Recent Tube

ইসলামের দৃষ্টিতে হাসির গুরুত্ব,প্রকার ও হুকুম সম্পর্কে; শামীম আজাদ।


ইসলামের দৃষ্টিতে হাসির গুরুত্ব,প্রকারহুকুম সম্পর্কে ;
================================

 হাসি সৌন্দর্যের প্রতীক। হাসি ভুলিয়ে দিতে পারে রাশি-রাশি দুঃখ ও বিষাদের কথা। হাস্যোজ্জ্বল মানুষকে সবাই ভালোবাসে। আপন ও কাছের মনে করে৷ হাসির মাধ্যমে আন্তরিকতা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। একটু খানি মুচকি হাসি দু-জনের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়৷ তাই পরিচিত-অপরিচিত সবার সাথে সদা হাসিতেই সাক্ষাৎ করা উচিত। হাসিমুখে কথা বলা ও বিনয়ী আচরণ করা ইসলামের সৌন্দর্যও বটে৷ চলার পথে, কাজে-কর্মে কত মানুষের সঙ্গেই না আমাদের সাক্ষাৎ হয়। একজন মুসলিম হিসেবে অন্য ভাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ কেমন হওয়া উচিত,তা প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়ে গেছেন। পাশাপাশি অপর ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়,এটিকে তিনি সদকা হিসেবেও ঘোষণা করেছেন। (সদকা অর্থ দান; যার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন।)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ وَإِنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ وَأَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِىْ إِنَاءِ أَخِيكَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি ভাল কাজই সদাক্বাহ‌, আর তোমার নিজের কোন ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং কোন ভাইয়ের পাত্রে নিজের বালতি থেকে পানি ঢেলে দেয়াও ভাল কাজের অন্তর্ভূক্ত। আত্ তিরমিযী ১৯৭০, আহমাদ ১৪৮৭৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৪২, সহীহ আত্ তারগীব ২৬৮৪, মিশকাতুল মাসাবিহ ১৯১০

وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئاً، وَلَوْ أنْ تَلْقَى أخَاكَ بوَجْهٍ طَلْقٍ». رواه مسلم

আবূ যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি কোন ভাল কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’’ (মুসলিম)  (অর্থাৎ মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও একটি ভালো কাজ।)
মুসলিম ২৬২৬, তিরমিযী ১৮৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৩৬২, দারেমী ২০৭৯, রিয়াদুস সালেহিন ৭০০

অন্য হাদিসে হযরত আহমাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমার ভাইয়ের সাক্ষাতে মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলাও একটি সদকা। (তিরমিযী ১৯৫৬)

কারো সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করলে সে খুশি হয়। আল্লাহ তায়ালাও বিষয়টি বেশ পছন্দ করেন। যেমন হযরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের কোনো মুসলিম ভাইকে খুশি করার জন্য এমনভাবে সাক্ষাৎ করে,যেমনটি সে নিজের জন্য পছন্দ করে। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে খুশি করবেন। (তাবরানী ১১৭৮; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১৩৭২১)

বস্তুত,হাসির মতো সাধারণ একটি আমলে আল্লাহ তায়ালা এতো বড় পুরস্কার দেবেন যে,হাসি মুখে কথা বলার দ্বারা মুমিন খুশি হয়। আর এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। ফলে বিনিময়ে তিনি বান্দাকে কেয়ামতের দিন আনন্দিত ও খুশি করবেন৷ সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি„„„
'
"হাসির বিভিন্ন ধরণ ও বিধান"
ইসলামের দৃষ্টিতে হাসি সাধারণত তিন ধরণের হয়ে থাকে।

০১। আল-কাহ্কাহা (অট্টহাসি)৷ যে হাসিতে শব্দ হয় এবং পার্শ্ববর্তী লোক শুনতে পারে সে হাসিকে আল-কাহ্কাহা বা অট্টহাসি বলে। এ ধরণের হাসি ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়৷

০২। আদ-দিহক (স্বাভাবিক হাসি)৷ যে হাসিতে মৃদআওয়াজ হয়,যা নিজের কাছে প্রকাশ পায়,অন্যেরা শুনে না,তাকে আদ-দিহক বা স্বাভাবিক হাসি বলে। এ ধরণের হাসি জায়েয।

০৩। আত-তাবাচ্ছুম (মুচকি হাসি)৷ যে হাসি শুধু মুখের মধ্যে প্রকাশ পায়,কোন প্রকার শব্দ হয় না,তাকে আত-তাবাচ্ছুম বা মুচকি হাসি বলে। মুচকি হাসি সুন্নাত।

এছাড়াও হাসির উদ্দেশ্যর উপর ভিত্তি করে হাসিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ কষ্টের হাসি,বিদ্রুপের হাসি, তাচ্ছিল্যকরণের হাসি,ভীতির হাসি,গর্বের হাসি প্রভৃতি। দাম্ভিকতা প্রদর্শন ও অন্যকে তাচ্ছিল্যকরণের জন্য হাসি নাজায়েজ ও হারাম।

পবিত্র কুরআনে হাসি প্রসঙ্গ

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে হাসি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সুখ-শান্তি ও আনন্দ প্রদানের মাধ্যমে হাসির ব্যবস্থা করে থাকেন। আবার তিনি কান্নার ব্যবস্থাও করে থাকেন। হাসি-কান্না তাঁর অসীম কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَأَنَّهُ هُوَ أَضْحَكَ وَأَبْكَى
আর তিনিই হাসান এবং তিনিই কাঁদান। সূরা নাজমঃ ৪৩

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হাসি ও কান্নার সীমা ও পরিমাণ সম্পর্কে বলেছেন- 

فَلْيَضْحَكُواْ قَلِيلاً وَلْيَبْكُواْ كَثِيرًا جَزَاء بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ
অতএব তারা যেন অল্প হাসে এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য বেশি করে কাঁদে। 
সূরা তাওবাঃ ৮২

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের মুচকি হাসির কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 

فَتَبَسَّمَ ضَاحِكًا مِّن قَوْلِهَا وَقَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ
তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা,তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও যেন আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি,যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্তকর। 
সূরা নামলঃ ১৯

কিয়ামতের দিন জান্নাতীদের মুখ হাস্যোজ্জ্বল থাকবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন- 
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ مُّسْفِرَةٌ  
ضَاحِكَةٌ مُّسْتَبْشِرَةٌ
সেদিন অনেক মুখমন্ডল হবে উজ্জ্বল,সহাস্য ও প্রফুল্ল। 
সূরা আবাসাঃ ৩৮,৩৯

মোটকথা পবিত্র কুরআন থেকে হাসির পরিমাণ,নবীদের হাসির পদ্ধতি এবং কিয়ামতে জান্নাতীদের হাসির কথা জানা গেল।

হাদীস শরীফে হাসি প্রসঙ্গ

মুচকি হাসি ভালোবাসা ও সম্প্রীতির পরিচায়ক। এজন্য প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম মুচকি হাসির ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছেন। দেখা-সাক্ষাতে মুচকি হাসি দেয়াকে হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদকাহ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। 

হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমার ভাইয়ের সামনে তোমার মুচকি হাসি সদকাহ স্বরূপ। 
সহীহ ইবনে হিব্বান ৪৭৪

অপর এক হাদীসে এসেছে,হযরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোন নেক আমলকে তুচ্ছ মনে করিও না। যদিও তা প্রফুল্ল চেহারায় তোমার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করা হয়। (ফতোয়ায়ে তাহমীদ)
'
হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাসি

হযরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা মুচকি হাসি দিতেন। তাঁর এ মুচকি হাসি ছিল অসাধারণ। তিনি হাসলে মনে হতো,তাঁর হাসির সাথে মুক্তা ঝরছে। 

وَعَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: مَا رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مُسْتَجْمِعاً قَطُّ ضَاحِكاً حَتَّى تُرَى مِنهُ لَهَوَاتُهُ، إنَّمَا كَانَ يَتَبَسَّمُ . متفقٌ عَلَيْهِ .

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো এমন অট্টহাসি হাসতে দেখিনি যাতে তাঁর আলজিভ দেখতে পাওয়া যেত। আসলে তিনি মুচকি হাসতেন।
বুখারী ৪৮২৯, ৩২০৬, ৬০৯২, মুসলিম ৮৯৯, তিরমিযী ৩২৫৭, আবূ দাউদ ৫০৯৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৯১, আহমাদ ২৩৮৪৮, ২৪৮১৪, ২৫৫০৬ রিয়াদুস সালেহিন ৭০৮

নবীজির মুচকি হাসি 

عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُغِيرَةِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ جَزْءٍ، قَالَ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ تَبَسُّمًا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏

আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জায্‌য়ি (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়ে বেশী মুচকি হাসি দিতে আমি আর কাউকে দেখিনি।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (১৯৪), মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৫৮২৯)।

ফুটনোটঃ
আবূ 'ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। ইয়াযীদ ইবনু আবী হাবীব হতে, ‘আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জায্‌য়ির বরাতে উপরিউক্ত হাদীসের মতোই বর্ণিত হয়েছে। 
জামে' আত-তিরমিজি ৩৬৪১

حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ قَيْسٍ، عَنْ جَرِيرٍ، قَالَ مَا حَجَبَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مُنْذُ أَسْلَمْتُ، وَلاَ رَآنِي إِلاَّ تَبَسَّمَ فِي وَجْهِي‏.

জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর কাছে যেকে বাধা দেননি। তিনি আমাকে দেখলেই আমার সামনে মুচকি হাসতেন।
সহিহ বুখারী ৬০৮৯

তবে তিনি কখনও কখনও এমনভাবে মুচকি হাসতেন যে,তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখা যেত। যেমন,হযরত আবু যার রাযি,থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন-হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আমি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তিকে ভালোভাবে জানি। আর যে ব্যক্তি সর্বশেষ জাহান্নাম হতে নাজাত পাবে,তাকেও জানি। কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে (আল্লাহর নিকট উপস্থিত করে) বলা হবে,এর সগীরা গুনাহগুলো উপস্থাপন করো এবং কবীরা গুনাহগুলো গোপন করে রাখো। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে,তুমি অমুক অমুক দিনে এই এই গুনাহ করেছ। তখন সে ব্যক্তি সবগুলো স্বীকার করবে এবং একটিও অস্বীকার করবে না। এরপর সে তাঁর কবীরা গুনাহসমূহ সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং অস্বীকার করবে। তখন ঘোষণা দেয়া হবে যে,তাঁর প্রতিটি মন্দ কাজের বিনিময়ে একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করো। এরপর সে বলবে,নিশ্চয় এখনও আমার অনেক গুনাহ বাকী আছে,যা দেখতে পাচ্ছি না। আবু যর রাযি বলেন,তখন আমি দেখলাম,হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসছেন,এমনকি তাঁর সাদা দাতগুলো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। (মুসনাদে আহমাদ  ২১৪৩০)

সাহাবায়ে কেরামের হাসি

হযরত রাসুলুুুুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে অবস্থানকালে হযরত সাহাবায়ে কেরাম রাযি,হাসা-হাসি করতেন।

 أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، وَذَكَرَ آخَرَ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، قَالَ: قُلْتُ لِجَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ: كُنْتَ تُجَالِسُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: نَعَمْ، «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ جَلَسَ فِي مُصَلَّاهُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، فَيَتَحَدَّثُ أَصْحَابُهُ يَذْكُرُونَ حَدِيثَ الْجَاهِلِيَّةِ، وَيُنْشِدُونَ الشِّعْرَ وَيَضْحَكُونَ، وَيَتَبَسَّمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

সিমাক ইব্‌ন হার্‌ব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ)-কে বললাম, আপনি তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে উঠা-বসা করে থাকতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ; যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাত আদায় করতেন, তাঁর সালাতের স্থানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। তখন তাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন, তাঁরা জাহিলী যুগের ঘটনাসমুহের আলোচনা করতেন, কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং হাসা-হাসিও করতেন, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসতেন।
সুনানে আন-নাসায়ী ১৩৫৮

তবে সাহাবায়ে কেরামের এ হাসি তাঁদের অন্তরকে আল্লাহর ভয় থেকে বিন্দুমাত্র দুরে রাখতে পারেনি। তাঁদের কলবে ছিল দৃঢ় ঈমান ও আল্লাহভীতি। এ প্রসঙ্গে কাতাদাহ রহ.আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি.কে প্রশ্ন করেছিলেন,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথীবর্গ অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম কি হাসা-হাসি করতেন? উত্তরে ইবনে উমর রাযি.বলেন,হ্যা,তাঁরা হাসা-হাসি করতেন। তবে তাঁদের কলবে ঈমান ছিল পাহাড়ের চেয়েও দৃঢ় ও অবিচল। (শরহুস সুন্নাহ ৩৩৫১)

অধিক ও অট্টহাসির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা

হাসি স্বভাবত ভালো একটি বিষয়। তবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে এর ব্যবহার করা বাঞ্চনীয়। অকারণে অধিক পরিমাণ হাসা-হাসি ও অট্টহাসি মানুষের হৃদয়কে কঠিন করে দেয়। এজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে হাসতে নিষেধ করেছে। হযরত রাসুল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অধিক পরিমাণে হাসবে না। কেননা অধিক হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে এবং মৃত্যুকে ভূলিয়ে দেয়। (সুনানে তিরমিযী  ২৩০৫)

حَدَّثَنَا أَبُو بِشْرٍ، بَكْرُ بْنُ خَلَفٍ حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ الْحَنَفِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حُنَيْنٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ لاَ تُكْثِرُوا الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيتُ الْقَلْبَ ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অধিক হাসবে না। কারন অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়। 
আত তা'লিকুর রাগীব ৩/১৭৯,  সহীহাহ ৫০৬, সুনানে ইবনে মাজাহ ৪১৯৩

এজন্য অধিক হাসি থেকে বিরত থাকতে হবে।

আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে সঠিক উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন।
আমিন

Post a Comment

0 Comments