Recent Tube

জাল যঈফ হাদীসের কবলে আহলে হাদীসঃ পর্ব ১ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।


জাল যঈফ হাদীসের কবলে আহলে হাদীসঃ   
   পর্ব ১ ;
-----------------------------------
'আহলে হাদীস' নামকরণে জাল হাদীসঃ

    তথাকথিত আহলে হাদীস সর্বদা সহীহ হাদীস পালনের সবক দেয়। তারা নিজেরাই বলে সহীহ হাদীস ছাড়া দলিল হিসাবে যে কোন জাল অথবা যঈফ হাদীস পেশ করা হারাম। মজার ব্যাপার হল- নিজেদের মতবাদের পক্ষে গেলে অগণিত জাল যঈফও হাদীসও দলিল হিসাবে পেশ করে তা সহীহ বলে জাতিকে বোকা ভেবে ধোঁকা দেয়। যেমন, 'আহলে হাদীস' নামটি কোন সহীহ হাদীসে নেই। তবুও নামধারী তথাকথিত আহলে
হাদীসরা দাবি করে সহীহ হাদীসে নাকি আহলে হাদীসের নাম ধরে প্রসংশা করা হয়েছে! এ বিষয়ে আলোচনা করতে ও আহলে হাদীসকে একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল হিসাবে প্রমাণ করতে গিয়ে আমাদের দেশের সহীহ হাদীসের অন্যতম ফেরিওয়ালা আসাদুল্লাহ গালিব রচনা করেছেন 'আহলে হাদীস আন্দোলন কি ও কেন', এবং 'ফিরকা নাজিয়াহ'। আরেক সহীহ ফেরিওয়ালা আহলে হাদীসকে হকপন্থী ও জান্নাতী এবং বাকি সকল মানুষকে জাহান্নামী সাব্যস্ত করতে রচনা করেছেন, 'ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন'। কিন্তু আফসোসের বিষয়, মানুষকে
সহীহ হাদীসের দাওয়াতের নাম দিয়ে তারা তাদের বইয়ের পাতায় পাতায় সহীহ হাদীসে নামে চরম মিথ্যাচার ও ভয়ঙ্কর জালিয়াতি করেছেন।

     অবাক করা ব্যাপার হল আহলে হাদীসের নাম ও তাদের ইতিহাস এবং আহলে হাদীসকে একমাত্র জান্নাতী ফিরকা প্রমাণে আসাদুল্লাহ গালিব, মুযাফফর সহ সকল আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রথমে যে দলিলটি পেশ করে থাকেন তা হল-
"বিখ্যাত সাহাবী আবু সাইদ খুদরী (রা) মুসলিম তরুণদের দেখলে খুশি হয়ে
বলতেন- 
 مرحبا بوصية رسول الله (ص) أمرنا رسول الله (ص) أن نوسع لكم في المجالس وأن نفهمكم الحديث فإنكم خلوفنا وأهل الحديث بعدنا-
"নবী (সাঃ) এর অসিয়ত অনুযায়ী আমি তোমাদের মারহাবা জানাচ্ছি, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে তোমাদের জন্য মজলিশ প্রশস্ত করার ও তোমাদের হাদীছ বুঝাবার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। কেননা তোমরাই আমাদের পরবর্তী বংশধর ও পরবর্তী আহলে হাদীছ।" (গালিব, আহলে হাদীছ আন্দোলন কি ও কেন, পৃঃ ৬; ফিরকা নাজিয়াহ, পৃঃ ২৫; মুযাফফর, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ২১৮। রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে- খত্বীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃঃ ১২; মুস্তাদরাক হাকেম, হা/২৯৮; হাকেম ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী সমর্থন করেছেন; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৮০, বায়হাক্কি লিল, শুআবুল ঈমান হা/ ১৭৪১)

    আহলে হাদীসের শায়েখরা দাবী করেছেন হাদীসটি সহীহ। এবার দেখি হাদীসটি সহীহ, না জাল? 
১. এই হাদীসটি আমি জামে তিরমিযী'তে দেখেছি তবে সেখানে 'আহলে হাদীস' শব্দটি খুঁজে পাইনি। (তিরমিযী হাঃ ২৬৫০)
২. হাদীসটি সুনান ইবনে মাজাহ'তে পেয়েছি সেখানেও 'আহলে হাদীস' নাম নেই। (ইবনে মাজাহ হাঃ ২৪৯)
৩. হাদীসটি তিরমিযীর বরাতে মিশকাতে দেখলাম সেখানেও 'আহলে হাদীস' শব্দের কোনো অস্তিত্ব নেই। (মিশকাত হাঃ ২১৫)
৪. মুস্তাদরাক হাকীমে হাদীসটি আছে তবে তাতেও 'আহলে হাদীস' শব্দের কোনোও অস্তিত্ব নেই।
৫. হাদীসটি শুআবুল ঈমান লিল বাইহাকী ও খত্বীবে বাগদাদীর শারফু আসহাবিল হাদীসে 'আহলুল হাদীস' শব্দ সহ পাওয়া যায় কিন্তু হাদীসটির রাবী আবু হারুন আল আবদী। তিনি দুর্বল, পরিত্যাক্ত, মিথ্যুক বলে অভিযুক্ত। তার হাদীস বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে এমন হাদীস বায়ান করতেন যা হাদীস নয়। যার কারণে একাধিক মুহাদ্দিস তার সম্পর্কে বলেছেন, তিনি মিথ্যাবাদী, মনগড়া হাদীস বর্ণনাকারী। (বিস্তারিত দেখুনঃ ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই’তিদাল, ৩/১৭০; ইবনে হাজার, তাকরীবুত তাহযীব পৃঃ ৪০৮)

    এই জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমাদের লা মাযহাবী ভাইয়েরা নিজেদের নামকরণ করেছেন ‘আহলে হাদীস’। এই হল তাদের দুর্বল ও জাল হাদীস মানার নিকৃষ্ট নমুনা। আমাদের বুঝে আসে না, সহীহ হাদীসের ধ্বজাধারীরা কি করে এমন জাল ও ভিত্তিহীন বর্ণনা নিজেদের মতের পক্ষে দলীল হিসাবে উপস্থাপন করলেন। তাদের সহীহ হাদীস অনুসারে চলার দাবী চরম জালিয়াতি, ধাপ্পাবাজী ও মিথ্যার প্রচার মাত্র। তারা স্বার্থের অনুকুলে বা সুযোগ পেলেই আবু হারুন আল আবদীর মতো পরিত্যাক্ত, মিথ্যাবাদীর মওজু হাদীস পেশ করতে তাঁরা লজ্জাবোধ করেন না। এইরূপ বর্ণনাকারীর হাদীস মানলে ওয়ালারাই বর্তমানে ‘আহলে হাদীস’ নামে পরিচিত।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গবেষক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments