Recent Tube

টুকটাক কথামালা-১ জিয়াউল হক।

   

             টুকটা থামালা-
   
আগুন ও আলেমের সোহবত, জ্ঞানার্জন ও প্রসঙ্গকথা:-
আমাদের বিশ্বটা গনগনে প্রোজ্জল্যমান সূর্য থেকে উত্তাপ পায়। সুর্যের তাপে আমরা বেঁচে থাকি, কখনও কখনও তা অসহনীয় হয়ে পড়ে। খোলা আকাশের নীচে ৩৫ ডিগ্রিতে (মরুভুমিতে ৫৬ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখেছি ও সয়েছি) অস্থির হয়ে পড়ি সেই তখনও, যখন সূর্যটা আমার মাথা থেকে অন্ততপক্ষে ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দুরে। 

মাটি থেকে যখন ৮ মাইল উপরে বিমানে করে কোথাও যাই (বিগত ৩৪ বসর ধরে এই যাওয়া আসা নিরন্তর চলছে) দেখি বাইরের তাপমাত্রা তখন -২৮ (মাইনাস ২৮)। কি অবাক কান্ড! মাটি থেকে আট মাইল উপরে উঠে আসলাম সুর্যের আরও কাছে, তারপরেও তাপমাত্রা কমে গেল বাড়ার বদলে!

ভাবনার খোরাক জোগায় না? ভাবনার কি কিছু নেই এখানে? রয়েছে বৈকি। সুর্যের ভেতরে তো দূরের কথা, কাছাকাছি যাবারই ক্ষমতা নেই মানুষের। আমি তো সুর্য আর মাটি; এ দুয়ের মধ্যে কোথাও শুন্যে ভেসে আছি, কারোরই সোহবতে নেই। উত্তাপ পাবো কোথা হতে? 

মাটিতে থাকাবস্থায় সুর্যের উত্তাপ অনুভব করি। কারণ হলো, মাটি সুর্যের উত্তাপকে ধারন করে এবং সেই উত্তাপকেই আমরা অনুভব করি মাটির কাছাকাছি, তথা, মাটির সোহবতে থাকার কারণে। মাটির সোহবতই আমাদের সুর্যের তাপ বুঝতে সহায়তা করে। 

এবারে একটু ভিন্নভাবে ভাবুন। প্রিয় সাহাবি রা: গণ কেন প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: এঁর সান্নিধ্যে, সোহবতে পড়ে থাকতেন দিন রাত! জ্ঞানের উত্তাপ পেতে। যুগে যুগে, বিগত দেড় হাজার বসর ধরে সেই ধারা চলে আসছে। ছাত্ররা আলেম, পীর আর ওস্তাদের সোহবতে থেকে জ্ঞান নেন, জ্ঞানের উত্তাপকে ধারণ করেন। 

জ্ঞানীর সোহবত ছাড়া কার্যকর জ্ঞান অর্জন হয় না। কিছু তথ্য মুখস্থ করাই জ্ঞান নয়, জ্ঞানের প্রায়োগিক উপস্থাপন, প্রত্যক্ষকরণ ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এগুলো ভার্চুয়ালি হতে পারে না। এর জন্য একচুয়ালিটির প্রয়োজন অনিবার্য।

বাবা মা যদি ‘পিটাইয়্যা পিটাইয়্যা’ ওস্তাদের সান্নিধ্যে পাঠিয়ে থাকেন, তবে সেটা এই ‘সোহবত’ পেতেই। জ্ঞানের উত্তাপ পেতে। সোহবতে না থাকলে উত্তাপ অনুভব করা যায় না। সুর্যের নয়, হৃদয়েরও না। জ্ঞানীর সোহবতে না থাকলে জ্ঞান জোটে না।

জ্ঞান মুখস্থ করতে নয়, ধারণ করতে হয়। ঘরে বসে বা ক্লাসরুমে ক্ষণিকের মেকি হাস্যালাপে কিছু তথ্য মুখস্থ করা কিংবা শখের বসে মাঝে মাছে টিচারের কাছে ‘এস্কারশনে’ যাবার মাধ্যমে জ্ঞানর্জন হতে পারে না। তার জন্য সোহবতের প্রয়োজন। কার সোহবতে থাকবো, কার সোহবত নেবো, সেটাও এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটে। সত্যটা বুঝতে পারাতেই মঙ্গল।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments