Recent Tube

নিশ্চিতই আল্লাহর আদালত অনেক শক্তিশালী। ফখরুল ইসলাম খাঁন।

 





     

নিশ্চিতই আল্লাহর আদালত অনেক 
     শক্তিশালী।

 মিথ্যে বানোয়াট কল্প কাহিনী সাজিয়ে নিরপরাধ মানুষ গুলোকে আদালতের মাধ্যমে হত্যা করতে সবকিছু করলে! আজ মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালার আদালতে হাজির হওয়ার সময় নিরপরাধ মানুষ গুলো হত্যার জন্য কি ডকুমেন্টস জমা দিবে??

﴿وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا ۚ وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا ۗ وَلَا 
يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا﴾

    আর সেদিন আমলনামা সামনে রেখে দেয়া হবে৷ সে সময় তোমরা দেখবে অপরাধীরা নিজেদের জীবন খাতায় যা লেখা আছে সে জন্য ভীত হচ্ছে এবং তারা বলছে, হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য, এটা কেমন খাতা, আমাদের ছোট বড় এমন কোনো কিছুই এখানে লেখা থেকে বাদ পড়েনি৷ তাদের যে যা কিছু করেছিল সবই নিজের সামনে উপস্থিত পাবে এবং তোমার রব কারোর প্রতি জুলুম করবেন না৷ {আয়াত-৪৯ সূরা ক্বাহাফ}।

  ব্যাখ্যাঃ-

  পূর্ববর্তী অধ্যায়টা সমাপ্ত হয়েছে শাশ্বত মূল্যের অধিকারী সৎ কর্মসমূহের উল্লেখের মধ্য দিয়ে। এখানে ওই বিষয়টাকে সেই দিনের বর্ণনার সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যেদিন ওই সব শাশ্বত সৎ কর্মের ওযন থাকবে এবং হিসাব নিকাশ নেয়া হবে। এটাকে কেয়ামতের একটা দৃশ্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর অব্যবহিত পরে আলােচিত হয়েছে ইবলীসের ঘটনা। আদমকে সেজদা করতে ইবলীসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলাে, কিন্তু সে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেছিলাে। অথচ আদমের সন্তানরা সেই ইবলিস ও তার বংশধর শয়তানদেরকে অভিভাবক ও বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করলাে। এ জন্যে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। কেননা তারা আগেই জেনেছে যে, ওরা মানুষের শত্রু। এ জন্যেই তারা কেয়ামতের দিন আযাব ভােগ করবে। আর যাদেরকে তারা আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করেছে তাদের কাছেই তাদের পূজারীরা যাবে। অথচ সেই প্রতিশ্রুত দিনে তাদের কোনাে প্রার্থনাই মঞ্জুর হবে না। 'আর স্মরণ করে দেখাে ওই দিনের অবস্থাকে যখন আমি, আল্লাহ তায়ালা চালিয়ে দেবাে পর্বতসমূহকে এবং দেখতে পাবে তােমরা পৃথিবীকে পরিণত করা হয়েছে এক উন্মুক্ত প্রান্তরে... আর পাবে তারা সে সব কিছু যা তারা করেছে, আর তারা দেখবে, তাদের সামনে সব কিছু হাযির (অবস্থায়) আর তােমার রব কোনাে যুলুম করবেন না কারাে ওপর।'  *কেয়ামতের জীবন্ত চিত্র : এখানে এমন একটি দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে যা মানব প্রকৃতির পক্ষে বুঝতে পারাটা খুবই সহজ। যে ভয়ানক দৃশ্য এ বর্ণনায় ফুটে উঠেছে তাতে মানব হৃদয়ে এক প্রচন্ড প্রকম্পন সৃষ্টি হয়। সেই মহা প্রলয় যখন শুরু হবে তখন পৃথিবীর সব কিছু মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণ হারিয়ে ফেলার কারণে একেবারেই ওযনবিহীন হয়ে পড়বে। সুউচ্চ পর্বতরাশি যা আজকে জমাট পাথর রূপে আমরা পৃথিবীর মধ্যে দৃঢ়বদ্ধভাবে প্রােথিত দেখতে পাচ্ছি সেগুলাে সব স্থানচ্যুৎ হয়ে মাটির উপরিভাগে ভাসাভাসাভাবে চলতে থাকবে, সেগুলাের মধ্যে অবস্থিত অনু-পরমাণুগুলাে পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে ধুলিকণা সম উড়তে থাকবে। চিন্তা করে দেখনু, এ অবস্থার মধ্যে পতিত হয়ে মানব হৃদয়ের কী অবস্থা হতে পারে। গােটা পৃথিবীর সব কিছু ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে এবং নযরে পড়বে দিগন্ত ব্যাপী প্রসারিত এক ধূধূ মহা প্রান্তর। সেখানে কাউকে আপনজন হিসাবে পাওয়া যাবে না। আর না থাকবে সেখানে পথ দেখানাের মতাে কেউ, না কোনাে উঁচু নীচু ভূমি, পাহাড় পর্বত, না কোনাে শস্য শ্যামল ভূমি আর না পানির প্রশ্রবন সম্বলিত কোনাে উপত্যকা। এ সময়ে মানুষের মনে লুকায়িত যাবতীয় গােপন রহস্য খুলে যাবে, সেদিন কেউ কোনাে কথা লুকিয়ে রাখতে পারবে না। আরাে চিন্তা করে দেখুন, এই কঠিন দিনে সমান্তরাল এ পৃথিবীর মধ্যে কোনাে কিছুই আর গােপন থাকবে না। কোনাে মানুষকেও গােপন থাকতে দেখা যাবে না। তাই এরশাদ হচ্ছে, 'একত্রিত করবাে সবাইকে, ওদের কাউকেই আমি ছাড়ব না।' ওই মহাসমাবেশের দিনে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না-সবাই হাযির হয়ে যাবে ওই মহা প্রান্তরে তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ আমল কাজ কর্ম ও ব্যবহার সহ সবাইকে হাযির করা হবে। এরশাদ হচ্ছে, 'আর তাদেরকে হাযির করা হবে তােমার রব এর সামনে সারিবদ্ধভাবে...' হাযির করা হবে গােটা মানবমন্ডলীকে যাদের কোনাে সীমা সংখ্যা থাকবে না, অর্থাৎ অগণিত হবে তাদের সংখ্যা। পৃথিবীর বুকে মানব জাতির বসতি শুরু হওয়া থেকে পৃথিবীর মহা প্রলয় পর্যন্ত যতাে মানুষ দুনিয়ায় পয়দা হয়েছে তারা সবাই ওই হাশরের ময়দানে হাযির হয়ে যাবে, কোনাে এক ব্যক্তিও বাকি থাকবে না। পৃথিবীর কোনাে অংশও আর গােপন থাকবে না সব অংশই মানবমন্ডলীর সামনে উপস্থিত থাকবে। এই পর্যায়ে এসে বর্ণনাভংগির পরিবর্তন হয়ে সম্বোধনসূচক বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে, যেন ওই দিনের সমাবেশের সকল জনতা উপস্থিত রয়েছে এবং তাদেরকে সরাসরি সম্বােধন করে কথা বলা হচ্ছে। এ বর্ণনাভংগি পাঠকের সামনে ওই কঠিন দিনের দৃশ্যকে এমন জীবন্ত ছবির মতাে তুলে ধরেছে যেন পাঠক অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছে হয়রান পেরেশান ওই বিশাল জনসমুদ্রকে। কল্পনায় ওই ভয়াবহ দৃশ্য অবলােকনে দৃষ্টি যেন পাথর হয়ে যেতে চাইছে, আমরাও যেন দেখছি ওই কঠিন অবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভাসছে, শুনছি জনতার ওই বিভীষিকাময় কোলাহলকে, দেখছি ঐ সব নাফরমান লােকদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত লজ্জিত অবস্থায়, যারা এ দিনের আগমনকে অস্বীকার করেছিলাে। এমনই এক অবস্থাকে সামনে নিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন, 'হাঁ, অবশ্যই আজ তােমরা সেই অবস্থায় আমার কাছে ফিরে এসেছ যেমন করে প্রথম বারে আমি, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা, তােমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু তােমরা তাে ভেবেছিলে এই ওয়াদাকৃত দিবস কখনই আসবে না।' এই সম্বােধনসূচক বাক্যটি ওই অবস্থাকে জীবন্ত রূপ দিয়েছে এবং কেয়ামতের ওই ভয়াবহ দৃশ্যকে এমন ছবির মতাে ফুটিয়ে তুলেছে যেন এখনই আমাদের সামনে ওই ছবিটা ভাসছে, মনে হচ্ছে এটা ভবিষ্যতের অনুষ্ঠিতব্য এবং অজানা অচেনা কোনাে কেয়ামত নয়। আর অবশ্যই আমরা ওই ভয়ানক দৃশ্যের মধ্যে অপরাধী, পাপিষ্ঠ ও আল্লাহর হুকুম অমান্যকারীদেরকে নানা প্রকার অপমান সইতে দেখছি, বর্ণনা প্রসংগে বাহ্যিক যে দৃশ্য আমাদের নযরে পড়ছে তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি ওই নাফরমানদের লাঞ্চনার গ্লানি অত্যন্ত পরিস্ফুট হয়ে রয়েছে। আল্লাহর সতর্কতা তাঁর কালামে যেভাবে ধ্বনিত হয়েছে তাতে ওদের প্রতি কঠিন ধমকের সুর ফুটে উঠেছে। এরশাদ হচ্ছে, 'অবশ্যই তােমরা সেই (অসহায় অবস্থায়) আমার কাছে এসেছে যেমন অতি (দুর্বল অবস্থায়) আমি তােমাদেরকে প্রথম বারে সৃষ্টি করেছিলাম অথচ তােমরা মনে করছে...' ওই সময়কার দৃশ্যের জীবন্ত ছবি আমাদের সামনে হাযির করার পর, পরবর্তী অবস্থা কি হবে সে বিষয়ে আমাদেরকে জানানাে হচ্ছে, 'হাযির করা হবে (মানুষের সামনে) তাদের জীবনের কার্যতালিকা রেকর্ড বুক তখন অপরাধী ব্যক্তিরা ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দেখতে পাবে ওই কিতাবের মধ্যে লিপিবদ্ধ তাদের জীবনের সকল বিষয়গুলাে।' অর্থাৎ তারা দেখতে পাবে তাদের সামনে রেখে দেয়া হয়েছে তাদের জীবনের সকল কাজ কর্মের পূর্ণাংগ তালিকা। এ সময় তারা চিন্তা করতে থাকবে এবং পেছনের কাজগুলাে স্মরণ করে দেখতে পাবে, যা কিছু লিপিবদ্ধ রয়েছে তার প্রতিটি কথাই সত্য। তখন, তাদের জীবনের সকল দুষ্কর্মের অবশ্যম্ভাবী শাস্তির কথা চিন্তা করে তারা তাদের বুক সংকুচিত হয়ে যাবে, কেননা তারা দেখবে এ রেকর্ড বই তাে ছােটো বড়াে কোনােটাই বাদ দেয়নি। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যা কিছু তারা করেছে তার প্রতিটি কথা গুণে গুণে এ কর্ম তালিকার মধ্যে লিখে রাখা হয়েছে। সুতরাং তাদের মন বলে উঠবে কি করে তারা রেহাই পাবে এর অনিবার্য শাস্তি থেকে। 'তখন তারা বলে উঠবে, হায় আফসােস। কী আশ্চর্য কিতাব এটা, ছােট বড় কোনাে অপরাধের কথাই এ কিতাব লিখতে ছাড়েনি, সবই গুণে গুণে এর মধ্যে ভরে রেখে দিয়েছে?' নিজের ওপর রাগ ও লজ্জা তাদেরকে এমনভাবে ঘিরে ফেলবে যে, ওই কঠিন শাস্তির ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় স্বগোক্তি করতে করতে নিজেদের অজান্তেই উপরােক্ত কথাগুলাে তারা উচ্চারণ করতে থাকবে চাইবে তারা পালিয়ে যেতে কিন্তু কোথায় যাবে তারা? আল্লাহর রাজ্য ছাড়া কোথাও তাে কোনাে আশ্রয় থাকবে না। তারা কাউকে তাদের সম্পর্কে ভুলিয়ে দিতে পারবে না বা কারো চোখে ধুলাে দিয়ে সরেও যেতে পারবে না যেমনটি আজ ওই চতুর লোকেরা মনে করে, তাই এরশাদ হচ্ছে, 'তারা যা কিছু করেছে সবই হাযির পাবে।' অর্থাৎ, যা কিছু করে এসেছে তার সমুচিত শাস্তি অবশ্যই তারা পাবে, 'এবং তােমার রব কারাে ওপর যুলুম করবেন না।' অর্থাৎ কাউকে তার পাওনা শাস্তি থেকে মােটেই বেশী দেবেন না-কিন্তু পাওনা শাস্তি কম দিলে তাঁকে ঠেকায় কে? এ প্রশ্ন যখন আসে তখন বুঝতে হবে তার হক কেউ নষ্ট করে থাকলে তা মাফ করে দেয়ায় তাকে কেউ বারণ করতে পারে না বা পারবে না কিন্তু কোনো বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার পাওনা ওই অপরাধীদের কাছ থেকে অবশ্যই তিনি বুঝে দেবেন, যেহেতু তাদের পাওনা আদায় করে না দিলে পাওনাদারদের প্রতি যুলুম করা হবে, অবশ্যই তিনি এ যুলুম করবেন না বা কিছুতেই তিনি এ যুলুম হতে দেবেন না। এটাই তার ইনসাফের দাবী। এমতাবস্থায় বান্দার হক কতাে কঠিন তা সহজেই অনুমেয়।
--------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক,সাংবাদিক  কলামিস্ট ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments