চাঁদ রাত
(Night of moon);
ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় শাওয়ালের চাঁদ দেখার জন্য আমরা উদ্গ্রীব হয়ে থাকতাম । সূ্র্যডুবির সাথে সাথে আমাদের চোখ পড়তো বাঁশবাগানের মাথায় । ছোটবেলায় মনে করতাম সম্ভবত ওখানেই চাঁদ মামার ঘরবাড়ি । তা না হলে প্রতিবছর এক জায়গা থেকে সে উদিত হয় কেন?
চাঁদ দেখার জন্য আম্মা আমাদেরকে উৎসাহ দিতেন। আমরা সবাই মিলে বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়াতাম । চাঁদ উঠতে দেরী হলে বিরক্তির সীমা থাকতোনা । অভিমান করতাম ভীষণ ভাবে। বেচারা একটু আগে উঠতে পারেনা ! হঠাৎ দেখা যেত সন্ধ্যাকাশে বাঁশ ঝাড়ের মাথায় বাঁকা কাস্তের মত ক্ষীনকায় আলো ছড়াচ্ছে চাঁদ মামা। তখন কি যে খুশী হতাম তা আজ আর বুঝানো সম্ভব নয় । চন্দ্রোদয় জানান দিতো আগামীকাল ঈদ ।
আমরা দৌড়ে ঘরে আসতাম রেডিও- (পরবর্তীতে টিভি) তে সম্প্রচারিত হত কবি নজরুলের সেই শিত্তহারী গান।
''ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ ''
।
ঈদের আগের রাতটা যেন ঈদের চাইতেও বেশী আনন্দের ছিল ।
আমরা ঈদের আগের রাতটিকে চাঁদ রাত (Night of moon) বলতাম । সে রাতে মেহেদীর কারুকাজ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়তেন অামার বোনেরা । তখন আমিও হাত বাড়াতাম । তারা অমার হাতে মেহেদীর উল্কী এঁকে দিতেন ।
ওদিকে আম্মা রাতভর সন্দেশ পিটা,পপ তৈরীতে ব্যাস্ত থাকতেন । পুরো একটা ঘুম দিয়ে উঠে দেখতাম আম্মা তখনও সন্দেশের ঘোল ডুবো তেলে ঢালছেন আর সন্দেশগুলো কেমন ফুটন্ত ফুলে ফুলে উঠছে ।
আবার ঘুমিয়ে পড়তাম। কতক্ষণ পরপর ঘুম ভাঙতো। আর ভাবতাম কেন যে সকাল হয়না । অবশেষে ভোর হত । মহা আনন্দে গোসল সারতাম । সূ্র্যের আলো প্রখর হত। আমরাও ছোটে যেতাম লোকালয়ের ঈদগাহে ।
আজ আর সেই দিন নেই ।
বাঁশবাগানের তলায় লুকিয়ে গেছে আমাদের সেই দিনগুলো।
0 Comments