Recent Tube

মনোকথন-২ ; জিয়াউল হক।

  
                          মনোথন-২

একটা মৌলিক প্রশ্ন আগে করি আমরা নিজেরা নিজেদরকেই। সেটা হলো, মানসিক উন্নয়ন বলতে কি বুঝি? মানসিক উন্নয়ন কাকে বলে? মনের উন্নয়ন? মনের উন্নয়ন যদি হয়, তা হলে তারও আগে আরও একটা একটা প্রশ্ন এসে যায়। 

প্রশ্নটা হেঁয়ালি মনে হতে পারে, তবে মোটেও হেঁয়ালি নয়। এটাকে বাহুল্যও মনে হতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করুন মোটেও বাহুল্য নয়। বরং এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একদম মৌলিক একটা প্রশ্ন।

প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ নিজের আত্মোপোলব্ধী এবং নিজেকে একটা উন্নততর অবস্থানে নিয়ে যাবার জন্য। উন্নত মানসিক অবস্থানে উন্নীত করার ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য। এই প্রশ্নটা জানার উপরেই নির্ভর করছে প্রথম প্রশ্ন; মানসিক উন্নয়ন বলতে আমরা কি বুঝি? সেটার উত্তর। কাজেই সবার আগে যে প্রশ্নটির উত্তর বুঝে নিতে হবে সেটা হলো; মন কি? মন কাকে বলে? কোথায় থাকে? এর পরিচয় কি?

প্রশ্নটা আপনাকেই যদি করা হয় তা হলে আপনি কি জবাব দেবেন? প্রথমে থেমে নিজের মনেই একটু ভেবে নেবেন নিশ্চিত। কারণ, মন কি? এটা শুনতে যতো সহজ মনে হতে পারে, এর জবাবটা দিতে গেলে দেখবেন বিষয়টা ততোটা সহজ নয়।  

মন কি তা আপনি খুব ভালো করেই জানেন। সবাই তা জানে। অন্তত উপলব্ধী করে ঠিকই। সমস্যা বাধে সেই উপলব্ধীটাকে যখন আপনি ভাষায় প্রকাশ করতে যাবেন, তখন। এই লেখাটা যখন পড়ছেন কিংবা পড়া শেষ হলে নিজে নিজে একবার ভেবে দেখুন তো, মনের সঙ্গাটা আপনি নিজের মতো করে বলতে পারেন কি না।  

আপনি নিজের মানসিক শক্তি ও সুস্থতাকে যদি গুরুত্ব দিতে চান, নিজের পরিবারের সদস্যদের মানসিক সুস্থতাকে যদি মূল্যায়ন করতে চান, তবে মনে রাখবেন জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে গিয়ে আপনাকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হবে। কাজেই যতো দ্রুত আপনি মনের পরিচয় ও তার কার্যবিধি, তার গতি প্রকৃতিকে বুঝতে পারবেন, ততোই সেটা আপনার, আপনার পরিবার, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও আপনার সাথে সংশ্লিষ্ঠ সকলের জন্য মঙ্গলজনক।

কাজেই মনের সঙ্গা ও পরিচয় দিতে গিয়ে আপনার মন কি বলে সেটা দেখুন আগে। উত্তরে আপনি হয়তো বলবেন ‘আমার মন’ বলে ‘মন’ হলো 'আমার অন্তর'। আমি বলবো আমার মন বলে মন মানে হলো 'আমার বিবেক'। অন্য কাউকে এই একই প্রশ্নটা করে দেখুন তিনি কি বলেন? কেউ হয়তো বলবেন 'আত্মা' কিংবা কেউবা হয়তো বলতে পারেন 'আমার আমি' বা 'আমি'। 

এভাবে দেখবেন প্রত্যেকেই নিজ নিজ বিশ্বাস আর উপলব্ধী অনুযায়ী মনের সঙ্গা দেবেন আপনাকে। মজার ব্যাপার হলো, আপনি সেই সব সঙ্গাগুলোর মধ্যে কোন না কোন পার্থক্য দেখবেন কিন্তু কোনটাকেই সরাসরি নাকচ করে দিতে পারবেন না। কারণ, প্রত্যেকের দেয়া সঙ্গাটা হলো মনের ধরন ও প্রকৃতির ব্যাপেরে তার ‘মন’ যা বলছে, সেটা।

এরকমভাবে নানা জনে নানাভাবে মনকে সঙ্গায়িত করবেন। একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন কোন উত্তরদাতাই নিজের দেয়া উত্তরকে একশতভাগ সঠিক ও অকাট্য এবং তার বাইরে মনের আর কোন সঙ্গা নেই, সে কথা বলবেন না। কারণ তিনি নিজেও জানেন যে, একটা মাত্র কথায় মনের প্রকৃত চিত্র, তার সঙ্গা ও রুপ এবং পরিচিতি তুলে ধরাটা অসম্ভব। 

উত্তরদাতা এর আগে বিষয়টি নিয়ে এতোটা সচেতন না থাকলেও আপনার প্রশ্নের জবাবটা দিতে গিয়ে ঠিকই তার উপলব্ধীতে ধরা দেবে যে, 'মন' এর সঙ্গা ও পরিচয় এক কথায় তুলে ধারাটা অতোটা সহজ নয়, যতোটা প্রথম দৃষ্টিতে সহজ বলে মনে হোক না কেন।  
 
কাজেই মনের সঙ্গা ও পরিচয় বুঝলেও তা অপরকে বুঝানো এতোটা সহজ নয়। এ জন্যই বলি আপনি সবার আগে নিজের কাছে এটা পরিস্কার করে নেন যে, মনের আসল রুপ ও প্রকৃতি, তার সঠিক সঙ্গা ও প্রকৃত পরিচয়টা কি?

আমরা যদি মনের সঙ্গা ও পরিচিতি, আমার অস্তিত্বের সাথে মনের সম্পর্কের ধরন ও পরিধিটা জানতে পারি, তা হলে আমাদের কাছে কয়েকটা বিষয় পরিস্কার হয়ে যায়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো;
 
(এক) মনের আসল রুপটা জানা থাকলে সেই রুপের যে কোন বিকৃতিই আমাদের কাছে বিকৃতি হিসেবে ধরা দেবে, ফলে আমরা যথাসময়ে সতর্ক হতে পারবো, 

(দুই) মনের যতœ নেয়াটা সহজ হয়ে পড়ে, 

(তিন) মনকে তার সঠিক অবয়বে এবং সঠিক মাত্রায় রাখার ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট হতে পারি, এবং 

(চার) নিজেদের মনের উপরে সঠিক মাত্রার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা ও তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটা সহজ হয়ে পড়ে।  

মনের ইংরেজি প্রতিশব্দ মাইন্ড (Mind), আমরা তা জানি। বলা হয়েছে ''The mind is about mental processes, thought and consciousness' অর্থাৎ মন হলো মানসিক কর্মপ্রক্রিয়া, চেতনা এবং চিন্তাধারা সংশ্লিষ্ঠ কোন সত্তা।১ 

আবার মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলা হয়েছে; The mind is an abstract concept used to characterize thoughts, feelings, subjective states, and self-awareness that presumably arise from the brain. 

ভাবানূবাদ; মন হলো মস্তিস্ক থেকে উৎসারিত এমন একটা অদৃশ্য ধারনাশক্তি যা চিন্তা-ভাবনা, আত্মসেচতনতা ও বোধ উপলব্ধীর সুনির্দিষ্ঠ অবস্থা নির্দেশ করে।(২)  

এই মন ও তার সঙ্গা, তার উৎস ও অবস্থান, তার কর্মপ্রক্রিয়া এবং প্রকৃতি এসব নিয়ে বিজ্ঞানীরা এতো বেশি গবেষণা, এতো বেশি চিন্তা ভাবনা করেছেন যে, তা বহু বিজ্ঞানী ও গবেষককে উদ্ভ্রান্ত করে দিয়েছে, হতবিহ্বল করে দিয়েছে
----------------------------------------------------------------

লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments