Recent Tube

কথোপকথন, সানাউল্লাহ মোহাম্মদ কাওসার।





 
সিভিল ড্রেস পড়ুয়া এক সেনা কর্মকর্তা জুমার সালাত শেষে টগবগে এক যুবককে বললেন-

 --- আজ প্রথম কোনো উগ্রপন্থি আহলে হাদিস দেখলাম নিতান্ত কোমল, ফ্লেক্সিবল, মোলায়েম।

যুবক: কি করে?

সেনা কর্মকর্তা: জ্বী, শুরু থেকে সালাতের শেষ পর্যন্ত আমি আপনার পাশেই ছিলাম।

যুবক: বেশ,  তো আপনার আমাকে আহলে হাদিস  ধারণা কেন হলো জানতে পারি?

সেনা কর্মকর্তা: আপনাকে দেখলাম বুকে হাত, রুকুর আগে হাত উঠাতে, সেজদার আগেও। আবার তাশাহুদে আঙ্গুল নাড়তে, ইত্যাদি দেখে।

যুবক: আপনি যা দেখেছেন তা ঠিক বটে, তবে আমি আহলে হাদিস নয়। একজন হানাফি। প্রকৃত হানাফি।
সেনা কর্মকর্তা: কিন্তু হানাফিরা তো.....

যুবক: থাক্ থাক্ বুঝতে পেরেছি, আপনি কি বলতে চাচ্ছেন সেটা। আসলে “মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তান আমাদের শোষণ করেছে, হয়রানি করেছে, একচেটিয়া ষড়যন্ত্র করেছে!”এই কথাগুলি স্রেফ ইন্ডিয়ার শেখানো বুলি ছিল এমনটা বললে যেমন অধিকাংশ লোকে বিশ্বাস করবেনা ঠিক তেমনিভাবে রাসুল সঃ এর সালাতের প্রকৃত রুপ-ই এরকম ছিল কথাটি আমাদের অধিকাংশ বিশ্বাস করেন না।
   কেননা, ঐ শেখানো বুলি যেমন আমাদের সর্বত্র প্রকাশ হয়েছে, কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে, ডকুমেন্টারি হয়েছে ঠিক তেমনিভাবে সালাত সহ আরো বহু ধর্মীয় বিষয় রয়েছে যেসব লক্ষ লক্ষ উপমহাদেশীয় আলেমরা মাদ্রাসায় শিখেছে, কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছে, ওয়াজে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
    “প্রসিদ্ধ মিথ্যা কথা অপ্রকাশিত সত্যের চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর!”
        ---তাওফিক আল হাকিম (আরবি নাট্যকার)।

সেনা কর্মকর্তা: মানে? 
যুবক: মানে খুব সোজা। পাকিস্তানের শোষনের কথাটি যেমন ইন্ডিয়ার শেখানো বুলি ছিল ঠিক সালাত সহ বিভিন্ন বিষয়ের বিকৃত মাসআলা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সুদূরপ্রসারী মিশন ছিল! 
   ইন্ডিয়ার কৌশলটি যেমন আজ সচেতন শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে সক্ষম হচ্ছে তেমনি ধর্মীয় বিকৃতিগুলিও সচেতন কতিপয় আলেম সমাজ বের করে আনতে সক্ষম হচ্ছেন।

  সেনা কর্মকর্তা: অহ হ, তাহলে এখন কি অন্যদের সালাত হবেনা?
  
  যুবক: বিলকুল হবে। ধরুন, আপনি আমার কাছ থেকে এক হাজার টাকা পাবেন। আমি আপনাকে এক হাজার টাকার দু'টো কাগজের নোট দিলাম। একটা চকচকে নতুন অন্যটি একটু ছেঁড়াফাড়া। হালকা ঘষামাজা হলেই ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তবে চলবে। একটু রিস্কি আর কি! এখন আশ্চর্য হয়ে দেখলাম আপনি দেখেশুনে ছেঁড়া টাকাটাই নিলেন।
       ব্যাপারটি ঠিক এরকমই। বুকে হাত বাঁধা বা রাফউল ইয়াদাইন এসবের হাদিসগুলি এতদিনের শুনে আসা হাদিসগুলি থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।  এখন আমাদের সামনে কতিপয় সংখ্যালঘু আলেম এসব জানানোর পরও ছেঁড়া নোট বাঁছাই করার মত করলে সেটা নিতান্ত আমাদের ব্যাপার। ঐ টাকাটা ছিঁড়েও যেতে পারে। নাভীর নিচে হাত বাঁধার হাদিসগুলিও এরকম দুর্বল। এতটাই দুর্বল যে কিছু কিছু গ্রহণযোগ্য ও নয়। সুতরাং চকচকে নোট থাকতে ছেঁড়াটা নেওয়ার কোন প্রশ্নই নেই। কেউ নিলে সেটা উনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। (সেটার দায়ভার উনি নিবেন বা বুঝবেন)!

সেনা কর্মকর্তা: আহলে হাদিসরাই তো এরকম সালাত আদায় করে।

যুবক: কোন দলের নাম আহলে হাদিস দেওয়া যেমন সমীচীন নয় তেমনি কেউ দিলে তাকে কাফির বা মুরতাদ বলাটাও উচিত নয়। মুসলমানদের একটাই দল। মহান আল্লাহর দল, রাসুল সঃ এর দল।

সেনা কর্মকর্তা: কি করেন ভাই আপনি?

যুবক: জ্বী, আমি একটা কলেজের ইসলামি শিক্ষা বিভাগের একজন মামুলি “প্রভাষক”! ইসলাম ধর্মের একজন ছাত্র।
সেনা কর্মকর্তা: জ্বী, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
  (লেখাটি  ৪ঃ১২ঃ২০২০ইং জুমার সালাতের পরে হওয়া কথোপকথন এর অংশবিশেষ!)
---------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক অনলাইন এক্টিভিস্ট শিক্ষক ও দাঈ।

Post a Comment

0 Comments