Recent Tube

খোলা চিঠি: হে যুবক-১৪; জিয়াউল হক।


 খোলা চিঠি:হে    
  যুবক-১৪;   

স্বশিক্ষাই হলো সুশিক্ষা;

আধুনিক বিশ্বে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ইউনিভার্সিটিতে   ডিগ্রি নিয়ে যারা বের হয়ে আসেন, তাদেরকে শিক্ষিত হিসেবে ধরা হলেও অধিকাংশদের কাছে কম্প্রিহেনসিভ  (Comprehensive) পরিপূর্ণ শিক্ষা যতোটা না থাকে, তার চেয়েও বেশি থাকে তথ্য ও দক্ষতা।
দক্ষতা ও শিক্ষা, দু’টোই আলাদা বিষয়। জীবন ও সমাজ পরিচালনার জন্য দু’টোই অতি প্রয়োজনীয় নি:সন্দেহে। তবে এ দু’য়ের মধ্যে শিক্ষার অর্থ, পরিধি ও বিস্তৃতি জ্ঞানের পরিসর অনেক অনেক বিশাল। জ্ঞানের সাথে অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ সংযুক্ত হলেই দক্ষতার জন্ম হয়। দক্ষতা হলো কোন বিশেষ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগের সফল ও কার্যকর কৌশল। দক্ষতা ও জ্ঞান অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হলেও এদের আলাদা দুটো পরিচয় রয়েছে।
একজন ছাত্র সমাজবিজ্ঞানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে সমাজবিজ্ঞানী হলেও কি সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে ইবনে খালদুনের সমকক্ষ হতে পারবেন? পৃথিবীর কেউ কি তাকে ইবনে খালদুনের সমকক্ষ সমাজবিজানী হিসেবে স্বিকার করবেন?
ইবনে খালদুন প্রায় অর্ধ শতাব্দিকাল এক জনপদ থেকে ভিন্ন জনপদ ঘুরে মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। তাদের জীবনাচার, সমাজ ও রাষ্ট্রের গঠন, উত্থান ও পতনের ধারবাহিকতা, রাষ্ট্র ও জনগণের পারস্পরিক সম্পর্কের ধরন, শাসকদের রুপ ও প্রকৃতি জানতে, নিজ চোখে দেখতে জীবজন্তুর পিঠে, পায়ে হেঁটে ৭৫০০০ মাইল পাড়ি দিয়েছেন। তার ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি ছিল না। অথচ সমাজ ও সভ্যতা, রাজনীতি নিয়ে তার লেখাগুলোই (আলমুকাদ্দিমা) বিশ্বের প্রতিটি ইউনিভার্সিটি পড়াচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানে কোন পাঠ’ই পূর্ণ হয় না ‘আলমুকাদ্দিমা’ ছাড়া! বিগত ছয়শত বসরে পৃথিবীর শত শত, ইউনিভার্সিটি থেকে সমাজবিজ্ঞানে কতো ডিগ্রি দেয়া হয়েছে, কতো সমাজবিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় ইবনে খালদুন হয়নি কেউই!
প্রশ্ন হলো, ইবনে খালদুন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়েছেন? ইবনে সিনা কোন মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়েছিলেন যে তার অমর গ্রন্থ আল কানুন’ই একাধারে সাড়ে ছয়শত বসর ধরে, এই তো অষ্টাদশ শতাব্দির প্রথম দিকেও বিশ্বের নামী দামী মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়ানো তো। একই কথা খাটে আল জাবির ইবনে হাইয়্যান, আল রাজি ইবনে রুশদ আল বেরুনিদের বেলাতেও।
আমাদের বাংলাদেশের দিকেই দেখুন। রবিন্দ্রনাথ কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন? অথচ তার সাহিত্য প্রতিটি ভার্সিটিতে পড়ানো হচ্ছে। বিদ্রোহি কবি নজরুল তো স্কুলের গন্ডীই শেষ করতে পারেননি, অথচ সে তিনি কিনা তৈরি করেছেন বিশাল সাহিত্যভান্ডার এই দেশ, এই জনপদের মানুষ, তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি সাহিত্য আর বোধ বিশ্বাসকে তুলে ধরেছেন তার জন্য বা তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা চেয়ারই রয়েছে। ইতিহাসে এরকম শত শত ব্যক্তি রয়েছেন, যারা প্রত্যেকেই স্বশিক্ষিত এবং একই সাথে সুশিক্ষিত ছিলেন। ইংরেজিতে একটা কথা আছে;
The only education worth anything is self-education.অর্থাৎ ‘স্বশিক্ষাই হলো একমাত্র যথার্থ শিক্ষা’।
কাজেই নিজের মতো করে স্বিদ্ধান্ত নিন। কলেজ ভার্সিটিতে ভর্তি হবার, পড়ার সময় পেরিয়ে গেছে বলে হা-পিত্যেশ করে কোন লাভ হবে না। বরং এখনও সময় আছে, আজই নেমে পড়–ন, নিজের চেষ্টা, উদ্যম আর উদ্যোগে স্বশিক্ষিত এবং একইসাথে সুশিক্ষিত হতে যে কাজগুলো করতে পারেন;
১ - স্বিদ্ধান্ত নিন: জ্ঞানচর্চার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্বিদ্ধান্ত নিতে, কি চান এবং কেন চান।
২ - পরিবেশ তৈরি করুন: পড়াশুনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা জরুরি অনুষঙ্গ।
৩ - বিষয় নির্বাচন করুন: সব বিষয়ে জ্ঞানার্জন একজন মানুষের পক্ষে সম্ভবপর নয়, কোন বিষয়ে পড়তে চান, সেটা ঠিক করে নিন।
৪ - অগ্রাধিকার নির্ধারণ করুন: কোন বিষয়টা আগে শিখতে চান, সেটা নির্ধারণ করে নিন।
৫ - সময়ভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ: যা শিখবেন বলে মনস্থির করেছেন, তার জন্য উপযুক্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে নিলে লেখা পড়ায় গতি আসবে এবং তা সঠিক ধারায় এগুবো।
৬ - বিভিন্ন মাধ্যম নির্ধারণ করুন: আধুনিক প্রযুক্তর যুগে বইপত্র ছাড়াও নানা উপায় উপকরণ রয়েছে। তার সবকটিকেই সর্বোচ্চমানে ব্যবহার করতে পারেন। অনলাইনে বহু লেকচার রয়েছে বিষয়ভিত্তিক, সে সব লেকচার শুনেও অনেক কিছু শেখা যায়।
৭ - সঙ্গ ও বন্ধু নির্বাচন করে নিন: আপনার জ্ঞানার্জনের পথে উপযুক্ত ও সহায়হক হতে পারে, এমন বন্ধু নির্বাচন করুন অত্যন্ত সতর্কতার সাথে।
৮ - নির্বাচিত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নির্ধারণ করুন: যে বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে চান, সে বিষয়ে আশে পাশে পারদর্শীলের সাথে তার বা তাদেও সংস্পর্শে যাবার এবং সম কাটাবার চেষ্টা করুন।
৯ - নৈমিত্তিক রুটিন করে নিন: পড়াশুনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন। অল্প হলেও প্রতিদিন নিয়ম করে পড়াশুনা করুন।
১০ - রুটিন মেনে চলুন: ব্যক্তিগত ব্যস্ততা ও পরিবারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রুটিন বানিয়ে তা মেনে চলুন।
১১ - পড়া ও শেখাটাকে বিনোদন বানিয়ে নিন
১২ - বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় লিপ্ত হন ও নোট করুন: বিষয়ভিত্তিক নোট সংরক্ষণ করুন। সে সব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করুন। নিজের মতো করে লেখালেখি করুন। লেখাগুলোকে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করার জন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করুন, দেখবেন দ্রুত জ্ঞানের জগত সমৃদ্ধ হচ্ছে।
১৩ - পড়ার পাশাপাশি বিচার বিশ্লেষণও করুন: যা পড়লেন বা শিখলেন, তাকে নিজের মতো করে তথ্য উপাত্ত নিয়ে বিচার করুন, একটা স্বচ্ছ দৃষ্টিভংগী গড়ে উঠবে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে। জ্ঞানের জগতকে সমৃদ্ধ করবে।
১৪ - জ্ঞানের মালিক আল্লাহকে স্মরণ করুন বিনিতভাবে। সময় পেলেই মনে মনে দোওয়া করতে থাকুন।
১৫ -  আত্মশ্লাঘা, আত্মতৃপ্তি ও অহংকারকে খুব সতর্কতার সাথে এড়িয়ে চলুন। ভেবে দেখুন অলক্ষ্যে আপনার মধ্যে এসবের কোনটা ঢুকে পড়ছে কি না। সতর্ক থাকুন। (সংক্ষেপকৃত)
--------------------------------------------------------------
লেখকঃ  ইসলামি  চিন্তাবিদ  গ্রন্থপ্রনেতা  গীতিকার  ইতিহাস  বিশ্লেষক  ও  কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments