Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৫৬; ৷ নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

       
           
                   বিতি কিচ্ছা-৫৬;

        মিথ্যাবাদী কাঠুরিয়ার গল্প;

       এমন দিন বেশ আগেই গত হয়ে গেছে, যখন ধনী গরীব নির্বিশেষে সকলের দরজায় সূখের কষাঘাত অব্যাহত ছিল। আজ আর সেই দিনটি নাই। এখন ধনী বলেন আর গরীব বলেন, সুখের সাক্ষাৎ লাভ বলতে গেলে দশমিকের কোটায়। অবশ্য কিছুটা সূখ যে আজও মধ্যবিত্যের চৌকাঠের সীমানায় এসে উঁকি দেয়না এমন নয়। এই সময়ে খুবই মনে পড়ে সত্য যুগের গরীব কাঠুরিয়ার গল্পটি।  ডিজিটাল যুগে এসে কাঠুরিয়া আর তার আগের অবস্থায় নাই। পুরো  গল্পটি না বললেতো আগামাথা কিছুই বুঝা যাবে না। তাই বলেই দেব আজ ডিজিটাল কাঠুরিয়ার গল্পটি আজকের এই বিতিকিচ্ছায়।
         গরীব কাঠুরিয়া সত্যিই এক সত্যবাদী ও নির্লোভী ব্যক্তি ছিল। তার ছিল একটি মাত্র বৌ। বাচ্চা কাচ্চাও ছিল তার।  সম্পদ বলতে তার সম্ভল একটি মাত্র কুড়াল (কুঠার) ছিল।  যা দিয়ে সে নিয়মিত জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে এনে বাজারে বিক্রি করত। এই অবস্থায় সে বেশ ভালই দিনানিপাত করছিল। তো একদিন গরীব কাঠুরিয়াটি জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে যা পেল তা দিয়ে সংসারের সদাইপাতি কিনে ফিরছিল ঘরে। বাজার থেকে তার বাড়ীর দিকে যাতায়াত পথে ছিল একটি নদী। অসাবধানতাবশত: হঠাৎ কাঠুরিয়ার হাত থেকে তার কুড়ালটি পড়ে যায় নদীতে। কাঠুরিয়া তার আয় রোজগারের একমাত্র সম্ভল কুড়ালটি হারিয়ে যার পর নাই মুছড়ে গেল। সে নদীর ধারে বসে পড়ল, আর অঝোঁর ধারায় কাঁদতে লাগলো। এদিকে কখন যে সন্ধ্যা ঘণিয়ে রাত গভীর হতে থাকলো তা টেরই পায়নি কাঠুরিয়া। সে কাঁদছে তো কাঁদছেই, ঘরে ফেরার কোন নামই নেই। ঘরে কাঠুরিয়ার একমাত্র আদুরে বৌ চিন্তায় অস্তির। 
         এদিকে কাঠুরিয়ার ক্রন্দন শ্রবণে নদীর গহীন থেকে আচমকা এক বিশাল মানব সদৃশ্য দৈত্য উটে এলো। সে প্রশ্ন করলো কঠুরিয়াকে, " তুই কাঁদছিস্  কেন?" উত্তরে কাঠুরিয়া বলল, " নদীতে অমার কুড়ালটি পড়ে গিয়েছে, তাই আমি কাঁদছি।" কাঠুরিয়ার কথা শুনে দৈত্যটি টুপ করে চলে গেল পানির নীচে। মুহুর্ত পর আবার উটে এল হাতে একটি ঝলমলে হীরের কুড়াল নিয়ে। কুড়ালটি কাঠুরিয়াকে দেখিয়ে বলল সে," এইটা কি তোর?"  কাঠুরিয়া জবাব দিল, " না মামুজি"। দৈত্যটি পুনরায় ডুব দিল, নিয়ে এলো একটি কাঁচা স্বর্ণের কুড়াল। এইবারও কাঠুরিয়া অস্বীকার করে বলল" না মামুজি"। দৈত্য তখন আবার গেল  গহীনে, নিয়ে এলো একটি রৌপ্যের কুড়াল। এইবারেও কাঠুরিয়া অস্বীকার করলে দৈত্যটি কাঠুরিয়ার সততায় ও লোভহীনতায় দারুণ খুশি হয়ে কাঠুরিয়াকে হীরা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের তিনটি কুড়াল সহ তার পুরাতন কুড়ালটিও ফেরৎ দিল।
       কাঠুরিয়া ঘরে ফিরলে কুড়ালগুলো পেয়ে কাঠুরিয়ার বৌ দারুণ খুসি। এবার তাদের ঘরে সূখ নামক শুকপাখীটা ভর করলো বোধ হয়।  
       এই ভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর সত্য যুগ ধীরে ধীরে অতীত হতে থাকলো। ডিজিটাল যুগের হাওয়া এসে  মনুষ্য বসতীতে জায়গা করে নিল। কাঠুরিয়ার বৌটির লোভের জিহ্বা সম্প্রসারিত হল। সূখ ধীরে ধীরে বিদায় নেবার জন্য প্রস্তুতি নিল। মান, অভিমান, ঝগড়াঝাঁটি,  কমবেশী সব জায়গায় সংঘটিত হতে থাকলো। কাঠুরিয়ার সংসারেও তা বাকী থাকলো না।  
         এক পর্যায়ে কাঠুরিয়ার বৌ'র মনে   চিন্তা জাগলো, পুরাতন লোহার কুড়ালটি নদীতে ফেলে দিয়ে আরও তিনটি স্বর্ণ, রৌপ্য ও হিরের কুড়াল পাওয়া যায় কি না। যেই ভাবা সেই কাজ।  সন্ধ্যা ঘণিয়ে এলে চুপি চুপি কাঠুরিয়ার বৌ গেল নদীর ধারে। এরই মধ্যে আচমকা পা পিছলে কাঠুরিয়ার বৌ নিজেই পড়ে গেল নদীর মধ্যে। এদিকে সময় গড়াতে থাকে। অপেক্ষার পালা শেষ করে অবশেষে কাঠুরিয়া গেল নদীর ধারে। সে বুঝতে পারল একমাত্র বৌটি তার নদীতে পড়ে গিয়েছে। সে তখন নদীর কিনারে বসে আগের চেয়ে আরও করুণ সুরে বিলাপ করে কাঁদতে লাগলো। এমন সময় আগের সেই দৈত্যটি উটে এলো পানির উপর। দৈত্য বলল কে তুই? এখানে বসে কাঁদছিস্ কেন?  কাঠুরিয়া বলল," স্যার, আমি ডিজিটাল যুগের এক কাঠুরিয়া। আমার একমাত্র বৌটি নদীতে পড়ে গেছে। কাঠুরিয়ার কথা শুনে দ্যত্যটি পানির গভীরে চলে গেল। অনেক পরে যখন ফিরলো তখন সাথে জনপ্রীয় চিত্রনায়িকা কুমারী শ্রীদেবীকে নিয়ে এল। দৈত্য বলল,"এটা কি তোর বৌ? কাঠুরিয়া  এক নিঃশ্বাসে বলল, "জ্বি স্যার এটাই আমার বৌ" এবার দৈত্যটি থেমে গেল। কিন্ত কুমারী শ্রীদেবীকে পারে তুলে দিল না। দৈত্য বলল," তুই তো আগে বড় সত্যবাদী ছিলেরে! আজ তোর কি হলো বল? কেন এই মিথ্যার আশ্রয় নিলে? " কাঠুরিয়া বলল," স্যার, মিথ্যা তো আর সাধে বলি নাই স্যার, বলেছি বাধ্য হয়েই।  আপনি যদি ডিজিটাল যুগে দুনিয়ায় সংসারী হতেন, তাহলে বুঝতেন কত ধানে কত চাল"। দৈত্য জিজ্ঞেস করল, " মানে"? কাঠুরিয়া  বলল," স্যার, আমি যদি সত্য বলতাম যে এইটা আমার বৌ না, তবে আপনি ডুব দিতেন, আর নিয়ে আসতেন হেলেনা মালিনী অথবা সুবর্ণ মমতাজ কে, আবার ডুব দিয়ে নিয়ে আসতেন ঢুলি শয়ন্তানী অথবা ডিস্কো কবরী কে। আমি এর পরও অস্বীকার করলে নিয়ে আসতেন আমার আসল বৌ কে। অতঃপর আপনি খুশী হয়ে আমাকে চার, চারটি বৌ উপহার হিসাবে দিয়ে দিতেন। কিন্তু স্যার, ডিজিটাল এই যুগে এক বৌয়ের জ্বালায় যে এখনও নদীতে ঝাঁপ দেই নাই, সেইটাইতো বেশ। আপনিতো স্যার চাইবেন না আমি মরার আগেই মইরা যাই। স্যার, এইবার আমারে একটু মিথ্যাবাদী হইবার সুযোগ দেন স্যার, আর ক'টা দিন বাচি স্যার, দেন স্যার দেন আমারে কুমারী শ্রীদেবীরেই দেন"। দৈত্য তো তাকে কুমারী শ্রীদেবীকে দেয় না, আবার পানিতে ডুবও দেয় না। তার উৎসুক মন কাঠুরিয়ার সাথে আরও গল্প জুড়তে চায়। সে জিজ্ঞেস করে, বলতো তোর চার বৌ থাকলে সমস্যাটা কোথায়? কাঠুরিয়া বলে, স্যার, আমি যদি কুমারী শ্রীদেবীর ঘরে একটু বিশ্রাম নিতে যাই, তবে কুড়ালের ডাণ্ডা হতে নিয়ে ঢুলি শয়ন্তানী বলবে,"
     এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাবো। 
  এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাবো"      
      এদিকে সুবর্ণ মমতাজ বলবে,'
" ফাইট্টা যায়,  বুকটা ফাইট্টা যায়।  
    এইসব ঝামেলায় থাইক্যা যখন এনার্জি ডাউন হইয়া যাইব তখন আমার আসল বৌরে কই একটু মধু দাও তে? সে কইব, 
" মধুর কাম নাই, একটু বিষ খাইয়া লাও। 
কোন কারণে তুমি পোড়া কপালীর দিকে ফিরিয়া না চাও।" 
       সে তখন এই চিন্তাটুকুও করতো না যে, সে তো আগেই নদীতে পড়িয়া মইরাই গেছিল।"
     এইসব কথা যখন দৈত্যের সাথে চলছে, তখন কাঠুরিয়া দেখে হঠাৎ তার সম্মুখে দৈত্যটি নাই। আর সেতো তার বিছানায়, যেন স্বপ্ব দেখছিল সে। না তে! এ বিশ্বাসই করা যায় না! সেতো বাস্তবিকই নদীর পারে হাটতে হাটতে দৈত্যের সাথে সাক্ষাৎ করলো! এ আবার স্বপ্ন হয় কেমন করে। যাক,  ভাগ্য তার ভালই বলা যায়। কারণ তার ডিজিটাল বৌটাতো আর নদীতে পড়ে মারা যায় নাই। এদিকে সকাল হয়ে গেল বলে কাঠুরিয়ার ডিজিটাল  বৌ আধুনিক ডিজিটাল বাংলায় গান গাইতেছে শুনা যায়, 
" মধু হৈ হৈ বিষ হাওয়াইলা"।
হুন হারণে বালো বাসার দম ন দিলা"।

Post a Comment

0 Comments