Recent Tube

কালেমা তাইয়্যেবা ২য় পর্ব মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম।

           
                  কালেমা তাইয়্যেবা 
                               ২য় পর্ব;


       কালেমায়ে তাইয়্যেবার ইতিহাস;

         কালেমা তাইয়্যেবার প্রথম অংশের অর্থ ও ব্যাখ্যা এখানেই শেষ করা হলাে।
এখন দেখতে হবে যে, ইসলামের কালেমার প্রথম অংশে যা কিছু বলা হয়েছে তা কি দুনিয়ায় নতুন কথা, না এর পিছনে কোনাে ইতিহাস আছে? কুরআনের পৃষ্ঠায়ই এর বিবরণ পাওয়া যাবে।

        কুরআন শরীফের পৃষ্ঠা উল্টালেই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আল্লাহ্ তা'আলার একত্বের কথা পৃথিবীতে এই নতুন নয়; বরং দুনিয়ার মানুষের কাছে যত নবীই এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ উম্মতকে এই শিক্ষাই দিয়েছেন- আল্লাহ্ সম্পর্কে তাদের মধ্যে এ ধারণাই প্রচার করেছেন। কুরআনে হযরত মুহাম্মাদ (স) কে লক্ষ্য করে আল্লাহ্ তা'আলা বলছেনঃ
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
(হে মুহাম্মাদ!) তােমার পূর্বে যত নবীই আমি পাঠিয়েছি, তাদের সকলেরই প্রতি ওহী যােগে আমি এ আদেশ করেছি যে, আমি ছাড়া আর কেউই 'ইলাহ' বা মা'বুদ ও প্রভু নেই। অতএব তােমরা সকলে কেবল আমারই দাসত্ব ও বন্দেগী কবুল করাে।
সূরা আম্বিয়াঃ ২৫

      এ আয়াত থেকে নিঃসন্দেহে বােঝা গেল যে, দুনিয়ার প্রত্যেক নবী-রাসূলই তওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ এখানে আমরা কয়েকটি ঐতিহাসিক আয়াত উদ্ধৃত করছি।

 ১. হযরত নূহ (আ) তাঁর সমকালীন জনগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন :

يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ
হে জনগণ, এক আল্লাহ্ তা'আলার দাসত্ব ও বন্দেগী কবুল করাে; কারণ তিনি ছাড়া তােমাদের অন্য কোনাে প্রভু বা ইলাহ্ নেই। (সূরা আ'রাফ : ৫৯)

  ২. হযরত ইউনুস (আ) তাঁর সমকালীন জনগণকে বহু দিন পর্যন্ত তওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন; কিন্তু জনগণ তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করেনি। অবশেষে তিনি
নিরাশ হয়ে দেশ থেকে চলে যান। পথিমধ্যে তিনি নদীতে পড়ে মাছের পেটে যেতে বাধ্য হন। এ মাছের পেটে বসে হযরত ইউনুস (আ) এই দো'আ পড়েছেন ?
 لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কেউ মাবুদ নেই। আমি কেবল তােমারই পবিত্রতা ও গুণ-গরিমা বর্ণনা করি। নিশ্চয়ই আমি জালিম ও অন্যায়কারীদের মধ্যে একজন।
(সূরা আল-আম্বিয়াঃ ৮৭)

  ৩. হযরত মূসা (আ) নিজের সমকালীন জনগণকে আজীবন তওহীদের দাওয়াত দিয়ে এক সময় বলেছেনঃ

أَغَيْرَ اللّهِ أَبْغِيكُمْ إِلَـهًا وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ 
আল্লাহকে বাদ দিয়ে তােমাদের জন্য আর একজন মাবুদ তালাশ করে আনব কি? অথচ একমাত্র আল্লাহই তােমাদেরকে দুনিয়ার সমস্ত লােকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মান দান করেছেন।
(সূরা আ'রাফ : ১৪০)

   ৪. হযরত সালেহ (আ) নিজ সময়ের জনগণকে আহবান জানিয়েছেন এই
বলেঃ
يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ
হে জনগণ! কেবল আল্লাহ্ তা'আলার দাসত্ব ও বন্দেগী কবুল করাে, তিনি ছাড়া তােমাদের আর কেউ মা'বুদ নেই।

   ৫. হযরত শু'আইব (আ) তাঁর সমকালীন    
   জনগণকে বলেছেন :
يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ
হে আমার জনগণ ! কেবল আল্লাহ্ তা'আলার দাসত্ব ও ইবাদত করাে; তিনি ব্যতীত তােমাদের আর কোনাে মাবুদ নেই ।
(সূরা হূদঃ ৮৪)

   হযরত হূদ (আ) যখন দাওয়াত দিলেন; হে জনগণ! তােমরা কেবলমাত্র এক আল্লাহর দাসত্ব ও এবাদত করাে, তিনি ছাড়া তােমাদের এবাদত পাওয়ার যােগ্য আর কেউই নেই, তখন জনগণ বললঃ

أَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ اللّهَ وَحْدَهُ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ آبَاؤُنَا
তুমি আমাদেরকে এ কথা বলতে এসেছ যে, আমরা একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব-বন্দেগী করব এবং আমাদের পূর্বপুরুষ যাদের বন্দেগী করত তাদেরকে ত্যাগ করব?
(সূরা আ'রাফঃ ৭০)

    এরা মুশরিক ছিল এবং আল্লাহর বন্দেগী করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও বন্দেগী করত। একান্তভাবে এক আল্লাহর বন্দেগী করতে তারা রাজি হচ্ছিল না। এ বন্দেগীর অর্থ ইবাদত করা যেমন, তেমনি ভয় করা, আইন মেনে চলাও।
এখানে এ কয়টি আয়াত উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হচ্ছি।
   কুরআন শরীফে যত নবী-রাসূলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের তওহীদের
দাওয়াত ও কাজকর্ম সম্পর্কে মাটামুটি বিবরণও কুরআন শরীফে পাওয়া যায় ।
কিন্তু তা সবই উল্লেখ করতে গেলে বইয়ের কলেবর বড় হয়ে যাবে। এর পর আমরা কুরআন শরীফেই দেখব শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স) কে আল্লাহ তা'আলা কি দাওয়াত প্রচার করবার জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন ।
হযরত মুহাম্মাদ (স)-কে সম্বােধন করে বলা হয়েছেঃ
قُلْ إِنَّمَا هُوَ إِلَـهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ
(হে মুহাম্মাদ!) তুমি বলে দাও যে, কেবল সেই আল্লাহই প্রকৃত মাবুদ তিনি এক ও একক এবং আমি নিজে তােমাদের শিরক মােটেই সমর্থন করি ; আমি এ থেকে সম্পূর্ণ দায়িত্বমুক্ত।
(সূরা আন'আমঃ ১৯)

   “তােমাদের শিক’ অর্থ এক আল্লাহর সঙ্গে তােমরা আর যাকে যাকে মাবুদ গণ্য করাে এবং যাদের পূজা-উপাসনা করাে, আমি কিন্তু তাদেরকে আদৌ স্বীকার করি না; বরং আমার ঘােষণা হলােঃ
قُلْ هُوَ رَبِّي لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ
বলাে তিনিই আমার রব্ব মালিক ও প্রভু। তিনি ব্যতীত আর কেউ মা'বুদ নেই। তার ওপরই আমার একান্ত ভরসা, আমি তার দিকে ফিরে যাচ্ছি।
(সূরা রা'দ : ৩০)

   অপর এক স্থানে বলা হয়েছেঃ

قُلْ إِنَّمَا يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَهَلْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ
বলাে (হে নবী!) আমার কাছে এই মর্মে ওহী পাঠানাে হয়েছে যে, তােমাদের মা'বুদ সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও মালিক মাত্র একজন। তােমরা কি তার অধীন ও অনুগত হয়ে থাকবে ?
(সূরা আম্বিয়াঃ ১০৮)

   এ আয়াতে আরও বিশদভাবে বলা হয়েছেঃ

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
বলাে, (হে মুহাম্মাদ!) আমি তােমাদেরই মতাে একজন মানুষ। কিন্তু আমার কাছে এই ওহী নাযিল হয়ে থাকে যে, তােমাদের মা'বুদ মাত্র একজন। অতএব যে ব্যক্তি সেই এক মা'বুদের সাক্ষ্য ও সন্তুষ্টি পাওয়ার আশা করে, তার পক্ষে (সেই এক মা'বুদের নির্দেশ মতাে) সুকাজ করা কর্তব্য এবং সে যেন তার একমাত্র মা'বুদের দাসত্ব ও বন্দেগী করার ব্যাপারে অন্য কাউকেও শরীক না করে।
(সূরা কাহাফ : ১১০)

   এ আয়াতে শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর পূর্ণ দাওয়াতের বিবরণ পাওয়া যায়। প্রথমত, তিনি বলেন যে, মানুষের প্রভু, সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও আইন রচনাকারী মাত্র এক ও একক আল্লাহ্।

   দ্বিতীয়ত তিনি বলেন, যারা সেই এক মাবুদের প্রতি ঈমান আনবে, তাদের
সেই এক মা'বুদের সন্তুষ্টি ও সাক্ষ্য লাভ করার উপায় মাত্র দুটিঃ একটি খাটিভাবে এক আল্লাহকে স্বীকার করা, কেবল তারই হুকুম পালন করা, কেবল তাঁরই ইবাদত-বন্দেগী করা এবং এসব ব্যাপারে অন্য কাউকেও তাঁর সহিত শরীক না করা। অপরটি, সেই এক আল্লাহর নির্দেশ মতাে সৎ ও নেক কাজ করা এবং পাপ ও নাফরমানীর কাজ থেকে ফিরে থাকা।বিশ্বনবীর পূর্ণ জীবনী, কার্যাবলী এবং পূর্ণ দাওয়াত বিশ্লেষণ করলে এ তিনটি বুনিয়াদী কথা জানতে পারা যায়। বস্তুত ইসলাম ও কালেমার বুনিয়াদী কথাও এই তিনটি। এখানে প্রমাণ হয়ে গেল যে, শেষ নবী দুনিয়ায় কোনাে নতুন কথা বলতে আসেননি। বস্তুত তওহীদ বা আল্লাহ্ তা'আলার একত্বের দাওয়াত দুনিয়ায় নতুন নয় মােটেই; বরং এটি পুরাতন। মানুষ সৃষ্টি যত পুরাতন, তওহীদ এবং তওহীদের এ দাওয়াতও ঠিক ততখানিই পুরাতন । আরও সত্য কথা, এ দুনিয়ায় মানুষ প্রথম যেদিন বসবাস শুরু করেছে, সেইদিন থেকে মানুষকে একমাত্র মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার ও তার দাসত্ব স্বীকার করে তাঁর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করবার দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। অন্য কারাে প্রতি ঈমান আনার কোনাে দাওয়াত কখনাে দেওয়া হয় নাই।

  ইনশাআল্লাহ  চলবে.......

Post a Comment

0 Comments