Recent Tube

কালেমা তাইয়্যেবা ; ৩য় পর্ব; মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম রহঃ

                   
            
                    কালেমা তাইয়্যেবা ;
                                 ৩য় পর্ব;


  কালেমা তাইয়্যেবার প্রচারে বাধা;

     কিন্তু এই কালেমা ও তওহীদের এ বাণী দুনিয়ায় যেমন নতুন নয়, ঠিক তেমনি এই কালেমার বিরুদ্ধতা ও শত্রুতাও দুনিয়ার ইতিহাসে কিছুমাত্র নতুন বা বিস্ময়কর নয়; বরং যখনই, যে দেশেই এবং যার মুখেই এই ‘চির-পুরাতন কথাটি নতুন করে ঘােষিত ও ধ্বনিত হয়েছে, তখনই চারদিক থেকে এর বিরুদ্ধতা ও শত্রুতার পাহাড় মাথা জাগিয়ে উঠেছে। এ আওয়াজকে চিরতরে স্তব্ধ করবার জন্য স্থানীয় সকল অপশক্তি প্রাণপণে চেষ্টা করেছে; দুনিয়ার কোনাে ইতিহাস পাঠকেরই এ কথা অজানা নয়।

   কিন্তু প্রশ্ন এই যে, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-
                (  لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ)।

     এই ছােট্ট কালেমাটির মধ্যে এমন কি কথা বা বস্তু লুকিয়ে আছে, যে জন্য এই কথা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চারিদিকে এত দুশমনের উদ্ভব হয়? এটি বিশেষভাবে চিন্তা করার বিষয় যে, আল্লাহ্ তা'আলার নবীগণ যখনই যে দেশে এবং যে সমাজেই এই ছােট্ট কালেমার দাওয়াত পেশ করেছেন, তখনই সেই সমাজের অধিকাংশ লােক তাদের ভয়ানক শত্রু হয়ে গেছে। অথচ এর দাওয়াত পেশ করার পূর্বে প্রত্যেক নবীই নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে সেই সময়ের সমস্ত মানুষের কাছে খুবই শ্রদ্ধাভাজন ও প্রিয়পাত্র বলে বিবেচিত হয়েছেন। হযরত মূসা (আ) তৎকালীন বাদশাহ ফিরাউনের ঘরেই লালিত-পালিত এবং বড় হয়েছেন। কিন্তু তিনি যখনই এ কালেমা’ উচ্চারণ করলেন, অমনি তাঁর পালক পিতা ফিরাউন হয়ে গেল তাঁর বড় দুশমন। হযরত ইবরাহীম (আ) একজন রাজপুরােহিতের পুত্র, পিতার আদরের সন্তান এবং সেই কারণে অন্যান্য সব লােকের বিশেষ স্নেহের পাত্র ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন এ তওহীদের আওয়াজ বুলন্দ করলেন তখনই তার পিতা-মাতা থেকে শুরু করে তৎকালীন বাদশাহ পর্যন্ত সকলেই তাঁর ঘােরতর শত্রু হয়ে গেল । এমন কি, তারা তাঁকে চিরতরে শেষ করে দেবার জন্য জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল। হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মই ছিল সকল মানুষের কাছে, একটা মস্তবড় মু'জিজা- যা মানুষ সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারে না। এ জন্য সকল মানুষ তাকে ‘অসাধারণ কিছু বলে মনে করত । কিন্তু তিনিও যখন একজন নবী হিসাবে আল্লাহ্ তা'আলার পবিত্রতা ও একত্বের কথা ঘােষণা করলেন, তখন তার নিজ বংশের লােক ও আত্মীয়-স্বজনরাই তার শত্রুতায় উঠে পড়ে লেগেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তখনকার ইহুদী সরকার তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স) এ তওহীদের কথা ঘােষণা করার পূর্বে দীর্ঘ চল্লিশটি বছর পর্যন্ত তার আপন বংশের এবং তখনকার অন্যান্য লােকদের মধ্যে জীবন যাপন করেছেন। ছােট-বড়, নারী-পুরুষ সকলেরই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি তিনি পেয়েছেন। কিন্তু এতৎসত্ত্বেও তিনি তওহীদের এ বাণী প্রথম যেদিন নিজের পরিচিত লােকদের মধ্যে প্রচার করলেন সেদিন থেকে তাঁর আপন বংশের লােকেরা প্রকাশ্যভাবে তার দুশমনী করতে শুরু করেছিল। অতপর হযরতকে তাঁর নবুয়্যতের দীর্ঘ তেরটি বছর মক্কী জীবনে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিষ্পেষণ এবং গালি-গালাজের আকাশছোঁয়া তুফানের সঙ্গে মুকাবেলা করতে এমন কি, শেষ পর্যন্ত তিনি মদীনায় হিজরত করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু কেন এমন হয় ? আম্বিয়ায়ে কেরাম এমন কি বড় কথা বলেছেন, যার ফলে তাদেরকে এরূপ দুঃখ ও নিষ্পেষণ, নির্যাতন ও নির্বাসন বরদাশত করতে হয়েছিল ?

       এ প্রশ্নের জবাব পেতে হলে, আম্বিয়ায়ে কেরামের ওপর দেশবাসী ও আপনজনের এরূপ অত্যাচারের মূলীভূত কারণ জানতে হলে, প্রথমেই জানতে হবে ‘ইলাহ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ কি? তা বিস্তারিতরূপে জেনে নিতে পারলেই এ কথা খুব সহজেই বুঝতে পারা যাবে যে, আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ’ মেনে নিলে বিরুদ্ধবাদীদের সম্মুখে কত বড় বিপদ ঘনীভূত হয়ে আসে।

ইনশাআল্লাহ চলবে.....।

Post a Comment

0 Comments