Recent Tube

এখনও কি তোমরা জাগবে না? জিয়াউল হক।





  

       এখনও কি তোমরা 
    জাগবে না?
 


      ফিলিস্তিন,প্যালেস্টাইন,জেরুজালেম,আল আকসা। কোটি মানুষের আবেগ মেশানো একটি ভুখন্ড, নানা নামে হলেও  কিন্তু নিজ মহিমায় সে পরিচিত। ইহুদিদের Yerushalayim খৃষ্টধর্মীদের Jerusalem এবং মুসলমানদের কাছে 'আল কুদস' হিসেবে পরিচিত। এর শেকড় বা মূল উৎসবিন্দু হলেন হযরত ইব্রাহিম আ:। তাঁর দুই সন্তান; ইসমাইল ও ইসহাক আ: এঁর মাধ্যমেই ইহুদি, খৃষ্টান ও মুসলমান; তিন গোষ্ঠীর উদ্ভব ও বিকাশ।

        এ এলাকাতেই প্রাচিন মেসোপোটেমিয় সভ্যতার শুরু, পরে গ্রিকো-রোমান ও ইসলামি সভ্যতার আগমন। আল্লাহপাক এখানে দুই তৃতীয়াশং বা অধিকাংশ নবী রসূল প্রেরণ করেছেন, যা তার গুরুত্ব বাড়িয়েছে। আব্রাহামিক রিলিয়জন বা আহলে কিতাবের পিতা ইব্রাহিম (আঃ)'ও এখানেই বসবাস ও দাওয়াতি কাজ করেছেন। হযরত সুলাইমান (আঃ) কর্তৃক নির্মিত মসজিদুল আকসা, এটাই মুসলমানদের প্রথম কেবলা। 

      প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: এঁর মিরাজ, গমণ এখান থেকেই সূচিত হয়েছে, মানব সভ্যতার জন্ম, বিকাশ ও বিস্তৃতি এখান থেকেই ঘটেছে। জেরিকো বিশ্বের প্রাচিনতম শহর। মাত্র ৬০২০ বর্গকিলোমিটারের ফিলিস্তিনে শান্তি স্থিতিশীলতা মানে হলো বিশ্বের বুকে স্থিতিশীলতা, এ শহরে সংঘাত মানে বিশ্বজুড়ে সংঘাত। আক্ষরিক অর্থেই এটা হলো; Heart of Muslim Ummah/ Intersection of Continents। 

       ভূ-সামরিক স্ট্রাটেজিক দৃষ্টিকোণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল  অঞ্চলটি ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়েই বার বার সংঘারেতর মুখোমুখি হয়েছে। আজ ইহুদিরা সেখানে সংঘাত ও সন্ত্রাস পরিচালনা করছে। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর একটা নাম ছিলো ‘ইসরাইল’, এ কারনেই তার বংশধরদের ‘বনী ইসরাইল’ বা ইসরাইলের বংশধর বলা হয়।

      হযরত সুলাইমানের (আঃ) পর ইসরাইল জেরুসালেম কেন্দ্রিক জুডিয়া ও সামারিয়া নামে দুইভাগে বিভক্ত হয়। ইহুদিদের মধ্যে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও আদর্শিক কারণে দীর্ঘ অন্তর্দ্বন্দের সূচনা ঘটে। ইহুদিরা হযরত যাকারিয়া (আঃ), ইয়াহিয়া (আঃ), ইয়ারমিয়াহ নবীকে হত্যা করে, ইলিয়াস আ: ও হযরত ঈসা (আঃ) কে হত্যার চেষ্টা করে। মামুস নবী'সহ অসংখ নবীকে নির্যাতন ও তাদের অবাধ্যতা করে। আল্লাহ পাক তাদের এইসব অপকর্ম আর সন্ত্রাসের কারণে অভিশপ্ত করেছেন। বার বার তারা নানা জাতি ও গোষ্ঠীর তোপের মুখে পড়েছে নিজেদের অপরাধের শাস্তি হিসেবে। 

       অথচ বিকৃত তাওরাতের বরাতে ইহুদিদের দাবী, আল্লাহপাক ইব্রাহিম আ: এঁর মাধ্যমে নীল ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তি অঞ্চল তাদেরকে দান করেছেন, (Promised land)। বংশধারা নয়, ইব্রাহিম আ: কে, তথা, আল্লাহর নবী ও তার অনুসারীদের এতদ্বাঞ্চল প্রদানের শর্ত ছিল  আল্লাহর নিখাঁদ আনূগত্য করা ও তার অবাধ্য না হওয়া।  ইব্রাহিম আ: পরবর্তি নবী, বিশেষ করে, মুসা আ: আনুগত্য হতে ইহুদিরা বিরত থেকে ও আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ করে এতদ্বাঞ্চলে কর্তৃত্ব করার অধিকার হারিয়েছে, এ সত্যটাকে তারা মানতেই চায় না আজও।
ইতিহাস জুড়ে শহরটি ২বার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, অন্তত ১৬টি বৃহৎ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, ২৩ বার অবরোধের মুখে পড়েছে এবং ৫২ বার আক্রান্ত হয়েছে, হাতবদল হয়েছে বহুবার। গ্রিকো রোমান সম্রাট আলেকজান্ডার, জুলিয়াস সিজার, হেড্রিয়ান, সেপ্টিমাস সেভেরাস এবং পারসিক সম্রাটরাও ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। রোমান সম্রাট হেড্রিয়ান ১৩৫ খৃ: জেরুজালেমকে ধ্বংস করে সেখান থেকে ইহুদিদের বের করে দেন। জেরুজালেমে প্রবেশ ইহুদিদের জন্য নিষিদ্ধ করে দেন। তিনি এ অঞ্চলটিকে যুডিয়া, সামারা ও সিরিয়া নামে তিনটা প্রদেশে বিভক্ত করেন।

        এর পর থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ইহুদিরা দীর্ঘ ১৮১৩ বসর বিশ্বব্যাপী ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে। সম্রাট সেপ্টিমিয়াস সেভেরাস তাদের একটা দলকে দাস হিসেবে ইংল্যান্ডের সাউথ শিল্ডেও আনেন। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এইসব ইহুদিদের দ্বারাই কালক্রমে একটা আদর্শিক সংস্কৃতি; ইহুদিবাদ গড়ে উঠে। জিউস (Jews), (Judaism), জিওনিজম (Zionism) ও জায়োনিস্ট (Zoinst) এরকম বিভিন্ন অভিধায় এই ইহুদিবাদকে নির্দেশ করা হয়। 

       দীর্ঘ প্রায় দুই হাজার বছর বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্নভাবে বাস করলেও তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে অনেকটা অক্ষুন্ন রেখেছে। ১৮৮০’র দিকে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে ১৯ বৎসরের ইহুদি যুবক 'Nathan Birnbaum' খাদিমাহ (Kadimah) নামে ছাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা, পত্রিকা প্রকাশ, লেখালেখি ও সর্বপ্রথম  Zionistic’ Zionist’ ‘Zionism’ এবং 'Political  Zionism'  পরিভাষাগুলো ব্যবহার করেন। এটা ছিল একটা সফল Zionist কালচারাল মুভমেন্ট। 

      এর পরে ১৮৮৭ সালে হাঙ্গেরির মাত্র ২৭ বসর বয়স্ক ইহুদি যুবক Theodore Herzl ইহুদিবাদ ভিত্তিক ‘ইহুদিরাষ্ট্র’ ধারনা ও একটি পূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলনের রুপরেখা উপস্থাপন  করেন। আজ সেই রাজনৈতিক দর্শনই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে! তারা কতোটা শক্তিশালী সেটা বুঝা যায় প্রতিষ্ঠাকাল (১৯৪৮) থেকে; বিগত ৭৩ বসরে এ পর্যন্ত ৮টি যুদ্ধে জড়িয়েছে, ৫টি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেও তা অবজ্ঞা করেছে, এবং (২০১৬ পর্যন্ত) পাসকৃত জাতিসংঘের ১৮৭টি রেজুলেশনের একটাও সে মানেনি, এ বাস্তবতা থেকেই।

       এই ইতিহাস অনেক দীর্ঘ, সেটা বর্ণনার জন্য এ লেখা নয়। লেখাটা আমাদের কোাটি কোটি ১৮-৩০ বসর বয়সী যুবকদের সামনে এ সত্যটা তুলে ধরার জন্য যে, দুই বিচ্ছিন্ন জনপদের ১৯ ও ২৭ বসরের দু’জন যুবকের গড়ে তোলা সাংস্কতিক ও বুদ্ধিৃবৃত্তিক সংগঠনের ফলাফলটা কি দেখতে পাচ্ছেন? এর পরেও কি আপনারা জাগবেন না? কবে জাগবেন? যেদিন আপনার মাথার উপরে ইসরাইলের এ্যাপাচি গর্জন শুনবেন সেদিন? (সংক্ষেপকৃত)
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments