Recent Tube

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সুবহান (রহঃ) শামীম আজাদ।


 মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সুবহান (রহঃ)
(১সেপ্টেম্বর ১৯২৯ - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০),
 --------------------------------- 

  তিনি একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ । তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় তিনি যথাক্রমে পাবনা -৫ আসন থেকে দু'বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।  

 ব্যক্তিগত বিবরণ;
জন্মঃ ১ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সুজানগর, পাবনা

 মৃত্যুঃ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ (বয়স ৯০)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

 রাজনৈতিক দলঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

 পিতামাতাঃ মুন্সী নাঈম উদ্দিন আহমেদ (পিতা)

যে জন্য পরিচিতঃ ইসলামী রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব

   প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা,; 

আবদুস সোবহান ১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাবনা জেলার সুজানগর থানা মোমিনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মুন্সী নাঈম উদ্দিন আহমেদ একজন ইসলামী পন্ডিত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি তার পরিবার নিয়ে পাবনার নগরীর গোপালপুরের পাথরটোলা চলে আসেন এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তিনি রামচন্দ্রপুর মক্তব-এ ভর্তি হন। তারপরে তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা মণিখাত এবং মাচপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেষ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি উলাত মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সেখানে অধ্যয়ন করেন এবং ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫০ সালে আলিম সনদ অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি একই মাদ্রাসা থেকে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন এবং মাদ্রাসা বোর্ডে প্রথম বিভাগে ৭ম স্থান অর্জন করেন। 

  পেশা ও শিক্ষাদান

ফাজিল পড়াশোনা শেষ করে তিনি পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় যোগদান করেন। এরপরে তিনি গোপালচন্দ্র ইনস্টিটিউট, আরিফপুর উলাত সিনিয়র মাদ্রাসা এবং মাগুরা বারোরিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তার শিক্ষাজীবন ১৯৫২-১৯৬২ সাল পর্যন্ত ১০ বছর ব্যাপৃত ছিলো।
  রাজনীতি

আবদুস সোবহান ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জমিয়তে তালাবা আরবিয়ার পাবনা জেলার সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং সময়ের সাথে সাথে পাবনা জেলার আমির নিযুক্ত হন। তিনি কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি দলের নয়েব-ই-আমীরও। 

  সংসদ সদস্য,

১৯৬২ এবং ১৯৬৫ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং তার পরবর্তী মেয়াদে বিরোধী দলের সিনিয়র উপ-নেতার ভূমিকা পালন করেন।  

তিনি ১৯৯১ সালে পাবনা -৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সংসদে তিনি জামায়াতের সংসদীয় দলের উপ-নেতা ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি আবার পাবনা -৫ আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় ৫৬.৭৮% ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালে, তিনি মহিলাদের পড়াশুনা বাড়ানোর জন্য প্রচারণা চালিয়েছেন।

  গ্রেপ্তার এবং বিচার

আবদুস সোবহানকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে ঢাকা থেকে পাবনা যাওয়ার পথে যমুনা সেতু এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে ২০০৩ সালে দায়ের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে আদালতে হাজির করার জন্য তাকে পাবনায় নেওয়া হয়েছিল। 

গ্রেপ্তারের একদিন পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -২ (আইসিটি) এর নয়টি অভিযোগ গঠন করে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন অপরাধ। অথচ এই অভিযোগ গুলো সন্দেহাতীত। 

মানবতার কল্যাণে কাজ করার পরও তারা মানবতাবিরুধী!!

একজন মানুষ সারাটা জীবন কিভাবে মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে পারেন তার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ পাবনার উন্নয়নের রূপকার, একাধিকবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য মাওলানা আব্দুস সুবহান। তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন ওয়ার্ড মেম্বার থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের সদস্য অবধি হয়েছিলেন।

পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে শুরু করে প্রায় ৫০ টিরও বেশি সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নির্মাণের পেছনে এই মানুষটির অবদান সবসময়ই স্মরণীয়। তার বয়স এখন ৯৪ বছর। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন।

তার জীবনের সর্বশেষ সঞ্চয় দিয়ে পরিবারের সদস্যরা তার ইচ্ছানুযায়ী একটি মসজিদ নির্মাণ করলেন। মসজিদ আত তাকওয়া নামের এই মসজিদটি গত ০৩-০৫-২০১৯  জুমআর নামাজের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো।

আল্লাহ মাওলানার এই বিশাল কাজকে সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করুন। 

মৃত্যু

দীর্ঘ ৭ বছর কারাজীবনে সুচিকিৎসার অভাবে। মাওলানা আবদুস সুবহান ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে কারাবন্দী অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেন।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের মজলুম জননেতাকে শহীদ হিসেবে কবুল করে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমীন।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments