Recent Tube

কুরআনিক থটপ্রসেস: আল কুরআনের চিন্তামানস। জিয়াউল হক।







 
 কুরআনিক থটপ্রসেস: আল কুরআনের চিন্তামানস। 
     পর্ব -৯;

             
    চিন্তাধারা, চিন্তামানস বা থটপ্রসেস (Thought Process) যে নামেই অভিহিত করি না কেন, বিষয়টি যে মানুষের, তথা, আমাদের মৌলিক সৃষ্টিসত্তার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত তাতে কোন সন্দেহ নেই। মানুষের চিন্তাধারা গড়ে উঠার সম্পর্ক তার জন্ম ও ক্রমিবকাশের সাথে জড়িত অবিচ্ছেদ্দ এক সত্তা। একে অপর থেকে আলাদা করা যায় না। কারণ চিন্তাধারা গড়ে উঠতে মানুষের যে বোধ-বিচার, বিবেক-বুদ্ধি, ভাব-আবেগ, অনুভূতি ও উপলব্ধীসহ তার মস্তিস্কের কাজ, চোখ-নাক-কানের কর্মযজ্ঞ, এসব কিছুই জড়িত। কাজেই চিন্তধারা বা থট প্রসেস (Thought Process) গড়ে উঠার প্রক্রিয়ার সাথে তার পুরো সত্তা জড়িয়ে থাকে। 

   এ ধারা বা প্রক্রিয়ার শুরু হয় ব্যক্তির জন্মেরও আগের সময়কাল হতে, তথা, মায়ের পেটে থাকা অবস্থা থেকেই। সেখানেই এই প্রক্রিয়াটা তার মূল অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্দ ও অবিভাজ্য এক অংশ হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে, ধীরে ধীরে তার ভেতরে বিকাশও হতে থাকে। 

    এই বিকাশ হওয়াটা নিরেট কাঠামোগত বিকাশ। মস্তিস্কের কোষের গঠন ও বিস্তার, মুখ, চোখ, কান, নাক এসব ইন্দ্রিয়ের গঠন ও বিকাশ এবং তাদের কার্যপদ্ধতির মধ্যে সামঞ্জস্যতা গড়ে উঠা। এসব একজন ব্যক্তির চিন্তাধারা, চিন্তামানস বা থটপ্রসেস গড়ে উঠার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান হলেও কেবলমাত্র এগুলোর উপরে ভিত্তি করে কারো থটপ্রসেস (Thought Process) গড়ে উঠে না, উঠতে পারেও না। 

    একটি সুষম ও সুনিয়ান্ত্রিত, শক্তিশালী ও কার্যকর চিন্তাকাঠামো বা চিন্তাধারা (Thought Process) গড়ে উঠার জন্য মানুষের প্রয়োজন হয় বোধ-বিশ্বাস, শিক্ষা-সংস্কৃতি, শক্তিশালী ভাষা ও বাচনক্ষমতা’সহ অনকুল - ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি। একজন মানব সন্তান হিসেবে তাকে পারিবারিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক বিচারে আনুষ্ঠানিক বা অনুষ্ঠানিক, প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক, প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

    এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার মধ্যে গড়ে উঠে একটি মনস্তÍত্ত বা সাইকোলোজি (Psychology)। এই সাইকোলোজিই তার থট প্রসেসকে ব্যাখা করে আমাদের সামনে। আমরা একজন ব্যক্তির সাইকোলোজি বা মনস্তÍত্ত বিচার করেই তার থট প্রসেস (Thought Process) সন্মন্ধ্যে ধারনা পাই।

   তা হলে দেখা যাচ্ছে মনস্তত্ত বা সাইকোলোজি (Psychology) মানবিক চিন্তাধারা গড়ে তোলার পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক দায়িত্ব পালন করে। আর এই সাইকোলোজিটাও গড়ে উঠে একজন ব্যক্তি কোন সাংস্কৃতিক পরিবেশে জন্ম নিচ্ছে, বেড়ে উঠছে, বসবাস করছে, কোন ধরনের বোধ বিশ্বাস ও দর্শনকে ধারন করছে, কোন ধরনের আবেগ অনুভুতি আর উপলব্ধীর মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এরকম অনেক বিষয়কে ভিত্তি করে। 

   উনবিংশ শতাব্দির প্রখ্যাত এক নৃবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানী Margaret Mead  তার এক সহকর্মী গবেষক Ruth Benedict’সহ একটি গবেষণায় এ ব্যাপারে চমৎকার এক মন্তব্য করেছিলেন; তারা বলেছেন;  
Individual psychology is fundamentally shaped by cultural values, ideas and ways of thinking. 
    ভাবানূবাদ: ব্যক্তির মনস্তত্ত তার সাংস্কৃতিক মুল্যবোধ, দর্শন ও ভাবনা প্রকৃতি দ্বারা মৌলিক ছাঁচ পায় (সুত্র: Psychology. Mind, Brain & Culture, Drew Westen, John Willey & Sons, Canada. পৃ: ৬)। 

   আধুনিক বিশ্বের মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী’সহ নানা বিষয়ে পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ ও গবেষকরা মানুষের এই মনস্তত্ত ও চিন্তাধারা গড়ে উঠার প্রক্রিয়া, তার উপরে প্রভাববিস্তারকারী নানা উপসর্গ, পরিবেশ ও পরিস্থিতি এসব নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন।

   আজও সে সব গবেষণা ও জরিপ চলমান। বিজ্ঞানভিত্তিক এইসব গবেষণা আমাদের সামনে অনেক চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছে। কিন্তু তারপরেও বাস্তবতা হলো, আধুনিক বিজ্ঞান, তথা, নাস্তিক্যবাদী বা ধর্মবিবজির্ত বিজ্ঞান গবেষকরা মানুষের এই চিন্তামানস গড়ে উঠার ক্ষেত্রে তার মূল সৃষ্টি প্রক্রিয়া, সৃষ্টিকর্তার ব্যাখা বিশ্লেষণ ও ঘোষণার দিকে কোনরকম দৃষ্টিপাতই করেন নি, বা তেমনটা করার প্রয়োজনও বোধ করেননি ধর্মকে অস্বীকার বা জ্ঞান গবেষণায় ধর্মীয় মুল্যবোধের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার কারনে।

    এর ফলে গবেষকরা যেখানে মানবিক জ্ঞান বুদ্ধির সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষের মনস্তত্ত ও চিন্তাপদ্ধতির কোন বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখা উপস্থাপন করতে পারেন নি, সেখানে তারা তাদের দৃষ্টিতে ‘সম্ভাবনা’র (Hypothesis) কথা তুলে ধরেছেন। 

     অর্থাৎ তারা তারা আন্দাজ অনুমানে কথা বলেছেন। পন্ডিত, গবেষক ও বিজ্ঞানীরা তাদের মতে ‘সম্ভাবনা’কে ভিত্তি করে যে সব চিন্তা গবেষণা করেছেন, তার ফলাফলকেই আমাদের সামনে ‘বিজ্ঞানভিত্তিক’ ও ‘গবেষণালব্ধ’ চুড়ান্ত মত হিসেবে তুলে ধরেছেন। বলাই বাহুল্য, তাদের সেই চুড়ান্ত মতামত যে কখনও চুড়ান্ত কিছু নয়, সেটা তারা নিজেরাই জানেন এবং স্বীকারও করেন। এ কারণেই মানুষের মন ও চিন্তামানস আজও বিজ্ঞানীদের কাছে এক দূর্বোধ্য বিষয় হয়ে আছে। 

   বিজ্ঞানী ও গবেষকরা যে যাই বলুক না কেন, প্রকৃতিগতভাবে, জন্মগতভাবে প্রাপ্ত মানবিক চিন্তামানস বা থট প্রসেস বুঝতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে কুরআনের দিকে। মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সূচনাতে। সেখানেই রয়েছে এ সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর। মানুষের মন ও চিন্তামানস, তার চিন্তার ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে যে কোন চিন্তা ও গবেষণার মৌলিক ভিত্তিমূল হবে সেটি। 

    আল কুরআনের সুরা বাকারার কয়েকটা আয়াতের দিকে নজর দিলেই আমরা সেটা দেখতে পাই। এ বিষয়ে আপনাদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আসুন আমরা সকলে কিছুক্ষণের জন্য সুরা বাকারার ৩০ আয়ত হতে ৩৬ প্রর্যন্ত মোট সাতটি আয়াতের দিকে নজর দেই (সংক্ষেপকৃত)।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক ইংল‍্যান্ডের বেসরকারী একটি মানসিক হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ও লেখক, ইংল‍্যান্ড।

Post a Comment

0 Comments