Recent Tube

তাফসীর ইবনে আব্বাস মোটেই সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে প্রমাণিত তাফসীরের কিতাব নয়।

তাফসীর ইবনে আব্বাস মোটেই সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে প্রমাণিত তাফসীরের কিতাব নয়। 
তাফসীর ইবন আব্বাস বা “তানওয়ীর আলমিকবাস মিন তাফসীর ইবন আব্বাস (تنوير المقباس من تفسير بن عباس)” নামক কিতাবের লেখক আবু তাহের মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব আল-ফায়রুযাবাদী (أبو طاهر محمد بن يعقوب الفيروزآبادى) (মৃত্যু ১৪১৪ খৃ/৮১৭ হি.)। এই তাফসীরকে সনদ সহকারে সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর প্রতি সম্পৃক্ত করা হয়। কিন্তু এই সনদ দুর্বল এবং অনির্ভরযোগ্য। মুসলিম স্কলারগণ এই তাফসীরকে সম্পূর্ণরুপে বর্জন করেছেন।

কিতাবের প্রারম্ভেই লেখক যে সনদে ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে তাফসীরগুলি উল্লেখ করেছেন সেটি নিম্নরূপঃ

أخبرنَا عبد الله الثِّقَة بن الْمَأْمُون الْهَرَوِيّ قَالَ أخبرنَا أبي قَالَ أخبرنَا أَبُو عبد الله قَالَ أخبرنَا ابو عبيد الله مَحْمُود بن مُحَمَّد الرَّازِيّ قَالَ أخبرنَا عمار بن عبد الْمجِيد الْهَرَوِيّ قَالَ أخبرنَا عَليّ بن إِسْحَق السَّمرقَنْدِي عَن مُحَمَّد بن مَرْوَان عَن الْكَلْبِيّ عَن ابي صَالح عَن ابْن عَبَّاس

আবদুল্লাহ, বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনাকারী, আল-মামুন আল-হারওয়ায়ী এর পুত্র আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন > পিতা > আবু আব্দুল্লাহ > আবু উবায়দুল্লাহ মাহমুদ ইবন মারওয়ান আল-রাযী > আম্মার ইবন আব্দ আল-মাজীদ আল-হারওয়ায়ী > আলী ইবন ইসহাক আল-সামরকান্দী > মুহাম্মাদ ইবন মারওয়ান > আল-কালবী > আবু সালিহ যিনি বর্ণনা করেছেন যে ইবন আব্বাস বলেছেনঃ

এই সনদে আছেন মুহাম্মাদ ইবনু মারওয়ান আস সুদ্দী আস সাগীর (محمد بن مروان السدي الصغير)। আসুন জেনে নেই এই রাবী সম্পর্কে ।

قال عبد السلام (1) بن عاصم عن جرير بن عبد الحميد: كذاب.
[(1) الحرح والتعديل: 8 / الترجمة 364.]
আব্দুল আসলাম বিন আসেম বলেন , মিথ্যুক।

وَقَال عَباس الدُّورِيُّ (2) ، والغلابي (3) ، عَنْ يحيى بْن مَعِين: ليس ثقة.
[(2) نفسه.(3) تاريخ الخطيب: 3 / 292.]
আব্বাস আদদুররী ও আল-গালবী ইয়াহিয়া বিন মাঈন হতে বলেছেন, তিনি ছিকাহ নন।

وَقَال مُحَمَّد بْن عَبد اللَّهِ بن نمير (4) : ليس بشيءٍ.
[(4) نفسه.]
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ইবনু নুমায়র বলেন, তিনি কিছুই না।

وَقَال يعقوب بْن سفيان الفارسي (5) : ضعيف، غير يقة.
[(5) المعرفة والتاريخ: 3 / 186.]
ইয়াকুব বিন সুফিয়ান আল-ফারসী বলেন, দাঈফ।

وَقَال صَالِح (6) بْن مُحَمَّد الْبَغْدَادِيّ الحافظ: كان ضعيفا، وكان يضع الحديث (7) أيضا.
[(6) تاريخ الخطيب: 3 / 392 – 393.(7) قوله: “الحديث “ليست في نسخة ابن المهندس.]
সালেহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-বাগদাদী আল-হাফেজ বলেনঃ তিনি দাঈফ , হাদীসের ক্ষেত্রে দাঈফ ।

وَقَال أَبُو حاتم (8) : ذاهب الحديث، متروك الحديث، لا يكتب حديثه البتة.
[(8) الجرح والتعديل: 8 / الترجمة 364.]
আবু হাতেম বলেন, তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য, তার হাদীস লিখতে না বলতেন।

وقَال البُخارِيُّ (9) : لا يكتب حديثه البتة (10) .
[(9) ضعفاؤه الصغير، الترجمة 340.(10) بقية كلامه: “سكتوا عنه “.]
ইমাম বুখারী তার হাদীস লিখতে না বলতেন।

জর্ডান থেকে প্রকাশিত  “তানভীর আল-মিকবাস মিন তাফসীর ইবনে আব্বাস” এর ইংলিশ অনুবাদের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছেঃ

“এই তাফসীরের ব্যাখ্যা যে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর নয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে সব রাবীর মাধ্যমে এটি হস্তগত হয়েছে তা মুহাম্মদ ইবনে মারওয়ান পর্যন্ত পৌছেছে, তাঁর থেকে ইবনে আব্বাস পর্যন্ত সনদ হল: মুহাম্মাদ ইবনে মারওয়ান> আল-কালবী > আবূ সালীহ যেটিকে হাদীস বিশারদগণ মিথ্যুকদের সনদ (সিলসিলাতুল কাযীব) বলেছেন। কারন এই রাবীদের সনদ স্পষ্টত সন্দেহপূর্ণ ও অনির্ভযোগ্য।

এমনকি কারো জন্য – ‘এটা যে ইবনে আব্বাস রা: এর তাফসীর নয়’ – তা প্রমাণ করার জন্য হাদীস বিশারদদের সনদ যাচাইয়ের পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের দরকার নেই। এই তাফসীরের বর্ণনাগুলোর মধ্যে বহু বিশৃঙ্খলতা/অসংলগ্নতা রয়েছে যাতে কারোই সন্দেহ থাকতে পারে না যে যিনি এটা লিখেছেন তিনি ইবনে আব্বাস রা: এর বহু শতাব্দী পরে বাস করেছেন।”

Post a Comment

0 Comments