Recent Tube

কুরআনিক থট প্রসেস: আল কুরআনের চিন্তামানস -৭, জিয়াউল হক।



 কুরআনিক থট প্রসেস: 
আল কুরআনের চিন্তামানস -৭
 (প্রাক কথন) 

      বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের একটা উক্তি মনুষ্য সমাজে, বিশেষ করে, বুদ্ধিজীবি মহলে অত্যন্ত সমাদৃত হয়ে আছে। তিনি বলেছিলেন; The world as we have created it is a process of our thinking. It cannot be changed without changing our thinking.
 ভাবানূবাদ: যে বিশ্বকে আমরা সৃষ্টি করেছি, সেটা আমাদের চিন্তাধারারই ফল। আমাদের নিজেদের চিন্তাধারাকে পরিবর্তন না করে এ বিশ্বকে পরিবর্তন করা যাবে না ।

       কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তব। বিজ্ঞানী আইনাষ্টাইন কথাটা বিংশ শতাব্দিতে বললেও এটা মূলত ইসলামেরই শিক্ষা। ইসলাম অনেক আগে, আইনষ্টাইনেরও প্রায় তেরশত বসরেরও বেশি সময়কাল আগেই কথাটা বলে দিয়েছে আমাদের জন্য। সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, কোন ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীর চিন্তামানসকে পরিবর্তন না করে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, সমাজ ও সভ্যতায় কোনরকম অর্থবহ পবির্তন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ নিজেই বলেছেন সে কথাটা। কুরআনুল কারিমে বিষয়টি বণিত হয়েছে এভাবে; 

    আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সুরা রা’দ : ১১)

     বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন; Imagination is more important than knowledge. For knowledge, is limited, whereas imagination embraces the entire world, stimulating progress, giving birth to evolution.
ভাবানূবাদ: জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞান তো সীমিত, কিন্তু কল্পনার কোন সীমা পরিসীমা নেই, পুরো সৃষ্টিজগতকেই ধারন করে সে জ্ঞানের প্রবৃদ্ধি ঘটায়, নতুন ত্বত্তের জন্ম দেয়। 

        এ কারণেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর চিন্তাজগত পরিবর্তন ও একটি সুস্থ ও কল্যাণকর চিন্তাস্তর ধারণ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে চলার পথে ছোট বা বড়ো প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ বিভ্রান্ত হয় এই চিন্তাস্তরের সাময়িক বা স্থায়ী দূর্বলতা ও অপূর্ণতার কারণে। তাই সুস্থ, সঠিক ও কল্যাণকর চিন্তাস্তর কোনটি, সেটা জীবনে সাফল্য পেতে আগ্রহী প্রতিটি সচেতন নারী পুরুষকে জানতেই হবে।

       আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা এর বাইরে গিয়ে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারে এবং বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের উপরে ভিত্তি করে থটপ্রসেসকে মোট ছয়টি ভাগে ভাগ করেছেন। অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে আমরা সেগুলোকে এখানে উল্লেখ করলাম; 

      থট প্রসেস কাকে বলে সেটা বুঝতে গেলে আমাদের খুব সাধারণ একটা বিষয় আগে বুঝে নিতে হবে। সেটা হলো; চিন্তা বা থিংকিং (Thinking) কি? তার সঙ্গাই বা কি? খুব সহজ ও সম্ভবত প্রথম দৃষ্টিতে প্রশ্নটিকে অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় বলেই মনে হবে। কিন্তু আমাদের আলোচ্য বিষয়টির গভীরে যেতে হলে এই সহজ প্রশ্নের উত্তরটাও আমাদেরকে জানতে হবে, আলোচনায়ও আনতেই হবে। প্রশ্নটাা হলো; চিন্তা বা থিংকিং কি? তার উপাদানই বা কি? 

      মনোবিজ্ঞানের ভাষায় চিন্তাকে (Thinking) সঙ্গায়িত করা হয়েছে এভাবে; Thinking means representing things mentally and operating mentally on these representations 
ভাবানূবাদ: চিন্তা হচ্ছে মানসপটে কোন একটা বিষয়কে স্থির করে নিয়ে তাকে ঘিরে মানসিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া (সুত্র: Psychology Mind, Brain & Culture. Drew Westen, John Wiley & Sons, Inc. New York, 1996, পৃ: ২৯২)। 

     চিন্তার উপকরণ, তথা, উপাদান কি? চিন্তার উপাদান হলো অন্তত তিনটি বিষয়, সেগুলো যথাক্রমে; এক: Image, দুই: Concept,  এবং  তিন: Propositions 

       খুব সংক্ষেপে ও সহজে যদি আমরা এই তিনটা বিষয়কে একটু বিশ্লেষণ করে দেখি তা হলে এর যথার্থতা আমাদের সামনে অতি সহজেই ফুটে টুঠে। বস্তুত আমরা মনের মধ্যে কোন বিষয়, কোন ব্যক্তি বা বস্তু কিংবা কোন ঘটনার একটা কল্পিত চিত্র (Image) এঁকে নেই। এর পরে সেই ইমেজকে নিজেদের জ্ঞান প্রজ্ঞা, বিচার বুদ্ধি, আবেগ অনুভুতি ও বোধ বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করে সেই চিত্রকে একটা ধারনায় (Concept) রুপান্তর করি। মনের ভেতরে পুরো ইমেজ নিয়ে একটা ধারনা তৈরি হয়ে যায় এর পরে সেই ধারনাকেই আমরা আমাদের মনের অভিব্যক্তি বা মতামত কিংবা প্রস্তাবনা (Propositions) হিসেবে ধরে রাখি বা প্রকাশ করি। এই তিনটা স্তর বা পর্যায় যে মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পাদিত হয়, সেটাই হলো থট প্রসেস (Thought Process)।  

      চিন্তারও রকমফের থাকে। আমরা সকলেই নিজ নিজ জীবনে প্রতিনিয়তই নানা বিষয়ে চিন্তা করি, করতে বাধ্য হই। কেউ এটা কখনও গভীরভাবে ভেবে দেখি না, যে আমাদের সেই সব চিন্তার রকম ফের কিরকম, কিভাবেই বা সম্পাদিত হয় সেগুলো?

      তবে মনোবিজ্ঞানীরা এর রকমফের নিয়ে ভেবেছেন। তারা বেশ কয়েকটি ভাগে সেগুলোকে ভাগ করেছেন। এই বিভক্তিকরণ নিছক চিন্তার ধরন উপলব্ধী করার জন্য। চিন্তামানস বা থট প্রসেস’কে (Thought Process) জানতে, বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যালোচনার মাধ্যমে গভীরভাবে বুঝতে হলে এই শ্রেণি বিন্যাসগুলোকে জানা প্রয়োজন। 

       মনোবিজ্ঞানীরা ‘চিন্তা’কে সর্বমোট ছয়টি ভাগে ভাগ করেছেন, অর্থাৎ তারা ছয় ধরনের চিন্তার কথা বলেছেন। (সংক্ষেপকৃত)
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক, গবেষক, ইংল‍্যান্ডের বেসরকারী মানসিক হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ও লেখক, ইংল‍্যান্ড।

Post a Comment

0 Comments