Recent Tube

সত্যিকারের পুরুষ চাই। আব্দুল্লাহ আরমান।

  


      
         সত্যিকারের পুরু চাই। 


     দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পিতার নিকট ঈদ অর্থ ‘খুশী’ নয়, তাদের নিকট এর অর্থ আকাশসম বোঝা নিয়ে বছরের সবচেয়ে কষ্টের দিনটির পূনঃ আগমন । খুশীর এই দিনে পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে তাঁদের রক্ত আর ঘাম একাকার হয়ে যাওয়ার ভেজা গল্পগুলো কারও অজানা নয়। বিশেষ করে প্রতিটি ঈদে বিবাহিত কন্যার অভাবী পিতা নষ্ট সামাজিক কুপ্রথার বলি হওয়ার দৃশ্যটা আজ ওপেন সিক্রেট। পিতৃত্ব ও পুরুষত্বের পাথরে হৃদয়ের অব্যক্ত চাপাকান্না চোখ বেয়ে নামতে না পারলেও তাদের উর্ধ্বমুখী আর্দ্র দীর্ঘশ্বাস মনের অজান্তে ঠিকই বেড়িয়ে যায়। 

      কন্যার পিতার আর্থিক দুরাবস্থা যতই শোচনীয় হোক হিংস্র সামাজিক প্রথা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় তার নেই । বিয়ের বাঁধনে আদরের কন্যাকে জিম্মি করে ছেলে পক্ষের ঘোষিত কিংবা অঘোষিত লোভাতুর দাবী পূরণ করতে নষ্ট সমাজব্যবস্থা তাকে বাধ্য করেছে। মোটা কাপড়ের কমদামি লুঙ্গি আর কয়েক বছরের পুরাতন পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়িয়ে কন্যার পিতার ঈদ কাটলেও মেয়ে বাড়ির সকলকে নতুন কাপড় উপহার(?) দেয়া এখন অবধারিত সামাজিক নিয়ম! দিনের পর দিন মোটা ভাত আর নিরামিষ খেয়ে দিন কাটানো মানুষটাও হরেক রকম দামী খাবারের পসরা সাজিয়ে কন্যার বাড়ি পাঠায় যাতে শ্বশুরবাড়িতে তার রাজকন্যার মাথা উঁচু থাকে এবং কারও সরাসরি বা ইঙ্গিতপূর্ণ কটুকথা শুনতে না হয়! হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় লালিত কন্যা অগোচরে অশ্রু ঝরাক কিংবা সবার মাঝে লজ্জায় মাথা নিচু হোক পৃথিবীর সবচেয়ে নিরুপায় বাবাও তা চায় না। মেয়ের প্রতি বাবার এই অকৃত্রিম দুর্বলতাই ছেলে পক্ষের মোক্ষম অস্ত্র।

        শ্বশুড়বাড়িতে একজন মেয়ের সবচেয়ে আপন ও নির্ভরতার একমাত্র স্থান তার স্বামী। পুতুল খেলার ছলে শিশুকাল থেকেই সে একটু একটু করে স্বামী ও তার সংসারের জন্য ভালোবাসা জমাতে শুরু করে। স্বপ্নের সেই পুরুষটিও যখন শ্বশুরকে আর্থিক বলিদানের এই নির্মম কুপ্রথাকে প্রত্যক্ষ বা মৌন সমর্থন দেয় তখন মেয়েদের নির্ভরতার শেষ জায়গাটুকুও শেষ হয়ে যায়। স্বামীর প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসার সমাধি সেদিনই হয় যেদিন সে  দরিদ্র বাবাকে হাসিমুখে কুপ্রথার তরবারীর নিচে স্বেচ্ছায় মাথা পেতে দিতে দেখে। কিন্তু তার হাসিমুখের পিছনে অভাবের কালো মেঘের ছায়া সে ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না। কারণ সে তার বাবার “দ্বিতীয় মা”, বৃদ্ধ সন্তানের অব্যক্ত ভাষা তার মতো আর কে বোঝে!

      বায়োলজিকালি পুরুষের সংখ্যা সমাজে অহরহ কিন্তু সত্যিকারের সুপুরুষের আজ বড়োই  অভাব। ‘পুরুষত্ব’ ধারণ করার মানসিক যোগ্যতা না থাকলে শারীরিকভাবে পুরুষ হওয়ার মাঝে কোনোই কৃতিত্ব নেই। আল্লাহভীরুতা, পুরুষালী ইতিবাচক স্বভাব, বিবেকবোধ, দয়া, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ, কর্মতৎপরতা, স্বনির্ভরতা, পরশ্রীকাতরতা বিহীন নির্লোভ মানসিকতা, ত্যাগ, মানসিক দৃঢ়তা, সত্যান্বেষী মনোভাব, ইত্যাদি একজন সত্যিকারের পুরুষের বৈশিষ্ট্য। এই অনুপম বৈশিষ্ট্যগুলোই তাকে অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করে। বিয়ে মানে শুধু জৈবিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দেয়া নয় কারণ পশুরও সে শক্তি আছে। বৈশিষ্ট্যের পরীক্ষায় কৃতকার্যতার মাধ্যমেই অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষকে পৃথক করা সম্ভব।

       সামাজিক অনাচার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারলে সে কিসের পুরুষ? 
পরশ্রীকাতর মনোভাব ত্যাগ করতে না পারলে পুরুষত্বের দাবী কতটুকু যৌক্তিক?
শ্বশুরের আদরে লালিত সম্পূর্ণ মানুষটাকে নিজের করে পেয়েও যে তৃপ্ত নয় পুরুষত্ব দূরে থাক তার মাঝে মনুষ্যত্ব আছে কি? 

      আমরা চাই এমন একটি সমাজ যেখানে পিতারা সুপুরুষের হাতে কন্যা সমর্পণ করবেন এবং এমন সত্যিকারের পুরুষ চাই যারা সমাজের সকল জুলুম ও অন্যায়ের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে! 
----------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক,ছোট গল্প, প্রবন্ধ প্রবন্ধ লেখক, অনলাইন এক্টিভিস্ট ও শিক্ষক 

Post a Comment

0 Comments