হে যুবক, তোমরা কি
ভাবতে প্রস্তুত?
একটি শক্তিশালী ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখা প্রতিটি শিক্ষিত ও সচেতন মানব সন্তানের অতি স্বাভাবিক ও মানবিক প্রবৃত্তি। তবে কাংক্ষিত সে সমাজ আপনা আপনি বিনাশ্রমে কিংবা কার্যকর প্রচেষ্টা ছাড়াই গড়ে উঠতে পারে না।
একটা গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান কিছু কমন বৈশিষ্ঠকে কেন্দ্র করে কোন একটি নির্দিষ্ঠ ভূখন্ডে বসাবস ও নিজেদের জীবন পরিচালিত করতে লাগলেই সেখানে ক্রমে একটা সমাজের বিকাশ হতে থাকে। নিজেদের অলক্ষ্যেই তাদের মধ্যে কিছু কমন রুলস গড়ে উঠে। তারা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মেনে চলার মতো নিয়ম নীতি তৈরি করে নেয়, এবং অধিকাংশ সদস্যরা সেগুলোর ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করে সরবে বা নীরবে। পৃথিবীর সূচনাকাল থেকে এরকম সমাজ তৈরি হয়েছে।
আদম আ: ও বিবি হাওয়া মিলে যে সমাজ পতিষ্ঠা করেছিলেন সেই সমাজের জন্য যুগ বিবেচনায় সর্বোত্তম নিয়ম নীতি ও প্রথা তারা চালু করেছিলেন। এর পরের প্রজন্ম সময়ের বিবর্তনে সেই সব নিয়ম ও প্রথা হতে বিচ্যুত হতে থাকে। তারা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তাবস্থায় নানা জনপদে ছড়িয়ে পড়ে সেখানে নিজেদের মতো করে সমাজ গড়ে তুলে। সেই সব সমাজের রীতি নীতি কতোটা বর্বর বা কতোটা উন্নত, সে বিতর্ক এখানে মূখ্য নয়।
সমাজ গঠন ও বিকাশের এটাই স্বাভাবিক এই প্রক্রিয়া। আবার ঐ সমাজের আশে পাশে বা তার ভেতরেই যখন কোন উন্নত রীতি নীতি ও প্রথা সমন্বয়ে নতুন কোন গোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র সমাজের বিকাশ হতে দেখেছে, তখন বিরাজমান সমাজ হয় নিজেদেরকে সেই সব উন্নত সমাজের নীতি রীতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে আর তা না হালে নিজেরাই সেই উন্নত সমাজে বিলিন হয়ে গেছে। এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক নিয়ম।
একটি সুন্দর ও আদর্শ সমাজ গড়ে উঠতে অন্তত ছয়টি ক্ষেত্রের সুসামঞ্জস্য বিকাশ প্রয়োজন হয়, সেগুলো হলো;
এক- ভাষা (Language),
দুই: ধর্ম (Religion),
তিন: সংস্কৃতি (Culture),
চার: ঐতিহ্য ও সামাজিক প্রথা (Customs & Traditions)
পাঁচ: সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান (Institution) এবং সবার শেষে
ছয়: গণমনস্তত্ত (Communal Psychology/ Social Psychology)
আর এটা তো জানা কথা যে, এই ছয়টি উপাদানের গঠন ও বিকাশ রাতারাতি সম্ভবপর হয় না। এগুলো গড়ে উঠে একটা দীর্ঘ সময়কালজুড়ে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সুত্র ধরে। এগুলো গড়ে উঠে ধীর লয়ে এবং অনেকের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমে।
উপরের ছয়টি উপাদানকে আমরা দু’টো ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথম ভাগে ভাষা, ধর্ম, সাংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সামাজিক প্রথা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, এই পাঁচটি। আর দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে গণমনস্তত্ত (Communal Psychology/ Social Psychology)।
এখন প্রশ্ন হলো; আপনি নিজেকে উপরের এই ছয়টি ক্ষেত্রের কোনটিতে যোগ্য বলে মনে করেন? কোন ক্ষেত্রটিকে বিশ্বের অন্যান্য সকল মতাদর্শীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কুরআনের শিক্ষা ও প্রিয় রাসুল সা: এর সুন্নাহর আলোকে সাঁজাতে পারবেন বলে মনে করেন?
নিজেকে প্রশ্ন করুন। নিজের বিচারটা নিজেই করুন। এর পরে সেভাবেই তৈরি করুন। আমদের মনে রাখা উচিৎ, আজ যারা ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এই বিশ্বসমাজকে পরিচালনা করছে, তারা প্রায় প্রত্যেকেই ্উপরোক্ত ছয়টির কোন না কোন ফিল্ডে অত্যন্ত যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েই মাঠে নেমেছে, তাদের হাত থেকে সংশ্লিষ্ঠ ক্ষেত্রের আধিপত্য ছিনিয়ে আনা খুব সহজ নয়।
সহজ নয় বটে, তবে অসম্ভবও নয়। অসম্ভব নয় এই কারণে যে, উপরের ছয়টি ক্ষেত্রের যে রুপ ও প্রকৃতি বর্তমান বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত থেকে রাজত্ব করে চলেছে, তার প্রতিটির দূর্বলতা সনাক্ত করার অস্ত্র (আল কুরআন ও সুন্নাহ) আমাদের হাতে রয়েছে। বরং বিশ্বের নানা বিজ্ঞানী ও পন্ডিতগণ ঐ ছয়টি ক্ষেত্রে যে সব থিওরি ও কর্মপদ্ধতি বিশ্বকে দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি কার্যকর ও অব্যার্থ পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দেয় ইসলাম।
তবে সমস্যা হলো, ইসলামের অনুসারী মুসলমান যুবসম্প্রদায় কি সে সবের সন্ধান জানে? তারা কি নিজেদেরকে প্রস্তুত করে যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার ইচ্ছা ও মানসিক দৃড়তাকে ধারন করে? মৌলিক এ প্রশ্নটাই আজ ভাবতে হবে সেই সব যুবকদের যারা বিদ্যমান বিশ্বসমাজকে বদলাতে চান।
---------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।
0 Comments