Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৫৫, ৷ নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

                              বিতি কিচ্ছা ;
                   র্ব-;

  মরিচিকা, না "শান্তি পথ":
----------------------
        শান্তির অন্বেষায় ব্যতিব্যস্ত কিছু লোক চাতুরীতে সিদ্ধহস্ত হয়ে হাওয়ার তালে পাল তুলে এগিয়ে যেতে চায়। ইতিপুর্বে যে লোকটির রাজাকার হিসাবে মশহুর পরিচিতি ছিল, আজ সে হাওয়ার তালে তাল রেখে পুরোদস্তুর  মুক্তিযোদ্ধা। আটচল্লিশ, উনপঞ্চাশ বছর আগে যার পরিচিতি ছিল দুধর্ষ ডাকাত, কালের পট পরিবর্তনে সে আজ যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ইতিপুর্বে যে ছিল নিরঙ্কুশ জাতীয়তাবাদী,  আজ শত চেষ্টার বদৌলতে সে একজন নিষ্টাবান ধর্ম-নিরপেক্ষ ও আওয়ামী। যার ফলে দেশে আজও দু'চার ডজন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা থাকলেও নাই কোন পঙ্গু রাজাকার। কিন্তু এইসব চাতুর্য চর্চ্চার পরও শান্তি কারো দরজায় এসে ধর্ণা দেয় নাই।

      এইসব চতুররা প্রায়শ: খোলস পাল্টায়, প্রায়শ: সুর বদলায়। ক্ষণে দেখা যায় ডানে, ক্ষণে আবার বায়ে মোড় নিতে ভুল করে না। এই পাল্টাপাল্টিতে যারা বেশী পটু তারাই আজ জাতীর তাবৎ হিতাহিতের দায়ীত্বপ্রাপ্ত হয়ে স্বীয় আখের গোছাতে যার পর নাই পেরেশান। একবার কোন এক  পাল্টিবাজকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, " আপনি কেন ঘন ঘন দল পাল্টান"। সে উত্তর দিয়েছিল, " আমি সবসময় সরকার দলেই থাকি। আমি পাল্টাই না, বরং সরকারই পাল্টে যায়।" মিরপুরের আলোচিত উক্ত পাল্টিবাজ এখন কোথায় জানিনা। হয়ত বয়সের ভারে কাবু হয়ে থাকায় পাল্টি দেয়ার মত শারীরিক কসরৎ করতে কুলিয়ে উটতে পারছেন না। তবে জীবন ভর পাল্টিবাজীর ফলেও শান্তির সু-বাতাস লাভ যে হয় নাই একথা সুনিশ্চিত।

     তবে কিছু আছে যাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। তবে তারা কিন্তু এই পাল্টাপাল্টিতে নেই। তারা ভুলেও সত্যের কাছাকাছি অবস্থান নিতে চায় না। দোটানায় না থেকে তারা মিথ্যাকেই সত্য বলে জেনেছে। এবং এই কল্পিত সত্য প্রতিষ্টায় যথেষ্ট আন্তরিক হয়ে লেগে থেকেছে। অত্যন্ত নিষ্টার সাথে তারা তাদের কল্পিত সত্যের প্রচারে ও প্রসারে সর্বস্ব ব্যয় করেতে থেকেছে। তারা কখনও ডানে আর কখনও বায়ে মোড় পরিবর্তন করে না। নির্দিষ্ট একটি তিমিরেই তাদের অবস্থান। এই দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে বুঝা যায় ইহকালীন শান্তির কিছু একটা অংশ তাদের স্পর্শে আছে। যদিও এই অনুমানটি শতভাগই ভুল। দুর্বল মেধার যে কেউ ওই মেকী শান্তির সংষ্পর্শে অবস্থান করলে প্রভাবিত হয়ে পড়া অসম্ভব নয়। সুতরাং  জীবনের কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সংসর্গ নির্বাচন করা রীতিমত কঠিন একটি কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এতএব পরকালীন কল্যানের আশা যারা করেন, তারা যেন অন্তর পরিবর্তনকারী মহান রবের সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারটাতে মুহুর্তের জন্যও যেন  বিস্মৃত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিৎ।

         তৃতীয় আরেক পক্ষ আছে যারা পর জগতের কল্যানের আশায় ইহ জাগতিক সূখ বিষর্জন দিয়ে দারুণ তৃপ্তি পায়। সুতরাং বলা যায় সূখের বাহু বন্ধনেই ওদের দিন কাটে তো রাত পোহায়। যতই ওরা অত্যাচারীত  হোক অথবা ব্যাথায় হোক যতই কাতর, ততই তারা সূখানুভুতিতে হয়ে উটে আরো আপ্লুত।

       কিন্তু এই তিন পক্ষের মানব সমষ্টি পরষ্পর বিরুধী মেরুতে অবস্থান নেয়ার পরও দেখা যায় সমাজে প্রায় শতভাগ লোকই ধর্মের দোহাই দিয়ে কথা বলে। এদের বেশীরভাগ লোকই ধর্ম কর্মে আন্তরিক নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার হচ্ছে এই ধর্ম। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, "  Honesty is the best police," যার অর্থ হল, সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। ব্যাখ্যা হল উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার এই সততা। সুতরাং ধর্মীয় লেবাস  কারো কারো ক্ষেত্রে নিছক ভড়ং বা খোলস। হেন কর্ম আড়াল করার জন্য ঢাল সরূপ ব্যবহার হয় এই ধর্ম। যেমন আলোচিত  মিলকী হত্যাকাণ্ডের নায়ক ধর্মীয় সংবেদনশীল পোষাকে সজ্জিত হয়ে হেন অপকর্মটি সপাদন করতে চেষ্টা করেছিল বটে, তবে দুর্ভাগ্যবশত সিসিটিবির ভিডিও ফুটেজকে আড়াল করেনি বলে ধরা খেল মিলকীর প্রতিপক্ষ কথিত সেই আওয়ামী নেতা।

    মোটকথা সর্বত্র দৃশ্যমান  চিত্র আর তার ভিতরকার অবস্থার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য -সৃষ্টির সেরা জীবকে নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর অবস্থানে নামিয়ে দিচ্ছে। অথচ কথা ছিল একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিজেদের দ্বীন ও ইবাদতকে নিবেদিত করে নেবে। একান্ত খালেস ভাবে হকের পথে অটল, ও অবিচল থাকবে। প্রকৃতপক্ষে ইহকাল ও পরকালে শান্তিময় আবাস   বিনির্মাণে আগ্রহী মাত্রই তার দায়ীত্বের প্রতি আন্তরিক হতে হয়। এবং সীরাতে মুস্তাকিমে টিকে থাকার জন্য মহান রবের সাহা্য্য কামনা করতে হয়। তবেই পাওয়া যাবে দূনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তি।
--------------------------------- 
লেখকঃ প্রবন্ধ লেখক কলামিস্ট ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments