Recent Tube

নামাজের ভেতর অনেক সময় অজু ভেঙে যায়। তখন কি আবার অজু করে প্রথম থেকে নামাজ পড়ব, নাকি যেখানে এসে অজু ভেঙেছে সেখান থেকে পড়ব? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল






  সালাতরত অবস্থায় ওযু ভেঙ্গে গেলে ওযু করার পর কি ১ম থেকে তা পূনরায় আদায় করতে হবে না কি যেখানে ওযু নষ্ট হয়েছিলো সেখান থেকে পরের অংশটুকু আদায় করতে হবে?
---------------------------------- 

 প্রশ্ন: 
নামাজের ভেতর অনেক সময় অজু ভেঙে যায়। তখন কি আবার অজু করে প্রথম থেকে নামাজ পড়ব, নাকি যেখানে এসে অজু ভেঙেছে সেখান থেকে পড়ব? 

 উত্তর: 
   নামাযরত অবস্থায় ওযু ভেঙ্গে গেলে পুনরায় ওযু করার পর কি প্রথম থেকে সালাত আদায় করবে না কি যেখানে ওযু নষ্ট হয়েছিলে সেখান থেকে পূর্ণ করবে এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। 

     জুমহুর বা অধিকাংশ ইমাম, যেমন ইমাম মালেক, শাফেঈ, আহমদ বিন হাম্বল প্রমুখ ইমামগণ বলেন, এ ক্ষেত্রে করণীয় হল, তৎক্ষণাৎ নামায ছেড়ে বেরিয়ে এসে ওযু করার পর পুনরায় প্রথম থেকে সালাত আদায় করা। তারা নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করেন:
আলী বিন ত্বলক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«إِذَا فَسَا أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ فَلْيَنْصَرِفْ، وَلْيَتَوَضَّأْ، وَلْيُعِدِ الصَّلَاةَ» رَوَاهُ الْخَمْسَةُ، وَصَحَّحَهُ ابْنُ حِبَّانَ
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সলাতে বাতকর্ম করবে, (সলাত ছেড়ে) সরে গিয়ে ওযু করবে ও সলাত পুনরায় সলাত আদায় করবে।” (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ইবনে হিব্বান প্রমুখ)

      ইবনে হিব্বান এ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন এবং কোন কোন মুহাদ্দিস হাসান বলেছেন। শুআইব আরনাবুত আবু দাউদের তাখরীজে এটিকে হাসান লিগাইরি বলেছেন, ইমাম ভূতি বলেন, এ হাদিসের সনদ جيد (ভালো)। আর শাইখ আলবানী সহ অনেক মুহাদ্দিস এ হাদিসটিকে যঈফ বলেছেন।

     পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা রাহ. এবং শাফেঈ এর প্রাচীন অভিমত অনুযায়ী, ওযু করার পর বাকিটুকু আদায় করাই যথেষ্ট। প্রথম থেকে আদায় করার প্রয়োজন নাই। কারণ যেহেতু ১ম অংশটুকু সে ওযু অবস্থায় আদায় করেছিলো। তারা তাদের মতের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করেন:

   ‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বৰ্ণিত। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
«مَنْ أَصَابَهُ قَيْءٌ أَوْ [ص: 26] رُعَافٌ, أَوْ قَلَسٌ, أَوْ مَذْيٌ فَلْيَنْصَرِفْ فَلْيَتَوَضَّأْ, ثُمَّ لِيَبْنِ عَلَى صَلَاتِهِ, وَهُوَ فِي ذَلِكَ لَا يَتَكَلَّمُ». أَخْرَجَهُ ابْنُ مَاجَه وَضَعَّفَهُ أَحْمَدُ وَغَيْرُهُ - ضعيف. رواه ابن ماجه (1221)
“যে ব্যক্তির বমি হয়, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে ও ভক্ষিত খাদ্য বস্তু মুখ পর্যন্ত চলে আসে কিংবা মাযী (হালকা আঠালো পানি) নিৰ্গত হয় সে যেন (সালাত ছেড়ে) ওযু করে নেয় এবং (এর মধ্যে কারো সাথে) কোন কথা না বলে; তাহলে সে সলাতের বাকি অংশ সমাধান করে নিবে।’ [ইবনে মাজাহ, আহমাদ প্রমুখ একে যঈফ বলেছেন। যঈফ ইবনে মাজাহ (১২২১)] ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বুলুগুল মারাম গ্রন্থে এ হাদিসটি যঈফ হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন)

     প্রকৃতপক্ষে এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো সহীহ-যঈফ হওয়ার কারণে সম্মানিত ফকীহদের মতামতে দ্বিমত সৃষ্টি হয়েছে। 

   ✅ তবে অধিকাংশ ইমামদের মতামত এবং ১ম পক্ষের হাদিসটিকে অনেক মুহাদ্দিস সহীহ/হাসান বলার প্রেক্ষিতে আমরা বলব, সালাত চলা কালীন সময় কোন কারণে তা ভেঙ্গে গেলে পূণরায় ওযু করার পর উক্ত সালাত ১ম থেকে আদায় করতে হবে। এটাই সবচেয়ে উত্তম ও অধিক নিরাপদ।

   সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিও এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ৫/৪৩৮) 
আল্লাহ ভালো জানেন।
--------------------------------- 
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,

Post a Comment

0 Comments