Recent Tube

জীবনের খেলা ঘর। আব্দুল্লাহ আরমান।

     

       
                  জীবনের খেলা ঘর।


         মেহেদী রাঙানো এক জোড়া লাল টুকটুকে হাত, ঘোমটার আড়ালে আনত নয়নে একটি মিষ্টি লাজুক চাহনী, ফুলশয্যায় দু'জোড়া হৃদয় ও চোখের লুকোচুরি খেলা, মধুচন্দ্রিমায় চাঁদের জোছনায় চন্দ্রস্নান ও নির্জনে বাঁধভাঙা প্রেমের অবারিত বৈধ সুযোগ এবং একটি টাকা ভর্তি ক্রেডিট কার্ডের মাঝে একজন ২০ পেরোনো  যুবক জীবনের ‘প্রকৃত’ সুখ খুঁজে পায়!

        কিন্তু মাত্র কয়েক বছর পূর্বেও তার দূরন্ত কৈশোরে ক্রিকেটের ব্যাট, ফুটবল,ব্যাডমিন্টন, হাডুডু ইত্যাদি ছিলো তার কিশোর মনোসুখের মূল উৎস! যদিও অনাকাঙ্খিতভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস গুলো বর্তমানে সেই স্থান দখল করে নিয়েছে।

   অপরদিকে বাল্যজীবনের সাথে যৌবনের সুখানুভূতির রয়েছে বিস্তর ফারাক।  সুন্দরী রমনীর দু'হাত ধরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মাঝে সকল যুবক সুখের আবেশ পেলেও একজন বালকের  কাছে তা  নিরর্থক। দু'হাতে ঘুড়ির নাটাই ধরে উর্ধ্বাকাশের রঙিন  ঘুড়ির দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকার মাঝেই সে অকৃত্রিম আনন্দ লাভ করে। প্রেয়সীকে বাহুডোরে বেঁধে বুকে জড়ালে যুবকের দেহ মনে আনন্দের জলোচ্ছ্বাস তৈরী হলেও একজন বালকের কাছে তা মূল্যহীন। মোটা গাছ দু'হাতে জড়িয়ে বেয়ে উঠে পাকা আম-জাম-বড়ই পেড়ে খাওয়ার মাঝে  সে আনন্দ খুঁজে পায়।

   আবার বাল্যকালের পূর্বে ফেলে আসা শৈশবের  সুন্দর পুতুলটা মলিন হয়ে গুদামঘরের কোণায় পড়ে থাকলেও সেই বালকটি তার দিকে আর ফিরেও তাকায় না! অথচ শৈশবে পুতুলটাকে সে ভালোবেসে বুকে জড়াতো, যত্ন নিতো, আদর করতো এমনকি হাতছাড়া হলে কেঁদে বুক ভাসাতো! আজ তা কেবলই স্মৃতি। পুতুল খেলার সেই সুখানুভূতি তার আজ নেই, যৌবন বসন্তের আগমনে তা হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে!

     এখানেই শেষ নয়। পিতৃত্বের মাধ্যমে একজন মানুষ জীবনের নবস্বাদ লাভ করে। সন্তানের ফোকলা দাঁতের একটুখানি হাসি, আদো আদো ভাষায় ‘বাবা' ডাক কিংবা ছোট্ট দু'হাতে গলা জড়িয়ে যখন গালে আলতো চুম্বন এঁকে দেয় তখন তার কাছে দুনিয়ায় সব সুখ ফিকে মনে হয়। জীবনের এ পর্যায়ে কেবলমাত্র সন্তান প্রতিপালন ও বিরামহীন অর্থোপার্জনের মাঝেই সে সুখ খুঁজে বেড়ায়।

    অবশেষে মানুষ যখন বার্ধক্যে পৌঁছে তখন পার্থিব সুখের সংজ্ঞায় আমূল পরিবর্তন ঘটে। কুঁচকে যাওয়া চামড়া, চোখের ঝাপসা দৃষ্টি ও বহু রোগ বাসা বাঁধা দুর্বল-ভঙ্গুর শরীর নিয়ে যখন সে শয্যাশায়ী হয় তখন তার কাছে সুখ মানে একটুখানি শান্তিতে “বেঁচে থাকা”। শৈশবের খেলনা, কৈশোরের দুরন্তপনা, পূর্ণ যৌবনা প্রেয়সীর মন মাতানো রূপ, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স সবকিছুই তার কাছে শারীরিক কষ্টের তুলনায় সম্পূর্ণ মূল্যহীন মনে হয়। অতঃপর অন্তিম নিঃশ্বাসের প্রাক্কালে দুনিয়ায় অর্জিত সবকিছুর বিনিময়ে সে একটুখানি বুকভরে “নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ” চায়। কিন্তু তাক্বদীরে বরাদ্দকৃত তার নিঃশ্বাসের বায়ু যখন ফুরিয়ে যায় ও মালাকুল মাওত উপস্থিত হয়  তখন পুরো “পার্থিব জীবনে”র অসারতা সে উপলব্ধি করে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে…..!

      জীবনটা কী অদ্ভুত,তাই না! শৈশব থেকে বার্ধক্যের প্রতিটি স্তরে বদলায় সুখের উপাদান-সংজ্ঞা-স্বাদ ও উপলব্ধি। বয়স যত বাড়তে থাকে অতীতের সুখের উপাদান গুলো তার নিকট ধীরে ধীরে  অনর্থক ও মূল্যহীন হয়ে যায়।

      তাইতো মহান আল্লাহ শৈশব-বাল্য-কৈশর-যৌবন-পৌড়ত্ব ও বার্ধক্যের প্রতিটি স্তরে সুখের অস্থায়ী উপাদান গুলোর প্রতি মানুষের আকর্ষণ এবং এর অসারতা ও খারাপ পরিণতি উল্লেখ করে বলেনঃ 
اِعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَا الۡحَیٰوۃُ  الدُّنۡیَا لَعِبٌ وَّ لَہۡوٌ وَّ زِیۡنَۃٌ  وَّ تَفَاخُرٌۢ  بَیۡنَکُمۡ وَ تَکَاثُرٌ فِی الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَوۡلَادِ ؕ کَمَثَلِ غَیۡثٍ اَعۡجَبَ الۡکُفَّارَ نَبَاتُہٗ  ثُمَّ یَہِیۡجُ فَتَرٰىہُ مُصۡفَرًّا ثُمَّ  یَکُوۡنُ حُطَامًا ؕ وَ فِی الۡاٰخِرَۃِ  عَذَابٌ شَدِیۡدٌ ۙ وَّ مَغۡفِرَۃٌ مِّنَ اللّٰہِ وَ رِضۡوَانٌ ؕ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ  الدُّنۡیَاۤ   اِلَّا مَتَاعُ  الۡغُرُوۡرِ 
  ভাবানুবাদঃ “তোমরা জেনে রেখ , দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর (আখেরাতের চিত্র অন্যরকম, পাপাচারীদের জন্য), আখিরাতে আছে কঠিন আযাব এবং (নেককারদের জন্য আছে) আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।” (সূরা হাদীদঃ২০)
-------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক গ্রন্থপ্রনেতা শিক্ষক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

#Abdullah_Arman
09/06/2021

Post a Comment

0 Comments