Recent Tube

কুরআন ও হাদীসের আলোকে কুরবানি। -১ শামীম আজাদ।





   কুরআন ও হাদীসের   আলোকে কুরবানী ;
                       
                          ১ম পর্ব;

 কুরবানী কী? 

  কুরবানীর বিধান যুগে যুগে সব শরিয়তেই   বিদ্যমান ছিল। মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে প্রমাণিত যে, পৃথিবীর সব জাতি ও সম্প্রদায় কোনো না কোনোভাবে আল্লাহর দরবারে তার প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করতেন। উদ্দেশ্য একটাই- আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন।

 আল্লাহ তা'আলা বলেন, 
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ [الحج: ٣٤]
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওই সব পশুর ওপর আল্লাহর নাম নিতে পারে, যা আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন।’ 
সূরা হজ্জঃ ৩৪

 কুরবানী কি?

  আরবি করব বা কুরবান (قرب বা قربان) শব্দটি উর্দূ ও ফার্সীতে (قربانى) কুরবানী নামে রূপান্তরিত। এর অর্থ হলো-নৈকট্য বা সান্নিধ্য। কুরআনুল কারিমের কুরবানীর একাধিক সমার্থক শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। 

   দ্বীনি নাহার (نحر) অর্থে আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ এবং কুরবানী আদায় করুন।
সূরা কাউসারঃ ২
 এ কারণে কুরবানীর দিনকে يوم النحر বলা হয়।

  নুসুকী (نسك) অর্থে। আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু; সবই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য।’ 
সূরা আনআ’মঃ ১৬২

  মানসাক (منسك) অর্থে। আল্লাহ বলেন, ‘ لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكاً ‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি।’ 
সূরা হজ্জঃ ৩৪

  কুরবানী সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার নির্দেশনা

  কুরবানীর হলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য মাধ্যম। কুরবানির শুরু হয়েছিল হজরত আদম আলাইহিস সালামের দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের মধ্যে সংঘটিত কুরবানীর মাধ্যমে।

 আল্লাহ তা'আলা বলেন, 
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِن أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ. لَئِن بَسَطتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَاْ بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لَأَقْتُلَكَ إِنِّي أَخَافُ اللّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ
 ‘হে রাসূল! আপনি তাদেরকে আদমের পুত্রদ্বয়ের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়েই কুরবানী করেছিল, তখন একজনের কুরবানী কবুল হ’ল এবং অন্যজনের কুরবানী কবুল হ’ল না।
সে (কাবিল) বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব।
    অপরজন (হাবিল) বলল, অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কুরবানি কবুল করেন।
সে (হাবিল) বলল, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার প্রতি হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’ 
সূরা মায়েদাঃ ২৭-২৮

   এ হলো কুরবানি কবুল হওয়া ব্যক্তির ভাবাবেগ ও মানসিকতা। কেননা কুরবানি তাকওয়াবান লোকদের আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য নিদর্শন।

  কুরবানীর উদ্দেশ্য;

     কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য। তাই আল্লাহ তা‘আলার বিধান তাঁর নির্দেশিত পথে পালন করতে হবে। তিনি বলেন :

﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [الذاريات: ٥٦]

‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।’ 
সূরা যারিয়াত-৫৬

  আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কুরবানীর বিধান আমাদের উপর আসার বেশ কিছূ উদ্দেশ্যও রয়েছে:

১. শর্তহীন আনুগত্য

   আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাহকে যে কোনোআদেশ দেয়ার ইখতিয়ার রাখেন এবং বান্দাহ তা পালন করতে বাধ্য। তাই তার আনুগত্য হবে শর্তহীন। আল্লাহর আদেশ সহজ হোক আর কঠিন হোক তা পালন করার বিষয়ে একই মন-মানসিকতা থাকতে হবে এবং আল্লাহর হুকুম মানার বিষয়ে মায়া-মমতা প্রতিবন্ধক হতে পারে না। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর আনুগত্য ছিল শর্তহীন। এ জন্য মহান আল্লাহ যেভাবে বিশ্ব মানবমন্ডলীকে বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত করেছেন ঠিক সেভাবে সর্বশেষ জাতি হিসেবে মুসলিম জাতির পিতাও মনোনয়ন দিয়েছেন । কুরআনে এসেছে :

﴿مِّلَّةَ أَبِيكُمۡ إِبۡرَٰهِيمَۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ﴾ [الحج: ٧٨]
‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত;তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম।’ 
সূরা হাজ্জঃ ৭৮

২. তাকওয়া অর্জন

   তাকওয়া অর্জন ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না। একজন মুসলিমের অন্যতম চাওয়া হলো আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন। পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কুরবানী দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿ لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧ ﴾ [الحج: ٣٧]  

‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে। 
সূরা হাজ্জ: ৩৭

৩. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা

   প্রত্যেক ইবাদাতই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। তাই কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧ ﴾ [الحج: ٣٧]

    ‘এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে। 
সূরা হাজ্জ: ৩৭

৪. ত্যাগ করার মহান পরীক্ষা

    কুরবানীর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরী করা। আল্লাহর বিধান পালনে জান-মালের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কুরবানীর ঈদকে গোশত খাওয়ার অনুষ্ঠানে পরিণত করা নয়, বরং নিজেদের মধ্যকার পশুসুলভ আচরণ ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নফসের আনুগত্য ত্যাগ করে আল্লাহর একান্ত অনুগত হওয়াই কুরবানীর উদ্দেশ্য।

﴿ وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ﴾ [البقرة: ١٥٥]

   ‘আমি তোমাদেরকে অবশ্যই ভয়, দারিদ্র্য, সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতি করার মাধ্যমে পরীক্ষা করবো।’ 
সূরা বাকারাঃ ১৫৫

 ইনশাআল্লাহ! চলবে.........
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments