Recent Tube

যাদের সাওম পালন অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের সাওমের পরিবর্তে ফিদইয়া তথা একজন মিসকীনকে খাদ্য দেওয়া,






যাদের সাওম পালন অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের সাওমের পরিবর্তে ফিদইয়া তথা একজন মিসকীনকে খাদ্য দেওয়া, 
---------------------------------------------------------------

ইবন উমার ও সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,

بابٌ ﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُ﴾ [البقرة: ١٨٤] نَسَخَتْهَا ﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥﴾ [البقرة: ١٨٥]»
“অধ্যায়: ﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُ﴾ [البقرة: ١٨٤] “আর যাদের জন্য তা (ফিদিয়া প্রদান) সম্ভব হবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪]
উক্ত আয়াতকে রহিত করেছে এ আয়াত: “রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সাওম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
«وَقَالَ ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مُرَّةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي لَيْلَى، حَدَّثَنَا أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَزَلَ رَمَضَانُ فَشَقَّ عَلَيْهِمْ، فَكَانَ مَنْ أَطْعَمَ كُلَّ يَوْمٍ مِسْكِينًا تَرَكَ الصَّوْمَ مِمَّنْ يُطِيقُهُ، وَرُخِّصَ لَهُمْ فِي ذَلِكَ، فَنَسَخَتْهَا: ﴿وَأَن تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ﴾ [البقرة: ١٨٤] فَأُمِرُوا بِالصَّوْمِ»
“ইবন নুমায়ের রহ. ইবন আবু লায়লা রহ. থেকে (সনদসহ) বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, রমযানের হুকুম নাযিল হলে তা পালন করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাওম পালনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সাওম ত্যাগ করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াতো। এ ব্যাপারে তাদের অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তারপরوَأَن تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ “সাওম পালন করাই তোমাদের জন্য উত্তম” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪] এ আয়াতটি পূর্বের হুকুমকে রহিত করে দেয় এবং সবাইকে সাওম পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।”
বুখারী, তা‘লিক, ৩/৩৪।
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
قَرَأَ: فِدْيَةُ طَعَامِ مَسَاكِينَ قَالَ: هِيَ مَنْسُوخَةٌ
“তিনিفِدْيَةُ طَعَامِ مَسَاكِينَ আয়াতটি পড়ে বলেছেন যে, এটি রহিত।”
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৪৯।
عَنْ عَطَاءٍ، سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ، يَقْرَأُ وَعَلَى الَّذِينَ يُطَوَّقُونَهُ فَلاَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: «لَيْسَتْ بِمَنْسُوخَةٍ هُوَ الشَّيْخُ الكَبِيرُ، وَالمَرْأَةُ الكَبِيرَةُ لاَ يَسْتَطِيعَانِ أَنْ يَصُومَا، فَيُطْعِمَانِ مَكَانَ كُلِّ يَوْمٍ مِسْكِينًا»
‘আতা থেকে বর্ণিত, তিনি ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বলতে শুনেছেন যে তিনি পড়ছেন, وَعَلَى الَّذِينَ يُطَوَّقُونَهُ فَلاَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ অর্থাৎ ‘আর যাদের উপর সাওম কষ্টকর হবে এবং তা আদায় করতে অসমর্থ হবে তারা মিসকীনকে ফিদইয়া হিসেবে খাবার খাওয়াবে।’ “ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আয়াতটি রহিত নয়, বরং তা অতিশয় বৃদ্ধ, অত্যন্ত বৃদ্ধার জন্য, যারা সাওম রাখতে সমর্থ নয়, তারা প্রতিদিনের সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়াবে।”
বস্তুত: وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ এর يُطِيقُونَهُ অর্থ নির্ধারণের মধ্যেই এ মতভেদ নির্ভরশীল। এর দু’টি পরস্পর বিরোধী অর্থ করা সম্ভব। [সম্পাদক]
ইমাম আতা রহ. বলেন, সর্বপ্রকার রোগেই সাওম ভঙ্গ করা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম হাসান ও ইবরাহীম রহ. বলেন, সন্তানের দাত্রী এবং গর্ভবতী স্ত্রীলোক যখন নিজ প্রাণ অথবা তাদের সন্তানের জীবনের প্রতি হুমকির আশংকা করে তখন তারা উভয়ে সাওম ভঙ্গ করতে পারবে। পরে তা আদায় করে নিতে হবে। অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি যখন সাওম পালনে অক্ষম হয়ে পড়ে (তখন ফিদইয়া আদায় করবে।)
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৫০৫।

রোযা রাখতে কষ্ট হয়, এমন ভাইদের উদ্দেশ্যে নিম্নে কিছু পরামর্শ প্রদত্ত হল

১-মানসিক প্রস্তুতিঃ
এটি একটি সত্য নিয়ম যে, মানসিক প্রস্তুতি অনেক কিছুকে সহজ করে দেয়; বরং কোন কিছুর সাফল্যের প্রথম সিঁড়িই হচ্ছে মানসিক প্রস্তুতি। মানুষ দুনিয়াবী কাজ-কর্মের ক্ষেত্রে কত প্রস্তুতি নেয়, কত পরিকল্পনা করে কিন্তু এক মাস ফরয রোযা পালনের ক্ষেত্রে কোন প্রস্তুতি নেয় না; অথচ একজন মুমিন তার দুনিয়াবী কাজের তুলনায় দ্বীনের কাজকে বেশী প্রাধান্য দেয়। তাই রোযার মাস আসার পূর্বে আমাদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সংকল্প নিতে হবে যে, আমি অবশ্যই রোযা পালন করবো। আর এমন সৎ নিয়ত থাকলে আল্লাহ তাআলা সেই কাজ করতে সাহায্য করবেন এবং তাওফীক দিবেন। পক্ষান্তরে দৃঢ় সংকল্প না নিলে শয়তান কুমন্ত্রণা দেওয়ার সুযোগ পাবে এবং আপনাকে এই ফরয ইবাদত থেকে দূরে রাখার জন্য সে যাবতীয় কৌশল গ্রহণ করবে এবং চক্রান্ত চালাবে।
২-সময় ও অবস্থা হিসাবে প্রস্তুতিঃ
এ ক্ষেত্রে আমি আপনাদের সউদী আরবের অবস্থা ও ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করব। সউদী আরবে রোযার মাসে সরকারী দফতরগুলিতে সাধারণতঃ ছুটি থাকে না। এমন কি স্কুল কলেজগুলিতেও ছুটি থাকে না। তবে বর্তমানে তাদের নির্ধারিত বাৎসরিক গ্রীষ্মের ছুটি যে সময়ে হয় তাতে রামাযান মাস পড়ে বলে কয়েক বছর ধরে রামাযানে স্কুল কলেজ ছুটি থাকছে। কিন্তু অন্যান্য দফ্তরগুলিতে ছুটি নেই। তারা রামাযান মাসে রোযাও পালন করে এবং দৈনন্দীন কাজ-কর্মও করে। এ ক্ষেত্রে এখানকার সরকার এবং কম্পানীগুলো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে যার ফলে লোকেরা রোযা সহ অফিসিয়াল কাজ-কর্ম সচল রাখতে পারে। উদাহারণ স্বরূপঃ

ক-সাধারণতঃ অফিস ও কম্পানীগুলিতে দৈনন্দীন কাজের নির্ধারিত সময় ৮ ঘন্টা। কিন্তু রামাযান মাসে তা কমিয়ে করা হয় ৬য় ঘন্টা। কম্পানী বিশেষে ৫ ঘন্টাও।
খ- কিছু সংস্থা ও কোম্পানী এমনও আছে যারা তাদের কাজ দিনে না করে রাতে নির্ধারণ করে। তারাবীর পর কাজ শুরু হয় আর সাহরীর কিছুক্ষণ পূর্বে শেষ হয়। যেহেতু এখানে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুতের সুব্যবস্তা রয়েছে তাই রাতে কাজের কোন অসুবিধা হয় না।
গ-অনেক সংস্থা এমনও আছে যারা ফজরের পর কাজ শুরু করে এবং সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত কাজ করে। অতঃপর সারাদিন ও রাত বিরতি থাকে যেন রোযা করতে সহজ হয়। এবং এই ধরণের আরও অন্যান্য সুন্দর পদক্ষেপ।
উপরের কার্য ব্যবস্থানুযায়ী আমরা আমাদের দেশের ঐ সকল ভাইদের কিছু পরামর্শ দিতে পারি, যারা বর্ণিত অজুহাতে ফরয রোযা ত্যাগ করে।
১-আপনারা সাধারণ দিনে যত বেশী সময় ধরে কাজ করেন, তার মাত্রা রামাযান মাসে কমাতে হবে কারণ আপনার উপর রোযা ফরয এবং আপনাকে তা পালন করা আবশ্যক।
২- ফজরের পর সরাসরি কাজ শুরু করা যেন দিনে রোদের তাপ প্রখর হওয়ার পূর্বে আপনি আপনার কাজের অনেকটা সমাধান করতে পারেন।
৩-ব্যবস্থা থাকলে রাতে কাজ করা। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম আলো ও চাঁদের আলোতে কাজ করা সহায়ক হতে পারে।
৪-আগে থেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, যেহেতু গ্রীষ্মে রোযা তাই রোযার কারণে কাজের কিছু ক্ষতি হতে পারে, তা সহ্য করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments