Recent Tube

কবরের আযাব কঠিন আযাব


কবরের আযাব কঠিন আযাব;
        
 ★★★
 আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সঙ্গীগণ (আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব) সেখান থেকে চলে আসে, আর তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। তার নিকট (কবরে) দু’জন মালাক (ফেরেশতা) পৌঁছেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, তুমি দুনিয়াতে এই ব্যক্তির (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) ব্যাপারে কী জান? এ প্রশ্নের উত্তরে মু’মিন বান্দা বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসন্দেহে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন তাকে বলা হয়, ঐ দেখে নাও, তোমার ঠিকানা জাহান্নাম কিরূপ (জঘন্য) ছিল। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তোমার সে ঠিকানা (জাহান্নামকে) জান্নাতের সাথে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তখন সে বান্দা দু’টি ঠিকানা (জান্নাত-জাহান্নাম) একই সঙ্গে থাকবে। কিন্তু মুনাফিক্ব ও কাফিরকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, দুনিয়াতে এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কী ধারণা পোষণ করতে? তখন সে উত্তর দেয়, আমি বলতে পারি না (প্রকৃত সত্য কী ছিল)। মানুষ যা বলতো আমিও তাই বলতাম। তখন তাঁকে বলা হয়, তুমি বিবেক-বুদ্ধি দিয়েও বুঝতে চেষ্টা করনি এবং (আল্লাহর কুরআন) পড়েও জানতে চেষ্টা করনি। এ কথা বলে তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে কঠিনভাবে মারতে থাকে, এতে সে তখন উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করতে থাকে। এ চীৎকারের শব্দ (পৃথিবীর) জিন আর মানুষ ছাড়া নিকটস্থ সকলেই শুনতে পায়। (মুত্তাফাকুন ‘আলায়হি, শব্দসমূহ বুখারীর)[1]

بَابُ اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِه وَتَوَلّى عَنْهُ أَصْحَابُه وَإِنَّه لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِه فَيَقُولَانِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هذَا الرَّجُلِ؟ لِمُحَمَّدٍ فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّه عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُه فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلى مَقْعَدِكَ مِنْ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللّهُ بِه مَقْعَدًا مِنْ الْجَنَّةِ فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا وَأَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَه مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هذَا الرَّجُلِ؟ فَيَقُولُ لَا أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ فَيُقَالُ لَا دَرَيْتَ وَلَا تَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَلَفْظُه لِلْبُخَارِىِّ 

[1] সহীহ : বুখারী ১৩৭৪, মুসলিম ২৮৭০, নাসায়ী ২০৫১, আহমাদ ১২২৭১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১২০, সহীহ আল জামি‘ ১৬৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৫।মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১২৬

 ★★★ কবরের ‘আযাব★★★

এখানে কবর দ্বারা উদ্দেশ হচ্ছে ‘‘আলামুল বারযাখ’’। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

 وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ اِلى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ

অর্থাৎ- ‘‘পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তারা বারযাখে থাকবে।’’ (সূরাহ্ আল মু’মিনূন ২৩: ১০০)

আর বারযাখ হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝের এক পৃথিবী। এখানে কবর দ্বারা মৃত্যু বরণকারী লাশকে দাফন করার গর্ত উদ্দেশ্য নয়। কেননা, অনেক মৃত ব্যক্তি আছে। যেমন, পানিতে ডুবে যে মৃত্যুবরণ করেছে অথবা আগুনে পুড়ে অথবা প্রাণী তাকে খেয়ে ফেলেছে এগুলোকে দাফন করা হয় না অথচ এদেরকেও শাস্তি দেয়া হয় এবং নি‘আমাতও দান করা হয়।

এখানে إثبات عذاب القبر বলে শুধুমাত্র শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে দু’টি কারণে। এক- গুরুত্বারোপ করা। দুই- শাস্তি যাদেরকে দেয়া হবে সেই কাফির বেঈমানদের সংখ্যা বেশী।

১২৫-[১] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে যখন কবরে জিজ্ঞেস করা হয় তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বূদ নেই এবং নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। ‘‘যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে অটল ও অবিচল রাখেন’’- (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ২৭)। আল্লাহর এ বাণীর অর্থ হলো এটাই।

অপর এক বর্ণনায় আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘ইউসাব্বিতুল্লা-হুল্লাযীনা আ-মানূ বিল ক্বওলিস্ সা-বিতি’’- এ আয়াত কবরের ‘আযাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কবরে মৃতকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার রব কে? সে বলে, আমার রব মহান আল্লাহ তা‘আলা। আর আমার নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।[1] (বুখারী, মুসলিম)

بَابُ اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ عَنِ النَّبِيّ ﷺ قَالَ الْمُسْلِمُ إِذَا سُئِلَ فِي الْقَبْرِ يَشْهَدُ أَن لَّا إِلهَ اِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَدًا رَّسُوْلُ الله فَذَلِكَ قَوْلُهٗ يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِينَ امَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَوةِ الدُّنْيَا وَفِي الْاۤخِرَةِ وَفِيْ رِوَايَةٍ عَنِ النَّبِيّ ﷺ قَالَ يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِينَ امَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ نَزَلَتْ فِي عَذَابِ الْقَبْرِ يُقَالُ لَهٗ مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ رَبِّيَ اللّهُ وَنَبِيِّي مُحَمَّدٌ ﷺ. مُتَّفَقٌ عَلَيْه

ِ [1] সহীহ : বুখারী ৪৬৯৯, মুসলিম ২৮৭১, আবূ দাঊদ ৪৭৫০, সহীহ আল জামি‘ ৬৭০৮, সহীহাহ্ ৩৯৬৩, নাসায়ী ২০৫৭, তিরমিযী ৩১২০, ইবনু মাজাহ্ ৪২৬৯।মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১২৬

🔰ব্যাখ্যা: (قَالَ الْمُسْلِمُ) কোন বর্ণনায় الْمُؤْمِنُ এর উল্লেখ পাওয়া যায় এবং এর দ্বারা উদ্দেশ্য جنس তথা জাতি। তা পুরুষ মহিলা উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করবে। অথবা এমন হতে পারে যে, মহিলার হুকুম বুঝা যাবে পুরুষের অনুসারিণী হওয়ার দিক দিয়ে। এখানে কবরের কথা উল্লেখ করে নির্দিষ্ট করার কারণ হচ্ছে সাধারণত কবরেই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।

অথবা এটা প্রত্যেক ব্যক্তির থাকার স্থানের নামও কবর হতে পারে, এখানে যার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে সে বিষয়গুলো অনুল্লেখিত আছে, সেগুলো হলো তার রব তার নাবী এবং  তার ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যেমনটা অন্য হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়।

 *⚫⚫⚫কবরের ‘আযাব⚫⚫⚫* 

১২৭-[৩] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মারা যায়, (কবরে) তাকে সকাল-সন্ধ্যায় তার (ভবিষ্যৎ) অবস্থান দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তার অবস্থান জান্নাত আর যদি জাহান্নামী হয় তবে তার অবস্থান জাহান্নাম দেখানো হয়। আর তাকে বলা হয়, এটাই তোমার প্রকৃত অবস্থান। অতঃপর ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে উঠিয়ে সেখানে প্রেরণ করবেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ اِثْبَاتِ عَذَابِ الْقَبْرِ وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُه بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هذَا مَقْعَدُكَ 
حَتّى يَبْعَثَكَ اللّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ 

[1] সহীহ : বুখারী ১৩৭৯, মুসলিম
 ২৮৬৬, নাসায়ী ২০৭০, আহমাদ ৫৯২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১৩০, সহীহ আল জামি‘ ৭৯২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫১। 
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১২৭

 ব্যাখ্যা: তার নিকট তার রূহ ফিরিয়ে দেয়া হয় যাতে করে তার সাথে কথা বলা যায় এবং সে অনুধাবন করতে পারে।

প্রশ্ন হলো, প্রতিনিয়তই কি তার নিকট তার রূহ ফিরিয়ে দেয়া হয়, নাকি একবারই দেয়া হয়।

‘একবারই দেয়া হয়’ এ মতটিই বেশী গ্রহণযোগ্য, আনাস (রাঃ)-এর হাদীসের কারণে এবং অপরাপর কিছু হাদীছ রয়েছে যা তাই প্রমাণ করে।

সকাল-সন্ধ্যা দিনের দুই প্রান্তে অথবা উদ্দেশ্য সার্বক্ষণিকের জন্যও হতে পারে। রূহের সামনে তার আসল ঠিকানা পেশ করা এবং মু’মিনকে নি‘আমাত এবং কাফিরকে শাস্তি প্রদান করার মাধ্যমে প্রমাণ হয় কবরের শাস্তি সাব্যস্ত এবং শরীরের মতো রূহ শেষ হয়ে যায় না। কেননা কোন জিনিস পেশ করা জীবিত ছাড়া অসম্ভব। তাহলে বুঝা গেল রূহ শেষ হয় না।

 ★কবরের ‘আযাব★

   ১৩০-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি  বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃতকে যখন কবরে শায়িত করা হয় তখন তার নিকট নীল চোখবিশিষ্ট দু’জন কালো মালাক (ফেরেশতা) এসে উপস্থিত হন। তাদের একজনকে মুনকার, অপর একজনকে নাকীর বলা হয়। তারা মৃতকে (রসূলের প্রতি ইঙ্গিত করে) জিজ্ঞেস করে, এ ব্যক্তির ব্যাপারে দুনিয়াতে তুমি কি ধারণা পোষণ করতে? সে বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন মালাক দু’জন বলবেন, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দিবে। অতঃপর তার কবরকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সেখানে তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তারপর তাকে বলা হয়, ঘুমিয়ে থাক। তখন কবরবাসী বলবে, (না,) আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই এবং তাদের এ সুসংবাদ দিতে চাই। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বলবেন, তুমি এখানে বাসর ঘরের বরের ন্যায় ঘুমাতে থাক, যাকে তার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয়জন ব্যতীত আর কেউ ঘুম ভাঙ্গাতে পারে না। অতঃপর সে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন না আসা পর্যন্ত এভাবে ঘুমিয়ে থাকে। যদি মৃত ব্যক্তি মুনাফিক্ব হয় তাহলে সে বলবে, লোকেদেরকে তাঁর সম্পর্কে যা বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম, কিন্তু আমি জানি না। তখন মালায়িকাহ্ বলেন, আমরা পূর্বেই জানতে পেরেছিলাম যে, তুমি এ কথাই বলবে। অতঃপর জমিনকে বলা হবে, তার উপর চেপে যাও। সুতরাং জমিন তার উপর এমনভাবে চেপে যাবে, যাতে তার এক দিকের হাড় অপর দিকে চলে যাবে। কবরে সে এভাবে ‘আযাব ভোগ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত (ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে) আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবর থেকে না উঠাবেন। (তিরমিযী)[1]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا اُقْبِرَ الْمَيِّتُ  أَتَاهُ مَلَكَانِ أَسْوَدَانِ أَزْرَقَانِ يُقَالُ لِأَحَدِهِمَا الْمُنْكَرُ وَالْاۤخَرُ النَّكِيرُ فَيَقُوْلَانِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هذَا الرَّجُلِ؟ فَيَقُولُ هُوَ عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهٗ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُولُهٗ فَيَقُوْلَانِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ هذَا ثُمَّ يُفْسَحُ لَهٗ فِي قَبْرِه سَبْعُونَ ذِرَاعًا فِي سَبْعِينَ ثُمَّ يُنَوَّرُ لَهٗ فِيهِ ثُمَّ يُقَالُ لَهٗ نَمْ فَيَقُولُ أَرْجِعُ إِلى أَهْلِـي فَأُخْبِرُهُمْ فَيَقُولَانِ نَمْ كَنَوْمَةِ الْعَرُوسِ الَّذِي لَا يُوقِظُهٗ اِلَّا أَحَبُّ أَهْلِه إِلَيْهِ حَتّى يَبْعَثَهُ اللّهُ مِنْ مَضْجَعِه ذلِكَ وَإِنْ كَانَ مُنَافِقًا قَالَ سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ قَوْلًا فَقُلْتُ مِثْلَهٗ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ ذلِكَ فَيُقَالُ لِلْأَرْضِ الْتَئِمِي عَلَيْهِ فَتَلْتَئِمُ عَلَيْهِ فَتَخْتَلِفُ أَضْلَاعُهٗ فَلَا يَزَالُ فِيهَا مُعَذَّبًا حَتّى يَبْعَثَهُ اللّهُ مِنْ مَضْجَعِه ذلِكَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

   [1] সহীহ : তিরমিযী ১০৭১, সহীহুত্ তারগীব ৩৫৬০। 
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১৩০

   ব্যাখ্যা: (إِذَا اُقْبِرَ الْمَيِّتُ) ‘যখন মৃতকে কবর দেয়া হয়’ এটা বলা হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মের উপর খেয়াল করে। নচেৎ মৃত ব্যক্তি বলতে তো সব মৃত ব্যক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। অথচ সব মৃত্যুকে কবর দেয়া হয় না। এখানে কবর বলতে বারযাখী জীবনে পদার্পণ করা, চাই সে মাটিতে হোক কিংবা মাছের পেটে হোক অথবা আগুনেই পুড়ে যাক।

 (الْمُنْكَرُ وَالْاۤخَرُ النَّكِيرُ) 
‘‘মুনকার তাকে বলা হয় যে কাউকে চিনে না। আর নাকীর তাকে বলা হয় যাকে কেউ চিনে না। এ মালাক (ফেরেশতা) দু’জনের নাম মুনকার ও নাকীর এজন্য রাখা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তি তাদের কাউকেই চিনে না। তাদের ‘‘আকৃতির’’ মতো আকৃতি কখনো দেখেনি। কিছু কিছু ‘আলিমগণ বলেন যে, গুনাহগারদের প্রশ্নকারী মালাকের নাম মুনকার ও নাকীর। আর নেক্কার বান্দাদের প্রশ্নকারী মালায়িকাহ্’র নাম মুবাশ্বির ও বাশীর।

 (فَيَقُوْلَانِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ هذَا)
 অর্থাৎ- মালায়িকাহ্’র কথাঃ ‘‘আমরা আগেই জানতাম যে, তুমি এ উত্তরই দিবে’’। প্রশ্ন হলো তারা কিভাবে জানতে পারলো যে, মৃত ব্যক্তি এই উত্তর দিবে? উত্তর হলো, আল্লাহ তা‘আলার জানানোর মাধ্যমে অথবা তার কপালে যে সৌভাগ্যের চিহ্ন আছে তা অবলোকন করে। যেমন ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ) হাদীস নিয়ে এসেছেন ‘‘মু’মিন হলে তার সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) তার মাথার নিকট তার যাকাত তার ডানে, তার সওম তার বামে অবস্থান করে।’’

  (يُفسَحُ لَهٗ فِيْ قَبْرِه سَبْعُونَ ذِرَاعًا فِي سَبْعِينَ) 
‘‘তার কবরকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হবে’’। বলা হয়ে থাকে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, মৃতের কবর অনেক প্রশস্ত করে দেয়া হবে। যেমন- কোন কোন বর্ণনায় এসেছে- مد بصره‘‘তার চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে।’’ এও হতে পারে যে, এ প্রশস্ততা ‘আমালকারীর ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন হবে।

 (سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ قَوْلًا فَقُلْتُ مِثْلَهٗ لَا أَدْرِى) 
‘‘লোকেদেরকে তাঁর সম্পর্কে যা বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম, কিন্তু আমি জানি না।’’ অর্থাৎ- লোকেদেরকে আমি বলতে শুনতাম যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নাবী তাই আমিও বলতাম যে, তিনি নাবী। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি জানতাম না যে, তিনি নাবী কি-না।

 (فَيُقَالُ لِلْأَرْضِ الْتَئِمِي عَلَيْهِ) 
‘‘জমিনকে বলা হবে, তার উপর চেপে যাও।’’ অর্থাৎ- তুমি তার ওপর একত্রিত হয়ে সংকীর্ণ হয়ে যাও।

فَتَخْتَلِفُ أَضْلَاعُهٗ
 ‘‘তার এক দিকের হাড় অপর দিকে চলে যাবে।’’ অর্থাৎ- জমিন তার উপর এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করবে যে, পাঁজরের হাড়গুলো যেভাবে ছিল সেভাবে আর থাকবে না। বরং চাপের আধিক্যের কারণে পাঁজরের এক পাশের হাড় অন্যপাশের পাঁজরের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করবে। আর এ চেপে যাওয়াটা বাস্তবেই ঘটবে তা কোন ধারণা বা কল্পনা নয়।

 ★★ কবরের ‘আযাব।

 ১৩১-[৭] বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কবরে মৃত ব্যক্তির (মু’মিনের) নিকট দু’জন মালাক (ফেরেশতা) আসেন। অতঃপর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাকে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার রব কে?’’ সে উত্তরে বলে, ‘‘আমার রব হলেন আল্লাহ।’’ তারপর মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার দীন কী?’’ সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, ‘‘আমার দীন হলো ইসলাম।’’ আবার মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল, তিনি কে?’’ সে বলে, ‘‘তিনি হলেন আল্লাহর রসূল (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।’’ তারপর মালায়িকাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘এ কথা তোমাকে কে বলেছে?’’ সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার উপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সমর্থন করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এটাই হলো আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর ব্যাখ্যাঃ ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সেসব লোকেদেরকে (দীনের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখেন যারা প্রতিষ্ঠিত কথার (কালিমায়ে শাহাদাতের) উপর ঈমান আনে... আয়াতের শেষ পর্যন্ত- (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ২৭)।

     অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আকাশমণ্ডলী থেকে একজন আহবানকারী ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। অতএব তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ফলে তার দিকে জান্নাতের বাতাস ও সুগন্ধি দোলা দিতে থাকবে এবং দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত তার কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তারপর তার রূহকে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তাকে দু’জন মালাক এসে তাকে উঠিয়ে বসান এবং বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার রব কে?। তখন সে উত্তরে বলে, ‘‘হায়! হায়!! আমি তো কিছুই জানি না।’’ তারপর তারা তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার দীন কী?’’ সে বলে, হায়! হায়!! তাও তো আমার জানা নেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করেন, ‘‘এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল?’’ সে বলে, ‘‘হায়! হায়!! এটাও তো জানি না।’’ তারপর আকাশ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও। আর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও। সে অনুযায়ী তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়।

     তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তার কবরকে তার জন্য সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়, যাতে তার একদিকের হাড় অপরদিকের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর একজন অন্ধ ও বধির মালাক নিযুক্ত করে দেয়া হয়, যার সাথে লোহার এক হাতুড়ি থাকে। সে হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তাহলে সে পাহাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে মাটি হয়ে যাবে। সে অন্ধ মালাক এ হাতুড়ি দিয়ে সজোরে তাকে আঘাত করতে থাকে। (তার বিকট চীৎকারের শব্দ) পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত জিন্ ও মানুষ ছাড়া সকল মাখলূক্বই শুনতে পাবে। এর সাথে সাথে সে মাটিতে মিশে যাবে। অতঃপর পুনরায় তার মধ্যে রূহ্ ফেরত দেয়া হবে (এভাবে অনবরত চলতে থাকবে)। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ عَنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ يَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِه فَيَقُوْلَانِ لَهٗ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُولُ رَبِّيَ اللّهُ فَيَقُولَانِ لَهٗ مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ دِيْنِيَ الْإِسْلَامُ فَيَقُولَانِ مَا هذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ فَيَقُوْلَانِ لَهٗ: وَمَا يُدْرِيْكَ؟ قَالَ فَيَقُولُ هُووَ رَسُوْلُ الله فَيَقُوُلَانِ لَه : وَمَا يُدْرِيْكَ فَيِقُوُلُ : قَرَأْتُ كِتَابَ اللهِ فَاۤمَنْتُ بِه وَصَدَّقْتُ فَذلِكَ قَوْلُهٗ يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِينَ اۤمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ الْاۤيَةُ قَالَ فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ صَدَقَ عَبْدِي فَأَفْرِشُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ وَأَلْبِسُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَه بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ فَيُفْتَحُ قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا وَيُفْسَحُ لَهٗ فِيهَا مَدَّ بَصَرِه وَأَمَّا الْكَافِرُ فَذَكَرَ مَوْتَهٗ قَالَ وَيُعَادُ رُوحُهٗ فِي جَسَدِه وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِه فَيَقُولَانِ مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ مَا دِيْنُكَ؟ فَيَقُولُ هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيَقُولَانِ مَا هذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنْ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ فَأَفْرِشُوهُ مِنْ النَّارِ وَأَلْبِسُوهُ مِنْ النَّارِ وَافْتَحُوا لَهٗ بَابًا إِلَى النَّارِ قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا قَالَ وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهٗ حَتّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهٗ ثُمَّ يُقَيَّضُ لَهٗ أَعْمى أَصَمُّ مَعَهٗ مِرْزَبَّةٌ مِنْ حَدِيدٍ لَوْ ضُرِبَ بِهَا جَبَلٌ لَصَارَ تُرَابًا فَيَضْرِبُهٗ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اِلَّا الثَّقَلَيْنِ فَيَصِيرُ تُرَابًا ثُمَّ يُعَادُ فِيهِ الرُّوحُ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وأَبُوْ دَاوٗدَ 

   [1] সহীহ : আবূ দাঊদ ৪৭৫৩, আহমাদ ১৮০৬৩।মিশকাতুল মাসাবীহ(মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১৩১

     ব্যাখ্যা: মালাক মু’মিন ব্যক্তির নিকট আসবে। প্রশ্ন করবে, এই ব্যক্তির পরিচয় কি, তিনি কি রসূল? অথবা এ ব্যাপারে তোমার বিশ্বাস কি? তুমি যে আল্লাহর একত্ব, ইসলাম এবং রিসালাতের খবর দিলে এটা তুমি কিভাবে জেনেছ?

 صَدَّقْتُ 
 তিনি যা বলেছেন তা সত্যায়ন করেছি এবং কুরআনে যা পড়েছি তাও সত্যায়ন করেছি। অতএব কুরআনে পেয়েছি যে, আমি সহ সমগ্র সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা এক অদ্বিতীয়, আর তিনি হলেন আল্লাহ। আর আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় জীবন বিধান কেবল ইসলাম। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারই প্রেরিত নাবী।

   মু’মিন ব্যক্তি এই যথাযথ উত্তর দিতে পারাই আল্লাহ তা‘আলার (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪ঃ ২৭) আয়াতের বাস্তবতা।

يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِيْنَ امَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ

  ‘‘যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ শাশ্বত বাণীর অবলম্বনে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন।’’
 
  ★★★ কবরের ‘আযাব।

  ১৩২-[৮] ‘উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি যখন কোন কবরের নিকট দাঁড়াতেন, কেঁদে দিতেন, (আল্লাহর ভয়ে চোখের পানিতে) তার দাড়ি ভিজে যেত। একদা তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ হলে, আপনি কাঁদেন না। আর আপনি এ জায়গায় (কবরস্থানে) দাঁড়িয়ে কাঁদছেন? তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আখিরাতের মঞ্জীলসমূহের মধ্যে কবর হলো প্রথম মঞ্জীল। কেউ যদি এ মঞ্জীলে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পরের মঞ্জীলসমূহ অতিক্রম করা তার জন্য সহজসাধ্য হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি এ মঞ্জীলে মুক্তি লাভ করতে পারলো না, তার জন্য পরবর্তী মঞ্জীলসমূহ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি [‘উসমান (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও বলেছেন, কবর থেকে বেশি কঠিন কোন ভয়ঙ্কর জায়গা আমি কক্ষনো দেখিনি। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

وَعَنْ عُثْمَانَ إِنَّه كَان إِذَا وَقَفَ عَلى قَبْرٍ بَكى حَتّى يَبُلَّ لِحْيَتُه فَقِيلَ لَه تُذْكَرُ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَلَا تَبْكِي وَتَبْكِي مِنْ هذَا؟ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنْزِلٍ مِنْ مَنَازِلِ الْاۤخِرَةِ فَإِنْ نَجَا مِنْهُ فَمَا بَعْدَه أَيْسَرُ مِنْهُ وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَه أَشَدُّ مِنْهُ قَالَ وَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَا رَأَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ اِلَّا الْقَبْرَ أَفْظَعُ مِنْهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وابن مَاجَةَ وَقاَلَ التِّرْمِذِيُّ هذَا حَدِيثٌ غَرِيب

   [1] সহীহ : তিরমিযী ২৩০৮, সহীহুত্ তারগীব ৩৫৫০, ইবনু মাজাহ ৪২৬৭। 
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১৩২

    ব্যাখ্যা : একটি প্রশ্ন এবং তার উত্তরঃ

  প্রশ্নঃ ‘উসমান (রাঃ) তো জান্নাতের সানাদপ্রাপ্তদের একজন। এ সত্ত্বেও তিনি কবরের কাছে গিয়ে কান্নাকাটির কারণ কি?

  এর উত্তর কয়েকটি হতে পারেঃ

 ১. জান্নাতের ঘোষণা হলেই কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তি হয়ে গেল বিষয়টি এমন নয়।

 ২. হতে পারে পরিস্থিতি কঠিন হওয়ায় তিনি যে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত এটা ভুলে গিয়েছিলেন।

 ৩. হতে পারে তিনি কবরের চাপ থেকে ভয় পেয়েছেন। যেমন সা‘দ (রাঃ)-এর হাদীসে এটাই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এই পাপ থেকে নাবীগণ ব্যতীত কেউই রেহাই পাবে না। মুল্লা ‘আলী কারী  (রহঃ) এমনটাই বলেছেন।

 ৪। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  নিজেও কবরের ‘আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন অথচ তিনি ছিলেন নাবী! আর যে যত আল্লাহর বেশী প্রিয় সে তত বেশী আল্লাহকে এবং আল্লাহর শাস্তিকে ভয় পেতেন। ‘উসমান (রাঃ)-এর ব্যাপারটি এমনি।

  ★কবরের ‘আযাব★

 ১৩৩-[৯] উক্ত রাবী [‘উসমান (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাইয়্যিতের দাফন সম্পন্ন করে অবসর গ্রহণকালে কবরের নিকট দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে বলতেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য (আল্লাহ তা‘আলার নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা কর ও দু‘আ কর, যেন তাকে এখন (মালায়িকার প্রশ্নোত্তরে) ঈমানের উপর সুদৃঢ় থাকার শক্তি-সামর্থ্য দেন। কেননা এখনই তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ سَلُوا لَه بِالتَّثْبِيتِ فَإِنَّهُ الْاۤنَ يُسْأَلُ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ 
[1] সহীহ : আবূ দাঊদ ৩২২১, সহীহুল জামি‘ ৪৭৬০।মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১৩৩

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি, দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করা এবং তার অবিচলতার জন্য আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করা শার‘ঈ নিয়ম বিদ্‘আত নয়। আর জীবিত ব্যক্তির দু‘আ মৃত ব্যক্তিদের উপকার দেয়।

★★ কবরের ‘আযাব।

 ১৩৬-[১২] ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এই [সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ)] সে ব্যক্তি যার মৃত্যুতে ‘আর্‌শ (আরশ)-ও কেঁপেছিল (তার পবিত্র রূহ্ ‘আর্‌শে পৌঁছলে ‘আর্‌শের নিকটতম মালায়িকাহ্ খুশীতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল) এবং আসমানের দরজা খুলে দিয়েছিল। তার জানাযায় সত্তর হাজার মালাক উপস্থিত হয়েছিলেন। অথচ তার কবর সংকীর্ণ হয়েছিল। (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু‘আর বারাকাতে) পরে তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল। (নাসায়ী)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ هذَا الَّذِيْ تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ وَفُتِحَتْ لَهٗ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَشَهِدَهٗ سَبْعُوْنَ أَلْفًا مِنَ الْمَلَائِكَةِ لَقَدْ ضُمَّ ضَمَّةً ثُمَّ فُرِّجَ عَنْهُ. رَوَاهُ النَّسَائِيُّ

 [1] সহীহ : নাসায়ী ২০৫৫, সহীহুল জামি‘ ৬৯৮৭। মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১৩৬

 ব্যাখ্যা: (هذَا الَّذِيْ) সা‘দ বিন মু‘আয-এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটা তা‘যীমের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

 (تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ)
 অন্য বর্ণনায় إهْتَزَّ উল্লেখ আছে। অর্থাৎ- লাফিয়ে উঠেছে এবং তার সম্মানের সুসংবাদ তার রবের নিকটে দিয়েছে। কেননা ‘আর্‌শ (আরশ)  যদিও সেটা জড় পদার্থ কিন্তু আল্লাহ চাইলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এ হাদীসে সা‘দ বিন মু‘আয  (রাঃ)-এর ফাযীলাত বর্ণনা আছে এবং এটাও বর্ণনা করছে যে, কবরের চাপ থেকে কোন মানুষই মুক্তি পাবে না। যেমন- সা‘দ (রাঃ) পাননি, তবে আম্বিয়ায়ে কিরামের কথা ভিন্ন।

  ইমাম হাকিম আত্ তিরমিযী (রহঃ) বলেন, এ চাপের কারণ হলো প্রতিটি মানুষই কিছু না কিছু পাপের সাথে জড়িত হয়, এই পাপ মোচনের জন্য এই চাপ দেয়া হয়, তারপর আবার তাকে রহমাত করা হয়। সা‘দ বিন মু‘আয-এর চাপ সম্বন্ধে বলা হয়ে থাকে যে, প্রস্রাবের পরে পবিত্রতার প্রতি অসতর্ক থাকার দরুন তার এই চাপ হয়েছে।

 ★★★ কবরের ‘আযাব।

 ১৩৮-[১৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন (মু’মিন) মৃতকে কবরে দাফন করা হয়, তার নিকট মনে হয় যেন সূর্য ডুবছে। তখন সে হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে উঠে বসে এবং বলে যে, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নেই। (সলাতের প্রতি একাগ্রতার কারণে এরূপ বলবে) (ইবনু মাজাহ্)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إِذَا اُدْخِلَ الْمَيِّتُ الْقَبْرَ مُثِّلَتِ الشَّمْسُ عِنْدَ غُرُوبِهَا فَيَجْلِسُ يَمْسَحُ عَيْنَيْهِ وَيَقُولُ دَعُونِي أُصَلِّي. رَوَاهُ اِبْنُ مَاجَةَ 

 [1] সহীহ : ইবনু মাজাহ্ ৪২৭২)(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১৩৮

 ব্যাখ্যা: হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, সূর্য ডুবে যাওয়ার ক্ষণে এই অবস্থা শুধুমাত্র মু’মিনেরই হবে। কারণ হাদীসে যদিও বিষয়টি ব্যাপক আছে তথাপি সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা তো কাফিরের আসতে পারে না বরং সেটা মু’মিনেরই শোভা পায়।

 ★★★ কবরের ‘আযাব।

  ১৩৯-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মৃত যখন কবরের ভিতরে পৌঁছে, তখন (নেক) বান্দা কবরের ভিতর ভয়-ভীতিহীন ও শঙ্কামুক্ত হয়ে উঠে বসে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কোন্ দীনে ছিলে? তখন সে বলে, আমি দীন ইসলামে ছিলাম। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে? সে বলে, এ ব্যক্তি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর রসূল। আল্লাহর নিকট হতে আমাদের কাছে (হিদায়াতের জন্য) স্পষ্ট দলীল নিয়ে এসেছেন এবং আমরাও তাঁকে (পরিপূর্ণ) বিশ্বাস করেছি। পুনরায় তাকে প্রশ্ন করা হয়, তুমি আল্লাহকে কক্ষনো দেখেছ কি? সে উত্তরে বলে, দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। সে সেদিকে তাকায় এবং দেখে, আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তখন তাকে বলা হয়, দেখ! তোমাকে কি কঠিন বিপদ হতে আল্লাহ হিফাযাত করেছেন। তারপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। এখন সে জান্নাতের শোভা সৌন্দর্য ও এর ভোগ-বিলাসের প্রতি তাকায়। তাকে তখন বলা হয়, এটা তোমার (প্রকৃত) স্থান। কেননা তুমি দুনিয়ায় ঈমানের সাথে ছিলে, ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছ। ইন-শা-আল্লাহ, ঈমানের সাথেই তুমি ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন উঠবে।

     অপরদিকে বদকার বান্দা তার কবরের মধ্যে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে বসবে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কোন্ দীনে ছিলে? উত্তরে সে বলবে, আমি তো কিছুই জানি না। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে? উত্তরে সে বলবে, আমি মানুষদেরকে যা বলতে শুনেছি তা-ই আমি বলেছি। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হবে। এ পথ দিয়ে সে জান্নাতের সৌন্দর্য ও এতে যা (সুখ-শান্তির উপায়-উপকরণ, সাজ-সরঞ্জাম) রয়েছে তা দেখবে। তখন তাকে বলা হবে, এসব জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দাও যেসব জিনিস হতে আল্লাহ তোমাকে ফিরিয়ে রেখেছেন। তারপর তার জন্য আর একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। আর সে সেদিকে দেখবে আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তাকে তখন বলা হবে, এটা তোমার (প্রকৃত) অবস্থান। তুমি সন্দেহের উপরেই ছিলে, সন্দেহের উপরই তুমি মৃত্যুবরণ করেছ। ইনশা-আল্লা-হ, এ সন্দেহের উপরই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তোমাকে উঠানো হবে। (ইবনু মাজাহ্)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إِنَّ الْمَيِّتَ يَصِيرُ إِلَى الْقَبْرِ فَيُجْلَسُ الرَّجُلُ فِي قَبْرِه مِنْ غَيْرِ فَزِعٍ وَلَا مَشْغُوْبٍ ثُمَّ يُقَالُ فِيمَ كُنْتَ؟ فَيَقُولُ كُنْتُ فِي الْإِسْلَامِ فَيُقَالُ مَا هذَا الرَّجُلُ؟ فَيَقُولُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ ﷺ جَاءَنَا بِالْبَيِّنَاتِ مِنْ عِنْدِ اللهِ فَصَدَّقْنَاهُ فَيُقَالُ لَه هَلْ رَأَيْتَ اللهَ؟ فَيَقُولُ مَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَرَى اللهَ فَيُفْرَجُ لَه فُرْجَةٌ قِبَلَ النَّارِ فَيَنْظُرُ إِلَيْهَا يَحْطِمُ بَعْضُهَا بَعْضًا فَيُقَالُ انْظُرْ إِلى مَا وَقَاكَ اللّهُ ثُمَّ يُفْرَجُ لَه فُرْجَةٌ قِبَلَ الْجَنَّةِ فَيَنْظُرُ إِلى زَهْرَتِهَا وَمَا فِيهَا فَيُقَالُ لَه هذَا مَقْعَدُكَ عَلَى الْيَقِينِ كُنْتَ وَعَلَيْهِ مُتَّ وَعَلَيْهِ تُبْعَثُ إِنْ شَآءَ اللّهُ وَيُجْلَسُ الرَّجُلُ السُّوءُ فِي قَبْرِه فَزِعًا مَشْغُوبًا فَيُقَالُ لَه فِيمَ كُنْتَ؟ فَيَقُولُ لَا أَدْرِي فَيُقَالُ لَه مَا هذَا الرَّجُلُ؟ فَيَقُولُ سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ قَوْلًا فَقُلْتُه فَيُفْرَجُ لَه قِبَلَ الْجَنَّةِ فَيَنْظُرُ إِلى زَهْرَتِهَا وَمَا فِيهَا فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلى مَا صَرَفَ اللّهُ عَنْكَ ثُمَّ يُفْرَجُ لَه قِبَلَ النَّارِ فَيَنْظُرُ إِلَيْهَا يَحْطِمُ بَعْضُهَا بَعْضًا فَيُقَالُ لَه هذَا مَقْعَدُكَ عَلَى الشَّكِّ كُنْتَ وَعَلَيْهِ مُتَّ وَعَلَيْهِ تُبْعَثُ إِنْ شَآءَ اللهُ تَعَالى. رَوَاهُ ابن مَاجَةَ 
[1] সহীহ : ইবনু মাজাহ্ ৪২৬৮)(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ১৩৯

★★ ব্যাখ্যা: (انْظُرْ إِلى مَا وَقَاكَ اللّهُ) ‘‘দেখো! আল্লাহ তোমাকে কি কঠিন বিপদ হতে রক্ষা করেছেন।’’ অর্থাৎ- তুমি ঐ শাস্তির দিকে তাকিয়ে দেখো যে শাস্তি থেকে আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেন স্বীয় কৃপায় তোমাকে কুফরী ও পাপ থেকে বিরত রেখে। যে পাপ মানুষকে ঐ শাস্তির মধ্যে নিক্ষেপ করে তথা শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 (فَيَنْظُرُ إِلى زَهْرَتِهَا وَمَا فِيهَا)
 ‘‘অতঃপর সে জান্নাতের সৌন্দর্য ও ভোগ-বিলাসের দিকে তাকায়।’’ অর্থাৎ- মু’মিন ব্যক্তি তখন জান্নাতের দিকে তাকিয়ে জান্নাতের যে নি‘আমাত সেটার মধ্যে যে দালান-কোঠা এবং হূর গেলেমান আছে সব দেখতে পাবে।

 (فَيُقَالُ لَه هذَا مَقْعَدُكَ) 
‘‘অতঃপর তাকে বলা হবে এটাই তোমার আবাসস্থল।’’ অর্থাৎ- কবর থেকে পুনরুত্থানের পর বান্দাদের হিসাব-নিকাশের পর এ জান্নাতই হবে তোমার আবাসস্থল, এখানেই তুমি অনন্তকাল থাকবে যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।

 (إِنْ شَآءَ اللهُ تَعَالى) 
সন্দেহ সৃষ্টির উদ্দেশে বলা হয়নি। বলার কারণ দু’টি হতে পারে।
১. বারাকাতের উদ্দেশে।
২. নিশ্চয়তা বুঝানোর উদ্দেশে।


Post a Comment

0 Comments