Recent Tube

মাসলা মাসায়েল।

সালাতের ফরযিয়াত ও রাকাত সংখ্যা
(فى فرضية الصلوة وعدد ركعاتها) :

নবুয়াত প্রাপ্তির পর থেকেই সালাত ফরয হয়। তবে তখন সালাত ছিল কেবল ফজরে ও আছরে দু’ দু’ রাক‘আত করে (কুরতুবী)। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ‘আপনি আপনার প্রভুর প্রশংসা জ্ঞাপন করুন সূর্যাস্তের পূর্বে ও সূর্যোদয়ের পূর্বে’।[3] আয়েশা (রাঃ) বলেন, শুরুতে সালাত বাড়ীতে ও সফরে ছিল দু’ দু’ রাক‘আত করে।[4] এছাড়া রাসূল (সাঃ)-এর জন্য ‘অতিরিক্ত’ (نَافِلَةً) ছিল তাহাজ্জুদের সালাত (ইসরা/বনু ইস্রাঈল ১৭/৭৯)। সেই সাথে ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে রাত্রির নফল সালাত আদায় করতেন।[5] মি‘রাজের রাত্রিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়।[6] উক্ত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হ’ল- ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা।[7] এছাড়া রয়েছে জুম‘আর ফরয সালাত, যা সপ্তাহে একদিন শুক্রবার দুপুরে পড়তে হয়।[8] জুম‘আ পড়লে যোহর পড়তে হয় না। কেননা জুম‘আ হ’ল যোহরের স্থলাভিষিক্ত। [9]

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতে দিনে-রাতে মোট ১৭ রাক‘আত ও জুম‘আর দিনে ১৫ রাক‘আত ফরয এবং ১২ অথবা ১০ রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। যেমন(১) ফজর : ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ২ রাক‘আত ফরয (২) যোহর : ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত (৩) আছর : ৪ রাক‘আত ফরয (৪) মাগরিব : ৩ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত (৫) এশা : ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত। অতঃপর শেষে এক রাক‘আত বিতর।

জুম‘আর ছালাত ২ রাক‘আত ফরয। তার পূর্বে মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে কমপক্ষে ২ রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ এবং জুম‘আ শেষে ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত। উপরে বর্ণিত সবগুলিই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিয়মিত আমল দ্বারা নির্ধারিত এবং সহীহ হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত, [10] যা অত্র বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় সমূহে দ্রষ্টব্য।

[3] . গাফির/মুমিন ৪০/৫৫; মিরআত ২/২৬৯। [4] . মুসলিম হা/৬৮৫; আবুদাঊদ হা/১১৯৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১১। [5] . মুযযাম্মিল ৭৩/২০; তাফসীরে কুরতুবী। [6] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ-৬। [7] . আবুদাঊদ হা/৩৯১, ৩৯৩ ‘সালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১। [8] . জুম‘আ ৬২/৯; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৫৪, ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ-৪২। [9] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২২৭। [10] . দ্র: সহীহ ইবনু খুযায়মা ‘সালাত’ অধ্যায়, ২ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ ‘সালাত’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৩। 
-------------------------------------------------------------

প্রশ্নঃ দিন এবং রাতে কতটুকু নামায আদায় করা ফারয?

উত্তরঃ নাবী কারীম (সাঃ) যখন সায়েদুনা মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) কে ইয়ামানের দিকে পাঠাচ্ছিলেন, তখন বলেনঃ 
(فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ)
তাদের কাছে বলো আল্লাহ্‌ তাদের উপর দিনে এবং রাতে পাঁচ (ওয়াক্ত) নামায ফারদ্ব করেছেন। (সাহীহ বুখারী, হা/৭৩৭২, সহীহ মুসলিম ১৯/১২১) 
সায়্যেদাহ আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ
(فَرَضَ اللَّهُ الصَّلاَةَ حِينَ فَرَضَهَا، رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ، فِي الحَضَرِ وَالسَّفَرِ، فَأُقِرَّتْ صَلاَةُ السَّفَرِ، وَزِيدَ فِي صَلاَةِ الحَضَرِ)
আল্লাহ্‌ যখন নামায ফারদ্ব করেন তখন সফর এবং মুকিম অবস্থায় দু’ রাক’আত করে নামায ফারদ্ব করেছিলেন। পরে সফরের নামায আগের মত রাখা হয় আর মুকিম অবস্থার নামায বাড়িয়ে দেওয়া হয়। (সাহীহ বুখারী, হা/৩৫০, সাহীহ মুসলিম ১৫৭/৬৮৫)
সায়্যেদাহ আয়েশা (রাঃ) থেকে অন্য রেওয়াতে বর্ণিত হয়েছেঃ
(فُرِضَتِ الصَّلاَةُ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ هَاجَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَفُرِضَتْ أَرْبَعًا، وَتُرِكَتْ صَلاَةُ السَّفَرِ عَلَى الأُولَى)
নামায দু’ (দু’) রাক’আত ফারদ্ব ছিল পরে নবী (সাঃ) হিজরত করেন, তখন চার রাক’আত করে নামায ফারদ্ব করে দেওয়া হয় এবং সফর কালে আগের অবস্থায় (দু’ দু’ রাক’আত) বহাল থাকে। (সাহীহ বুখারী, হা/৩৯৩৫)
সায়েদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(فَرَضَ اللهُ الصَّلَاةَ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْحَضَرِ أَرْبَعًا، وَفِي السَّفَرِ رَكْعَتَيْنِ، وَفِي الْخَوْفِ رَكْعَةً)
আল্লাহ্‌ তা’য়ালা তোমাদের নাবী (সাঃ) এর যবান মুবারাক দ্বারা মুকিম অবস্থায় চার রাক’আত এবং সফরে দুই রাক’আত এবং ভীতিকর অবস্থায় এক রাক’আত নামায ফারদ্ব করেছেন। (সাহীহ মুসলিম ,হা/১৪৫৫ ই.সে) 
সায়্যেদাহ আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেনঃ
( كَانَ أَوَّلَ مَا افْتُرِضَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةُ: رَكْعَتَانِ رَكْعَتَانِ، إِلَّا الْمَغْرِبَ، فَإِنَّهَا كَانَتْ ثَلَاثًا، ثُمَّ أَتَمَّ اللَّهُ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْعِشَاءَ الْآخِرَةَ أَرْبَعًا فِي الْحَضَرِ، وَأَقَرَّ الصَّلَاةَ عَلَى فَرْضِهَا الْأَوَّلِ فِي السَّفَرِ)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর প্রথমে দু’ দু’ রাক’আত নামায ফারদ্ব করা হয়েছিল মাগরিব ছাড়া, তা (মাগরিব) তিন রাক’আত ফারদ্ব ছিল। পরে আল্লাহ্‌ মুকিম অবস্থায় যোহর, আছর এবং ঈশা এর নামায চার চার (রাক’আত) করে দেয় এবং সফরে আগের অবস্থায় (দু’ দু’ রাক’আতে) বহাল ছিল। (মুসনাদে আহমাদ খন্ড৬, পৃঃ২৭২, হা/২৬৭৬৯, অন্য নুসখা হা/২৬৩৩৮, সানাদ হাসান লিযাতিহ)
সায়্যেদাহ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(فُرِضَتْ صَلَاةُ السَّفَرِ وَالْحَضَرِ رَكْعَتَيْنِ، فَلَمَّا أَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَانِ رَكْعَتَانِ، وَتُرِكَتْ صَلَاةُ الْفَجْرِ لِطُولِ الْقِرَاءَةِ، وَصَلَاةُ الْمَغْرِبِ لِأَنَّهَا وِتْرُ النَّهَارِ)
সফর এবং মুকিম অবস্থায় দু’ দু’ রাক’আত ফারদ্ব ছিল। পরে যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)মদিনাতে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন মুকিম অবস্থায় দুই রাক’আত করে বৃদ্ধি করা হয়। ভোরের নামাযে কির’আত লম্বা করার কারনে দুই রাক’আত থাকতে দেওয়া হয় এবং মাগরিবের নামায (তিন রাক’আত) বহাল রাখা হয়, কারন তা দিনের বেজোড়। (সাহীহ ইবনে হিব্বান ৪/১৮০, হা/২৭২৭, সাহীহ ইবনে খুযাইমাহ ২/৭১, হা/৯৪৪, সানাদ হাসান)
নোটঃ এই রেওয়াতের রাবী মাহবুব বিন আল-হাসান বিন হিলাল বিন আবী যাইনাব হাসানুল হাদীস। তাকে জমহুর মুহাদ্দীছীন ছিক্বাহ্ আখ্যা দিয়েছেন। 
উপরোক্ত সাহীহ হাদীছ গুলো থেকে জ্ঞাত হওয়া যায় যে, দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায (সকল প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য) ফারদ্ব।
১. ফজরের নামায।
২. যোহরের নামায।
৩. আসরের নামায।
৪. মাগরিবের নামায।
৫. ঈশা এর নামায।
 ফজরের এবং ঈশা এর নামায নির্দিষ্ট ভাবে কুর’আন মাজীদে উল্লেখিত আছে। (সূরা-নূরঃ৫৮)
এছাড়াও দেখুন, কিতাবুল উম্ম লিশ-শাফেঈ (১/৬৮)
এর উপর মুসলমানদের ইজমা আছে যে দিন এবং রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফারদ্ব।
হাফেয ইবনে হাযম (রহঃ) (মৃঃ৪৫৬ হিঃ) বলেনঃ ইহার উপর ঐক্যমত (ইজমা) আছে যে পাঁচ (ওয়াক্ত) নামায ফারদ্ব। ইহার উপর ঐক্যমত (ইজমা) আছে যে, ভীতিকর অবস্থায় অথবা নিরাপদ, সফর এবং মুকিম অবস্থায় ভোরের নামায দুই রাক’আত ফারদ্ব এবং ভীতিকর অবস্থা অথবা নিরাপদ অবস্থা, সফর এবং মুকিম অবস্থায় মাগরিবের নামায তিন রাকাত ফারদ্ব। ইহার উপর ঐক্যমত (ইজমা) আছে যে, নিরাপদ ও মুকিম অবস্থায় যোহর, আছর এবং ঈশা এর নামায চার চার রাক’আত ফরজ। (মারাতিব আল-ইজমা’ পৃঃ২৪-২৫)
হাদীছের বক্তব্য থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে ঘরে (নিরাপদ) অবস্থায় ভোরের নামায দুই রাক’আত, যোহর চার, আছর চার, মাগরিব তিন এবং ঈশা চার রাক’আত নামায ফারদ্ব। সফরে মাগরিব ছাড়া সব নামায দুই রাক’আত করে ফারদ্ব। কাফেরদের সাথে জিহাদ করার সময় ভীতিকর অবস্থায় ভোরের এবং মাগরিবের ছাড়া সব নামায এক-এক রাক’আত করে ফারদ্ব।
নোটঃ সফরে কসর করার ফযিলত আছে কিন্তু সম্পূর্ন নামায পড়াও জায়েয এবং সহীহ যেমন সহীহ হাদীছ এবং আছারে সাহাবী থেকে প্রমাণিত হয়। ইমাম আবূ বাকর মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন আল-মুনযিরি আন-নাইসাবূরী (রহঃ) (মৃঃ ৩১৮ হিঃ) বলেনঃ
৩৪. ইজমা আছে যে যোহরের নামাযের সময় সূর্য নিম্ন দিকে গমন করলে (শুরু হয়)।
৩৫. ইজমা আছে যে মাগরিবের নামায সূর্য অস্তের পরে ওয়াজিব হয়।
৩৬. ইজমা আছে যে, ফজরের নামাযের সময় সুবহে সাদিক। (কিতাবুল ইজমায় পৃঃ২৪)
শেষ কথাঃ সাহীহ হাদীছ এবং ইজমা থেকে দিন ও রাতে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফারদ্ব হওয়া প্রমাণিত এবং একই ভাবে নামাযের সময় এবং রাক’আতের সংখ্যা সহীহ হাদীছ এবং ইজমা দ্বারা প্রমাণিত - والحمدلله 
ফাতোয়ায়ে ইলমিয়া খন্ডঃ১, পৃঃ৪০৬

Post a Comment

0 Comments