Recent Tube

অর্ধ শাবানের ফযিলত ও বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম






 
অর্ধ শাবানের ফযিলত ও বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ 
-------------------------------------------------


     হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রা. রসূলুল্লাহ স. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: 
"يَطَّلِعُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ"
আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের (লাইলাতুল বারাআত) রাতে আপন সব মাখলুকের দিকে বিশেষ দয়ার দৃষ্টিতে দেখেন। আর মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (তবারানী কাবীর হাঃ ১৬৬৩৯, সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ ৫৬৬৩)

      আল্লামা হাইসামী বলেন: হাদীসটি তবারানী তাঁর কাবীর ও আওসাতের মধ্যে বর্ণনা করেছেন এবং এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য”। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ১২৯৬০)
   শায়খ আলবানী বলেন: حديث صحيح روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا “এ হাদীসটি সহীহ। এ হাদীসটি একদল সাহাবায়ে কিরাম থেকে এমন বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে, যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে”। 
   অতঃপর শায়খ আলবানী সে সব সাহাবায়ে কিরামের নামের তালিকা পেশ করে বলেন: তাঁরা হলেন: হযরত মুআজ বিন জাবাল, আবু সা’লাবা আলখুশানী, আব্দুল্লাহ বিন আমর, আবু মুসা আশআরী, আবু হুরাইরা, আবু বকর সিদ্দীক, আওফ ইবনে মালেক ও আয়েশা রা.। (সিলসিলাতু আহাদীসিস সহীহা: ১১৪৪)

    যেসবব হাদীস দ্বারা লাইলাতুল বারাআত তথা মধ্য শাবানের রাতের ফযীলাত প্রমাণিত হয় তার মধ্যে রয়েছে- 
(ক) হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত, তিরমিজী: ৭৩৭, মুসনাদে আহমাদ: ২৬০১৮।
(খ) হযরত মুআজ ইবনে জাবাল, ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫।
(গ) আবু মুসা আশআরী, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, কিতাবুস সুন্নাহ লিইবনে আবী আসেম: ৫১০, শুআবুল ঈমান: ৩৮৩৩।
(ঘ) হযরত আবু বকর সিদ্দীক, মুসনাদে বাযযার: ২০৪৫, কিতাবুত তাওহীদ লিইবনে খুযাইমা: ১৩৬, শুআবুল ঈমান: ৩৮২৮ ও ৩৮২৯, কিতাবুস সুন্নাহ লিইবনে আবী আসেম: ৫০৯।
(ঙ) হযরত আবু সা’লাবা খুশানী, কিতাবুস সুন্নাহ লিইবনে আবী আসেম: ৫১১, শুআবুল ঈমান: ৩৮৩১ ও ৩৮৩২।
(চ) হযরত আবু হুরাইরা, মুসনাদে বাযযার: ২০৪৬।
(ছ) হযরত আওফ বিন মালেক রা. মুসনাদে বাযযার: ২০৪৮ বর্ণিত হাদীস। 
এ সব বর্ণনার পরে শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন: وإن كان في إسناد كل منها مقال إلا أنه بمجموعها يصح الحديث ويقوى. “প্রত্যেকটি হাদীসের ওপর যদিও কিছু আপত্তি আছে; কিন্তু সম্মিলিতভাবে হাদীসটি সহীহ ও শক্তিশালী। (মুসনাদে আহমাদ: ৬৬৪২ নম্বর হাদীসের আলোচনা দ্রঃ)

     বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ

    এ হাদীসে সকল মানুষের জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে যারা মুশরিক, মহান আল্লাহর সাথে শিরক করে এবং হিংসুক, আল্লাহর বান্দাগণের প্রতি হিংসা করে তারা এই সাধারণ ক্ষমার আওতা ভুক্ত হবে না। আফসোসের বিষয় হলো-  বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মাঝেও ব্যাপক ভাবে শিরকি আকিদা ও শিরকি কর্মকান্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ সবচেয়ে বেশি যে শিরকে লিপ্ত সেটি হলো আইন পালনের শিরক। আজ তারা আল্লাহর উলুহিয়্যাত ও রুবুবিয়্যাত সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে তাগুতী বিধানকে মেনে চলছে। শুধু তাই নয় এক শ্রেণীর তাগুতপন্থী আলেম জালিম সরকারের তাগুতী শাসন মানা ফরজ (?) বলে দাবী করছে এবং লক্ষ কোটি সাধারণ মুসলিমকে শিরক করতে উৎসাহিত করছে। ফলে ইহুদী খ্রিষ্টানরা যেমন আল্লাহর পরিবর্তে তাদের ধর্মীনেতা ও রাষ্ট্রীয় নেতাদের রব হিসাবে গ্রহণ করেছে (সূরা তওবাহঃ৯/৩১) ঠিক তেমনি তারাও আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে তাগুতী বিধান স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে চলে শিরকের মধ্যে ডুবে আছে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
مَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا-
"তিনি (আল্লাহ) ছাড়া তাদের (মানুষের) কোন ওলী (বিধানদাতা) নেই। তাঁর বিধানে তিনি কাউকে শরীক করেন না।" (সূরা কাহফঃ১৮/২৬)

    আর হিংসা হলো ভয়ংকর পাপ, যার কারণে একে শিরকে সাথে বর্ণনা করা হয়েছে।  মুসলিম উম্মাহ যে দলে দলে বিভক্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না। যার আজ তারা নির্যাতিত ও পরাজিত। এর প্রধান কারণ হলো পরস্পর হিংসা বিবাদ। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋُﻮﺍ ﻓَﺘَﻔْﺸَﻠُﻮﺍ ﻭَﺗَﺬْﻫَﺐَ ﺭِﻳﺤُﻜُﻢْ ﻭَﺍﺻْﺒِﺮُﻭﺍ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮِﻳﻦَ
"আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। পরস্পর বিবাদ করো না তাহলে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। এবং ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন।" (সূরা আনফাল:৮/৪৬)

    যেহেতু ক্ষমা লাভের শর্ত হলো শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা তাই এদুটি বিষয় থেকে যে ব্যক্তি মুক্ত হতে পারবে সে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করবে। আর যদি কোন ব্যক্তি শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত হতে না পারে, তাহলে তার কোন আমলেই কাজ হবে না। অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে পারবে না। 
   তাই আসুন! আইন পালনের শিরক সহ যাবতীয় শিরক ও পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করে ঐক্যবদ্ধ হই এবং নিজেদের শক্তি অর্জন করে মুসলিম উম্মাহর প্রভাবপ্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনি। আল্লাহর জমিন থেকে তাগুতী বিধান অপসরণ করে আল্লাহর বিধান কায়েম করার চেষ্টা করি। আল্লাহ তা'য়ালার অফুরন্ত রহমত ও ক্ষমা লাভ করি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুক!।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা আলোচক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 
اللهم آمين

Post a Comment

0 Comments