Recent Tube

খোলা চিঠি: হে যুবক-১৩ ; -- জিয়াউল হক।

  

                    খোলা চিঠি: হে যুবক
                                 পর্ব-১৩;


  কাংক্ষিত জ্ঞানের তিন বৈশিষ্ঠ :

  পৃথিবী বড়ো অদ্ভুত জায়গা, সে নানা বিষ্ময়কর প্রাণিকূল ধারণ করে রেখেছে। হাজার হাজার জানা অজানা প্রাণিকূলের মধ্যে সবচেয়ে বিষ্ময়কর এক প্রাণি, মানুষকেও, এই মানুষই তার বুকে সবচেয়ে বড়ো বুদ্ধিমান প্রাণি। একই সাথে দূর্বল এবং জাহেল, তথা, বোকা এবং অজ্ঞ প্রাণিও বটে। কুরআনই সে পরিচয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। (সুরা নিসা :২৮, সুরা আহযাব : ৭২)।
তার মানে, আল্লাহপাক কুরআনুল কারিমে মানুষকে দূর্বল, মূর্খ ও জাহেল হিসেবে অভিহিত করেছেন, সেই মনুষ্য প্রজাতিকে যাকে আবার তিনিই সবচেয়ে সম্মানজনক আসন দিয়েছেন নিজের প্রতিনিধি বানিয়ে, প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব অর্পণ করে।
অর্থাৎ মানুষের এই বিপরিতমূখী অবস্থান ও পরিণতি, তা বিশেষ ঘটনা ও পরিস্থিতি এবং কার্যকারণনির্ভর বিষয়। যে মানুষ কোন বিশেষ পরিস্থিতি ও পরিবেশে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও মর্যাদাবান, সেই একই মানুষই আবার পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও পরিবেশ এবং কার্যকারণে সবচেয়ে বড়ো মূর্খও হতে পারে। এর একমাত্র কারণ হলো, তার ভেতরে জ্ঞান আর অজ্ঞানতা, সম্পূর্ণ বিপরিতধর্মী দুই পরিস্থিতির উদ্ভব ও উপস্থিতি। এ দু’টি পরস্পর বিরোধি অবস্থান ও পরিস্থিতিরই ধারক মানুষ।
পৃথিবীতে বসবাস করার জন্য মানুষের মৌলিক শক্তি দুটো,; (এক) জ্ঞান ও (দুই) তার স্বাস্থ্য। জ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা। আর শরিরের ক্ষেত্রে সুস্থতা। এ নিবন্ধে আমরা শুধুমাত্র জ্ঞানের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করবো।
মানুষের মতো এমন স্বাধীন ও শক্তিশালী অবস্থানে পৃথিবীর আর কোন প্রাণি নেই। এর একমাত্র কারণ হলো, মানুষকে চিন্তা শক্তি ও কর্মপদ্ধতির ব্যাপারে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষমতা আর কোন প্রাণি (আমাদের চোখে অদৃশ্য জাতি জ্বীন ব্যতিত) বা প্রজাতিকে দেয়া হয়নি। এ এক অমূল্য এবং বিষ্ময়কর ক্ষমতা। অথচ এই স্বাধীনতাই তার জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও মূর্খতার কারণও হয়ে থাকে।
পৃথিবীতে শান্তি, সুখ, নিরাপত্তা ও সম্মান কিংবা তার বিপরিতে অশান্তি অস্থিরতা, দু:খ কষ্ট আর দূর্দশা কিংবা দুরাবস্থা বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যও সে এবং তার কর্মকান্ডই দায়ী। কুরআনুল কারিমই সে কথা আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ পাক। এই জন্যই বললাম; মানুষ সবচেয়ে বুদ্ধিমান আবার সেই সাথে সবচেয়ে নির্বোধ প্রাণিও বটে।
এরকম পরিস্থিতি তৈরি হওয়া বা তার উদ্ভব ঘটে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির কারণে। এ জন্যই আল্লাহ পাক পৃথিবীতে প্রথম মানুষ আদম আ:কে পাঠানোর আগে সকল প্রকার জ্ঞান দিয়েই পাঠিয়েছেন। মানুষকে যেহেতু চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতাও তিনি দিয়েছেন, যেহেতু মানুষ সময়ের পরিক্রমায় হয় ভুলে যায় বা ভূল পথে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে শয়তানের ঘোষিত শপথের কারণে, তারই প্ররোচনা ও ইন্ধনে, সেহেতু তাকে জ্ঞানের সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে আদম আ: এর পরেও সময় সময় আল্লাহপাক বিভিন্ন নবী রাসুল পাঠিয়েছেন, জ্ঞান দিয়ে বা জ্ঞানের নবায়ন করিয়ে, তথা, নতুন নতুন সংস্করণ’সহ।
এভাবেই জ্ঞানের আগমণ ও সঞ্চারণ মানবসমাজের মধ্যে। বিশ্বের বুকে বাঁচতে হলে আমাদের জ্ঞান দরকার। ধর্ম বর্ণ, স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জন্যই জ্ঞান দরকার।
মানুষকে তার অবস্থান ও দায়িত্ব থেকে পথভ্রষ্ট করার শপথ ইবলিশ নিয়েছে সৃষ্টির সূচনাতেই। (‘সে (শয়তান) বলল, আপনার ইজ্জতের কসম! আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করে দেব’ (ছোয়াদ: ৮২)। কোনরকম রাখঢাক না করেই তার সে শপথের কথা ঘোষণাও দিয়েছে খোদ আল্লাহর সামনেই। প্রশ্ন হলো, শয়তান মানুষকে কিভাবে বিভ্রান্ত করে?
মানুষকে বিভ্রান্ত করার পথে শয়তানের সবচেয়ে বড়ো অস্ত্র হলো; আল্লাহর দেয়া সত্য জ্ঞানকে দূষিত করা, তথা, জ্ঞানের দূষণ ঘটানো। মানুষকে ভুল জ্ঞান, অকার্যকর ও ক্ষতিকর জ্ঞান দিয়ে বিভ্রান্ত করা। সত্য ও সঠিক জ্ঞান থেকে বিরত রাখা বা ভুলিয়ে দেয়া।
এ জন্যই কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোন জ্ঞান উপস্থাপিত ও ঘোষিত হলেই সেটা জ্ঞান নয়, সেটাকে যাচাই বাছাই করে, তার কার্যকারিতা, সত্যতা এবং কল্যাণকামীতার বিচারে উৎরে গেলেই কেবল সেটা ‘জ্ঞান’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তার মানে হলো, বিশ্বের সকল জ্ঞানই আমার আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় নয় ও প্রত্যাশিত নয়। প্রত্যাশিত ও কাংক্ষিত জ্ঞানের তিনটি বৈশিষ্ঠ থাকতে হয়;
(এক) যথার্থতা- পৃথিবীর একমাত্র সত্য ও যথার্থ জ্ঞান হলো সেটা, যা আল্লাহ ও তার রাসুল সা. কর্তৃক উপস্থাপিত হয়েছে (সুরা বাকারা: ১৪৭)। এ জ্ঞান আমাদের প্রয়োজন।
এবং বিশ্বের কোন জ্ঞানী গুনী দ্বারা উদ্ভাবিত সেই জ্ঞানও, যা কুরআন ও হাদিসের সাথে সামঞ্জশ্যশীল এবং কোন মৌলিক নীতিমালার সাথেই সাংঘর্ষিক নয়। এ জ্ঞান মুসলিম বা অমুসলিম যে কোন সুত্র হতে আগত হতে পারে।
(দুই) কার্যকারিতা- আল্লাহ কুরআন ও তার প্রিয় রাসুল সা. এর মাধ্যমে যে জ্ঞান আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন, মানব সমাজর জন্য, যুগ কাল পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিচারে, তা’ই সকল সৃষ্টির জন্য সর্বাপেক্ষা কার্যকর। এর বাইরে গেলেই পদস্খলনের সুত্রপাত ( সুরা বাকারা : ১৪৫)। এ জ্ঞান বর্জনীয়, পরিত্যাজ্য।
(তিন) কল্যাণকামীতা- প্রিয় রাসুল সা: আমাদেরকে প্রাত্যহিক দোওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের কাছে ‘কল্যাণকর জ্ঞান’ বা ‘ইলমান নাফিয়ান’ চাইবার জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন। (আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া রিজকান তাইয়্যিবাহ ওয়া আমালান মুতাক্কাব্বালান।)
অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সেই জ্ঞান চাই যা আমার জন্য কল্যাণকর। সেই রিজিক চাই যা আমার জন্য পবিত্র এবং হালাল। আর এমন আমলের তাউফিক চাই যা আপনার কাছে কবূল হবে। (ইবনে মাজাহ, নাসায়ি)।
অতএব, জ্ঞানর্জানের ক্ষেত্রে মৌলিক এ দৃষ্টিভংগীটা আমাদের দৃষ্টিসীমায় রেখে স্বচ্ছ জ্ঞানটাই অর্জন করতে হবে। (সংক্ষেপকৃত)
-----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments