Recent Tube

২৩ শ্রেণীর মানুষ অভিশপ্ত:

২৩ শ্রেণীর মানুষ অভিশপ্ত: 
-----------------------------------
 হাদীসে যে শ্রেণীর মানুষকে আল্লাহ বা তার রাসুল (সা:) কর্তৃক লানত দেয়া হয়েছে। তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা।
(১) নেশাজাতীয় বস্তু বা মদ সেবনকারী, প্রস্তুতকারক ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেন:
لعن الله الخمر وشاربها وساقيها وبائعها و مبتاعها و عاصرها ومعتصرها وحاملها والمحمولة إليه
“মদ পানকারীকে, মদ পরিবেশনকারীকে, তার ক্রেতা ও বিক্রেতাকে, তার প্রস্ততকারককে, যার জন্য প্রস্তুত করা হয় তাকে, তার বাহককে ও যার জন্য বহন করা হয় তাকে আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।”
(সুনানে আবূ দাউদ : ৩৬৭৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৩৮০)

(২) সূদখোর, সুদদাতা, সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট লিখক ও সাক্ষী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

(৩) মুর্তি, ভাস্কর্য বা ছবি ইত্যাদি নির্মাণকারী।
আবু জুহায়ফা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
.أن النبي ﷺ  لعن آكل الربا وموكله ولعن المصور
"রাসুলুল্লাহ (সা:) সুদখোর, সুদদাতা ও ছবি নির্মাণকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন।"
অন্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত, 
لعن رسول الله ﷺ آکل الربا و موکله و شاهده و کاتبه
"রাসুলুল্লাহ (সা:) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী ও সুদের লেখক সকলকে অভিশাপ দিয়েছেন।"
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৫৯৬২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৩৩৩)

আরো বর্ণিত,  রাসূল (সা:) সুদখোর, সূদদাতা, সূদের লেখক এবং তার সাক্ষীদ্ধয়কে অভিশাপ করেছেন এবং বলেছেন, ওরা সকলেই সমান।(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৫৯৭)

(৪) চোর তথা যে ব্যক্তি অন্যের মাল চুরি করে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সা:) বলেন:
 لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ يَسْرِقُ الْبَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ وَيَسْرِقُ الْحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ
"চোরের উপর আল্লাহ্‌র লা’নত হোক, যখন সে একটি হেলমেট চুরি করে এবং এ জন্য তার হাত কাটা হয় এবং সে একটি রশি চুরি করে এ জন্য তার হাত কাটা হয়।
(সহীহ মুসলিম, হাঃ ১৬৮৭)

(৫) যে ব্যক্তি জমি-জায়গার চিহ্ন সরিয়ে নিজের অংশ বেশী করে।

(৬) যে বাক্তি নিজের মা-বাপকে অভিশাপ দেয়।

(৭) যে বাক্তি কোন মুর্তি বা মাজারের উদ্দেশ্যে কোন প্রাণী যবাই করে।

(৮)  যে ব্যক্তি কোন বিদয়াতিকে প্রশ্রয় দেয়। 

(৯) যারা সমকামী (পুরুষে-পুরুষে বা মহিলায়-মহিলায় যৌন-মিলন করে।)

(১০) যারা পশুর সাথে যৌনসঙ্গম করে।

(১১) যে ব্যক্তি অন্ধকে ভূল পথ নির্দেশ করে। ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন:
ملعون من سب أباه ملعون من سب أمه معلون من ذبح لغير الله ملعون من غيَّر تخوم الأرض ملعون من كَمَه أعمى عن طريق ملعون من وقع على بهيمة ملعون من عمل بعمل قوم لوط
আলী রা: হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন:
لَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهُ  وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ  وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا  وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৭৭১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ৫৮৯১; সহীহ বুখারী, ১৩৭০)

(১২) পুরুষের বেশধারিণী নারী এবং নারীর বেশধারী পুরুষ।  ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন:
لعن رسول الله المتشبهين من الرجال بالنساء والمتشبهات من النساء بالرجال 
"আল্লাহর রসূল সাঃ নারীদের বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশধারিণী নারীদেরকে অভিশাপ করেছেন।" (সহীহ বুখারী)

আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
 "لَعنَ رسول الله ﷺ الرَّجُلَ يلْبسُ لِبْسةَ المرْأةِ، والمرْأةَ تَلْبسُ لِبْسةَ الرَّجُلِ
“আল্লাহর রাসুল (সা:) সেই পুরুষকে অভিশাপ করেন, যে নারীর পোশাক পরিধান করে এবং সেই নারীকে অভিশাপ করেন, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে।”
(সুনানে আবু দাউদ)

(১৩) যে মহিলা মাথায় পরচুলা (Tressal) বাধে। 
আসমা (রাঃ) বলেন, “যে অপরের মাথায় পরচুলা বেধে দেয় এবং যে নিজের মাথায় তা বাধে, এমন উভয় মহিলাকেই নবী সাঃ অভিশাপ করেছেন।” 
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৯৪১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২১২২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৯৮৮)২, ইবনে মাজাহ ১৯৮৮নং)

(১৪) যে সকল মহিলা হাত বা চেহারায় দাগ করে নকশা করে অথবা করায়, চেহারা থেকে যারা লোম তুলে ফেলে, সৌন্দর্য আনার জনা যারা দাতের মাঝে ঘসে ফাক ফাক করে এবং আল্লাহর সৃষ্টি-প্রকৃতিতে পরিবর্তন ঘটায়।
রাসুল (সা.) বলেন: 
لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ وَالنَّامِصَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ؛
(সহীহ বুখারি : ৬০১২; সহীহ মুসলিম : ৫৬৯৫)

(১৫) যে বাক্তি স্ত্রীর পায়খানাদ্বারে সঙ্গম করে। (মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবু দাউদ, সহীহুল জামে, হাদীস নং- ৫৮৮৯)

(১৬) যে স্ত্রী স্বামীর যৌন-আহবানে সাড়া না দিয়ে স্বামীকে রাগান্বিত করে রাত্রিযাপন করে। রাসূল (সা:) বলেন, “স্বামী যখন নিজ স্ত্রীকে (সঙ্গমের উদ্দেশ্যে) তার বিছানার দিকে ডাকে এবং সে আসতে অস্বীকার করে, আর এর ফলে স্বামী তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি যাপন করে, তখন ফিরিস্তামন্ডলী সকাল পর্যন্ত সেই স্ত্রীর উপর অভিশাপ করতে থাকেন।”
(সহীহ বুখারী : ৫১৯৩, সহীহ মুসলিম : ১৪৩৬, সুনানে আবু‌ দাউদ : ২১৪১)

(১৭) যে ব্যক্তি কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করে।  আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন:
لعن الله اليهود والنصارى ; اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد 
“আল্লাহ ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে অভিশাপ করেছেন। কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদা ও নামাযের স্থান) বানিয়ে নিয়েছে।” (সহীহ বুখারী)

(১৮) যে নিজের পিতাকে অস্বীকার করে অন্যকে পিতা বলে দাবী করে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
من ادعی الی غیر ابیه او انتمی الی غیر موالیه فعلیه لعنة الله و الملاٸکة و الناس اجمعین لا یقبل الله منه یوم القیامة صرفا و لا عدلا
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৭০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং- ৫৯৮৭)

(১৯)  যারা কোন সাহাবীকে গালি দেয়। 
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন:
من سب اصحابي فعليه لعنة الله والملائكة والناس اجمعين 
“যে বাক্তি আমার সাহাবাগণকে গালি দেবে তার উপর আল্লাহ, ফিরিস্তাবর্গ এবং সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ হোক।” 
(তাবরানী, মুজামুল কাবীর, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদীস নং- ৩৩৪০)

(২০) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহিতা। ইবনু ওমর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
لعن رسول الله ﷺ الراشی و المرتشی
"রাসুলুল্লাহ (সা:) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহিতা উভয়কে অভিশাপ দিয়েছেন।"
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ৩৫৮০, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩৩৭, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ২৩১৩)

(২১) যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
 جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ  يَشْكُو جَارَهُ فَقَالَ: اطْرَحْ مَتَاعَكَ عَلَى الطَّرِيقِ فَطَرَحَهُ فَجَعَلَ النَّاسُ يَمُرُّونَ عَلَيْهِ وَيَلْعَنُونَهُ فَجَاءَ إِلَى النَّبِيِّ  ﷺ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ مَا لَقِيتُ مِنَ النَّاسِ، قَالَ: وَمَا لَقِيتَ مِنْهُمْ؟ قَالَ: يَلْعَنُونِي، قَالَ: قَدْ لَعَنَكَ اللهُ قَبْلَ النَّاسِ، قَالَ: فَإِنِّي لا أَعُودُ فَجَاءَ الَّذِي شَكَاهُ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ لَهُ: ارْفَعْ مَتَاعَكَ فَقَدْ كُفِيتَ
"এক ব্যক্তি মহানবী (সা:) এর কাছে এসে নিজ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি তোমার আসবাব-পত্র রাস্তায় বের করে ফেলো। সে ফিরে গিয়ে তাই করল। তা দেখে পথচারী লোকেরা কারণ জিজ্ঞাসা করলে প্রতিবেশীর কষ্ট দেওয়ার কথা জানানো হল। সুতরাং সকলে ঐ প্রতিবেশীকে অভিশাপ দিতে লাগল। সে তা শুনে মহানবী (সা:) এর কাছে এসে লোকেদের অভিশাপ দেওয়ার কথা জানালে তিনি তাকে বললেন, তাদের আগে আল্লাহ তোমাকে অভিশাপ দিয়েছেন।’ প্রতিবেশীটি বলল, ‘আমি ওকে আর কষ্ট দেব না।’ অতঃপর অভিযোগকারী মহানবী (সা:) এর কাছে এলে তাকে তার আসবাবপত্র তুলে নিতে আদেশ করলেন এবং তাকে আশ্বস্ত করলেন।  (আবূ দাঊদ, হাদীস :৫১৫৫; ত্বাবারানী হতে সহীহ তারগীব, হাদীস নং- ২৫৫৮)

(২২) যে বাক্তি অস্ত্র উঠিয়ে মুসলিম ভাইকে সন্ত্রস্ত করে।  আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
من أشار إلى أخيه بحديدةٍ فإن الملائكة تلعنُه حتى يدعَها، وإن كان أخاه لأبيه وأمه
“যে বাক্তি তার (মুসলিম) ভায়ের প্রতি কোন লৌহদন্ড (লোহার অস্ত) দ্বারা ইঙ্গিত করে, সে বাক্তিকে ফিরিস্তাবর্গ অভিশাপ করেন; যদিও সে তার নিজের সহোদর ভাই বা মা হোক না কেন।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬১৬)

(২৩) যে বাক্তি নিজের তিন তালাক দেওয়া স্ত্রীকে  হালাল করার উদ্দেশ্যে অপরের সাথে সাময়িক বিয়ে দেয় এবং হিল্লে বিয়ে করে।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত, 
لعن رسول الله  ﷺ المحلل والمحلل له
" রাসুলুল্লাহ (সা:) হিল্লা বিয়ের আয়োজনকারী ও বিবাহকারী উভয়কে অভিশাপ দিয়েছেন।"
(মুসনাদে আহমাদ, সুনানে তিরমিহী, সুনানে নাসাঈ, সহীহুল জামে, হাদীস নং- ৫১০১)
---------------------------------
সংকলন ও সম্পাদনায় 
আরিফুল হক এনামী
প্রভাষক;
আধুনগর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা,
খতিব,শাহ ছমিউদ্দিন জামে মসজিদ
লোহাগাড়া, চট্রগ্রাম।

Post a Comment

0 Comments