Recent Tube

গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আমল যা সালাতে করা মাকরুহ অথবা নিষিদ্ধঃঃ-

 







 
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আমল যা 
সালাতে করা মাকরুহ অথবা নিষিদ্ধঃঃ-

এক;
নামাযে যে সমস্ত কার্যাবলী করা সুন্নত (যেমন রফ্‌য়ে ইয়াদাইন, ইস্তিরাহার বৈঠক, বুকেহাত বাঁধা ইত্যাদি) তার কোন একটিও ত্যাগ করা মাকরুহ। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১২৫পৃ:)

দুই;
মুখ ঘুরিয়ে বা আড় চোখে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখা, ঘড়ি বা অন্য কিছু দেখা বৈধ নয়।

   পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, চোরা দৃষ্টিতে বা ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করার মাধ্যমে শয়তান নামাযীর নামায চুরি করে থাকে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৯৮২নং) যেমন অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করে মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহও মুখ ফিরিয়ে নেন। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৯৯৫ নং)

   নফল নামাযেও এদিক-ওদিক দেখা বৈধ নয়। বৈধ হওয়ার ব্যাপারে হাদীসগুলি সহীহ নয়। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩০৮-৩০৯পৃ:)

   অবশ্য চোখের কোণে ডাইনে-বামের জিনিস দেখা বা নজরে পড়া নামাযের জন্য ক্ষতিকর নয়। কারণ, ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) নামায পড়া অবস্থায় ডাইনে ও বামে লক্ষ্য করতেন। আর পিঠের দিকে ঘাড় ঘুরাতেন না।’ (তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ৯৯৮ নং)

   অনুরুপ ভয় ও প্রয়োজনের সময় দৃষ্টি নিক্ষেপ দূষণীয় নয়। একদা মহানবী (সাঃ) এক উপত্যকার দিকে জাসূস পাঠালেন। অতঃপর ফজরের নামায পড়তে পড়তে তার অপেক্ষায় সেই উপত্যকার দিকে তাকিয়ে দেখছিলেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৯১৬ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২৩৭)

   আল্লাহর রসূল (সাঃ) যোহ্‌র ও আসরের নামাযে কুরআন পড়তেন তা সাহাবাগণ তাঁর দাড়ি হিলার ফলে বুঝতে পারতেন। (বুখারী ৭৪৬, আবূদাঊদ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ) অনুরুপ তাঁরা তাঁকে সিজদায় মাথা রাখতে না দেখার পূর্বে কেউ কওমা থেকে সিজদায় যেতেন না। (বুখারী ৭৪৭ নং)

    অতএব শিশুর মা নামায পড়তে পড়তে যদি তার শিশুর গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে আড় নয়নে তাকায়, তাহলে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩১২)

তিন;
আকাশের (বা উপর) দিকে তাকানো:-

নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) বলেন, “লোকেরা যেন অবশ্য অবশ্যই নামাযের মধ্যে আকাশের দিকে তাকানো হতে বিরত হয়, নচেৎ তাদের চক্ষু ছিনিয়ে নেওয়া হবে!” (বুখারী ৭৫০, মুসলিম, মিশকাত ৯৮৩ নং) অতএব নামায পড়তে পড়তে উপর বা আকাশ দিকে দৃষ্টিপাত করা হারাম। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩১৫)

চার;
চোখ বুজা-
মহানবী (সাঃ) যখন নামায পড়তেন, তখন তিনি তাঁর চোখ দু’টিকে খুলে রাখতেন। তাঁর দৃষ্টি থাকত সিজদার জায়গায়। তাশাহ্‌হুদে বসার সময় তিনি তাঁর তর্জনী আঙ্গুলের উপর নজর রাখতেন। এ ছাড়া তিনি চোখ খুলে রাখতেন বলেই মা আয়েশা رضي الله عنها এর দেওয়ালে টাঙ্গানো ছবিযুক্ত পর্দা তাঁর সম্মুখ থেকে সরিয়ে নিতে বলেছিলেন। সুতরাং সুন্নত হল, চোখ খোলা রেখে নামায পড়া।

    তবে হ্যাঁ, যদি প্রয়োজন পড়ে; যেমন সামনে কারুকার্য, নক্সা, ফুল বা এমন কোন জিনিস থাকে, যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে অথবা মনোযোগ কেড়ে নেয় অথবা ক্বিরাআত ভুলিয়ে দেয় এবং তা দূর করা সম্ভব না হয়, তাহলে চোখ বন্ধ করে নামায পড়ায় কোন দোষ নেই। বরং এই ক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করেই নামায পড়া উত্তম হওয়া শরীয়ত এবং তার উদ্দেশ্য ও নীতির অধিক নিকটবর্তী। (যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম ১/২৯৩-২৯৪, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৪৮, ৫২, ৩১৬, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৯-২৯০, মুত্বাসা ১৩০-১৩১পৃ:)

পাচ;
 এমন জিনিস (যেমন নক্সাদার মুসাল্লা, সৌন্দর্য ও কারুকার্যময় দেওয়াল বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যপূর্ণ কাপড় ইত্যাদি) সামনে রেখে নামায পড়া, যাতে নামাযীর মনোযোগ ও একাগ্রতা নষ্ট হয়। এ ব্যাপারে ‘যে সব স্থানে নামায পড়া মাকরুহ’ শিরোনাম দেখুন।

ছয়;
 কোন প্রাণীর বা মানুষের ছবি, মূর্তি বা আগুন সামনে করে নামায পড়া। কারণ, এতে থাকে শির্কের গন্ধ এবং অমুসলিমদের সদৃশতা। (মাজমূউস স্বালাওয়াতি ফিল-ইসলাম, ড: শওকত উলাইয়ান ২৫০-২৫১পৃ:)

সাত;
 কোন প্রাণী বা মানুষের ছবি চিত্রিত কাপড় পরে নামায পড়া। (ঐ ২৫১পৃ:)

আট;
নিজের বা আর কারো ছবি পকেটে রেখেও নামায মাকরুহ। অবশ্য কোথাও রেখে নামায পড়লে চুরি হয়ে বা হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে নিরুপায় অবস্থায় ছবিযুক্ত টাকা-পয়সা, পাশপোর্ট, পরিচয়-পত্র প্রভৃতি সঙ্গে নিয়ে নামায পড়ায় দোষ নেই। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১২/৯৮, ১৯/১৬১)

নয়;
দুই হাতের আঙ্গুলসমূহকে পরস্পর খাঁজাখাঁজি করা:-

   প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সুন্দরভাবে ওযু করে মসজিদের উদ্দেশে বের হয়, তখন সে যেন অবশ্যই তার (দুইহাতের) আঙ্গুলসমূহকে খাঁজাখাঁজি না করে। কারণ, সে নামায অবস্থায় থাকে।” (আহমাদ, মুসনাদ ৪/২৪২, ২৪৩, আবূদাঊদ, সুনান ৫৬২, তিরমিযী, সুনান ৩৮৬, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ ৩৩৩৪, দারেমী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৪৪১নং, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, বায়হাকী ৩/২৩০,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২০৬, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ২/১০২) অর্থাৎ নামায পড়া অবস্থায় ঐরুপ নিষিদ্ধ।

    নামাযের জন্য ওযূ করার পর থেকে নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঐরুপ করা নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে আরো হাদীস দেখুন। (সহিহ তারগিব ২৯২, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১২৯৪, জামে ৪৪৫, ৪৪৬ নং)

দশ।
আঙ্গুল ফুটানো:-

*নামাযের মধ্যে আঙ্গুল ফুটানো মাকরুহ। কারণ, এটি একটি বাজে ও নিরর্থক কর্ম এবং অপর নামাযীদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩২৪)

এগারো।
কোমরে হাত রাখা:-

  আল্লাহর নবী (সাঃ) নামায পড়ার সময় কোমরে হাত রাখতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ১২১৯, ১২২০, মুসলিম, সহীহ ৫৪৫, মিশকাত ৯৮১ নং) এর কারণ বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, এমন কাজ ইয়াহুদীদের। (বুখারী ৩৪৫৮, ইবনে আবী শাইবা ৪৫৯১, ৪৬০০ নং) অথবা জাহান্নামীরা জাহান্নামে এরুপ কোমরে হাত রেখে আরাম নেবে। (ইবনে আবী শাইবা ৪৫৯২, ৪৫৯৫ নং) সুতরাং তাদের সদৃশতা অবলম্বন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। অনেকে বলেন, নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ, এরুপ কাজ অহংকারী, বিপদগ্রস্ত অথবা ভাবনা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্তদের। তাই নামাযে এরুপ প্রদর্শন অবৈধ। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩২৩, মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্‌ ১৫৫পৃ:)

বারো;
 কুকুরের মত বসা:-

দুই পায়ের রলা খাড়া রেখে,হাত দু’টিকে মাটিতে রেখে এবং দুই পাছার উপর ভর করে কুকুরের মত বৈঠক নিষিদ্ধ। কারণ এমন বৈঠক শয়তানের। (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩১৬নং) এ ব্যাপারে অধিক জানতে তাশাহহুদের বৈঠকের বর্ণনা দ্রষ্টব্য।

তেরো;
বামহাত দ্বারা ভর করে বসা:-
নামাযের বৈঠকে বামহাতকে মাটি বা মুসাল্লার উপর রেখে ঠেস দিয়ে বসা নিষিদ্ধ। কারণ এমন বৈঠক আল্লাহর ক্রোধভাজন ইয়াহুদীদের। (বায়হাকী,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৮০ নং) অতিরিক্ত তাশাহহুদের বৈঠকের বর্ণনা দ্রষ্টব্য।

চৌদ্দ;
কাপড় গাঁটের নিচে ঝুলানো:-
পুরুষদের জন্য তাদের কাপড়; লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট, চোগা প্রভৃতি গাঁটের নিচে ঝুলিয়ে পরা সব সময়ের জন্য নিষিদ্ধ। পরন্তু মহান বাদশার সামনে নামাযে দাঁড়িয়ে অহংকারীদের মত এমনভাবে কাপড় ঝুলিয়ে রাখা অধিকভাবে নিষিদ্ধ। (নামাযীর লেবাস দ্রষ্টব্য)

পনেরো;
কাপড় (শাল বা চাদর) না জড়িয়ে দুই কাঁধে দু’ দিকে ঝুলিয়ে রাখা অথবা চাদরে জড়িয়ে থাকা অবস্থায়হাত দু’টিকেও তার ভিতরে রেখেই রুকূ-সিজদা করা:-

    হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) নামাযে এইভাবে কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৬৪৩, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ,হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ৭৬৪ নং) এর কারণ বর্ণনায় বলা হয়েছে, এরুপ অভ্যাস ইয়াহুদীদের।

ষোল ;
চাদর, শাল, কম্ফর্টার প্রভৃতির মাধ্যমে মুখ ঢাকা:-
নামায পড়া অবস্থায় মুখ ঢাকতে মহানবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৬৪৩, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৭৬৪ নং)

মদ্বীনার ফকীহ্‌ সালেম বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার কাউকে নামাযে মুখ ঢেকে থাকতে দেখলে তার মুখ থেকে তার কাপড়কে সজোরে টেনে সরিয়ে দিতেন। (মালেক, মুঅত্তা ৩০নং)

সতেরো ;
পুরুষের লম্বা চুল পেছন দিকে বেঁধে নামায পড়া:-
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি তার (লম্বা) চুলকে পেছন দিকে বেঁধে নামায পড়ে, সে সেই ব্যক্তির মত যে তার দুইহাত বাঁধা অবস্থায় নামায পড়ে।” (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে হিব্বান, সহীহ) তিনি আরো বলেন, “ঐ বাঁধা চুল হল শয়তান বসার জায়গা!” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সিজদার বিবরণ দ্রষ্টব্য)
ইবনুল আষীর বলেন, লম্বা চুল খোলা অবস্থায় থাকলে সিজদাহ অবস্থায় সেগুলিও মাটিতে পড়ে যাবে। ফলে সিজদাহকারীকে ঐ চুলের সিজদাহ করার সওয়াব দেওয়া হবে। পক্ষান্তরে বাঁধা বা গাঁথা থাকলে সেগুলো সিজদায় পড়তে পারবে না। তাই বাঁধতে নিষেধ করা হয়েছে। (নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/৩৪০)

আল্লামা আলবানী (রহঃ) বলেন, মনে হয় এ বিধান কেবল পুরুষদের জন্যই, মহিলাদের জন্য নয়। ইবনুল আরাবী থেকে এ কথা উদ্ধৃত করে শওকানী তাই বলেন। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৪৩পৃ:) কারণ, মেয়েদের চুল থাকবে বাঁধা ও কাপড়ের পর্দার ভিতরে। যা বের হলে মহিলার নামাযই বাতিল হয়ে যাবে। (নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/৩৪০)

আঠারো;
কাপড় গুটানো:-
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি ৭ অঙ্গ দ্বারা সিজদাহ করি --- এবং কাপড় ও চুল না গুটাই।” (বুখারী, মুসলিম, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৭৮২, জামে ১৩৬৯ নং)

মুহাদ্দিস আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘এই নিষেধ কেবল নামায অবস্থাতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং নামাযের পূর্বেও যদি কেউ তার চুল বা কাপড় গুটায় অতঃপর নামাযে প্রবেশ করে, তাহলে অধিকাংশ উলামাগণের মতে সে ঐ নিষেধে শামিল হবে। আর চুল বেঁধে নামায পড়া নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীস উক্ত মতকে সমর্থন করে। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৪৩পৃ:)

এখান থেকেই বহু উলামা বলেছেন যে, জামার আস্তীন বা হাতা গুটিয়ে নামায পড়া মাকরুহ। কারণ মহানবী (সাঃ) ও তাঁর উম্মত নামাযে কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছেন। আর জামারহাতা গুটানো কাপড় গুটানোরই শামিল।

ইমাম নওবী বলেন, উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, কাপড় বা জামার আস্তীন গুটিয়ে, চুল বেঁধে বা পাগড়ীর নিচে গুটিয়ে রেখে নামায পড়া নিষিদ্ধ। অবশ্য এই নিষেধের মান হল মাকরুহ। অর্থাৎ, এতে নামায নষ্ট হয় না। (শারহু মুসলিম ৪/২০৯, আউনুল মা’বূদ ২/২৪৭)

উক্ত নিষেধের কারণ বর্ণনায় অনেকে বলেন যে, কাপড় গুটানো বা তোলা অহংকারীদের লক্ষণ। তাই তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন নিষিদ্ধ। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৩৪৬)

অবশ্য কাপড় খুলে গেলে তা পরা উক্ত নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। বরং লজ্জাস্থান খুলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তো নামায অবস্থাতেও পরা ওয়াজেব। অনুরুপ উলঙ্গ নামাযী নামাযের মাঝে যদি কাপড় পায়, তাহলে সেই অবস্থাতেই তার জন্যও তা পরা ওয়াজেব। কারণ, কাপড় বর্তমান থাকতে লজ্জাস্থান বের করে নামায পড়লে নামায বাতিল। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৪৭-৩৪৮)

নামায পড়তে পড়তে খুব শীত লাগলে এবং পাশে কাপড় থাকলে নামাযী নামাযের মধ্যেই তা পরতে বা গায়ে নিতে পারে। কারণ না পরলে তার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটবে। (ঐ ৩/৩৪৮) অনুরুপ খুব গরম লাগলেও অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় কাপড় নামায অবস্থাতেই সরিয়ে ফেলতে পারে।

ঊনিশ ;
কাঁধ খোলা রেখে নামায-

কাঁধ খোলা রেখে নামায নিষিদ্ধ। (এ ব্যাপারে ‘নামাযীর লেবাস’ প্রসঙ্গে আলোচনা দেখুন।) সুতরাং বহু হাজীদের ইহ্‌রাম পরে এক কাঁধ খোলা অবস্থায় নামায পড়া বৈধ নয়। (মাজমূউস স্বালাওয়াতি ফিল-ইসলাম, ড: শওকত উলাইয়ান ২৫১পৃ:)

বিশ;
সশব্দে কুরআন পাঠ:-

অনেকে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা ইত্যাদি পড়ার সময় মাঝে মাঝে গুন্‌গুন্‌ করে বা ফিসফিসিয়ে ওঠে। যাতে পাশের নামাযীর বড় ডিষ্টার্ব হয়। এমন করাও হাদীস থেকে নিষিদ্ধ। মহানবী (সাঃ) বলেন, “অবশ্যই নামাযী তার প্রতিপালকের সাথে নিরালায় আলাপ করে। সুতরাং কি নিয়ে আলাপ করছে, তা যেন সে লক্ষ্য করে। আর তোমাদের কেউ যেন অপরের পাশে কুরআন সশব্দে না পড়ে।” (আহমাদ, মুসনাদ, মালেক, মুঅত্তা, প্রমুখ মিশকাত ৮৫৬ নং)।

একুশ ;
খাবার সামনে রেখে নামায-
 খাবার জিনিস সামনে হাজির থাকলে এবং খাওয়ার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা থাকলে তা না খেয়ে নামায পড়া মাকরুহ। কারণ, সে সময় খাবারের দিকে মন পড়ে থাকে এবং নামাযে যথার্থ মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।

  মহানবী (সাঃ) বলেন, “যখন তোমাদের রাতের খাবার প্রস্তুত থাকে এবং সেই সময়ে নামাযের ইকামতও হয়, তখন তোমরা প্রথমে খাবার খাও। আর খাওয়া শেষ না করা পর্যন্ত কেউ যেন তাড়াহুড়ো না করে।” ইবনে উমার (রাঃ) এর জন্য খাবার বাড়া হলে সেই সময় যদি নামাযের ইকামত হত, তাহলে তা খেয়ে শেষ না করা পর্যন্ত নামাযে আসতেন না। সেই সময় তিনি ইমামের ক্বিরাআতও শুনতে পেতেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১০৫৬ নং)

বাইশ;
প্রস্রাব-পায়খানা আটকে রেখে নামায পড়া:-

প্রস্রাব-পায়খানার চাপ থাকলে সেই অবস্থায় নামায পড়া বৈধ নয়। সময় বা জামাআত ছুঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও প্রস্রাব-পায়খানার কাজ না সেরে নামাযে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ। মহানবী (সাঃ) বলেন, “খাবার সামনে রেখে নামায নেই। আর তারও নামায নেই, যাকে প্রস্রাব-পায়খানার বেগ পেয়েছে।” (মুসলিম, সহীহ ৫৬০, মিশকাত ১০৫৭ নং, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩২৫-৩২৮)

তিনি আরো বলেন, “তোমাদের কারো পায়খানার তলব হলে এবং অন্য দিকে নামাযের ইকামত হলে প্রথমে সে যেন পায়খানাই করে।” (তিরমিযী, সুনান, আবূদাঊদ, সুনান ৮৮, নাসাঈ, সুনান, মালেক, মুঅত্তা, মিশকাত ১০৬৯ নং)

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে তার জন্য প্রস্রাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে এবং (প্রয়োজন সেরে) হাল্কা হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত নামায পড়া বৈধ নয়।” (আবূদাঊদ, সুনান ৯১নং, প্রমুখ)

তেইশ;
 ঢুল বা তন্দ্রা অবস্থায় নামায-

   ঘুমের ঘোর থাকলে বা ঢুল এলে (নফল) নামায পড়া উচিৎ নয়। বরং একটু ঘুমিয়ে নিয়ে পড়া উচিৎ। অবশ্য ফরয নামাযের ক্ষেত্রে জামাআত ও নির্দিষ্ট সময় খেয়াল রাখা একান্ত জরুরী। (এ ব্যাপারে ‘নামায কিভাবে কায়েম হবে’ শিরোনামের আলোচনা দ্রষ্টব্য)

চব্বিশ;
 মাদকদ্রব্য বা কোন হারাম বস্তু বহন করা:-

   হ্‌কপ্রিয় ও সত্যানুসন্ধানী উলামাগণের নিকট কুরআন, সুন্নাহ্‌, বিবেক ও জ্ঞান-বিজ্ঞান ভিত্তিক বহু দলীল বর্তমান থাকার কারণে বিড়ি, সিগারেট, গালি, তামাক, গুল-জর্দা প্রভৃতি মাদকদ্রব্য মাকরুহে তাহ্‌রীমী অর্থাৎ হারাম। তাই এ সব জিনিস পকেটে রেখে মসজিদে যাওয়া ও নামায পড়া মাকরুহ। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/১৯৯-২০০)

পঁচিশ;
হেলা-দোলা:-
নামায পড়তে পড়তে আগে-পিছে বা ডানে-বামে হেলা-দোলা বৈধ নয়। কেন না, এ কাজ নামাযে একাগ্রতা ও স্থিরতার প্রতিকূল। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্‌ ২২০পৃ:)

   অনেকে কেবল ডান অথবা বাম পায়ের উপর ভরনা দিয়ে বাঁকা হয়ে দাঁড়ায়; যাতে কাতারের পাশের নামাযীরও ডিষ্টার্ব হয়। পক্ষান্তরে প্রিয় নবী (সাঃ) নামায শুরু করার পূর্বে সাহাবাগণের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেন, “তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও। বিভিন্নরুপে দাঁড়ায়ো না। নচেৎ তোমাদের হৃদয়ও বিভিন্ন হয়ে যাবে।” (মুসলিম, মিশকাত ১০৮৮ নং)

   অবশ্য নামায লম্বা হলে পা ধরার ফলে দু-একবার পা বদলে আরাম নেওয়া দূষণীয় নয়। তবে শর্ত হল, যেন এক পা অপর পায়ের চেয়ে বেশী আগা-পিছা না হয়ে যায়। বরং উভয় পা যেন বরাবর থাকে এবং এ কাজ বারবারও না হয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩২৩-৩২৪) তাছাড়া যেন পাশের মুসল্লীর ডিষ্টার্ব না হয়।

ছাব্বিশ;
নামাযের প্রতিকূল কিছু আচরণ:-

   নামায পড়তে পড়তে মাথা বা দাড়ি চুলকানো, বারবার মাথার টুপী, পাগড়ী বা রুমাল সোজা করা, ঘড়ি হিলানো ও দেখা, নখ, দাঁত, নাক ও ব্রণ খোঁটা প্রভৃতি অপ্রয়োজনীয় কর্ম বৈধ নয়। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্‌ ১৭২-১৭৫পৃ:) একটি কথা খুবই সত্য যে, হৃদয় চাঞ্চল্যময় থাকলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চঞ্চল থাকে। আর হৃদয়কে যদি শান্ত ও স্থির রাখা যায়, তাহলে বাহিরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সেই মহান বাদশার জন্য শান্ত ও স্থির থাকবে।

সাতাশ;
সালাম ফেরার সময়হাতের ইশারা মাকরুহ। (সালামের বিবরণ দ্রষ্টব্য)।
------------------------------

Post a Comment

0 Comments