Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস; জিয়াউল হক।

  আমার বড়ো আবেগের ফসল; 
   দ্যা চয়েস ইজ ইউরস-
-------------------------------------------------------

সেলফ সেন্সরশিপ বলে একটা কথা আছে। ব্যক্তির উচিৎ নিজের উপর নিজে থেকেই কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা।এটা সবারই করা উচিৎ্ তবে সবাই করেন না। পারেনও না। একজন ব্যক্তি তার জ্ঞানের ক্ষেত্রে কতোটা পরিপক্কতা পেয়েছেন, সেটা মাপার অন্যতম একটা প্যারামিটার হলো এটা। সে বিষয়টা মাথায় রেখেই দু'কথা লিখছি আমার আসন্ন একটা বই নিয়ে।

বইটা প্রিয় রাসুল সা: কে নিয়ে। সীরাত বলতে পারছি না। খুব ভালো মানের আলেম ছাড়া সীরাত আর তাফসির লেখা সবার উচিৎ নয়। এটা সেই সেলফ সেন্সরশিপের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু প্রিয় রাসুল সা: এর জীবন নিয়ে আমার একটা আগ্রহ আছে অন্য অনেকের মতোই।

আল্লাহ জানেন অন্তরের কথা, আমি এ মহান ব্যক্তিকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। তাঁর কথা ভাবি, তাঁকে বুঝার চেষ্টা করি নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। আমার জ্ঞান কম। কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় পড়াশুনা করতে পারিনি। শৈশবেই সেই ১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধের সময় একবার প্রায় বসরখানেক ছেদ পড়েছিল, আবার ১৯৭২ থেকে ৭৪ এর শুরু পর্যন্ত প্রায় আড়াই বসর, দুবারই রাজনৈতিক কারণে।

আবার ১৯৭৭ -৭৯ সময়কালে ছিটকে পড়েছি পারিবারিক দুর্যোগের কারণে। তৃতিয় বিশ্বের মধ্যবিত্ত পরিবারে একজন ছেলের এই ছোট্ট একটা জীবনে পর পর তিনবার যদি পড়ালেখায় ছেদ পড়ে, বিশাল একটা পরিবারকে যদি দূর্গতির চরম সীমা থেকে তুলে আনার কঠিন দায়িত্ব নিজের কাঁধে এককভাবে টানতে হয়, তা হলে তার লেখাপড়া হয় কি করে? বাংলাদেশের মতো দেশে আমার পুরো পরিবার'সহ হারিয়ে যায়নি, এতেই আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া।

কিন্তু তাই বলে মন যে মানে না আমার প্রিয় রাসুল সা: কে জানতে মন চায়। একেবারে নিজের মতো করে। তাঁর কুরআন মুখস্থ করা হয়নি, কারণ জীবনেও মাদ্রাসায় পড়ার সৌভাগ্য হয়নি আমার। তাঁর জীবনী কিংবা হাদিস মুখস্থ করা হয়নি ঐ একই কারণে। কিন্তু তারপরেও এই মহামানবকে আমার জানতে মন চায়।

ইবনে হিশাম, ইবনে কাসির কিংবা ইবনে সা'দ যেভাবে, যে চোখে দেখেছেন, তার বাইরে আরও গভীরভাবে জানতে মন চায়। সীরাত গ্রন্থগুলো বাবা মায়ের নাম, দাদা চাচার নাম, এতিম হবার কথা লিখেছেন।

সিরিয়া যাবার কথা বাহিরা পাদ্রির সাথে দেখা হবার কথা, বক্ষ বিদির্ণ হবার কথা, বিয়ের কথা সব তাও লিখেছেন। এর পরে তিনি যখন তিনি নবী হলেন, তার পর থেকে তো প্রায় প্রতিটি মহুর্তের কথা আমাদের সামনে খোদ কুরআনের পাতায় পাতায়। তাঁকে জানা যায় এসব সুত্র থেকেই।

আমার মন চায় আরও বেশি কিছু জানতে।চাচা আবু তালিবের ছেলে মেয়েদের সাথে তিনি কিভাবে খেলাধুলা করতেন, কিভাবে খেতেন, গল্পগুজব করতেন? করলে কিভাবে? আচ্ছা, বাবার কবরের পাশে যেদিন তিনি প্রথম দাঁড়ালেন, সেদিন কি অনুভুতি হয়েছিল তাঁর? মায়ের যখন ইন্তেকাল হলো সেই মহুর্তে তাঁর চেহারাটা কেমন হয়েছিল?

তিনি মাঠে ছাগল চরাতে যেতেন, সেই সব পাহাড়গুলোর আশে পাশে (এখন আর অবশ্য তা আর অবশিষ্ঠ নেই।) তো ঘুরেছি একটু আধটু, মদিনায় মসজিদে নববী থেকে ইচ্ছা করেই দূরে একা একা হেঁটে গিয়েছি উদ্দেশ্যহীনভাবে, আনমনে। বুঝার চেষ্টা করেছি এই পথে কি আমার নবী হেঁটে গিয়েছেন? জানি, সেই পথ, সেই মহল্লা নেই, কিন্তু মন যে মানে না। মন তাঁর চলা সেই পথের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে চায়, তাঁকে বুঝার জন্য।

তাঁকে বুঝতে চাই। বুঝার চেষ্টা করি। হেরা পাহাড়ের চুড়ায় উঠেছিলাম, গুহার মধ্যে নিশ্চুপ বসে দুরে কাবার দিকে তাকিয়ে থেকেছি, আর বুঝার চেষ্টা করেছি তিনি সা: এখানে বসে রাতের পর রাত কিভাবে কাটাতেন?
তাঁর সেই নি:সঙ্গতাকে বুঝতে চেয়েছি। শৈশবে তালিব বা আকিলকে যখন দেখতেন তারা তাদের মাকে মা বলে ডাকছেন, বাবা আবু তালিবকে বাবা বলে ডাকছে, তখন আমার নবীর মুখে কি কোন বেদনার ছাপ ফুটে উঠতো নিজের বাবা মায়ের কথা মনে করে?

আমার বড়ো জানতে ইচ্ছা করে, ইচ্ছা করে, আহা, বেদনার্ত সেই মুখখানার অভিব্যক্তিটা যদি একটাবার, মাত্র একটাবার আঁকতে পারতাম আমার কলমের আঁচড়ে, কাগজের পাতায়। এটা কারো পক্ষেই সম্ভবপর নয়। তারপরেও মানুষ চেষ্টা করেছেন। আরও করবেন ভবিষ্যতে তা নিশ্চিত। যাঁরা আলেম, আশেকে রাসুল, যাঁদের সেই মানের জ্ঞান ও আমলের জোর আছে, তাঁদের জন্য এটা মানানসই। আমাদের জন্য নয়।
কিন্তু তারপরেও মন যে মানে না। তাঁকে নিয়ে লিখতে মন চায়।
 
সাইকোলোজি, মনোবিজ্ঞান আমার খুব প্রিয় সাবজেক্ট। নিজের জীবন জীবিকার একটা মাধ্যমও বটে। আমি এই মনোবিজ্ঞানের আয়নায় তাঁকে দেখতে চেয়েছি। তাঁর নবী জীবনকে নয়, নবী জীবনের আগের চল্লিশ বসরকে, তাঁর শৈশব, সেই শৈশবকালের চরিত্রগুলোকে, সেই সমাজকে।

এই দেখতে চাওয়াটাই হলো একটা বই; 'দ্যা চয়েস্ ইজ ইউরস'। বইটার নাম হয়তো এটা থাকবে না, বা কিছু রদবদল সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। আবার প্রকাশকরা হয়তো বলবেন; ধুর! এটা কোন বই'ই হয়নি।' কিন্তু তারপরেও বিগত আড়াই বসরের শ্রমে লিখেছি প্রায় তিনশত পৃষ্ঠার বইটি।

লিখতে লিখতে কতোবার যে থেমে যেতে হয়েছে! কতোবার যে থমকে যেতে হয়েছে, কেন যেন চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে উঠেছে, আমি দূর্বল মানুষ তো! তাই। কিন্তু আমি তাঁকে খুব ভালো বাসি। আমার সকল দূর্বলতা, আমার সকল অপূর্ণতা আর ত্রুটির পাহাড়'সহ তাঁকে, সেই মহামানবকে ভালোবাসি। তাঁকে বুঝতে চেয়েছি আমার নিজের মতো করে।

প্রকাশক যদি বইটা প্রকাশ না করেন, না করবেন, শ্রদ্ধেয় পাঠক যদি বইটাকে গ্রহণ না করতে চান, তাতেও কোন সমস্যা নেই। আমি তো এতেই সন্তুষ্ঠ যে, বিগত আড়াইটা বসর এই মহামানবকে জানার জন্য, তাঁর জীবনের একটা অংশকে নিজের মতো করে জানার জন্য সময় দিতে পেরেছি। এতেই আমি সন্তুষ্ঠ। আলহামদুলিল্লাহ, গতকাল শেষ হলো আমার অনেক আবেগের ফসল; দ্যা চয়েস ইজ ইউরস-
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments