Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৫৮ নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।


বিতি কিচ্ছা-৫৮
নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

অযাচিত উপদেশ দান;-- 

উপদেশ দান করতে পয়সা খরছ করতে হয় না বলেই কি যথা ইচ্ছা উপদেশ খয়রাত করা সমীচীন?  যথা ইচ্ছা উপদেশ খয়রাত করতে যেয়ে বিড়ম্বনায় পড়ার যথেষ্ট নজির বিদ্যমান আছে চারিদিকে। তাই সচেতন ও বুদ্ধিমান লোকেরা যত্রতত্র উপদেশ খয়রাতে ঠোঠ সামলিয়ে নেন। তবে মনুষ্য সমাজে উপদেশ খয়রাতে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়ে যারা সচেতনতার সাথে  শব্দ চয়ন করেন, তারাও আবার নির্দিধায় পরামর্শ দিতে থাকেন আপন  স্রষ্টাকে। কারণ স্রষ্টার ধরাতো আগামী কালের জন্য, আজকের জন্য নয়। ফলশ্রুতিতে আমরা  মহা বিজ্ঞানী মালিকের আক্রোশের শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছি কি না- তার প্রতি খেয়াল রাখি না অনেকেই। তাই হেদায়াতের গন্ডির মধ্যে সামিল থাকার, ও আল্লাহর আক্রোশ বাঁচার জন্য কতিপয় সাংকেতিক প্রকাশ নিয়ে আজকের এই বিতিকিচ্ছা।        

ধুলিময় এক শহরের প্রায় সর্বত্র হালকা ধরণের বৃষ্টি বর্ষণ হয়েছে। তাতে কোথাও ভিজেনি মাটি, কোথাও ভিজেছে মাটি। জনৈক সৃষ্টি তার মালিককে বলছে, " ও আল্লাহ -আরোও এখটু বেশী দিলেতো বড় ভালা অইতো।  

ধুলাগুইনতো মরছে না এবো।" আল্লাহকে পরামর্শ দেয়ার এই রকম প্রবনতা আমাদের  অনেকের মধ্যেই বিদ্যমান আছে। কিসে মাখলুকের ভাল আর কিসে মন্দ তা বুঝানোর জন্য আল্লাহর পরামর্শ সভার সদস্য হিসাবে এখনও তাকে নেয়া হচ্ছে না কেন?  এই চিন্তায় বোধ হয় অস্থির এই আবাল সৃষ্টি।          

অনেকে আবার আল্লাহর প্রতি তার ক্ষোভ ঝাড়তে মোটেও দ্বিধা করেন না। যেমন দিনভর হালকা তালে বৃষ্টি হচ্ছে, ছাতা ছাড়া  কোথাও বেরুনোর উপায় নাই।  এ অবস্থায় সকলেই যার যার সম্ভল মাথার উপর টানিয়ে নিয়ে বাজার-হাট সেরে নিচ্ছে। ইহাতে শুকরিয়া করেছে কে জানি না। কারণ আল্লার এই নিয়ামতের কল্যানকর দিকটি সম্পর্কেতো জ্ঞান বেশীরভাগ লোকেরই নেই। এখানে জনৈক ভদ্রলোক তার ক্ষোভ ঝাড়লেন এইভাবে," দিলে দে,  নাইলে বন্দ খর। ই কি জন্ত্রনারে বাবা, আস্তা দিন ধরি ফেটার ফেটার মেঘ।" নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক।          

মহান রবের ভালবাসা লাভের তীব্র আকাঙ্কা থাকলে তার প্রতি সর্বোচ্ছ সম্মান সূচক শব্দ ব্যবহার করে সম্বোধন করা জরুরী নয় কি? অথচ আমরা সচরাচর যার পর নাই তুচ্ছার্থে শব্দ ব্যবহার করলাম এই সম্বোধনের ক্ষেত্রে। এটা কি যুক্তিসঙ্গত? আমি অনেক আলেমের মাহফিলে যাতায়াত করেছি, আজকালতো ঘরে বসেই শুনা যায় ইউ টিউব চ্যানেলে সকল ইসলামিক স্কলারদের বক্তৃতা। অনেককেই দেখেছি আল্লাহর শানে সম্নান সূচক বাংলা শন্দ 'আপনি' বলেছেন। কেউ কেউ বলেন 'তুমি'। তবে অনেক বিতর্কিত সভায় 'তুই ' বলেও চালিয়ে যাওয়া হয় দেদারসে। বিষয়টি আমার কাছে রুচিসম্মত ঠেকেনি কখনও। সর্বদা আল্লাহর নিয়ামত প্রাপ্তির শুকরিয়ার ভাষায় কি সর্বোচ্ছ বিনয় থাকতে পারে না?        

অন্যদিকে আল্লাহর গজব হিসাবে যা নাযিল হয় আমাদের উপর তার দায়ভার তো আল্লাহর নয়, এগুলো আমাদের নিজেদেরই- আমরা বোধ হয় এ বিষয়টিও মানতে ইতস্তত করি। আল্লাহ বলেন, " মানুষের কৃতকর্মের দরুণ স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান। যাতে তারা ফিরে আসে।"(সুরা রম-৪১)।        

মুলতঃ সৃষ্টিকূল প্রতি মূহুর্ত তার মালিকের দান 'অফুরন্ত নিয়ামত' এর মধ্যে ডুবে আছে। এই নিয়ামতকে  অনুধাবন করতে পারে একমাত্র ঈমানদারই। এবং সে অনন্তর তার মালিকের শুকরিয়ায় নিমগ্ন থাকে। অথচ কাণ্ডজ্ঞান অভাবে  অবলীলায় মানুষ আল্লাহর নিয়ামতের না-শোকরী জ্ঞাপনে ব্যস্ত আছে। নিয়ামত বাড়ানোর প্রক্রিয়াতো একটাই," অনন্তর মালিকের শুকরিয়া চালিয়ে যাওয়া "। কিন্তু এ সমাজে দেখা যায়  উল্টো আল্লাহকে পরামর্শ দানের দিনভর ব্যস্ততা।  কী আজব এই আশরাফুল মখলুকাত আমরা!         শারীরিক রোগ শোকে আক্রান্ত আল্লাহর নবী হযরত আইয়ুব (আঃ) এর জীবনী থেকে একজন শোকরকারী হিসাবে  আমাদের শিক্ষা নেয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু এসব আমাদের পাঠ্য তালিকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রহমতের নবী মুহাম্মদ (দঃ) এর জীবন চরিত নিয়ে অধ্যয়ন আজ নেহায়েত কম। মুসা(আঃ) এর জামানায় হাঁসপালের শুকরিয়ার বদৌলতে তাৎক্ষনিক আল্লার নিয়ামত 'বৃষ্টিরাজি' দিয়ে পৃথিবীকে সিক্ত করার ঘটনা আমরা অনেকেই আলোচনা করি না। এই সব আলোচনা দ্বারা স্রষ্টার সঠিক মর্যাদা সম্পর্কে মনের ভিতরে প্রত্যয় জন্ম নেয়, যা ঈমান বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এ সব বরকতপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমাদের নিরবতা  আজ পরবর্তী প্রজন্মকে জাহিলিয়াতের তথা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না তা আমাদের খেয়াল রাখা দরকার। আসলে আল্লাহর তাসবিহতো তা ই - "যাতে আল্লাহর নিয়ামতের স্মরণ, অনুধাবন,তার আলোচনা মনের কোটায় বাড়ানো, অতঃপর সর্বাপেক্ষা  বিনয়ী ও সর্বোচ্ছ সম্মান সূচক শব্দে তার প্রকাশ।"       শেষমেষ এক দূষ্ট আবালের ভাষা উদৃতি দিয়ে লিখাটি শেষ করতে চাই। আবালটি এক অতি কপট ও হিংসুটে লোক। সফর উদ্দেশ্য বন্ধুর কাছে ধার চাইল 'একটি ঘোড়া'। বন্ধুটি তাকে ঘোড়া ধার দেয়নি বলে  সে আল্লাহর কাছে দোয়া করল যেন আজ রাতের মধ্যেই বন্ধুর ঘোড়াটি মারা যায়। কিন্তু সে তার নিজ বাড়িতে এসে দেখতে পেলো তার নিজের গাভীটি মারা গিয়েছে। সে তখন বলল," ও আল্লাহ এখনও গরু কোনটা আর ঘোড়া কোনটা ছিনলায় না" এইসব আবালরা কৌতুকের ছলে আল্লাহর নামে কত যে বাজে শব্দ পাড়ে!! - যা আল্লাহর আক্রোশকে বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত জমিনে গজব নাযিলে সহায়ক। "নাউজুবিল্লাহ্"। আল্লাহ যেন আমাদেরকে অযথা মারাত্মক এইসব স্পর্শকাতর বাচালামী থেকে হেফাজত করেন।      আল্লাহ্‌র বাণী, "নি:শ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি,  এবং রাত ও দিনের পালাক্রমে যাওয়া আসার মধ্যে যে সব বুদ্ধিমান লোক উটতে, বসতে ও শয়নে সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন। (তারা আপনা আপনি বলে উটে) হে আমাদের প্রতিপালক, এসব আপনি অনর্থক এবং উদ্দেশ্যবিহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে আপনি পাক-পবিত্র ও মুক্ত।"(সুরা আল্ ইমরান -১৯০/১৯১)       

এতএব,  আসুন আমরা মূর্খ আবালদের সঙ্গ ত্যাগ করি,  সচেতনতার সাথে ঈমানের হেফাজত করি, আর সর্বদা অন্তরে আল্লাহর তাসবিহ ধারণ করি। সর্বদা বলি," সুবহানাল্লাহ,  আলহামদুলিল্লাহ্‌,  লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ "।

Post a Comment

0 Comments