহ ‘আবদ’ বলে পরিচয় দিয়েছেন । যেমন, নুহ (আ.) সম্পর্কে বলছেন, إِنَّهُ كَانَ عَبْدًا شَكُورًا “নিশ্চয় সে ছিল কৃতজ্ঞ বান্দা” (বনী ইসরাঈল:৩)।
হাদীসে রয়েছে,
“إن الرسول قد خير بين أن يكون نبيَّا ملكًا أو عبدًا رسولاً فاختار أن يكون عبدًا رسولاً.
রাসূলকে ‘বাদশাহ নবী ও বান্দা নবী’ এ দুটোর যে কোন একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। তিনি আল্লাহর বান্দা নবী হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন”। অতিরিক্ত ইবাদাতের কারণে তার পদযুগল ফুলে উঠেছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার জীবনের পূর্বাপর গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে, তবুও এত ইবাদাত করেন? তিনি জবাব দিয়েছিলেন,
أفلا أكون عبدًا شكورًا”
“আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞপরায়ণ বান্দা হব না?” অন্য হাদীসে রাসূল (স.) নিজেকে আল্লাহর বান্দা হিসেবেই নিজেকে সর্বোচ্চ সম্মানিত ও গৌরবান্বিত বোধ করে ঘোষণা দিয়েছেন,
“لا تطروني كما أطرت النصارى المسيح ابن مريم، ولكن قولوا عبد الله ورسوله”.
“তোমরা আমার প্রশংসায় সীমা লংঘন করো না। যেমনটি করেছিল মারইয়াম তনয় ঈসা (আ.) এর ব্যাপারে খ্রীষ্টানরা। বরং বল, আল্লাহর বান্দা ও রাসূল”।
যারা আল্লাহর যথার্থ ইবাদাত করবে, তাদের হাতেই আল্লাহ তুলে দিবেন পৃথিবীর নেতৃত্ব ও শাসন ক্ষমতা। ঈমানদের প্রতি এটি আল্লাহর অকাট্য প্রতিশ্রুতি।
এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمْ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না” (নূর: ৫৫)।
ইবাদাতের এই সুউচ্চ মর্যাদা শিক্ষা দেয়ার জন্যেই কুরআনে ইসরার প্রসঙ্গে রাসূলকে ‘আবদ’ বা বান্দা হিসেবে ভূষিত করা হয়েছে। মুহাম্মাদ, রাসূল, হাবীব, খলীল বা অন্যকোন শব্দ ব্যবহার করা হয়নি।
ইরশাদ করছেন আল্লাহ:
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى
“পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত” (বনী ইসরাঈল:১)।

দশ.  

বাইতুল  মাকদাসে  রাসূলের  ইমামতির   তাৎপর্য ও শিক্ষা:
বাইতুল মুকাদ্দাসে রাসূলের ইমামতিতে নবী-রাসূলদের দু’রাকাত নামায আদায়ের মধ্যে রয়েছে গভীর তাৎপর্য ও একাধিক শিক্ষা। যেমন:
ক. সমস্ত নবী-রাসূল তথা গোটা বিশ্ব সৃষ্টির মধ্যে মুহাম্মাদ (স.) এর সম্মান ও মর্যাদা সর্বোচ্চ তা প্রমাণ করা।
খ. মুহাম্মাদ (স.) এর রিসালাতের বিশ্বজনীনতা ও সর্বজনীনতা প্রমাণ করা।
গ. সব নবী-রাসূল কর্তৃক আনীত আসমানী দ্বীনের মৌলিকত্ব আসলে এক ও অভিন্ন, তা বোঝানো।
এ ব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
“আর তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদাত কর” (আম্বিয়া:২৫)।
ঘ. রিসালাতের দরজা মুহাম্মাদ (স.) এর মাধ্যমে চিরতরে বন্ধ ঘোষণা করে পূর্বের সমস্ত শরীয়ত রহিত করা।
ঙ. রাসূলকে স্বান্তুনা দেয়া। দুনিয়ার মানুষ ঈমান না আসলে কি হবে? সমস্ত নবী ও রাসূল তাঁর উপর ঈমান এনেছে।
চ. ইসলাম বিশ্বময় প্রসারিত হবে, সে সত্যকে নির্দেশ করা।
ছ. উম্মতে মুহাম্মাদিয়াকে উচ্চ সম্মান প্রদান এবং এ কথা বোঝানো, এখন থেকে নেতৃত্বের পালাবদল হয়ে গেছে। ইয়াহুদী, খ্রীষ্টানদের হাত থেকে এবার নেতৃত্ব হস্তান্তরিত হলো মুহাম্মাদ (স.) ও তাঁর উম্মতের হাতে। শত শত বছর সত্যি সত্যি মুসলিম উম্মাহ জগতবাসীকে সুখ-সমৃদ্ধি, সাফল্যের পথে নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু ইসলামের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে আজকে তারা নেতৃত্ব হারিয়েছে। তাতে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিশ্বও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মানুষ হারিয়েছে নিরাপত্তা, অধিকার ও বেঁচে থাকার সঠিক অর্থ ও অবলম্বন।
এ জন্যই আল্লাহ মুসলিমদেরকে লক্ষ্য করে বলছেন,
وَلاَ تَهِنُوا وَلاَ تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
“আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, আর তোমরাই বিজয়ী যদি মুমিন হয়ে থাক” (আল-ইমরান:১৩৯)। 

রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, 
الإسلام يعلو ، ولا يعلى عليه 
“ইসলাম সর্বদাই উচ্চ আসনে অধিষ্ঠীত। এর উপরে কিছু হতে পারে না”।
জ. বাইতুল মাকদাসের প্রতি মুসলিমদের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য।

এগারো  

ইসলাম  স্বভাবজাত  ধর্ম:
মিরাজের পবিত্র রজনীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, রাসূল (স.) কে দুধ ও মদের পাত্র পান করতে দেয়া হলে তিনি দুধের পাত্র গ্রহণ করেন, প্রত্যাখ্যান করেন মদের পাত্র।
এ প্রসঙ্গে হযরত জিব্রাইল (আ.) বলেন,
هُدِيتَ الْفِطْرَةَ، أَوْ أَصَبْتَ الْفِطْرَةَ، أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَخَذْتَ الْخَمْرَ غَوَتْ أُمَّتُكَ
“আপনি ফিতরাতের (প্রকৃত মানবীয় স্বভাবের) পথ অবলম্বন করেছেন। কিংবা ফিতরাতকেই পেয়েছেন। পক্ষান্তরে, আপনি যদি মদ গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রান্ত হয়ে যেত”।
ইমাম কুরতুবী বলেন,
يحتمل أن يكون سبب تسمية اللبن فطرة؛ لأنه أول شيء يدخل بطن المولود ويشق أمعاءه
দুধকে ফিতরাত বলার একটি সম্ভাব্য কারণ হল, এই দুধই সর্বপ্রথম মানব সন্তানের পেটে প্রবেশ করে এবং তার নাড়িভুড়ি ভেদ করে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, هِيَ الْفِطْرَةُ الَّتِي أَنْتَ عَلَيْهَا وَأُمَّتُكَ “এটিই হলো সেই ফিতরাত, যার উপর আপনি এবং আপনার উম্মত প্রতিষ্ঠিত”।
মানবীয় স্বভাবের সুস্থতা বিধান করা ও এর বিকৃত রোধ করাই ইসলামের সারকথা। কেননা, স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা ও কুপ্রবৃত্তির প্রভাবমুক্ত মানবীয় স্বভাবের দাবী-দাওয়ার সাথে ইসলামী আকীদাহ, শরীয়ত,আহকাম (বিধি-বিধান) সমূহ সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যময়। এ জন্যই ইসলামকে স্বভাবজাত ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করে ইরশাদ করছেন,
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ
“অতএব তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না” (রূম:৩০)।

অতএব, যারা ইসলাম নিয়ে আজ ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করে, ইসলামের নবীকে নিকৃষ্টতম ভাষায় গালি দেয়, হেয় প্রতিপন্ন করার চক্রান্ত করে, কিংবা ইসলামকে প্রগতি, মুক্তচিন্তা ও মেধা-মনন বিকাশের অন্তরায় মনে করে, তারা স্বভাববিরোধী বিষাক্ত মতাদর্শে আক্রান্ত। তারাই মূলত প্রগতিবিরোধী, মানবতার প্রকৃত শত্রু। মানুষের মৌল স্বভাবের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে যতই তারা স্বাধীনতা, মুক্তি আর উন্নয়নের শ্লোগান উচ্চারণ করুক না কেন, আসলে সবই অন্তঃসারশূন্য প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। তাদের হাতে মানবতা নিরাপদ নয়। যেন ক্ষুধার্ত খাচামুক্ত হিংস্র সিংহের সামনে অসহায় জনপদ।

বারো  

রাত্রীকালীন ইবাদাতকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান:
আল্লাহর কাছে দিবসের তুলনায় রাত অধিক প্রিয়। রাত্রের এ মূল্য ও মর্যাদার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তিনি তাঁর নবীকে রাত্রিকালীন পরিভ্রমণ করিয়েছেন। যেমনিভাবে আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে রাতের নামে কসমও খেয়েছেন। এ কথা সত্যি যে, আল্লাহ তা‘আলা কোন গুরত্বহীন বস্তুর নামে কসম করেন না। যে জাতি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে, মুহাম্মাদ (স.) কে নবী ও রাসূল হিসেবে, কুরআনকে জীবন বিধান, রাষ্ট্র বিধান, সংবিধান ও সত্যপথের দিশা হিসেবে পেয়ে আনন্দিত হয়েছে, সে জাতির উচিত এমন বস্তুর গুরুত্ব ও সম্মান অনুধাবন করা যে বস্তুকে স্বয়ং আল্লাহ সম্মানিত করেছেন। রাতের বরকত কুড়িয়ে নেয়া এ পর্যায়েরই একটি দৃষ্টান্ত। এ জন্যই রাসূল একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত ইশার পরে জেগে থাকা পছন্দ করতেন না। যেন শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও ইবাদাত করা সহজ হয়। সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) জীবনধারা ছিল, 
فرسانًا بالنهار رهبانًا بالليل إذا جنَّ الليل سمعت لهم دويًّا كدوي النحل 
দিবসে যোদ্ধা, রাত্রে ইবাদাতমগ্ন। রাত যত গভীর হত, মৌমাছির গুঞ্জরনের মত তাদের কান্নার রোল শোনা যেত।
জান্নাতীদের পরিচয় প্রসঙ্গে কুরআন বলছে,
كَانُوا قَلِيلاً مِنْ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ . وَبِالأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
“রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাতো। আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত”। 
সূরা আয-যারিয়াত:১৭,১৮
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنْ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে” 
সূরা সিজদাহঃ ১৬

রাতের নির্জনতায় মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের তাঁর নৈকট্যপানে আহবান করেন। অপরাধ মার্জনা, রিযিক অন্বেষা যার যা প্রয়োজন তা চেয়ে নিতে ডাকতে থাকেন। রাতের ইবাদাত মুমিন জীবনের এক অনন্য শক্তির ফল্গুধারা। আধ্যাত্মিক সংশুদ্ধি লাভের মাধ্যমে খাঁটি মানুষ হওয়ার এক অনুপম ব্যবস্থা। প্রভুর সাথে গোপন অভিসারে হারিয়ে যাওয়ার মোক্ষম সময়। মুসলিম উম্মাহর অনেকেই আজ এ সত্য ভুলে যেতে বসেছে। কিন্তু ইসলামের শত্রুরা ভোলেনি। তারা এমন সব আয়োজন করছে আমাদের জন্য যাতে রাত থাকে আমাদের পাপাচারে জাগ্রত আর দিন হয় অলস নিদ্রার কারাগার। এভাবে যুব শক্তি, সমাজ ও পরিবার তলিয়ে যাচ্ছে অনৈতিকতা ও অবক্ষয়ের অতল তলে। বঞ্চিত হচ্ছে জাতি রাত ও প্রভাতের বরকত থেকে। রাসূল (স.) বলেন, 
بارك الله في بكور أمتي 
“আল্লাহ আমার উম্মতের প্রভাতে বরকত দান করেছেন”।

তেরো  

মসজিদের গুরুত্ব ও মর্যাদার উপলদ্ধি:
মসজিদ থেকে মসজিদ। মসজিদ থেকে শুরু আবার মসজিদে এসেই শেষ। এভাবে ইসরার শুরু-সমাপ্তির সাথে মসজিদের সম্পৃক্ততা ইসলামী সমাজে সমজিদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নির্দেশ করে। মসজিদ শুধু নামাযের জায়গা নয়; এটি পার্থিব ও পারলৌকিক জ্ঞান বিকীরণের সর্বোত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। মুসলিমদের বিশ্ব জয়ের সূচনাকেন্দ্র। যেথায় ভাষা, বর্ণ ও বিচিত্র বৈষম্য একাকার হয়ে যায়। গড়ে ওঠে পারস্পরিক দায়বদ্ধতা, সম্প্রীতি ও বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গিপ্রসূত এক অনুপম মানব সমাজ। এ জন্যই মহানবী হিজরতের অব্যবহিত পরে মদীনায় সর্বপ্রথম যে কাজটি করেছিলেন, তাহলো একটি মসজিদ নির্মান করা। যেখানে এসে পারস্যের সালমান, হাবশার বেলাল, মক্কার আবু বকর, ওমর আর মদীনার আনসারগণ একীভূত হয়েছিলেন। যাদের পদতলে পৃথিবীর নেতৃত্ব এসে ঊর্মীভঙ্গের মত আচড়ে পড়েছিল। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মসজিদের সেই ভূমিকা পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়া ক্রমান্বয়ে তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে, ঘুনে ধরা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, গণহত্যা, খুন-গুম, নাস্তিক্যবাদ ও স্বৈরাচারের সর্বগ্রাসী থাবা আতংকে দিশেহারা আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভুমি সোনার বাংলাদেশে। তাহলে আবার এই পবিত্র শিক্ষাঙ্গন থেকে তৈরি হবে সাহাবীদের মত সাহসী, নেতৃত্বের গুণাবলীসমৃদ্ধ সুশিক্ষিত প্রজন্ম । যারা দিকে দিকে ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দেবে ইসলামের সুবিমল জ্যোতি। যাদের উপর প্রযোজ্য হবে আল্লাহর এ বাণী:
فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ . رِجَالٌ لا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالأَبْصَارُ.
“সেসব ঘরে যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিক্র করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করেÑসেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর যিক্র, সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে” (নূর:৩৬,৩৭)।
হাদীসে  কুদসীতে  আল্লাহ তা‘আলা  বলছেন,
“بيوتي في الأرض المساجد، وزوارها عُمَّارها، فطوبى لعبدٍ تطَّهر في بيته ثم زارني في بيتي فكان حق على المزور أن يُكرم زائره”.
“পৃথিবীতে আমার ঘর হল মসজিদ। এর জিয়ারাতকারীরাই হচ্ছে এর আবাদকারী। সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য যে ঘরে বসে পবিত্রতা অর্জন করে। অতঃপর আমার ঘরে এসে আমাকে জিয়ারত করে। কারণ অতিথিকে সম্মানিত করাতো ঘরের মালিকের দায়িত্ব”।

চৌদ্দ  

 সর্বাবস্থায়  আল্লারহ  স্মরণ / যিকর  করার  শিক্ষা:
কুরআনে ইসরার বিবরণ শুরু হয়েছে ‘সুবহানাল্লাহ’ শব্দ দিয়ে। যা আল্লাহর যিকর ও মাহাত্ম্য প্রকাশের অন্যতম উপাদান। এতে একদিকে যেমন ইসরা নামক মোজেযার প্রকৃত সংঘটক মহান স্রষ্টার পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠতার তাৎপর্য নিহিত, তেমনি রয়েছে মানুষকে আল্লাহর তাসবীহ, তাহমীদ ও তাযীম ঘোষণার শিক্ষা। যেন মানুষ সার্বক্ষণিকভাবে প্রভু মহিয়ানের স্মরণ সংস্পর্শে প্রশান্তময় জীবন ধারনের পথ খুঁজে পায়। সৃষ্টির সেরা হয়ে মানুষ কি স্রষ্টাকে ভুলে থাকতে পারে? অথচ এ পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টি তাঁরই যিকর করে।
কুরআনে বলা হয়েছে,
(وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ)
“এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রসংশায় তাসবীহ পাঠ করে না” 
সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৪৪
সব ইবাদাতের একটা নির্দিষ্ট সময় ও সীমারেখা আছে। কিন্তু যিকরের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা।
এ জন্য ইরশাদ হয়েছে,
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
“যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’ (আল্-ইমরান:১৯১)।
এক ব্যক্তি রাসূল (স.) এর কাছে সহজে পালনীয় একটি ব্যাপক শিক্ষার আবেদন করলে তিনি বলেন,
“ولا يزال لسانك رطب بذكر الله”.
তোমার জিহ্বাকে সর্বদা আল্লাহর যিকর দ্বারা সতেজ রাখ”।
নিচের হাদীসটিও এ ক্ষেত্রে বিস্ময়কর তাৎপর্য বহন করে। রাসূল (স.) বলেন,
لَقِيتُ إبْرَاهيمَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي فقالَ يا مُحَمدُ: أَقْرِئ أُمّتَكَ مِنّي السّلاَمَ وَأخْبِرْهُمْ أَنّ الْجَنّةَ طَيّبَةُ التّرْبَةِ عَذْبَةُ المَاءِ، وَأنّهَا قِيعَانٌ، وَأَنّ غِرَاسَهَا سُبْحَانَ الله والْحَمْدُ لله وَلاَ إلهَ إلاّ الله وَالله أكْبَرُ
ইসরা রজনীতে ইব্রাহীম (আ.) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন, “হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মতকে আমার সালাম দিবেন। আর তাদেরকে বলবেন, জান্নাত ঊর্বর ভূমি ও সুমিষ্ট পানিময়। কিন্তু তা উদ্ভিদশূন্য। এর বৃক্ষরাজি হচ্ছে, এই যিকর: সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আল্লাহু আকবার”। এজন্যই রাসূল (স.) আমাদের জন্য সব কাজ ও স্থানের জন্য বিশেষ বিশেষ দু‘আ ও যিকরের ব্যবস্থা করেছেন। যেমন, বাহনে আরোহণের দু‘আ, ঘরে প্রবেশ ও ঘর থেকে বের হওয়ার দু‘আ ইত্যাদি। আমাদের উচিত এ সব দু‘আ ব্যবহার করা এবং সন্তানদেরকে এতে অভ্যস্ত করা। সব কাজে আল্লাহর স্মরণ অন্যায়-অনাচার থেকে বেঁচে থাকার এক মহারক্ষাকবচ। আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার কারণেই আজ আমাদের ঘরে-বাইরে সর্বত্র নগ্নতা, বেহায়াপনা ও পাপাচার শুধু বেড়েই যায়নি; বরং সমাজের নেতৃত্বের আসনে বসে আজে এসব পাপীষ্ঠ-খোদাদ্রোহী ও নগ্নবাদীরা। পরিণামে আমাদের যুব প্রজন্ম দ্রুত নৈতিক পদস্খলনের দিকে ছুটে চলছে।
পনেরো. সামাজিক অপরাধসমূহের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সতর্কিকরণ:
রাসূল (স.) কে এ ইসরা ও মিরাজের ঐতিহাসিক সফরে মারাত্মক সামাজিক অপরাধসমূহের ভয়াবহ পরিণাম ও শাস্তি প্রত্যক্ষ করানো হয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে, উম্মতকে এ ব্যাপারে সকর্ত করা। এ সব দৃশ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দৃশ্য এখানে তুলে ধরা হলো:

ক. ব্যভিচারের শাস্তি :
রাসূল (স.) ব্যভিচারী নারী-পুরুষের শাস্তি দেখেছেন। সহীহ বুখারীতে সামুরা বিন জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স.) এর দীর্ঘ হাসীসে কবরে ব্যভিচারীর ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেন,
فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللَّهَبُ ضَوْضَوْا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَؤُلَاءِ قَالَ قَالَا لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ ) الحديث ، وفي آخره : ( وَأَمَّا الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ الْعُرَاةُ الَّذِينَ فِي مِثْلِ بِنَاءِ التَّنُّورِ فَإِنَّهُمْ الزُّنَاةُ وَالزَّوَانِي ).
“অতঃপর আমরা একটি তন্দুর চুলার নিকট আসলাম। যার উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশ ছিল প্রশস্ত। তার ভিতরে আমরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দেখতে পেলাম তাতে রয়েছে কতগুলো উলঙ্গ নারী-পুরুষ। তাদের নিচের দিকে থেকে আগুনের শিখা প্রজ্বলিত করা হচ্ছে। অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হওয়ার সাথে সাথে তারা উচ্চঃস্বরে চিৎকার করছে। রাসুর (স.) এর কারণ জানতে চাইলে ফেরেশাদ্বয় বললেন, এরা হলো আপনার উম্মতের ব্যভিচারী নারী-পুরষ।
ব্যভিচারীর শাস্তির অন্য একটি চিত্র:
رأى الرسول صلى الله عليه وسلم قوم بين أيديهم لحم نضيج في قدر، ولحم آخر نىء قذر خبيث، فجعلوا يأكلون من اللحم النيئ الخبيث ويدعون النضيج الطيب. قال جبريل: هذا الرجل من أمتك تكون عنده المرأة الحلال الطيبة، فياتى امرأة خبيثة فيبيت عندها حتى يصبح، والمرأة تقوم من عند زوجها حلالا طيبا، فتأتى رجلا خبيثا فتبيت معه حتى تصبح ”
“নবী (স) মিরাজের রাত্রিতে একদল লোকের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তাদের সামনে একটি পাত্রে গোশত রান্না করে রাখা হয়েছে। অদূরেই অন্য একটি পাত্রে রয়েছে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত কাঁচা গোশত। লোকেরা এসে রান্না করা পবিত্র গোশত বাদ দিয়ে দুর্গন্ধময়, কাঁচা গোশত খেতে লাগল। (অর্থাৎ তাদেরকে তা খেতে বাধ্য করা হচ্ছে)। জিব্রাইল (আ.) বললেন, এরা আপনার উম্মতের ঐ সব পুরুষ লোক যারা নিজেদের ঘরে পবিত্র হালাল স্ত্রী থাকা সত্বেও অপবিত্র খারাপ মহিলাদের সাথে রাত্রি যাপন করত। এবং ঐ সব নারী যাদের পবিত্র হালাল স্বামী থাকা সত্বেও অপবিত্র খারাপ পরপুরুষের সাথে রাত্রি যাপন করে”।

খ. যাকাত অস্বীকারকারীদের শাস্তি:
لقد أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم على قوم، على أقبالهم رقاع وعلى أدبارهم رقاع، يسرحون كما تسرح الإبل والنعم، ويأكلون الضريع والزقوم، ورضف جهنم وحجارتها. سأل الرسول صلى الله عليه وسلم سيدنا جبريل ما هؤلاء؟ فقال جبريل عليه السلام : هؤلاء الذين لا يؤدون زكاة اموالهم.
রাসূল (স.) এমন কিছু লোকের কাছে আসলেন, যাদের লজ্জাস্থান ও পশ্চাতদেশ সামান্য এক টুকরা চামড়া বা কাপড় দিয়ে ঢাকা। তারা উট বা ছাগলের মত ইতস্তত এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করছে। আর জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর ও বিষাক্ত যাক্কুম বৃক্ষ ও কাঁটাবিশিষ্ট গুল্ম থেকে ভক্ষণ করছে। রাসূল (স.) যখন তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন, জিব্রাইল জবাব দিলেন, এরা হচ্ছে ঐ সব লোক যারা যাকাত আদায় করত না”।
যাকাত ইসলামের বন্ধন সেতু। এ বন্ধন মানুষের সাথে আল্লাহর। নিয়ামতদাতার সাথে নিয়ামতপ্রাপ্তের কৃতজ্ঞতার বন্ধন। এ বন্ধন মানুষের সাথে মানুষের। ধনীর সাথে গরীবের ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতির বন্ধন। দ্বীন দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন, ধর্মনিরপেক্ষবাদের এ অসুস্থ চিন্তার সূত্রপাত ঘটেছিল যাকাতদানের অস্বীকৃতির মাধ্যমে। যারা বলেছিল, যাকাত হলো সম্পদ তথা পার্থিব বিষয়। এর সাথে আবার ধর্মের কি সম্পর্ক? যেমনটি আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা বলে, রাজনীতিতো পার্থিব বিষয়। এর সাথে আবার ধর্মের কি সম্পর্ক? এজন্যই হযরত আবু বকর যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

ইনশাআল্লাহ, চলব......
-----------------------------------------------------------------
লেখকঃ দাঈ, গবেষক, ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments