Recent Tube

দ্বিতীয় শৈশব...। ‌ আব্দুল্লাহ আরমান।

  
  
                          দ্বিতীয় শৈশব...
 
     পরিবারের বৃদ্ধ মানুষগুলো বটবৃক্ষের মতো। বিশাল বপুর এ বৃক্ষ তার নিখাঁদ ভালোবাসার ছায়ায় পরিবারকে ঘিরে রাখে গভীর মমতায়। পরিবারের জন্য কিছু করার ক্ষমতা তাদের না থাকলেও কুঁচকে যাওয়া চামড়ার দু'খানা হাত আছে যা বারংবার রবের দিকে উত্তোলিত হয় পরিবারের সবার কল্যাণ কামনায়,যে মূল্যবান হাত জোড়া আসমানের মালিক ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান! তাদের সেই দোআ'য় নেই কোনো লৌকিকতা ও স্বার্থের বিন্দুমাত্র ছোঁয়া। জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দোআ' করার মতো যখন আর কেউ থাকেনা তখন বোঝা যায় সেই দু'খানা হাতের মর্ম!

      মানুষের জীবনটা একটি বৃত্তাকার চক্রের মতো! শৈশবের বিন্দু থেকে শুরু হয়ে বয়সের কম্পাসটা কৈশোর ও যৌবনের গন্ডি পেরিয়ে আবারও দ্বিতীয় শৈশব তথা বার্ধক্যের বিন্দুতে এসে মিলিত হয়।

      বার্ধক্যকে “দ্বিতীয় শৈশব” বলা মোটেও অত্যুক্তি নয়। একজন শিশু যেমন শৈশবে পরিবারের সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল ও কর্মক্ষমহীন একজন সদস্য মাত্র,পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকা নির্ভর করে অন্যের দয়া-ভালোবাসা ও সহযোগিতার উপর, দ্বিতীয় শৈশবের বৃদ্ধদের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই। অনাকাঙ্ক্ষিত বায়না,অযাচিত বাক্যের ব্যবহার,অভিযোগ-ভুল ধরা ও ভুল বোঝার প্রবনতা বৃদ্ধি ,কৌতুহলী মনোভাব, কথা না শোনা বা না বোঝার প্রবণতা,অহেতুক রাগ ও অভিমান,অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে নাক গলানো, ধারাবাহিক অসুস্থতা,নানারকম জিনিসের বায়না,শৌচকার্যে নিয়ন্ত্রণহীনতার পাশাপাশি হাজারো শিশুসুলভ আচরণ একজন মানুষের দ্বিতীয় শৈশবে আবারও ফিরে আসে। 
শিশুদের ভুল কথাগুলো শুনে আমরা হেসে ফেলি বা আদর করে শুধরিয়ে দেই,তাদের কৌতুহলী মনের পিপাসা মেটাতে হাজারটা প্রশ্নের জবাব দেই কোনপ্রকার বিরক্তি ছাড়াই, অনর্থক রাগ ভাঙাতে চেষ্টা করি, সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে তাদের আবদার পূরণ করতে চেষ্টা করি,তাদের অসুস্থতায় উৎকন্ঠিত হই বা রাত জেগে সেবা করি, মলমূত্র পরিস্কার করি হাসিমুখে কিন্তু দ্বিতীয় শৈশবের মানুষগুলোর প্রতি আমরা বড়োই নির্মম!

       দুঃখজনকভাবে দিনদিন বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।কারাগার ও বৃদ্ধাশ্রমের মূল পার্থক্য হলো;কারাগার অপরাধীদের জন্য কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম নিরপরাধ অসহায়দের জন্য। কারাগারের আসামীরা অপরাধের কারণে সাজা ভোগ করে কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমের মানুষরা “কী অপরাধে তার এই শাস্তি?” দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার জবাব খুঁজতে থাকে! আমাদের মনে রাখা উচিত এই দীর্ঘশ্বাসের বার্তা আসমানের মালিকের নিকট খুবই দ্রুত পৌছায় আর তার জবাবটাও হয় খুবই কঠোর !

      বৃদ্ধ মানুষগুলোর কিছু আচরণ মেনে নেয়া সত্যিই কঠিন! কিন্তু একবার ভাবুন আমাদের প্রথম শৈশবে আমাদের বিরক্তিকর আচরণ গুলো তাঁরা হাসিমুখে সহ্য করেছিলেন,আমাদের জীবনের সবচেয়ে অসহায়ত্বের সময়ে তাঁরা যৌবনের সবটুকু শক্তি ও পরম ভালোবাসা দিয়ে আমাদের বাহুডোরে আগলে রেখেছিলেন,এখন তাদের অসহায়ত্বের সময়ে যদি আমরা পিছুপা হই তবে আমাদের মনে রাখা উচিত বয়সের কম্পাসটা বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে দ্বিতীয় শৈশবে আসলেই আমরাও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে একই প্রতিদান পাবো! সমাজে এমন প্রতিদানের সাক্ষী আমরা সবাই!
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক, শিক্ষক, কলামিস্ট ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments