Recent Tube

ইসরা ও মিরাজের শিক্ষা এবং তাৎপর্য: আজকের প্রেক্ষিত ২য় পর্ব, ড. বি. এম. মফিজুর রহমান।


  
  ইসরা ও মিরাজের শিক্ষা এবং তাৎপর্য: আজকের প্রেক্ষিত। 

                            র্ব।


চৌদ্দ ঃ সর্বাবস্থায়  আল্লারহ  স্মরণ / যিকর  করার  শিক্ষা:

কুরআনে ইসরার বিবরণ শুরু হয়েছে ‘সুবহানাল্লাহ’ শব্দ দিয়ে। যা আল্লাহর যিকর ও মাহাত্ম্য প্রকাশের অন্যতম উপাদান। এতে একদিকে যেমন ইসরা নামক মোজেযার প্রকৃত সংঘটক মহান স্রষ্টার পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠতার তাৎপর্য নিহিত, তেমনি রয়েছে মানুষকে আল্লাহর তাসবীহ, তাহমীদ ও তাযীম ঘোষণার শিক্ষা। যেন মানুষ সার্বক্ষণিকভাবে প্রভু মহিয়ানের স্মরণ সংস্পর্শে প্রশান্তময় জীবন ধারনের পথ খুঁজে পায়। সৃষ্টির সেরা হয়ে মানুষ কি স্রষ্টাকে ভুলে থাকতে পারে? অথচ এ পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টি তাঁরই যিকর করে।
কুরআনে বলা হয়েছে,
(وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ)
“এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রসংশায় তাসবীহ পাঠ করে না” (বনী ইসরাঈল:৪৪)।
সব ইবাদাতের একটা নির্দিষ্ট সময় ও সীমারেখা আছে। কিন্তু যিকরের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা।
এ জন্য ইরশাদ হয়েছে,
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
“যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’ (আল্-ইমরান:১৯১)।
এক ব্যক্তি রাসূল (স.) এর কাছে সহজে পালনীয় একটি ব্যাপক শিক্ষার আবেদন করলে তিনি বলেন,
“ولا يزال لسانك رطب بذكر الله”.
তোমার জিহ্বাকে সর্বদা আল্লাহর যিকর দ্বারা সতেজ রাখ”।
নিচের হাদীসটিও এ ক্ষেত্রে বিস্ময়কর তাৎপর্য বহন করে। রাসূল (স.) বলেন,
لَقِيتُ إبْرَاهيمَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي فقالَ يا مُحَمدُ: أَقْرِئ أُمّتَكَ مِنّي السّلاَمَ وَأخْبِرْهُمْ أَنّ الْجَنّةَ طَيّبَةُ التّرْبَةِ عَذْبَةُ المَاءِ، وَأنّهَا قِيعَانٌ، وَأَنّ غِرَاسَهَا سُبْحَانَ الله والْحَمْدُ لله وَلاَ إلهَ إلاّ الله وَالله أكْبَرُ
ইসরা রজনীতে ইব্রাহীম (আ.) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন, “হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মতকে আমার সালাম দিবেন। আর তাদেরকে বলবেন, জান্নাত ঊর্বর ভূমি ও সুমিষ্ট পানিময়। কিন্তু তা উদ্ভিদশূন্য। এর বৃক্ষরাজি হচ্ছে, এই যিকর: সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আল্লাহু আকবার”। এজন্যই রাসূল (স.) আমাদের জন্য সব কাজ ও স্থানের জন্য বিশেষ বিশেষ দু‘আ ও যিকরের ব্যবস্থা করেছেন। যেমন, বাহনে আরোহণের দু‘আ, ঘরে প্রবেশ ও ঘর থেকে বের হওয়ার দু‘আ ইত্যাদি। আমাদের উচিত এ সব দু‘আ ব্যবহার করা এবং সন্তানদেরকে এতে অভ্যস্ত করা। সব কাজে আল্লাহর স্মরণ অন্যায়-অনাচার থেকে বেঁচে থাকার এক মহারক্ষাকবচ। আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার কারণেই আজ আমাদের ঘরে-বাইরে সর্বত্র নগ্নতা, বেহায়াপনা ও পাপাচার শুধু বেড়েই যায়নি; বরং সমাজের নেতৃত্বের আসনে বসে আজে এসব পাপীষ্ঠ-খোদাদ্রোহী ও নগ্নবাদীরা। পরিণামে আমাদের যুব প্রজন্ম দ্রুত নৈতিক পদস্খলনের দিকে ছুটে চলছে।

পনেরো. সামাজিক অপরাধসমূহের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সতর্কিকরণ:

রাসূল (স.) কে এ ইসরা ও মিরাজের ঐতিহাসিক সফরে মারাত্মক সামাজিক অপরাধসমূহের ভয়াবহ পরিণাম ও শাস্তি প্রত্যক্ষ করানো হয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে, উম্মতকে এ ব্যাপারে সকর্ত করা। এ সব দৃশ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দৃশ্য এখানে তুলে ধরা হলো:

ক. ব্যভিচারের শাস্তি :
রাসূল (স.) ব্যভিচারী নারী-পুরুষের শাস্তি দেখেছেন। সহীহ বুখারীতে সামুরা বিন জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স.) এর দীর্ঘ হাসীসে কবরে ব্যভিচারীর ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেন,
فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللَّهَبُ ضَوْضَوْا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَؤُلَاءِ قَالَ قَالَا لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ ) الحديث ، وفي آخره : ( وَأَمَّا الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ الْعُرَاةُ الَّذِينَ فِي مِثْلِ بِنَاءِ التَّنُّورِ فَإِنَّهُمْ الزُّنَاةُ وَالزَّوَانِي ).
“অতঃপর আমরা একটি তন্দুর চুলার নিকট আসলাম। যার উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশ ছিল প্রশস্ত। তার ভিতরে আমরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দেখতে পেলাম তাতে রয়েছে কতগুলো উলঙ্গ নারী-পুরুষ। তাদের নিচের দিকে থেকে আগুনের শিখা প্রজ্বলিত করা হচ্ছে। অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হওয়ার সাথে সাথে তারা উচ্চঃস্বরে চিৎকার করছে। রাসুর (স.) এর কারণ জানতে চাইলে ফেরেশাদ্বয় বললেন, এরা হলো আপনার উম্মতের ব্যভিচারী নারী-পুরষ।
ব্যভিচারীর শাস্তির অন্য একটি চিত্র:
رأى الرسول صلى الله عليه وسلم قوم بين أيديهم لحم نضيج في قدر، ولحم آخر نىء قذر خبيث، فجعلوا يأكلون من اللحم النيئ الخبيث ويدعون النضيج الطيب. قال جبريل: هذا الرجل من أمتك تكون عنده المرأة الحلال الطيبة، فياتى امرأة خبيثة فيبيت عندها حتى يصبح، والمرأة تقوم من عند زوجها حلالا طيبا، فتأتى رجلا خبيثا فتبيت معه حتى تصبح ”
“নবী (স) মিরাজের রাত্রিতে একদল লোকের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তাদের সামনে একটি পাত্রে গোশত রান্না করে রাখা হয়েছে। অদূরেই অন্য একটি পাত্রে রয়েছে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত কাঁচা গোশত। লোকেরা এসে রান্না করা পবিত্র গোশত বাদ দিয়ে দুর্গন্ধময়, কাঁচা গোশত খেতে লাগল। (অর্থাৎ তাদেরকে তা খেতে বাধ্য করা হচ্ছে)। জিব্রাইল (আ.) বললেন, এরা আপনার উম্মতের ঐ সব পুরুষ লোক যারা নিজেদের ঘরে পবিত্র হালাল স্ত্রী থাকা সত্বেও অপবিত্র খারাপ মহিলাদের সাথে রাত্রি যাপন করত। এবং ঐ সব নারী যাদের পবিত্র হালাল স্বামী থাকা সত্বেও অপবিত্র খারাপ পরপুরুষের সাথে রাত্রি যাপন করে”।

খ. যাকাত অস্বীকারকারীদের শাস্তি:
لقد أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم على قوم، على أقبالهم رقاع وعلى أدبارهم رقاع، يسرحون كما تسرح الإبل والنعم، ويأكلون الضريع والزقوم، ورضف جهنم وحجارتها. سأل الرسول صلى الله عليه وسلم سيدنا جبريل ما هؤلاء؟ فقال جبريل عليه السلام : هؤلاء الذين لا يؤدون زكاة اموالهم.
রাসূল (স.) এমন কিছু লোকের কাছে আসলেন, যাদের লজ্জাস্থান ও পশ্চাতদেশ সামান্য এক টুকরা চামড়া বা কাপড় দিয়ে ঢাকা। তারা উট বা ছাগলের মত ইতস্তত এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করছে। আর জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর ও বিষাক্ত যাক্কুম বৃক্ষ ও কাঁটাবিশিষ্ট গুল্ম থেকে ভক্ষণ করছে। রাসূল (স.) যখন তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন, জিব্রাইল জবাব দিলেন, এরা হচ্ছে ঐ সব লোক যারা যাকাত আদায় করত না”।
যাকাত ইসলামের বন্ধন সেতু। এ বন্ধন মানুষের সাথে আল্লাহর। নিয়ামতদাতার সাথে নিয়ামতপ্রাপ্তের কৃতজ্ঞতার বন্ধন। এ বন্ধন মানুষের সাথে মানুষের। ধনীর সাথে গরীবের ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতির বন্ধন। দ্বীন দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন, ধর্মনিরপেক্ষবাদের এ অসুস্থ চিন্তার সূত্রপাত ঘটেছিল যাকাতদানের অস্বীকৃতির মাধ্যমে। যারা বলেছিল, যাকাত হলো সম্পদ তথা পার্থিব বিষয়। এর সাথে আবার ধর্মের কি সম্পর্ক? যেমনটি আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা বলে, রাজনীতিতো পার্থিব বিষয়। এর সাথে আবার ধর্মের কি সম্পর্ক? এজন্যই হযরত আবু বকর যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

গ. অসংযত জিহ্বার অপরাধসমূহ ও তার শাস্তি:

মানুষ অনেক সময় পরিণাম চিন্তা না করে এমন অনেক কথা-বার্তা বলে থাকে, যা কঠিন দন্ডযোগ্য অপরাধের আকার ধারন করে। এমন কিছু অপরাধের শাস্তি রাসূল (স.) মিরাজ কালে অবলোকন করেছিলেন। যেমন:

১. গীবাত বা পরনিন্দা:
رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم قوما لهم أظافر من نحاس يخدشون بها وجوههم فقال من هؤلاء يا جبريل فقال هؤلاء الذين يأكلون لحوم الناس ويقعون فى اعراضهم (الذين يغتابون الناس
রাসূল (স.) এক কিছু লোক দেখলেন, যাদের নকগুলো ছিল তামার মত। তারা সেগুলো দিয়ে নিজেরাই নিজেদের মুখমন্ডলগুলোকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছিল। রাসূল (স.) জিব্রাইল কে প্রশ্ন করলেন, এরা কারা? তিনি জবাব দিলেন, এরা ঐ সব লোক যারা মানুষের গোশত খেত এবং মান-মর্যাদায় আঘাত হানত। যারা মানুষের গীবাত করত।
এরপর তিনি এমন একজন লোক দেখলেন যে ব্যক্তি কাঠ জমা করে বোঝা হিসেবে উঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও আরো বেশি কাঠ তার বোঝার সাথে যোগ করছে। এই লোকটির পরিচয় জানতে চেয়ে উত্তর পেলেন, এ ব্যক্তিটির ওপর এতবেশি দায়িত্বের বোঝা ছিল যে, সে বহন করতে পারতো না। তা সত্ত্বেও বোঝা কমানোর পরিবর্তে আরো অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা নিজের কাঁধে চাপিয়ে নিত।
এর পরের দৃশ্যে তিনি দেখলেন, কিছু লোকের ঠোঁট ও জিহ্বা কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলা হলো, এরা ছিল কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তা। মুখে যা আসে তাই বলতো এবং সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করতো। তারপর এক স্থানে একটি পাথর দেখা গেল, যার মধ্যে ছিল সামান্য ফাটল। তার মধ্য থেকে একটা মোটাসোটা বলদ বেরিয়ে এলো। পরে এর মধ্যে ঢুকতে চেয়ে পারল না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বলা হলো, এটা হল এমন দায়িত্বহীন ব্যক্তির দৃষ্টান্ত, যে ফেতনা সৃষ্টি করার মতো উক্তি করে লজ্জিত হয়ে প্রতিকার করতে চায় কিন্তু পারে না। 

২. অন্যকে দোষারোপকরা বা তুচ্ছ্যতাচ্ছিল্য করা:
ورأى رسول الله صلى الله عليه وسلم أقوام تقطع لحومهم من جنوبهم ويأكلونها كرهاً: فيقال له كل كما كنت تأكل من لحم أخيك
রাসূল দেখলেন কিছু মানুষ নিজেদের পার্শ্বদেশ থেকে নিজেরাই গোশত কাটছে। সে গোশত তাদেরকেই আবার খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, খাও। যেভাবে তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত খেতে। এরা হচ্ছে ঐ সব লোক যারা নির্দোষ লোকদেরকে দোষারোপ করত। যারা শব্দ কিংবা দেহের ভাষায় অন্যকে তুচ্ছ্য তাচ্ছিল্য করে বেড়ায়।
নির্দোষ, নিরীহ, খোদাভীরু ও তাওহীদি জনমানুষের হৃদয়ের সম্পন পর্যায়ের লোকদেরকে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধে অভিযুক্ত করার প্রবণতা, এক শ্রেণীর মানুষের পেশা ও নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ধারণা এভাবেই তাদের পথের কাঁটা ভালো মানুষগুলো পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। অথচ তারা ভুলে গেছে পরকালের আল্লাহর বিচারের কথা। তারা ভেবেছে দুনিয়ার বিচারই শেষ বিচার।
আসলে সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে, যাদের কাছে অন্যের মান-সম্মান সুস্বাদু লোভনীয় খাদ্যের মত। পৃথিবীতে মানুষ দুটো জিনিস নিয়ে বেশি ব্যস্ত। সম্পদ সঞ্চয় ও অপরের মানসম্মান হরণ। এ দুটো কাজই মূলত পৃথিবীতে ফাসাদের অন্যতম কারণ।

৩. মিথ্যাচার ও তথ্যসন্ত্রাস:
فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُسْتَلْقٍ لِقَفَاهُ ، وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِكَلُّوبٍ مِنْ حَدِيدٍ ، وَإِذَا هُوَ يَأْتِي أَحَدَ شِقَّيْ وَجْهِهِ فَيُشَرْشِرُ شِدْقَهُ إِلَى قَفَاهُ ، وَمَنْخِرَاهُ إِلَى قَفَاهُ ، وَعَيْنَاهُ إِلَى قَفَاهُ , قَالَ : ثُمَّ يَتَحَوَّلُ إِلَى الْجَانِبِ الْآخَرِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِالْجَانِبِ الْأَوَّلِ ، فَمَا يَفْرُغُ مِنْ ذَلِكَ الْجَانِبِ حَتَّى يَصِحَّ الْأَوَّلُ كَمَا كَانَ ، ثُمَّ يَعُودُ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِهِ الْمَرَّةَ الْأُولَى …وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُشَرْشَرُ شِدْقُهُ إِلَى قَفَاهُ ، وَعَيْنَاهُ إِلَى قَفَاهُ ، وَمَنْخِرَاهُ إِلَى قَفَاهُ ، فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَغْدُو مِنْ بَيْتِهِ ، فَيَكْذِبُ الْكَذِبَةَ تَبْلُغُ الْآفَاقَ
রাসূল (স.) বলছেন, “তারপর আমরা এমন এক ব্যক্তির কাছে গেলাম, যে মাথার পেছনে হেলান দিয়ে বসে ছিল। আরেক ব্যক্তি লোহার ছুরি নিয়ে তার পাশেই ছিল। সেই ছুরি দিয়ে সে ঐ লোকটির মুখমন্ডলের এক পার্শ্ব থেকে (ঠোঁট সংলগ্ন) গাল, নাসারন্ধ ও চোখ পেছনের গ্রীবা দেশ পর্যন্ত ফেড়ে দিচ্ছে। তারপর মুখমন্ডলের অপর পার্শ্ব প্রথম পার্শ্বের মত ফেড়ে দিচ্ছে। তা শেষ করতে না করতেই প্রথমার্ধ আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। তারপর আবার সে প্রথম পার্শ্ব থেকে আগের মতই ফেড়ে দিচ্ছে। রাসূল (স.) কে বলা হয়েছিল, এ ব্যক্তি সকাল বেলা ঘর থেকে বের হত এবং এমন মিথ্যাচার করত, যা দিগন্তে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ত”।
আজকের প্রেক্ষাপটে তথ্যসন্ত্রাস তথা হলুদ সাংবাদিকতায় আক্রান্ত, পক্ষপাতদুষ্ট, বিশেষ করে ইসলাম বিদ্বেষী, নাস্তিকবান্ধব গণমাধ্যম ও সাংবাদকর্মীদের উপর এ হাদীসটির প্রয়োগ কতইনা বাস্তব! সত্যিই ইসলাম চিরআধুনিক, চিরবিস্ময়কর!

৪. আমানত বিনষ্ট করা:
ثم أتى الرسول صلى الله عليه وسلم على رجل قد جمع حزمة عظيمة لا يستطيع حملها، وهو يزيد عليها. قال سيدنا جبريل: هذا الرجل من أمتك، يكون عليه أمانات الناس لا يقدر على أدائها وهو يريد أن يزيد عليها
এরপর রাসূল (স.) এমন এক ব্যক্তির কাছে গেলেন, যে একটি বিশালাকৃতির আঁটি বেধেছে। যা সে বহন করতে পারছে না। তবুও সে আরো বোঝা চাচ্ছে।জিব্রাইল বললেন, এই হচ্ছে আপনার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি, যার উপর মানুষের আমানতের বোঝা আছে। সে তা পালন করতে পারছে না। তা সত্বেও সে আরো চাচ্ছে।
রাসূল (স.) অন্য হাদীসে বলেন, “যে ব্যক্তির মধ্যে আমানাতদারিতা নেই, তার ঈমান নেই”। এ কথা সুস্পষ্ট যে, দায়িত্বভার একটি মহান আমানত। তা যে কোন পর্যায়ের হোক না কেন? ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্ট্র কিংবা তারচেয়েও সম্প্রসারিত। যাদের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা নেই, তবুও দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তদূপরি আরো দায়িত্ব চায় কিংবা গায়ের জোরে দায়িত্ব কুক্ষিগত করে রাখার ষড়যন্ত্র করে, তারা সবাই এ সব হাদীসে বর্ণিত পরিণামের ভোগের যোগ্য, তাতে সন্দেহ নেই।

৫. অবৈধ উপায়ে ইয়াতিম-অসহায়দের সম্পদ ভক্ষণ:

রাসূল (স.) এই পবিত্র সফরে এমন কিছু লোক দেখতে পেলেন, যাদের ঠোঁটগুলো উটের ঠোঁটের মত। তাদের মুখগহ্বর খুলে ধরা হচ্ছে এবং তার মধ্যে থোকা থোকা আগুন ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর তা তাদের গুহ্যদ্বার দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। এরা ছিল সে সব লোক যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতিমদের সম্পদ ভক্ষণ করত।

৬. সুদখোরের শাস্তি:
ক.
فَأَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ حَسِبْتُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ أَحْمَرَ مِثْلِ الدَّمِ ، وَإِذَا فِي النَّهَرِ رَجُلٌ سَابِحٌ يَسْبَحُ ، وَإِذَا عَلَى شَطِّ النَّهَرِ رَجُلٌ قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ حِجَارَةً كَثِيرَةً ، وَإِذَا ذَلِكَ السَّابِحُ يَسْبَحُ مَا يَسْبَحُ ثُمَّ يَأْتِي ذَلِكَ الَّذِي قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ الْحِجَارَةَ ، فَيَفْغَرُ لَهُ فَاهُ فَيُلْقِمُهُ حَجَرًا فَيَنْطَلِقُ يَسْبَحُ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَيْهِ ، كُلَّمَا رَجَعَ إِلَيْهِ فَغَرَ لَهُ فَاهُ فَأَلْقَمَهُ حَجَرًا
রাসূল (স.) বলেন, আমরা একটি রক্তের নদীর কাছে আসলাম। দেখলাম নদীতে একটি লোক সাঁতার কাটছে। নদীর তীরে অন্য একটি লোক কতগুলো পাথর একত্রিত করে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সাঁতার কাটতে কাটতে লোকটি যখন নদীর কিনারায় পাথরের কাছে দাঁড়ানো ব্যক্তির নিকটে আসে, তখন দাঁড়ানো ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পাথর মুখে নিয়ে লোকটি আবার সাতরাতে শুরু করে। যখনই লোকটি নদীর তীরে আসতে চায়, তখনই তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়। রাসূল (স.) এর কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেন, এরা হল আপনাদের উম্মতের সুদখোর”।

খ. রাসূল (স.) এমন কিছু লোক দেখলেন যাদের পেটগুলো ছিল ঘরের মত বিশালাকৃতিসম্পন্ন। যখনই তাদের কেউ দাঁড়াবার চেষ্টা করে, তখনই পরে যায়। তাদের পেটের ভেতর থেকে সাপ বের হচ্ছে। এরা ছিল সুদখোর।

মোটকথা, যিনা-ব্যভিচার, নগ্নতা-অশ্লীলতা, ন্যায়নীতিভ্রষ্টতা, যুলুম-নির্যাতন মুক্ত সমাজ এবং সুদমুক্ত, যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতার প্রকৃত মুক্তি সাধন ইসরা ও মিরারেজ অন্যতম শিক্ষা।

আল্লাহ তা’আলা  রাসূল সা. কে শান্তি প্রতিষ্ঠার ১৪ দফা মূলনীতি অনুসরণ করতে বলেন যা দুনিয়ার সমস্ত মানবজাতির জন্য কল্যাণকর

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, (১)তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং (২) পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহা র কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে `উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৩ ]
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৪ ]
رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ إِن تَكُونُواْ صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلأَوَّابِينَ غَفُورًا
তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভালই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্যে ক্ষমাশীল। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৫ ]
وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلاَ تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا
(৩) আত্নীয়-স্ব জনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং (৪) কিছুতেই অপব্যয় করো না। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৬ ]
إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا
নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৭ ]
وَإِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَاء رَحْمَةٍ مِّن رَّبِّكَ تَرْجُوهَا فَقُل لَّهُمْ قَوْلاً مَّيْسُورًا
এবং (৫) তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৮ ]
وَلاَ تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلاَ تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَّحْسُورًا
(৬) তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।[ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৯]
إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاء وَيَقْدِرُ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا
নিশ্চয় তোমার পালকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত,-সব কিছু দেখছেন। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩০ ]
وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُم إنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْءًا كَبِيرًا
(৭) দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্নক অপরাধ। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩১ ]
وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً
(৮) আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩২ ]
وَلاَ تَقْتُلُواْ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللّهُ إِلاَّ بِالحَقِّ وَمَن قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلاَ يُسْرِف فِّي الْقَتْلِ إِنَّهُ كَانَ مَنْصُورًا
(৯) সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩৩ ]
وَلاَ تَقْرَبُواْ مَالَ الْيَتِيمِ إِلاَّ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ وَأَوْفُواْ بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤُولاً
আর, (১০) এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়া; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যৌবনে পদার্পন করা পর্যন্ত (১১) এবং 
অঙ্গীকার পূর্ন কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩৪ ]
وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذا كِلْتُمْ وَزِنُواْ بِالقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً
(১২) মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপালায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিণাম শুভ। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩৫ ]
وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولـئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً
(১৩) যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩৬ ]
وَلاَ تَمْشِ فِي الأَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولاً
(১৪) পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩৭ ]

মেরাজের প্রকৃত শিক্ষা

এই ১৪ দফাই মেরাজের প্রকৃত শিক্ষা। শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা রাসূল সা: মদিনায় গিয়ে কায়েম করেছিলেন, এগুলো তার বুনিয়াদি মূলনীতি। পরবর্তীকালে এই দফাগুলো ইসলামি রাষ্ট্রের আইনে পরিণত হয় এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-ব্যবস্থা রাসূল সা: প্রণয়ন করেন। ইসলামি হুকুমাত প্রতিষ্ঠার পর মানুষের জীবনধারা সুন্দর ও শান্তিময় হয়ে ওঠে এবং পবিত্র জীবনধারার এক সভ্যতার বিস্তৃতি লাভ করে। মসজিদ, মক্তব, মাদরাসাসহ সর্বোত্র রমরাজের এই শিক্ষাকে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করে এর আলোকে ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা আমাদের সবার ঈমানি দায়িত্ব। সব ধরনের অশান্তি, পাশবিকতা ও মানব বিপর্যয় থেকে মুক্তির এটিই একমাত্র পথ। 

উপসংহারে, এক কথায় বলা যায়, মিরাজের সমূদয় শিক্ষা যেন একটি নিষ্কর্ষের মধ্যে ফুটে ওঠেছে। তা হচ্ছে, আল্লাহর যমীনে আল্লাহর বিধানভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক উপাদানসমূহ শিক্ষা দেয়া। যারই ফলশ্রুতি ছিল মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজের গোড়াপত্তন।

হে আল্লাহ! আমাদের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসরা ও মিরাজের শিক্ষা ধারন ও বাস্তবায়নের তাওফীক দান কর। আমীন।

Post a Comment

0 Comments