Recent Tube

মাসলা মাসায়েল।



যাকাতের গুরুত্বঃ

সংকলনঃ শাইখ মুখলিসুর রহমান মাদানী।   

    যাকাত এমন ১টি আর্থিক ইবাদত যা মানুষকে আত্মিক কৃপণতা থেকে মুক্ত করে। সম্পদকে পবিত্র করে মানুষকে লোভ মুক্ত করে। মহান আল্লাহ্ যাকাতের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনেক স্থানে সালাতের সহিত আবার বেশ কিছু জায়গায় আলাদাভাবে যাকারতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাকাত ইসলামের ১টি গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ভিত্তি। ইহা ইসলামের ৩য় রোকন, সালাতের পরেই এবং সিয়ামের আগেই তার অবস্থান। হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ 
روى ابنُ عُمَرَرضي الله عنها  قال: قال رسول الله  صلى الله عليه وسلم : “بُنِيَ الإِسْلامُ على خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إلا الله وَأَنَّ مُحَمَّدًا رسول الله وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ“(متفق عليه).
অর্থঃ ইবনে উমার রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ   বলেছেনঃ ইসলাম ৫টি খুঁটির উপর স্থাপিতঃ 
১। একথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহর রাসূল। 
২। সালাত কায়েম করা, 
৩। যাকাত প্রদান করা, 
৪। কাবা ঘরের হজ্জ করা এবং 
৫। রমযান মাসের রোযা রাখা। (বুখারী ও মুসলিম)। 
যাকাত ১টি অতি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত হওয়ায় আমাদের পূর্ববর্তী রাসূলগণের শরীয়তেও তা বিদ্যমান ছিল। ওহীর মাধ্যমে তাদের উপরেও এ যাকাত ফরজ করা হয়েছিল। যেমনঃ ইব্রাহীম আঃ এর বংশধর ইমামগণের প্রতি আল্লাহ্ এ মর্মে ওহী করে ছিলেনঃ
(وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ) [الأنبياء:৭৩]
অর্থঃ আমি তাদেরকে এমন ইমাম করেছিলাম যারা আমার নির্দেশে হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছে এবং আমি তাদেরকে ভাল কাজ, সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়ে ছিলাম। (সূরাহ্ আম্বিয়া #৭৩)। 
    যাকাত আদায়ের দরুন মহান আল্লাহ্ ইসমাঈল আঃ এর প্রশংসা করে বলেনঃ 
(وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِنْدَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا) [مريم:৫৫] 
    অর্থঃ তিনি নিজ পরিবারকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন, আর তিনি স্বীয় রব্বের নিকটে সন্তোষজনক ছিলেন। (সূরাহ্ মারঈয়াম #৫৫)। 
ঈসা আঃ এর ব্যাপারে সংবাদ দিয়ে আল্লাহ্ বলেনঃ 
(وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنْتُ ‎وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا) [مريم:৩১].
    অর্থঃ আর আমি যেখানেই থাকি আল্লাহ্ আমাকে বরকতময় করেছেন এবং সালাত ও যাকাতের ব্যাপারে আমৃত্যু নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরাহ্ মারঈয়াম #৩১)। 
     আল্লাহ্ তায়া’লা বানী ইসরাঈলের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দৃঢ় অঙ্গিকার গ্রহণ করেন যার অন্যতম হলঃ যাকাত প্রদান করা। আল্লাহ্ এ মর্মে তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করে বলেনঃ 
(وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآَتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ)
অর্থঃ আর তোমরা সালাত কায়েম, যাকাত আদায় কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। (সূরাহ্ বাকারাহ্ #৪৩)। 
    আল্লাহর পক্ষ থেকে যাকাতের গুরুত্বারোপের ১টি দলীল হলঃ হিজরতের পূর্বেই মক্কাতে মুমিনদেরকে যাকাতের দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাক্কী সূরাহ্ সমূহে বার বার যাকাতের উল্লেখ হয়েছে। সূরাহ্ বাইয়িনাতে তাওহীদ ও সালাতের সাথে যাকাতের উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহ্ বলেনঃ 
(وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ القَيِّمَةِ) [البيِّنة:৫].
অর্থঃ তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিন্ঠভাবে আল্লাহ্র এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। (বাইয়িনাহ্ #৫)। 
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ্ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেনঃ যাকাত ও ইহ্সান সম্পর্কে মক্কাতেই মুমনিগণ আদিষ্ট হয়ে ছিলেন। তবে যাকাতের পরিমাণ ও বিধিবিধান মদীনাতে শরীয়ত সম্মত করা হয়েছে। 
আল্লাহর রাসূল সাঃ যাকাতের আদায়ের উপরে তাঁর সাহাবায়ে কিরাম রাঃ এর বাইয়াত গ্রহণ করতেন। আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপরেই বাইয়্যাত গ্রহণ করা হয়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ 
روى جَرِيرُ بنُ عبدِ الله رضي الله عنه قال: “بَايَعْتُ النبي صلى الله عليه وسلم   على إِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ“(متفق عليه).
অর্থঃ জারির বিন আব্দুল্লাহ্ রাঃ বলেনঃ আমি নবী সাঃ এর কাছে সালাত কায়েম, যাকাত প্রদান এবং প্রত্যেক মুসলিমকে উত্তম নসীহত করার উপর বাইয়াত করেছি। (বুখারী ও মুসলিম)। 
যাকাত অস্বীকার কারীর বিরুদ্ধে তা আদায় না করা পর্যন্ত জিহাদ অব্যাহত থাকবে। কারণ, মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এ ঘোষণা দিয়েছেন যে, সালাত আদায়, যাকাত প্রদান ও তাওবাহ্ করলে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে না। আল্লাহ্ বলেনঃ 
(فَاقْتُلُوا المُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ) [التوبة:৫].
অর্থঃ (অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে) মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (তাওবাহ্ #৫)। এ মহান বিধানের উপর ভিত্তি করে রাসূল সাঃ ও বলেছেনঃ 
}أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ الناس حتى يَشْهَدُوا أَنْ لا إِلَهَ إلا الله وَأَنَّ مُحَمَّدًا رسول الله وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ فإذا فَعَلُوا ذلك عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إلا بِحَقِّ الْإِسْلَامِ وَحِسَابُهُمْ على الله{ (متفق عليه).
অর্থঃ লোকেরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ অ-আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ সাঃ  এর সাক্ষ্য না দেওয়া, সালাত কায়েম এবং যাকাত প্রদান না করা পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য আদিষ্ট হয়েছি। যখন তারা ইহা পালন করবে তখন ইসলামের অধিকার ব্যতীত আমার থেকে তাদের জান, মাল সংরক্ষণ করে নিল। (বুখারী ও মুসলিম)।  
আল্লাহর নবী সাঃ এর মৃত্যুর পরে আরবের কিছু গোত্র যাকাত অস্বীকার করার মাধ্যমে মুরতাদ হয়েগেলে দলীলের ভিত্তিতে আবূ বকর রাঃ তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য মুসলিম সেনাবাহিনী প্রস্তুত করেন। তাদের ব্যাপারে তিনি কোন শিথিলতা দেখাননি। অথচ এরা মনে করেছিল যে, যাকাত নবী এর সাথে খাস ছিল। যা তাঁর মৃত্যুর পরে আর দিতে হবে না। আবূ বকর রাঃ তাদেরকে বলে দেন যে, যাকাতের বিধান সালাতের মতই। অতএব, যে ব্যক্তি তা দিতে অস্বীকার করবে না দেওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইসলামের অধিকার। হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ 
عن أبي هُرَيْرَةَ  رضي الله عنه قال: “لَمَّا تُوُفِّيَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم    وكان أبو بَكْرٍ رضي الله عنه  وَكَفَرَ من كَفَرَ من الْعَرَبِ فقال عُمَرُ  رضي الله عنه: كَيْفَ تُقَاتِلُ الناس وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ الناس حتى يَقُولُوا لَا إِلَهَ إلا الله فَمَنْ قَالَهَا فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ وَنَفْسَهُ إلا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ على الله، فقال: والله لَأُقَاتِلَنَّ من فَرَّقَ بين الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ فإن الزَّكَاةَ حَقُّ الْمَالِ، والله لو مَنَعُونِي عَنَاقًا كَانُوا يُؤَدُّونَهَا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم   لَقَاتَلْتُهُمْ على مَنْعِهَا قال عُمَرُ رضي الله عنه فَوَ الله ما هو إلا أَنْ قد شَرَحَ الله صَدْرَ أبي بَكْرٍ -رضي الله عنه- فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَقُّ“(رواه الشيخان).
   অর্থঃ আবূ হুরাইরাহ্ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ মারা গেলে আবূ বকর রাঃ মুসলিমদের খলীফাহ্ নির্বাচিত হলেন। ওদিকে বেশ কিছু লোক যাকাত অস্বীকার করে মুরতাদ হয়েগেল। আবু বকর রাঃ তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলেন। উমার রাঃ বললেনঃ আপনি কিভাবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন অথচ রাসূল সাঃ বলেছেনঃ লোকেরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ না বলা পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আদিষ্ট হয়েছি। যে ব্যক্তি তা বলে সে ইসলামের অধিকার ব্যতীত আমার থেকে তার জান ও মাল হেফাযত করেনিল। আর তার হিসাব নেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব। 

    তখন আবূ বকর রাঃ বলেনঃ আল্লাহর কসম! যারা সালাত ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব। কারণ, যাকাত সম্পদের অধিকার। 
আল্লাহর কসম! তারা আল্লাহর রাসূল সাঃ কে যাকাত হিসেবে দেওয়া ১টি উঁটের বাচ্চাও যদি আমাকে দিতে অস্বীকার করে তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। 
    উমার রাঃ বলেনঃ আল্লাহর কসম! এরপর আমি বুঝতে পারি আল্লাহ্ আবূ বকর রাঃ এর অন্তর খুলে দিয়েছেন অতএব, তা সত্য। (বুখারী ও মুসলিম)। 
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ্ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেনঃ সাহাবায়ে কিরাম ও তৎপরবর্তী সকল ইমামগণ যাকাত অস্বীকার কারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। যদিও তারা ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় ও রমযান মাসের সিয়াম পালন করুক না কেন। 
অতএব, আল্লাহতে বিশ্বাসী প্রত্যেক মুমনি ব্যক্তির উচিৎ দ্বীন ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিকে অবহেলা না করে খুশী মনে নিজ সম্পদের যাকাত বের করে দেওয়া। মনে এ বিশ্বাস রাখা যে, মহান আল্লাহই তাকে এ সম্পদ দান করেছেন। 
আর তিনিই এ সম্পদ থেকে সামান্য পরিমাণ মাল গরীবদের জন্য বের করা ফরজ করেছেন। কোন ব্যক্তি যাকাত ফরজের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে, সওয়াবের আশায় এখলাস সহকারে নির্দিষ্ট হক্বদারকে তার যাকাত পৌঁছিয়ে দিলে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ তাকে এর মহান প্রতিদান দান করবেন।  
আর যাকাতের মাধ্যমে নিজ আত্মার বখীলতা ও ভুল ভ্রান্তি থেকে বাঁচা যায়। সম্পদ পবিত্র ও বৃদ্ধি হয়। আল্লাহ্ বলেনঃ 
(خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا)[التوبة:১০৩].
   অর্থঃ তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ কর। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে আত্মিক ও সম্পদের দিক থেকে পবিত্র করবে। (তাওবাহ্ #১০৩)। 
দূঃখ জনক হলেও সত্য যে, ঢিলেমী বা মূর্খতার দরুন অনেকে নির্দিষ্ট হক্বদারের নিকটে তার যাকাত পৌঁছাতে পারে না। 
মুসলিমদের মধ্যে হাজারো ধনী লোক রয়েছে। তবে তাদের মাঝে অসংখ্য গরীব মানুষ আছেন। কিন্তু মুসলিমদের ধনীরা যদি গরীবদেরকে সঠিকভাবে তাদের সম্পদের যাকাত প্রদান করে তবে মুসলিমদের মাঝে কোন গরীব থাকার কথা নয়। কিন্তু অনেক ধনী লোকেরা ঠিকমত তাদের সম্পদের যাকাত বের করেন না। 
অনেকে একেবারেই যাকাত বের করে না। অনেকে যাকাতের এমাউন্ট (পরিমাণ) কে বড় মনে করে সামান্য কিছু যাকাত বের করে থাকে। অথচ যাকাতের তুলনায় তার কাছে যে, বিশাল পরিমাণ সম্পদ থেকে যাচ্ছে সে তার হিসেবই করে না। যাকাত তো আপনার বিশাল সম্পদের ৪০ ভাগের ১ভাগ মাত্র। 
(قُتِلَ الإِنْسَانُ مَا أَكْفَرَهُ) [عبس:১৭].
    অর্থঃ মানুষ ধ্বংস হোক সে কতই না বড় অকৃতজ্ঞ। (সূরাহ্ আবাসা #১৭)। 
অনেক ধনী লোক এমন রয়েছেন যা তাদের সম্পদের যাকাত বের করেন ঠিক কিন্তু তা হক্কদারের কাছে পৌঁছে না। কারণ, অনেক ধনীরা নির্দিষ্ট গরীবদেরকে প্রতি বছরই যাকাত দিয়ে থাকেন। 
অথচ তাদের বা তাদের সন্তানদের অনেকেই কাজ-কর্ম, বা চাকুরী করার দরুন এখন আর তারা যাকাতের হক্বদার নয়। কিন্তু না জেনে তাদের অনেকেই এখনও যাকাত নিয়েই চলেছেন। অথবা তারা মনে করে যে, এটা আমাদেরকে অমুকের পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়েছে।  
অনেক ধনী লোক কাছে যে, ভিক্ষুককে পায় তাকেই যাকাত দিয়ে দেয়। অথচ সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে বর্ণিত যাকাতের হক্বদারদেরকে সে খুজেই দেখে না। এর কারণ, হলঃ ভিক্ষুকদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিশ্বাস, আর অনেক ভিক্ষুকের ভিক্ষার বিভিন্ন কৌশল মজবুতভাবে রপ্ত করা। 
সাথে রয়েছে কৃত্রিম ভিক্ষুকদের চমৎকার ও চটকদার কথা। এদের অধিকাংশ মিথ্যুক হয়ে থাকে। যাদের অনেকে হয়তো প্রথম দিকে গরীব ছিল। কিন্তু এখন আর তারা গরীব নয়। তবে ভিক্ষা করতে গিয়ে যখন দেখে এর মাধ্যমে ভাল পয়সা আসে তখন তারা ইহাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। 
অথচ অসূস্থ্য, পীড়িত মেলা গরীব মানুষের খোঁজ কেউ নেয় না। কারণ, তারা ভিক্ষা বৃত্তিতে তেমন পারদর্শি নয়। অথবা চাইতে মানুষের কাছে লজ্জাবোধ করেন। 
যারা চেয়ে বেড়ায় তারা কারও না কারও কাছে ভিক্ষা বা সহযোগীতা পেয়ে যাবে। তাই মুসলিমের উচিত জাত ভিক্ষুককে অধিক গুরুত্ব না দেওয়া। তাদের সত্যতা না জেনে তাদের হাতে নিজের যাকাত প্রদান করে ধোকাগ্রস্ত হওয়া বড় বোকামী বটে। এ মর্মে রাসূল সাঃ আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়ে বলেনঃ 
ليس الْمِسْكِينُ بِالَّذِي تَرُدُّهُ التَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ ولا اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ إنما الْمِسْكِينُ الْمُتَعَفِّفُ، اقرؤوا إن شِئْتُمْ: (لَا يَسْأَلُونَ الناس إِلْحَافًا) (رواه الشيخان)
   অর্থঃ সে ব্যক্তি মিসকীন নয় যাকে ২/১ টি খেজুর বা ২/১ লোকমা খাবার দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়। প্রকৃত মিসকীন তো সে ব্যক্তি যে, আত্মসংযমতা অবলম্ন করে মানুষের কাছে চায় না। 
তোমরা চায়লে আল্লাহর বানী পাঠ করঃ অর্থঃ এরা কাকুতি মিনতি সহকারে কারও কাছে চায় না। (বরং তারা আত্মসংযমতা অবলম্বন করে)। (বুখারী ও মুসলিম)। 
কোন ব্যক্তিকে যাকাত প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে তার উচিৎ প্রকৃত হক্কদারকে তালাশ করে যাকাত প্রদান করা। এ ক্ষেত্রে নিকটত্মীয়তা, বন্ধু বা পরিচিত কাউকে ছাড় দেওয়া ঠিক নয়। 
বরং অবশ্যই প্রকৃত হক্বদারের নিকটে যাকাত পৌঁছিয়ে দিতে হবে। আর যদি সে তা না পারে তবে ধনী ব্যক্তির নিকট হতে যাকাত বন্টনের দায়িত্ব নেওয়া তার ঠিক নয়। কারণ, এতে করে প্রকৃত গরীবদের অধিকার নষ্ট ও হরণ ও তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ 
اتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ“(رواه الترمذي وقال: حديث حسن صحيح).
অর্থঃ তোমরা নিজেদের রব্বকে ভয় কর, ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় কর, রমযান মাসে রোযা রাখ, সম্পদের যাকাত আদায় কর, নেতাদের আনুগত্য কর তবে তোমরা নিজের রব্বে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিযী)।

Post a Comment

0 Comments