Recent Tube

তুরষ্ক কেন আফগানিস্তানে আসতে চায়? - মোতাহের হোসেন।





  তুরষ্ক কেন আফগানিস্তানে আতে চায়?

     তুরষ্ক এর সম্পর্ক কখনোই তালেবানের সাথে মধুর ছিল না। ১৯৯৬ সালে তালেবানের বিরোধী ছিল তুর্কী সরকার। এই বিরোধিতা শুধু মুখে নয় বরং কাজেও ছিল। তালেবান বিরোধী,  জেনারেল দুস্তমকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল। পরে দুস্তম পরাজিত হয়ে তুরষ্কে পালিয়ে যায়।  সেই দুস্তম এখনো আছে৷ তবে এখন সে আর জেনারেল নেই, সে এখন ফিল্ড মার্সাল।  

    দেখেন ভাই,  তুরষ্কের পরাষ্ট্রনিতী খুব একটা পরিবর্তিত হয় না। এরদোয়ান আসুক আর কামালিস্টরা আসুক,  তুরষ্কের ফরেন পলিসি কিছু ধারা অবলম্বন করেই চলে। তুর্কী পরাষ্ট্রনিতীর কিছু ধারা হল - 
১/ আমেরিকা ও রাশিয়ার মাঝে ব্যালেন্স রেখে নিজের সোভেরিনিটি অক্ষুণ্ণ রাখা।
২/ তুর্কী দেশ সমূহের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ ও তুর্কী বলয় বজায় রাখা। 
৩/ গ্রিসকে চিরস্থায়ী শত্রু জ্ঞান করা।
৪/ পাকিস্তানকে চির সবুজ বন্ধু জ্ঞান করা। 

 তুরষ্কের যেই ক্ষমতায় আসুক উপরের ৪ নিতীর পরিবর্তন হয় না।  

   আফগানিস্তান নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের জানা শোনা কম৷ আমরা মনে করি যে বাংলাদেশের সবাই যেমন বাংগালী তেমনি আফগানিস্তানের সবাই আফগান জাতির লোক, সবাই এক ভাষায় কথা বলে,  সবাই তালেবানের সমর্থক।  

      বাস্তবে আফগান বলে কোন জাতি নেই৷ আফগানিস্তানে প্রধানত চারটা জাতি আছে - পাঠান, তাজিক, উজবেক( তুর্কী)  , হাজারা। পাঠানরা মোট জনসংখ্যার ৪০%৷ তালেবানের মূল সমর্থন পাঠানদের ভেতরে৷ কিছু তাজিক, উজবেক তালেবানে যুক্ত হলেও,  পাঠান বেল্টে তালেবান যেভাবে মানুষের জনসমর্থন পায় তেমনটা তাজিক, উজবেকদের মধ্যে পায় না৷ হাজারারা শিয়া ।  তাই তাদের ভেতর সমর্থন একেবারেই শূন্য যদিও তালেবান একজন শিয়া ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দিয়েছে৷ 

     তুরষ্কের একটা নিতী হল তুর্কী বলয় তৈরি৷ আফগানিস্তানের ১৫-২০% হল উজবেক তুর্কমেন৷ তারা তুর্কী জাতির লোক৷ তুরষ্ক কিভাবে তাদের কে ত্যাগ করবে?  এই সহজ জিনিসটা কেন বুঝছেন না?  আমেরিকার,  আফগানিস্তানে কোন দায়ভার নেই৷ কিন্তু তুরষ্কের দায়ভার আছে। তুরষ্ককে ভাবা হয় তুর্কী জাতির নেতা যেভাবে ইরান শিয়াদের নেতা৷  আজকে ইরানকে যদি বলা হয় যে তোমরা,  ইয়েমেনের শিয়াদের সাহায্য কর না - সেটা কি লজিকাল হবে?  হবে না৷ কারণ ইরান শিয়া ধর্ম রাষ্ট্র।  তেমনি তুরষ্ক তুর্কী জাতি রাষ্ট্র৷ তাই তুরষ্ক যে কারনে আজারবাইজান, সাইপ্রাসে গিয়েছে একই কারনে আফগানিস্তানে গিয়েছে৷ যে কারণে তুর্কী,  উইঘুর ইস্যু নিয়ে মুখ রক্ষার জন্য হলেও চীনের সমোলচনা করে একই কারনে দুস্তমকে সমর্থন করে । 

      তুরষ্ক ষ্পস্টত জাতীয়তাবাদী কারণেই আফগানিস্তানে গিয়েছে কিন্তু একই সাথে এটাও সত্য যে তালেবান ও জাতীয়তাবাদ এর ঊর্ধ্বে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে নাই৷ সাধারণ উজবেক, তাজিকদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্য করতে পারে নাই৷ 

    অনেকে বলছে যে,  তুরষ্ক এখন চলে যাক৷ এরপর তালেবান সরকার গঠন করলে তখন আসুক। জিনিসটা তেমন হাস্যকর যদি ইরানকে ইয়েমেন থেকে চলে যেতে বলা হয় এরপর সৌদি জোট ক্ষমতা গ্রহণ করলে তখন আসতে বলা হয়৷  

   তুরষ্ক আমেরিকার ভাড়া খাটতে যাচ্ছে না বরং নিজের প্রভাব বাড়ানো,  তুর্কী বলয় তৈরি, মুসলিম সুন্নি দুনিয়ার একক অভিবাবক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে।  

      আমেরিকা কেন তুর্কী কে স্পেস দিচ্ছে?
কারণ আমেরিকার ভয় হল যে আফগানিস্তানে রাশিয়া, চীনের প্রভাব বাড়তে পারে। তুর্কী সেটা ঠেকাতে পারবে৷ 

 আমেরিকা পারল না। তুর্কী কি পারবে?

   তালেবান যে পাহাড়ে খেলা করে বড় হয়েছে সেই পাহাড়েই বড় হয়েছে উজবেক, তুর্কমেনরা৷  তুরষ্কের সেনাবাহিনীর সাথে ভাষাগত মিল,  আকিদাগত মিল, মাজহাবগত মিল, খাবারে মিল থাকায়,  তুরষ্ক আফগানিস্তানে হোম ভেন্যুর সুভিধা পাবে যেটা আমেরিকা পায় নাই। এছাড়া পাকিস্তান, ইরানের ও তুরষ্ক নিয়ে তেমন আপত্তি থাকবে না কারণ তুরষ্ক শিয়া বিরোধী না, শিয়াদের কাফের ও ভাবে না। তুর্কী সমাজ,  শিয়া সুন্নি বিভক্তির বাইরে।  তালেবানের হাত থেকে তুর্কীর হাতে হাজারারা নিরাপদ থাকবে।  

      তুরষ্ক রক্তপাত চায় না। তুরষ্ক চায় একটা পিসফুল সেটেলমেন্ট৷ এক কথায়,  তালেবান যেন দুস্তমের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেয়।  গুলুবুদ্দিন হেকমাতিয়ারকে কিছুটা ক্ষমতা দেয়৷ 

এটা যুদ্ধ।  কোন পক্ষকে ফেরেস্তা ভাবার দরকার নাই৷

Post a Comment

0 Comments