Recent Tube

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রাথমিক পূজি। --অধ্যাপক গোলাম আযম রহঃ।



 ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রাথমিক পুঁজি ;


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী,
চিন্তা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এক
ব্যাপক বিপ্লব,
ইসলামী জ্ঞান চর্চার এক নিখুঁত
পরিকল্পনা, 
উন্নত চরিত্র গঠনের এক মজবুত সংগঠন।

জনসেবা ও সমাজ সংস্কারের এক
বাস্তব কর্মসূচি,
জনকল্যাণমুখী আদর্শ রাষ্ট্র ও সরকার
গঠনের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন।

এ পুস্তিকার উদ্দেশ্য
আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশে বহু বছর থেকে ইসলামী আন্দোলন আল্লাহর আইন ও সৎলােকের শাসন কায়েমের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান অর্জনের উপযােগী বিপুল সাহিত্য সৃষ্টি করেছে। বিরাট সংখ্যায় আল্লাহর বান্দাহ-বান্দীরা আন্দোলনে শরীক হয়েছে।
কয়েকটি সংগঠনের মাধ্যমে দ্বীন কায়েমের যােগ্য লোক তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পূর্বে অল্প কর্মী থাকায় ৭ দিন ও ১০ দিনের দীর্ঘ ট্রেনিং ক্যাম্প করা হতাে। বর্তমানে সকল কর্মীকে ৩ দিনের শিক্ষা শিবিরের সুযােগ দান করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের বিজয়ের জন্য উন্নতমানের কর্মী বাহিনী তৈরি হওয়া জরুরী। মােটামুটি একটা মানে পৌঁছলে যাদেরকে সদস্য (রুকন) বানানাে হয় তাদের মান আরাে বৃদ্ধি পাওয়া প্রয়ােজন। কর্মী ও সদস্যদের (রুকন) মান বৃদ্ধির জন্য তাদের মন মগজে যেসব বুনিয়াদী কথা সব সময় তাজা থাকা দরকার তা বিভিন্ন বইতে ছড়িয়ে আছে।
এসব বই যারা পড়েন তারাও সব কথা মন-মগজে হাযির রাখতে পারেন না। অথচ ঐ সব বুনিয়াদী কথা চেতন মনে হাযির না থাকলে মান বৃদ্ধি দূরের কথা; মান রক্ষাই
অসম্ভব। কর্মী ও সদস্যদের (রুকন) এ প্রয়ােজন পূরণের উদ্দেশ্যেই এ পুস্তিকাটি তাদের হাতে তুলে দিলাম। সংগঠনের সকল
পর্যায়ের দায়িত্বশীলগণ এ পুস্তিকাটি প্রতিটি কর্মীর কাছে পৌঁছাবেন বলে আশা করি।
সবাই যাতে এ পুস্তিকাটি সব সময় সাথে রাখতে পারেন সে উদ্দেশ্যেই পকেট সাইজে প্রকাশ করা হলাে।
পুস্তিকাটির শেষাংশের কথাগুলাে নতুন করে সাজিয়ে পেশ করা হয়েছে।
গোলাম আযম 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

ইসলামী আন্দোলনের 
কর্মীদের প্রাথমিক পুঁজি

কোন একটা ব্যবসা শুরু করতে হলে ঐ ব্যবসার উপযােগী পরিমাণ প্রাথমিক পুঁজি” দরকার যেমন বিশ-পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে পান-বিড়ি সিগারেটের দোকান শুরু করা যায়। কিন্তু এক লাখ টাকার কম মুদি দোকান বা কয়েক লাখের কমে কাপড়ের দোকান শুরু করা যায় না। এ পরিমাণ টাকাকে প্রাথমিক পুঁজি (Primary Capital) বলা হয়। দোকানের যাবতীয় খরচাদির পর এমন পরিমাণ লাভ হতে হবে যাতে পুঁজিটুকু কায়েম থাকে। লাভ কম হলে খরচ চালাবার জন্য পুঁজিতেই হাত দিতে হয়। ফলে আস্তে আস্তে পুঁজি ফুরিয়ে যায় এবং ব্যবসা লাটে উঠে। তাই যে ব্যবসার জন্য যে পরিমাণ প্রাথমিক পুঁজি” দরকার এর কম পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে সে ব্যবসায় উন্নতির কোন আশা নেই, বরং পুঁজিটুকুই কিছুদিনের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে।

দ্বীনের ব্যবসা
আল্লাহর আইন কায়েমের আন্দোলনকে কুরআনে এমন এক ব্যবসা বলা হয়েছে যা দোযখের আযাব থেকে নাজাত দেয়। 
সূরা সফ ১০

কুরআনের ভাষায় ইসলামী আন্দোলনকে “জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ” বা “ইকামাতে দ্বীন” বলা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের মনগড়া আইনকে
উৎখাত করে আল্লাহর আইন কায়েম করার জন্যই রাসূল (সা.) কে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। 
সূরা সফ ৯

এ কাজে যারা রাসূল (সা.)-এর সাথে মনে-প্রাণে শরীক হয়েছিলেন আল্লাহ পাক তাদেরকেই খাটি মুমিন বলে স্বীকার করেছেন। আর যারা রাসূল (সা.)-এর সাথে নামায আদায় করা সত্ত্বেও ঐ কাজে শরীক হতে রাযী হয়নি তাদেরকে “মুনাফিক” বলে ঘােষণা করা হয়েছে। এ দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, দোযখ থেকে নাজাত পেতে হলে ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনে শরীক হওয়া ছাড়া উপায় নাই।
এ ব্যবসার প্রাথমিক পুঁজি এ উপমহাদেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদীর (র.) লিখিত “ইসলামী আন্দোলন ও সাফল্যের শর্তাবলী” নামক বিখ্যাত বইটিতে এ বিষয়ে অত্যন্ত চমৎকার ভাষায় প্রয়ােজনীয় জ্ঞান দান করা হয়েছে। তিনি প্রথমেই উল্লেখ করেছেন যে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে চারটি গুণ অবশ্যই থাকতে হবে। আর কর্মীরা যখন একজোট হয়ে সংগঠন হিসাবে কাজ করবে তখন আরও চারটি সাংগঠনিক গুণের দরকার হবে।

কর্মীদের ব্যক্তিগত চারটি গুণ এবং সাংগঠনিক চারটি গুণ মিলে মােট আটটি গুণ হলাে ইসলামী আন্দোলনের প্রাথমিক পুঁজি”।
ইসলামী আন্দোলনে আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আমি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ঘােষণা করছি যে

১। ইসলামী আন্দোলনের কোন কর্মী এক সময় বেশ অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও তখনই ঢিলা হয়ে যায় বা পিছিয়ে পড়ে যখন তার মধ্যে ব্যক্তিগত ঐ জন্যই রাসূল (সা.) কে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।
সূরা সফ ৯

এ কাজে যারা রাসূল (সা.)-এর সাথে মনে-প্রাণে শরীক হয়েছিলেন আল্লাহ পাক তাদেরকেই খাটি মুমিন বলে স্বীকার করেছেন। আর যারা রাসূল (সা.)-এর সাথে নামায আদায় করা সত্ত্বেও ঐ কাজে শরীক হতে রাযী হয়নি তাদেরকে “মুনাফিক” বলে ঘােষণা করা হয়েছে। এ দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, দোযখ থেকে নাজাত
পেতে হলে ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনে শরীক হওয়া ছাড়া উপায় নাই।

এ ব্যবসার প্রাথমিক পুঁজি
এ উপমহাদেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদূদীর (র.) লিখিত “ইসলামী আন্দোলন ও সাফল্যের শর্তাবলী” নামক বিখ্যাত বইটিতে এ বিষয়ে অত্যন্ত চমৎকার ভাষায় প্রয়ােজনীয় জ্ঞান দান করা হয়েছে। তিনি প্রথমেই উল্লেখ করেছেন যে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে চারটি গুণ অবশ্যই থাকতে হবে। আর কর্মীরা যখন একজোট হয়ে সংগঠন হিসাবে কাজ করবে তখন আরও চারটি সাংগঠনিক গুণের দরকার হবে।

কর্মীদের ব্যক্তিগত চারটি গুণ এবং সাংগঠনিক চারটি গুণ মিলে মােট আটটি গুণ হলাে ইসলামী আন্দোলনের প্রাথমিক পুঁজি”।
ইসলামী আন্দোলনে আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আমি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ঘােষণা করছি যে

১। ইসলামী আন্দোলনের কোন কর্মী এক সময় বেশ অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও তখনই ঢিলা হয়ে যায় বা পিছিয়ে পড়ে যখন তার মধ্যে ব্যক্তিগত ঐ চারটি গুণের যে কোনটির অভাব দেখা দেয়।

২। সংগঠনের যে কোনাে পর্যায়ে- ইউনিট,
ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা বা জিলায় তখনই সমস্যা ও সংকট দেখা দেয় যখন সেখানে সাংগঠনিক ঐ চারটি গুণের কোনাে একটির অভাব দেখা দেয়।

ইসলামী আন্দোলনের চারটি সংগঠন
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির,
ইসলামী ছাত্রীসংস্থা ও শ্রমিক কল্যাণ
ফেডারেশন- এ চারটি সংগঠনের মাধ্যমে
ব্যক্তিগঠনের দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। তাই
কর্মীদের ব্যক্তিগত চারটি গুণ ও সাংগঠনিক চারটি গুণের গুরুত্ব ঐ সবক’টি সংগঠনের সকলের জন্য সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী আন্দোলনের সাফল্য এসব গুণ অর্জনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে। এসব গুণের যে কোনটির অভাব হলে আন্দোলনের মহান উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বাধ্য। তাই ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীকে এ আটটি গুণের কথা সব সময় মনে রাখতে হবে। ইউনিট বৈঠকে, টি.সি বা টি.এস চলাকালে এবং বিভিন্ন সময় দেখা-সাক্ষাৎ হলে এ আটটি গুণ নিয়ে আলােচনা করতে থাকলে সব সময় মনে রাখা সহজ হবে।

কর্মীদের ব্যক্তিগত চারটি গুন

১। দ্বীনের ইলম ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মী সমাজে তখনই কর্মী হিসাবে পরিচিত হয় যখন সে অন্যকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়। মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে বুঝাবার চেষ্টা করতে হলে ইসলামের সঠিক জ্ঞান হাসিল করতেই হবে। যে নিজেই ইসলামকে ঠিক মতাে বুঝে না সে অন্যকে কেমন করে বুঝাবে? এ বিষয়ে কয়েকটি কথার দিকে খেয়াল রাখতে হবে

ক. দ্বীনের ইলম যতটুকু জানা গেল ততটুকুই অপরের নিকট পৌছবার জন্য রাসূল (সা.) হুকুম করেছেন। যতটুকু অন্যের নিকট পৌছাবে ততটুকু ইলমই মজবুত হবে। অন্যকে বুঝাতে চেষ্টা করলেই নিজের জ্ঞান গভীর হয়।

খ. দ্বীনের দাওয়াত দিতে গেলে মানুষ নানা রকম প্রশ্ন করবে। প্রশ্নের সঠিক জওয়াব না জানলে গোঁজামিল না দিয়ে উত্তর শিখে জওয়াব দেবেন। এভাবেই দাওয়াতী কাজের ফলে জ্ঞান বাড়তে থাকবে।

গ. দাওয়াতী কাজ কমিয়ে দিলে নিজের হাসিল করা ইলমও কমতে থাকে।

২। ইসলামী ইলমের প্রতি ইয়াকীন বা
অবিচল বিশ্বাস দ্বীনের দাওয়াত দিতে গেলে এমনসব লােকেরও নাগাল পাওয়া যায় যারা ইবলিসের যােগ্য খলিফা হিসাবে ইসলাম সম্পর্কে এমনসব কথা বলে যা কর্মীর মনেও সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে।
ইবলিসের নিকট কুযুক্তির অভাব নেই। মহাজ্ঞানী লােককেও ধোকা দেয়ার যােগ্যতা তার আছে। ইবলিসের শাগরিদেরা নানা অজুহাতে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়। তাছাড়া ইসলাম বিরােধীদের দাপটে এবং বাতিল শক্তি প্রভাব প্রতিপত্তি দেখে ইসলামের সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ বা ইসলামের বিজয় সম্পর্কে নিরাশা সৃষ্টি হতে পারে। একমাত্র মজবুত ঈমানই (ইয়াকীন) এ সব রকম অবস্থায় কর্মীকে সবল রাখতে পারে। কর্মীকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহ তায়ালার দেওয়া জ্ঞানে সামান্য ভুলও নেই। কমী যদি কোন প্রশ্নের জওয়াব দিতে না পারে তখন এ কথা খেয়াল করবে যে “আমার জ্ঞানের অভাব থাকতে পারে, আল্লাহর জ্ঞান অসীম। কোন প্রশ্নের জওয়াব আমার জানা না থাকলে এর জন্য ইসলাম দায়ী নয়। ইসলামের জ্ঞান অবশ্যই নির্ভুল ও যুক্তিপূর্ণ ।” ইসলামী ইলমের প্রতি এ অবিচল বিশ্বাসই কর্মীর প্রধান ঢাল যা ইবলিস এবং তার খলীফা ও শাগরেদের খপ্পর থেকে তাকে রক্ষা করবে।

৩। আমল বা চরিত্র

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে “আমি কোনাে অবস্থায়ই বিবেকের বিরুদ্ধে চলবাে না।” ইসলামের যেটুকু ইলম আল্লাহ পাক দিয়েছেন, কোন আমল যেন এর বিপরীত হয় সে বিষয়ে সব সময় সাবধান থাকতে হবে। যে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলে না এবং যার চরিত্রে মানুষ সাচ্চা মুমিনের গুণাবলী দেখতে পায় না সে যখন অন্যকে দ্বীনের পথে ডাকে তখন সে হাসির পাত্র হয়ে পড়ে। নিজের জীবনেই যে দ্বীন কায়েম করেনা সে গােটা দেশে আল্লাহর আইন কায়েমের কথা বললে তার কথা কে কান দেবে?
কর্মীর মধ্যে এটুকু যােগ্যতা সৃষ্টি হতে হবে যে, আল্লাহ পাক যে কাজে খুশী শুধু তাই করবে এবং যে কাজে তিনি অসন্তুষ্ট সে কাজ কোন অবস্থায়ই করবেনা। এর ফলেই ঐ মানের চরিত্র গড়ে উঠবে যা কর্মীকে দুনিয়া ও আখিরাতে সত্যিকার সাফল্য দান করবে।

৪। ইকামাতে দ্বীনকে জীবনের উদ্দেশ্য
মনে করা

দুনিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। রুযী-রােযগার করা, বিয়ে-শাদী করা, সন্তানসন্ততি লালন-পালন করা, ডিগ্রি হাসিলের জন্য লেখাপড়া করা, চাকরি বা ব্যবসা করা ইত্যাদি সবাইকেই করতে হয়। বেঁচে থাকতে হলে এসব করা ছাড়া উপায় নেই।
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীকেও এসব করতে হয়। কিন্তু সত্যিকার কর্মী এসব কাজকে জীবনের আসল উদ্দেশ্য মনে করে না। তার ভাবধারা ভিন্ন। সে বিশ্বাস করে যে, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতের অনন্ত অসীম জীবনে সুখ-শান্তি পেতে হলে শুধু বেঁচে থাকার জন্য যা করতে হয় ততটুকু করলেই চলবে না।
তার ভাবনা নিম্নরূপ : “দুনিয়ায় বেঁচে থাকবার জন্য যা কিছু করতে হয় তা করব বেঁচে থাকার প্রয়ােজনেই। কিন্তু বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য কী? কী জন্য বেঁচে থাকব? আমার জীবনের উদ্দেশ্য কি শুধু পশুর মত খেয়ে দেয়ে বেঁচে থাকা? নিশ্চয়ই নয়। আল্লাহর দ্বীনকে কায়েম করার জন্যই
আমার জীবনকে বিলিয়ে দেব। দ্বীনের দাবীই আমার নিকট অগ্রগণ্য।” যে কমী এভাবে জীবনে চলার সিদ্ধান্ত নেয় সে-ই তার ২৪ ঘন্টার কাজ হিসাব করে চলে। সে ইসলামী আন্দোলনের দাবী পূরণ করাকেই প্রধান কর্তব্য মনে করে এবং এ কর্তব্য পালনের জন্য বেঁচে থাকার প্রয়ােজনে যা করা দরকার ততটুকুই করে। দুনিয়ার উন্নতি, ধন-দৌলত, মান-সম্মান, সুখ-সুবিধা তার জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য নয়। দ্বীনের দাবী পূরণ করার জন্য দুনিয়ার
যতটুকু নেয়ামত আল্লাহ পাক দান করেন তাতেই সে সন্তুষ্ট থাকে। দুনিয়ার সুখ-সুবিধার স্বার্থে সে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বে কখনও অবহেলা করে না। এ দায়িত্ব পূর্ণরূপে পালন করার সাথে সাথেই সে দুনিয়ার উন্নতির জন্য যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করে।

চতুর্থ গুণটির গুরুত্ব

ইলম, ইয়াকীন ও আমলের গুণ অর্জনের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে থাকলেই এক পর্যায়ে একজন কর্মী সংগঠনের রুকন বা সদস্য হয়। একটি নির্দিষ্ট মানে না পৌছলে কোন সংগঠনেই সদস্য করা হয় না। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে কোন কোন রুকন বা সদস্যের মান কমে যায়।
এবং শেষ পর্যন্ত রুকনিয়াত বা সদস্যপদ হারাতে বাধ্য হয়। চতুর্থ গুণটির অভাবেই এ দুর্দশা ঘটে থাকে। এমন কি এ গুণটির অভাব হলে অন্য তিনটি গুণেও ঘুন ধরে। তখন ইলম কমতে থাকে, ঈমানে দুর্বলতা দেখা দেয় ও চরিত্রে অবনতি ঘটতে থাকে। চতুর্থ গুণটি যদি বহাল থাকে তাহলে ঐ তিনটি গুণ ক্রমাগত বাড়তেই থাকে।

সাংগঠনিক চারটি গুণ

দ্বীনের সঠিক ও নির্ভুল জ্ঞান, দ্বীনের প্রতি
অবিচল বিশ্বাস, সে অনুযায়ী চরিত্র গঠন এবং দ্বীন কায়েমকে জীবনের উদ্দেশ্য মনে করা- এ চারটি এমন মৌলিক গুণ যা প্রতি কর্মীকে ব্যক্তিগতভাবে হাসিল করতে হবে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ লােকও যদি আলাদা আলাদাভাবে একা একা তাদের মধ্যে এ সব গুণ পয়দা করার চেষ্টা করে তবুও দ্বীনকে বিজয়ী করা কিছুতেই সম্ভব হবেনা।

দ্বীনকে বিজয়ী করতে হলে ঐ কর্মীদেরকে
জামায়াতবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ :
নিছক ব্যক্তিগত চেষ্টায় সমাজ-ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা যায় না। তাই নবী ও রাসূলগণও জামায়াত কায়েম করে দলবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছেন। তাই ইসলামী সংগঠনের সকল স্তরে চারটি গুণ থাকা অত্যন্ত জরুরী। এর কোন একটি গুণের অভাব থাকলে সংগঠন অচল হতে বাধ্য।

১। ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসা

সংগঠনের সকল কর্মী দ্বীনী ভাই ও বােন হিসাবে একে অপরকে মহব্বত করবে। কারণ তারা দুনিয়ার কোন স্বার্থ পাওয়ার জন্য সংগঠনে যােগদান করেনি। তাদের সম্পর্কের ভিত্তিই হলাে দ্বীন ও ঈমান। রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়তা থেকে দ্বীনের ভিত্তিতে আত্মীয়তা আরও গভীর ও পবিত্র বলে অনেক ক্ষেত্রেই প্রমাণিত।

আল্লাহ পাক ঘােষণা করেছেন যে, তার দিলে যে রহম বা দয়া রয়েছে এর মাত্র একশ ভাগের এক ভাগ গােটা সৃষ্টির মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পশু যে তার সন্তানকে স্নেহ করে তাও ঐ এক ভাগের অংশ।আল্লাহর রহমের ৯৯ ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এক মুমিনের সাথে আর এক মুমিনের যে সম্পর্ক তার মাধ্যম
স্বয়ং আল্লাহ। তাই মুসলিমদের মধ্যে ভাই ভাই সম্পর্ক যদি গভীর হয় তাহলে তা ঐ ৯৯ ভাগের অংশও হতে পারে। দালানের ইটগুলােকে সিমেন্ট দিয়ে একত্র করে মজবুত করতে হয়। দ্বীনী মহব্বত, একে অপরের মঙ্গল কামনা, একে অপরের জন্য সহানুভূতি ও ত্যাগ স্বীকার ইত্যাদি ইসলামী সংগঠনের সিমেন্ট। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ঐ গুণটি ছিল বলেই কুরআনে “রুহামা-উ বাইনাহুম” (একে অপরে প্রতি রহম দিল) বলে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। কর্মীদের মধ্যে এ গুণটি যত বেশি গভীর হবে সংগঠন ততােই বেশি মজবুত হবে। এ গুণটি দুর্বল হলে শয়তান সহজেই ফাটল ধরাতে সক্ষম হয়।

২। পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ

সংগঠনের যাবতীয় কাজ সমাধা করার জন্য যত সিদ্ধান্ত দরকার তা পরামর্শের ভিত্তিতে নিতে হবে। সংগঠনের দায়িত্বশীল নিজের মরমী মতাে বা নির্দিষ্ট বডি বা ফোরামে পরামর্শ না করে সিদ্ধান্ত নিলে সে সিদ্ধান্ত সবাই খুশি হয়ে মেনে নেয় না। সংগঠনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট ফোরাম থাকতে হবে, যা মজলিসে শুরার মতাে দায়িত্ব পালন করবে। পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হলে কয়েকটি নিয়ম সবাইকে মেনে চলতে হবে

ক. প্রত্যেকে ঈমানদারীর সাথে দ্বীনের স্বার্থে নিজের মত প্রকাশ করবে। মনের মধ্যে কোন কথা লুকিয়ে রাখবে না।

খ. আলােচনার সময় নিজের মতের পক্ষে
সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য জিদ ধরবে না বা অপর মতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পােষণ করবে না।

গ. খােলা মেলা আলােচনার পর অধিকাংশ লােক যে মতের পক্ষে রায় দেয় তা-ই সংগঠনের সিদ্ধান্ত হিসাবে সবাইকে মেনে নিতে হবে।

ঘ. এ সিদ্ধান্ত যারা সঠিক মনে করে না তারা পরবর্তী কালে ঐ ফোরামে সে সিদ্ধান্ত
পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু
অন্য কোথাও এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করবে না।

ঙ. সিদ্ধান্তের সাথে একমত না হলেও
সংগঠনের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ
করবে। যে এসব নিয়ম মেনে চলতে রাযী নয় তার সংগঠন ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সংগঠনে থাকতে হলে অধিকাংশের মত মেনে নিতেই হবে। কারণ এ নিয়ম ছাড়া একদল লোক কখনাে এক সাথে চলতে পারে না।

৩। সাংগঠনিক শৃংখলা বা টীম স্পিরিট

সংগঠনে শামিল লােকদের কতক পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে, আর বাকী সবাই তাদের আদেশ মতাে কাজ করে। এভাবে আমীরের দায়িত্ব ও মা’মুরের দায়িত্ব সংগঠনের সবাই নিয়ম অনুযায়ী পালন করলে চমৎকার শৃংখলা কায়েম হয়।

যেমন, বিমানের ক্যাপ্টেন যখন ইঞ্জিন চালু করে তখন গােটা বিমানই কর্মচঞ্চল হয়ে পড়ে এবং এক কমান্ড মেনে বিমানের সব যন্ত্র নিজ নিজ কাজ করতে থাকে। সংগঠনের মধ্যে এমনি ধরণের টীম স্পিরিট থাকতে হবে। কমান্ড করার দায়িত্ব যার তার নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে সংগঠনের সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই সংগঠন এর প্রতিটি কর্মসূচি
সফলতার সাথে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হবে।

৪। সংশােধনের উদ্দেশ্যে সমালােচনাঃ

কোন মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। সংগঠনের
দায়িত্বশীল ও কর্মীদের সবারই ভুলত্রুটি হতে পারে। তাই সংগঠনকে ত্রুটিমুক্ত ও সুস্থ রাখার জন্য ভুল সংশােধনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যদিসংগঠনে এ বিষয়ে বিধি-বিধান রাখা না হয় তাহলে ভুলত্রুটি তাে দূর হবেই না, তা ছাড়া সংগঠনে গীবতের রােগ ছড়াবে এবং বিভেদ  সৃষ্টি হবে। এর জন্য নিম্নরূপ নিয়ম পালন করতে হবে।

(ক) কারাে চোখে কোন ভুল বা দোষ ধরা
পড়লে প্রথমে যার মধ্যে দোষ দেখা গেল
তাকে দরদের সাথে এবং সংশােধনের
নিয়তে ক্রটিটুকু ধরিয়ে দিতে হবে।

(খ) যার ভুল বা দোষ ধরা হলাে তার বিবেক যদি ভুল স্বীকার করে তাহলে মুখেও তাস্বীকার করতে হবে এবং ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য খুশি হয়ে তা সংশােধন করে নেবে। ভুল বুঝা সত্ত্বেও তা স্বীকার না করা
মারাত্মক দোষ। এ দোষ থেকে বেঁচে
থাকতে হবে।

(গ) সমালােচনা ও ভুল ধরার উদ্দেশ্য কাউকে হেয় বা অপমান করা নয়। সংশােধন করাই আসল উদ্দেশ্য। তাই ভদ্র ভাষায়, দরদের সুরে এবং মহব্বতের পরিবেশে কথা বলতে হবে। নামাযে ইমাম সাহেবের ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য অত্যন্ত শালীন ভাষায় লুকমা দিতে হয়। সংশােধনের উদ্দেশ্যে সমালােচনা করতে এ নীতিই পালন করতে হবে।

(ঘ) যার ভুল ধরা হলাে তিনি যদি তা স্বীকার না করেন অথবা তার কথায় যদি সমালােচক সন্তুষ্ট হতে না পারেন তাহলে সংগঠনের উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলের নিকট অভিযােগ করবেন। কিন্তু অন্য কোথাও গীবত করে বেড়াবেন না।

সাংগঠনিক সমস্যার কারণ এই চারটি গুণের যে কোনটির অভাব হলেই সাংগঠনিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে চতুর্থ গুণটির অভাবেই মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়। দায়িত্বশীল যদি সমালােচনার সুযােগ না দেন বা সমালােচনা সহ্য না করেন অথবা সমালােচনাকারী যদি অদ্র ভাষায় বা মেজায দেখিয়ে কথা বলেন তাহলে গােটা পরিবেশই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
মাঝে মাঝে দায়িত্বশীল ব্যক্তি সহকর্মীদেরকে তার ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানাবেন। এটাই ইসলামী আন্দোলনের ঐতিহ্য। ভুল-ত্রুটি থেকে বেঁচে থাকার এটাই সঠিক উপায়। এ রীতি চালু করা হলে অভদ্র সমালােচনা ও গীবতের পথ বন্ধ হয়ে যাবে এবং সংগঠন সব সময় সুস্থ থাকবে।

ব্যবসায় লাভ করতে হলে ব্যবসার পুঁজি যােগাড় হলেও সে পুঁজিকে কৌশল ও যােগ্যতার সাথে কাজে না লাগাতে পারলে ব্যবসায় উন্নতি হয় না। কোন রকমে পুঁজিটুকু বাঁচিয়ে রাখাই যথেষ্ট নয়। বুদ্ধি বিবেচনা খাটিয়ে পুঁজিকে ব্যবহার করতে পারলে পুঁজির পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং
ব্যবসায়ে অগ্রগতি হতে থাকে।
দ্বীনের ব্যবসায়ে উন্নতি করতে হলেও কর্মীদের ব্যক্তিগত ৪টি গুণ ও সাংগঠনিক ৪টি গুণ মিলে যে পুঁজিটুকু প্রয়ােজন তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। এ ব্যবসায় প্রচুর লাভ করতে হলে এবং পুঁজির পরিমাণ বাড়াতে হলে কর্মীর দিলে ৬টি জযবা পয়দা করতে হবে

১। আল্লাহর প্রতি শুকরিয়ার জযবা

দ্বীন ও ঈমানই হলাে  আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত। ইসলামী আন্দোলনে শরীক হওয়ার ফলে দ্বীনের যে সঠিক ধারণা পাওয়া গেল এবং দ্বীন কায়েমের যে ঈমানী দায়িত্ববােধ পয়দা হলাে এর শুকরিয়া অন্তরে গভীরভাবে অনুভব করতে হবে।

দু'রকমভাবে এ শুকরিয়া আদায় করতে হবে

(ক) মৌখিক শুকরিয়াঃ আল-হামদুলিল্লাহ বলতে থাকা

(খ) আমলী বা বাস্তব শুকরিয়া ও আনসারুল্লাহর দায়িত্ব পালন করা।আল্লাহর যে বান্দাহ বান্দীরা এখনও এ পথে
আসেনি তাদের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াত পৌছাতে থাকলে আল্লাহ তা'য়ালার সাহায্যকারীর (আনসারুল্লাহ) মর্যাদা হাসিল হয়। হেদায়াতের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে। যে অন্য কোন মানুষের হেদায়াত পাওয়ার জন্য দাওয়াতী কাজ করে তাকে আল্লাহ তার কাজে সাহায্যকারী বলে গণ্য করেন।

২। সহীহ নিয়তের জযবা

রিদওয়ানুল্লাহ (আল্লাহর সন্তুষ্টি)। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোন বড় নেক আমলও আল্লাহ কবুল করেন না। এ জযবার সারকথা হলাে : “আমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের মুক্তির উদ্দেশ্যেই এ পথে এসেছি। দুনিয়ায় কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ পাওয়ার নিয়্যতে এ আন্দোলনে আসিনি।”

৩। বেহেশতে যাওয়ার জযবা

বাইয়াত বিল্লাহ- “আমি দোযখে যেতে চাই না। আমাকে বেহেশতই পেতে হবে।” এ জযবা মযবুত থাকলে জীবনে পদে পদে ভুল পথে চলা থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়।বাইয়াত মানে বিক্রয়। সূরায়ে তাওবার ১১১ নং আয়াতে আল্লাহ পাক ঘােষণা করেছেন যে, যারা তাদের জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রি করবে তাদেরকেই এর দাম হিসাবে বেহেশত দান করবেন। যে সত্যিকার মুমিন সে আল্লাহকেই তার জান ও মালের আসল মালিক মনে করে এবং সারা জীবন আল্লাহর মরী অনুযায়ী জান ও মাল ব্যবহার করার চেষ্টা করে। নাফসের তাড়না, শয়তানের ধোকা এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের চাপে যাতে আল্লাহর মরযীর বিরুদ্ধে চলতে বাধ্য হতে না হয় সে জন্যই ইসলামী সংগঠনের অগ্রসর হওয়া জরুরী।

৪। আল্লাহর গােলাম হওয়ার জযবা
“আমি একমাত্র আল্লাহর গােলাম হয়ে চলব। নফসের বান্দাহ, শয়তানের গােলাম বা অন্য কোন শক্তির দাস হতে রাযি নই।” এ জবাই মনে শক্তি যােগায়। যারা এ জযবা নিয়ে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের (সা.) তরীকা মেনে চলার চেষ্টা করে তারাই আল্লাহর গােলাম হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে। আল্লাহর গােলাম সবাই এক মানের নয়। কুরআনে দু'মানের গােলামের বিবরণ পাওয়া যায়

ক. আল্লাহর দাস (ইবাদুল্লাহ) 

এটা সাধারণ মান। আবদ মানে দাস। এর বহু বচন ইবাদ। যারা আল্লাহর হুকুম পালন করা ও আল্লাহর নিষেধ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে এবং যখনই ত্রুটি হয়ে যায় তখনই তওবা করে ও সংশােধন হতে চেষ্টা করে তারাই ইবাদুল্লাহ।

খ. আল্লাহর ওয়ালী (আওলিয়াউল্লাহ)
 
এটা আল্লাহর গােলামদের উন্নত মান। ওয়ালী (অলী) মানে বন্ধু, সাহায্যকারী। যারা সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহর সকল হুকুম পালন করে এবং সব সময়ই সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে তারাই আল্লাহর ওয়ালী বা আদরের দাস।

৫। আল্লাহর খলীফা হওয়ার জযবা (খুলাফা উল্লাহ) 
আল্লাহ পাক কুরআন ও সুন্নাহকে মানব জাতির জীবন বিধান হিসাবে রাসূলের (সা.) কাছে পাঠিয়েছেন। সকল সৃষ্টির জন্যই আল্লাহ বিধান রচনা করেছেন। সেসব বিধান রাসূলের (সা.) মাধ্যমে পাঠাননি। আল্লাহ নিজেই সব সৃষ্টির উপর তাঁর রচিত বিধান কায়েম করেন। কিন্তু মানুষের জন্য যে বিধান (ইসলামে) রাসূলের (সা.) নিকট পাঠালেন তা তিনি নিজে সরাসরি কায়েম করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে সে বিধান কায়েমের দায়িত্ব রাসূল (সা.) ও রাসূলের প্রতি যারা ঈমান আনে তাদের উপর দেয়া হয়েছে।
খলীফা শব্দের অর্থ প্রতিনিধি। এরই বহুবচন খুলাফা। খুলাফাউল্লাহর দায়িত্ব হলাে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামকে কায়েম করার চেষ্টা করা।

৬। শহীদ হওয়ার জযবা (শুহাদাউ লিল্লাহ)

হাশরের ময়দানে নবীর পরই শ্রেষ্ঠ মর্যাদা হলাে শহীদদের। শহীদগণ বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবেন। শহীদ হওয়ার সুযােগ পাওয়া বিরাট সৌভাগ্যর বিষয়। কেউ ইচ্ছা করলেই শহীদ হতে পারে না। আল্লাহ পাক যাকে শহীদ হওয়ার গৌরব দিতে চান সেই কেবল এ বিরল মর্যাদার অধিকারী হয়।

এ বিষয়ে রাসূল (সা.) আমাদের জন্য এক
বিরাট সুসংবাদ রেখে গেছেন। তিনি বলেন, “যে 'আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর নিকট শাহাদাতের আবেদন করবে সে বিছানায় মারা গেলেও আল্লাহ তা'য়ালা তাকে শহীদের মর্যাদা দেবেন।”
মৃত্যু একদিন অবশ্যই আসবে। মরতেই যখন হবে তখন শহীদের মৃত্যু কামনা করাই বুদ্ধিমান মুমিনের লক্ষণ।

শেষ কথা
কর্মীদের ব্যক্তিগত চারটি গুণ, সাংগঠনিক চারটি গুণ, কর্মীদের ছয়টি সহীহ জযবা মিলে (৪+৪+৬) মােট ১৪টি পয়েন্ট হয়েছে। এ চৌদ্দটি কথা কর্মীদের মন-মগজে হামেশা তাজা না থাকলে শয়তান ধোকা দিয়ে তাদেরকে গাফেল করে ফেলার সুযােগ পাবে। তাই সংক্ষেপে এ পয়েন্টগুলাে এক সাথে কর্মীদের হাতে তুলে দেয়া কর্তব্য মনে করলাম।
এ সংক্ষেপ কথাগুলাে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ :
বুঝবার জন্য নিম্নের বইগুলাে ভাল করে পড়তে হবেঃ

১। ইসলামী আন্দোলন-সাফল্যের শর্তাবলী

এই বইটিতে কর্মীদের চারটি গুণ ও সাংগঠনিক চারটি গুণ আলােচনার পর থেকে বেঁচে থাকার প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

২। হেদায়াত 

এ বইটিতে আল্লাহর সাথে
সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার উপায় অতি চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এ সম্পর্ক গড়ে তােলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

৩। ইসলামী আন্দোলন কর্মীদের সহীহ জযবা ও এতে ৬টি জযবার ব্যাখ্যা রয়েছে।

৪। বাইয়াতের হাকীকত ও কর্মীদের ৬টি
জ্যবার তৃতীয় জযবাটি সঠিকভাবে বুঝতে হলে এ ছােট্ট বইটি পড়া দরকার।

৫। ইসলামী আন্দোলন সাফল্য ও বিভ্রান্তি ও ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত কী কী সাফল্য কামনা করা উচিত ও সাংগঠনিক সাফল্যের রূপ কী এবং কিভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে সেসব বিষয়ে এতে আলােচনা করা হয়েছে।

৬। মনটাকে কাজ দিন
ইবলিসের ষড়যন্ত্র হতে বাঁচতে হলে মনটাকে কোন সময় বেকার রাখা উচিত নয়। মনটাকে কিভাবে কাজ দিলে শয়তান সেখানে তার কারখানা কায়েম করতে ব্যর্থ হয় সে কৌশল এ বইটি থেকে সংগ্রহ করতে হবে।

৭। আল্লাহর আইন ও সৎ লােকের শাসন

এটা কর্মীদের মুখে শ্লোগান রূপে উচ্চারিত হয়। এই বইটি ভাল করে না পড়লে আল্লাহর আইনের দিকে দাওয়াত দেয়া কি করে সম্ভব হবে? দেশের সব শিক্ষিত লােকদের কাছে এ বইটি পৌছানাে কর্মীদের কর্তব্য। মাত্র একটি বই থেকে পাঠক ইসলামী আন্দোলন কী চায় তা সহজে বুঝতে পারবে। দাওয়াতী উদ্দেশ্যে এই বইটি ব্যাপকভাবে পৌছালে বিরাট কাজ হবে, তবে কর্মীকে পয়লা নিজে পড়তে হবে।

এক নজরে ১৪টি পয়েন্ট

১। ইলম-ইসলাম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান।
২। ইয়াকীন-ইসলামের সত্যতার প্রতি মজবুত ঈমান।
৩।  আমল-ইসলামের বিধান অনুযায়ী চরিত্র গঠন।
৪।  দ্বীনই জীবনের উদ্দেশ্য ইসলামী আন্দোলনের কাজকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া।
৫।  ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা একে অপরকে দ্বীনি ভাই ও বোন হিসেবে আন্তরিকভাবে মহব্বত করা।
৬। পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সংগঠনের নির্দিষ্ট ফোরামের পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
৭। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা সুসংগঠিত টিম হিসেবে কাজ করা।
৮। সংশোধনের উদ্দেশ্যে সমালোচনা বড়দের সাথে ভদ্র ভাষায় ও সংশোধনের নিয়তে ভুল ধরিয়ে দেয়া।
৯। আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জযবা
ক) মৌখিক শুকরিয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ।
খ) আমলী বা বাস্তব শুকরিয়া আনসারুল্লাহ।
১০। সহি নিয়তে জযবা
রিদওয়ানুল্লাহ।
১১। বেহেশতে যাওয়ার জযবাঃ বাইয়াত বিল্লাহ।
১২। আল্লাহর গোলাম হওয়ার জযবাঃ
ক)  ইবাদুল্লাহ।
খ)  আউলিয়া উল্লাহ।
১৩।  আল্লাহর খলিফা হওয়ার জযবাঃ খুলাফাউল্লাহ।
১৪।  আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার শুহাদাউ লিল্লাহ।
 এ ছয়টি জযবাকে কুরআনের পরিভাষায় পেশ করা হয়েছে।

জামায়াতের বুনিয়াদী আকিদা-বিশ্বাস

আল্লাহ পাকই মানব জাতির একমাত্র রব,
বিধানদাতা ও হুকুমকর্তা।

কুরআন ও সুন্নাহই মানুষের জন্য একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।

মহানবীই (সা.) মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে
একমাত্র অনুসরণযােগ্য আদর্শ নেতা।

সাহাবায়ে কেরামই (রা.) নবীর আনুগত্যের একমাত্র আদর্শ নমুনা।

ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন মুমিন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের মুক্তিই মুমিন জীবনের একমাত্র কাম্য।

জামায়াতে ইসলামীর অবদান

জামায়াত কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে
বলিষ্ঠ ইসলামী সাহিত্য রচনা করেছে।

মাদরাসা শিক্ষিতদেরকে আধুনিক শিক্ষিতদের নিকট ইসলামী শিক্ষা তুলে ধরার যােগ্য বানিয়েছে।

আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যেও ইসলামী
যােগ্যতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।

একদল ইসলামী চিন্তাবিদ, নিঃস্বার্থ কর্মী-বাহিনী ও যােগ্য নেতৃত্ব তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক ময়দানেও সততা, নৈতিকতা ও আন্তরিকতা চালু করেছে।

আমার কাজ

আমি
১. সব সময় চেষ্টা করবাে, যেন প্রতিটি সাংগঠনিক বৈঠকে ঠিক সময়ে যােগদান করতে পারি এবং অসুখ-বিসুিখ বা শরয়ী ওযর ব্যতীত কোন বৈঠকে অনুপস্থিত না থাকি।

২. বিশেষ কারণে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে না পারলে পূর্বেই অনুমতি নেব বা আমার অবস্থা দায়িত্বশীলকে জানাব।

৩. সব সময় দাওয়াতী বই সঙ্গে রাখবাে এবং প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দু'খানা বই বিতরণ করবাে।

৪. কমপক্ষে দু'জন লােককে কর্মী তৈরি করার চেষ্টা করবাে, তাদের সাথে রীতিমত যােগাযােগ করবাে এবং সপ্তাহে একবার অবশ্যই সাক্ষাৎ করবাে।

৫. সব সময় সহযােগী সদস্য ফরম সঙ্গে রাখবাে এবং প্রতিমাসে কমপক্ষে দু'জন সহযােগী সদস্য সংগ্রহ করবাে।

৬. প্রতিদিন দাওয়াতী কাজ ও সাংগঠনিক কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু সময় দেব এবং সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন দাওয়াত সম্প্রসারণ ও কর্মী গঠনের কাজে বের হবাে।

৭. আমার পরিচিত মহল থেকে জামায়াতের জন্য মাসিক বা এককালীন সাহায্য আদায় করার চেষ্টা করবাে এবং নিজের আয়ের একটা উল্লেখযােগ্য অংশ (যথা শতকরা ৫ বা ১০ ভাগ) আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবো।

Post a Comment

0 Comments