Recent Tube

শবে মিরাজ পালন করা বিদ'আত ও রজব মাসের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নেই; আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ।



শবে মিরা পালন করা বিদ'আরজব মাসের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদী নেই;
---------------------------------- 

  নিঃসন্দেহে ইসরা ও মিরাজ সত্য। মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সাঃ) কে এক রাতে স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায়, মক্কা থেকে জেরুজালেম ও সেখান থেকে সাত আকাশ ভ্রমণ করিয়েছেন। ৫ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের আকীদা।

  তবে মিরাজ কবে হয়েছে, কোন মাসে হয়েছে, কত তারিখে হয়েছে এর বর্ণনা কুরআন-হাদীসে নেই।

 ▪ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: মিরাজের সময় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

▪ আর তাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন:

   "ইবনে রজব বলেন: রজব মাসে বড় বড় ঘটনা ঘটেছে মর্মে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায় কিন্তু কোনটির পক্ষেই সহীহ দলীল নাই। বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজবের প্রথম রাতে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন, সাতাইশ বা পঁচিশ তারিখে নবুওয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন অথচ এ সব ব্যাপারে কোন সহীহ দলীল পাওয়া যায় না।" [লাতাইফুল মায়ারেফ, ১৬৮ পৃষ্ঠা]

  ▪ আবু শামাহ বলেন: গল্পকারেরা বলে থাকে যে, ইসরা ও মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল রজব মাসে। কিন্তু ইলমে জারহ ওয়াত তাদীল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আলেমগণের মতে এটা ডাহা মিথ্যা। [আল বায়িস: ১৭১]

 শবে মিরাজ পালন করা বিদ'আত হওয়ার কারণ -

 বিদ'আতঃ ইসলামে ইবাদত ও আকীদার ক্ষেত্রে নতুন রীতি, নীতি, মতবাদ ও আমল উদ্ভাবন করা কে বিদ'আত বলে।

 রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  বলেন, 

من أحدث في ديننا ما ليس منه فهو رد

“কোনো ব্যক্তি যদি আমাদের এই দ্বীনের ভেতর এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।”

[বুখারী ও মুসলিম, রিয়াদুস সলিহীন, বই ১, বিদ’আত বা দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন নিষিদ্ধ অধ্যায়; হাদিস নং ১৬৯]

 তিনি আরো বলেন,

"তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হ’তে সাবধান থাক। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।"  [আবু দাউদ ৪৬০৭; মিশকাত  ১৬৫, সনদ সহীহ] 
  
 জাবির (রাঃ) হতে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ﻭَﻛُﻞَّ ﺿَﻼَﻟَﺔٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭ
অর্থাৎঃ ‘এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’।  [আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ১৫৭৯; দুই ঈদ-এর খুৎবা’ অধ্যায়] 

  রাসূল (সাঃ) এর কাছে হাশরের মাঠে তাঁর উম্মতের সবাই কাউসারের পানি পান করতে আসবে। তখন, তাদের মধ্যে যারা বিদ'আতি ছিল তাদের ও রাসূল (সাঃ) মাঝে পর্দা তৈরি করে দেওয়া হবে। রাসূল (সাঃ) কে বলা হবে "আপনি জানেন না, আপনার পর তারা আপনার ধর্মে কী পরিবর্তন করেছে!" রাসূল (সাঃ) তখন বলবেন - "যারা পরিবর্তন করেছে তারা দূর হোক, দূর হোক।" [বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং, ৬৪৪৩ ]

  ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) স্বীয় ছাত্র ইমাম শাফিঈ (রহিমাহুল্লাহ) কে বলেছিলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)  ও তাঁর সাহাবীদের সময়ে যেসব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমান কালেও তা ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত হবে না। যে ব্যক্তি ধর্মের নামে ইসলামে কোন নতুন প্রথা চালু করল, অতঃপর তাকে ভাল কাজ বা ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ বলে রায় দিল, সে ধারণা করে নিল যে, আল্লাহর রাসুল(ﷺ)  স্বীয় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করেছেন’।  [আল ইনসাফ, পৃষ্ঠা ৩২] 

  ▪ ইবনুল হাজ্জ বলেন:

  “রজব মাসে যে সকল বিদআত আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে সাতাইশ তারিখের লাইলাতুল মিরাজের রাত অন্যতম।” [আল মাদখাল, ১ম খণ্ড, ২৯৪পৃষ্ঠা]

   প্রশ্ন হতে পারে আমি তো নামাজই পড়ছি, ইবাদতই করছি। খারাপ কী? তাহলে, আসর নামাজ ৪ রাকাত, যদি ৫ রাকাত পড়েন তাহলে হবে? কেন হবে না? একটা রুকু, দুইটা সিজদা বেশি দিচ্ছেন। ভালো কাজই তো। বিতর নামাজ ৪ রাকাত পড়লে হবে? কেন হবে না? ভালোই তো। রবিউল আউয়াল মাসে হজ্জ করলে হবে? কেন হবে না?

  হবে না কারণ, ইবাদত কবুলের শর্ত হচ্ছে - 

১. আশা- আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার আশা, তাঁর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশায়
২. ভয় - আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পেয়ে
৩. ভালোবাসা ও বিনয়- আল্লাহকে পরিপূর্ণ ভালোবেসে, বিনয় ও নিষ্ঠার সাথে
৪. রাসূল (সাঃ) এর পদ্ধতিতে - 

 পদ্ধতি হলো -
ক. তিনি কোন সময়ে করেছেন, খ. কী পরিমাণ করেছেন বা কতটুকু করতে বলেছেন, গ. কোন নিয়মে করেছেন, ঘ. কোন স্থানে করেছেন

  ইবাদতের জন্য এ সীমারেখা গুলো মেনে চলা আবশ্যিক। আর কিছু লোক প্রশ্ন করতে পারে, বিদ'আত দুই প্রকার, ভালো আর খারাপ। আমরা তো লাইট, ফ্যান ব্যবহার করি, এগুলো তো নবীর যুগে ছিলো না। এগুলোও তো বিদ'আত। তাদের বলবো - উপরের হাদীসগুলো ভালোভাবে পড়ুন। পড়লে স্পষ্ট হবে যে -

১. রাসূল (সাঃ) ধর্মের ভিতর নতুন কিছু আবিষ্কার করতে নিষেধ করেছেন [মান আহদাসা ফি দ্বীইনিনা] , এটাকেই বিদ'আত বলেছেন। দুনিয়াবি কোনো আবিষ্কারকে বিদ'আত বলেন নি।

২. বিদ'আত কখনো ভালো হয় না। রাসূল (সাঃ) যেহেতু বলেছেন - [কুল্লু বিদ'আতিন দলালা] সকল বিদ'আত হলো ভ্রষ্টতা।

Post a Comment

0 Comments