হাদীসের নামে মিথ্যা বলার বিধান ও ইসলামের কাঠগড়ায় মতিউর রহমান মাদানীঃ
-------------------------------------
বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা অকাট্য ভাবে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জামানায় আরব দেশে গরু ছিল। (দেখুনঃ- সহীহ বুখারী হাঃ ৪২৩৪, সহীহ মুসলিম হাঃ ১১৫, ১৩১৮, জামে তিরমিযী হাঃ ৬২৩, ৯০৪, ১৫০২, সুনান নাসায়ী হাঃ ৪৩৮৩, আবূ দাউদ ১৫৭৬, ১৭২০, ২৮০৭, ২৮০৮, ২৮০৯, ইবনে মাজাহ হাঃ ১৮০৩, ২৫০৩, ৩১৩২, আহমাদ হাঃ ১৩৭১৩, ১৩৯৮৯, ১৪৩৯৪, ১৪৪৯৮,১৪৫০৬, ১৪৬২১, ১৪৮৩৫, ১৮৭০২, ১৮৭২৫, ২১৫৭৯, ২১৬২৪, মুয়াত্তা মালেক ৫৯৮, ১০৪৯, দারেমী ১৬২৩, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ইরওয়াহ হাঃ ৭৯৫)
আর বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা এ কথাও প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গরুর গোশত খেয়েছেন। দেখুনঃ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
وَأُتِيَ النَّبِيُّ، صلى الله عليه وسلم بِلَحْمِ بَقَرٍ فَقِيلَ هَذَا مَا تُصُدِّقَ بِهِ عَلَى بَرِيرَةَ . فَقَالَ " هُوَ لَهَا صَدَقَةٌ وَلَنَا هَدِيَّةٌ "
একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু গরুর গোশ্ত আনা হলো। অতঃপর বলা হলো এ গোশ্ত বারীরাকে সদাক্বাহ্ হিসেবে দান করা হয়েছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা তার জন্য সদাক্বাহ্ কিন্তু আমাদের জন্য হাদিয়্যাহ্।” (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০৭৫; ই.ফা. হাঃ ২৩৫৪, ই.সে. হাঃ ২৩৫৪)
জাবির (রা) কর্তৃক বর্ণিত বুখারী মুসলিমের অপর এক হাদীসে এসেছে-
فَلَمَّا قَدِمَ صِرَارًا أَمَرَ بِبَقَرَةٍ فَذُبِحَتْ فَأَكَلُوا مِنْهَا.
"রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সিরার নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন একটি গরু জবাহ করার নির্দেশ দেন। অতঃপর তা জবাহ করা হয় এবং সকলে তার গোশত আহার করে।" (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৮৯; সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭১৫)
এছাড়াও আরো অনেক সহীহ হাদীস বিভিন্ন কিতাবে মজুদ রয়েছে; সে হাদীসগগুলো দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক গরু কুরবানী করা এবং গরুর গোশত খাওয়ার বিষয়টি জানা যায়। (দেখুনঃ- সহীহ বুখারী হাঃ ১৭০৯, ৫৫৪৮, ৫৫৫৯, সহীহ মুসলিম হাঃ ১২১১, নাসায়ী হাঃ ২৯০, আবু দাউদ হাঃ ১৭৫০, ১৭৮২; ইবনে মাজাহ হাঃ ২৯৬৩, ২৯৮১, ৩১৩৫, আহমাদ হাঃ ২৩৫৮৯, ২৫০৯১, ২৫৮১২, মুয়াত্তা মালেক হাঃ ৮৯৬, ১০৫১, দারেমী হাঃ ১৯০৪)
এ সকল সহীহ হাদীসগুলোকে অস্বীকার করে আহলে হাদীসের এসি শায়েখ মতিউর রহমান মাদানী ওরফে কাজ্জাব হিন্দুস্থানী গরু পূজারী মুশরিক ও ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের খুশি করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামে মিথ্যাচার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) না কি গরুর গোশত খাননি। কারণ, সে সময় আরব দেশে গরুই ছিল না! গরুর গোশত পাবেন কই? তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন,
"নবী (সাঃ) গরুর গোশত খেয়েছেন- এমন হাদীস দেখাতে পারবেন? যখনতখন; যেমন, খাসি আর উট দেখাতে পারবেন, ঐ রকম পারবেন কি? আরব দেশে গরুই ছিল না।" (নাউযুবিল্লাহ! এ কথা তার ভাইরাল হওয়া কাটিং ভিডিও ও পূর্ণাঙ্গ ফুল ভিডিও উভয় ভিডিওতে রয়েছে। লিংক কমেন্টে)
এখন আমরা ইসলামের দৃষ্টিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে মিথ্যা বলার বিধান ও মতিউর রহমান মাদানীর শাস্তি কি হতে পারে, তা জেনে নেয়। এ বিষয়ে একাধিক সাহাবী কর্তৃক বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.
‘‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তার আবাসস্থল জাহান্নাম।’’ (সহীহ বুখারী হাঃ ১০৬, ১০৭, ১০৮, ৩৪৬১; সহীহ মুসলিম হাঃ ০২, ০৩, ০৪, তিরমিযী হাঃ ২২৫৭, ২৬৫৯, আবু দাউদ হাঃ ৩৬৫১, ইবনে মাজাহ হাঃ ৩০, ৩৬, ৩৭, আহমদ হাঃ ৫৮৫, ১০৭৮, ৬৪৫০, ৬৫৫৬, দারেমী হাঃ ২৩০, ২৩৫; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ১/১৯৯)
প্রায় ১০০ জন সাহাবী এ অর্থে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর কোনো হাদীস এত বেশি সংখ্যক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি। (ইমাম নাবাবী, শারহু সাহীহ মুসলিম ১/৬৮, ইবনুল জাওযী, আল-মাউযূ‘আত ২৮-৫৬),
এত গেল আখিরাতের শাস্তির কথা যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে মিথ্যারোপকারী জাহান্নামী। এবার দেখুন, দুনিয়ার শাস্তি। এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনু শারাফ আন-নাবাবী (৬৭৬ হি) বলেন:
"হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে মিথ্য বলা কঠিনতম হারাম, ভয়ঙ্করতম কবীরা গোনাহ এবং তা জঘন্যতম ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ। এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ একমত। তবে অধিকাংশ আলিমের মতে, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে কোনো মিথ্যা বলবে সে যদি তার এ মিথ্যা বলাকে হালাল মনে না করে তাহলে তাকে কাফির বলা যাবে না। সে পাপী ফাসিক মুসলিম। আর যদি সে এ কঠিনতম পাপকে হালাল মনে করে তাহলে সে কাফির বলে গণ্য হবে। ইমাম আবু মুহাম্মাদ আল-জুআইনী ও অন্যান্য কতিপয় ইমাম এ অপরাধকে কুফুরী বলে গণ্য করেছেন। ইমাম জুআইনী বলতেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামে মিথ্যা বলবে সে কাফির বলে গণ্য হবে এবং তাকে 'মৃত্যুদন্ড' প্রদান করতে হবে।" (ইমাম নাবাবী, শারহু সহীহ মুসলিম ১/৬৯)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে মিথ্যারোপকারীর তাওবার বিধানঃ
হাদীসের নামে মিথ্যা বলা ও অন্যান্য বিষয়ে মিথ্যা বলার মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য হলো, হাদীসের নামে মিথ্যাবাদীর তাওবা মুহাদ্দিসগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যদি কোনো ব্যক্তির বিষয়ে প্রমাণিত হয় যে, তিনি কোনো রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে মিথ্যা কথা উল্লেখ করেছেন বা প্রচার করেছেন এবং এরপর তিনি তাওবা করেছেন, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতেও পারেন, তবে মুহাদ্দিসগণের কাছে তিনি তাওবার কারণে গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পাবেন না।
পঞ্চম শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফকীহ আহমাদ ইবনু সাবিত খতীব বাগদাদী (৪৬৩ হি) বলেন: "ইমাম আহমাদ (২৪১ হি)-কে প্রশ্ন করা হয়: একব্যক্তি একটিমাত্র হাদীসের ক্ষেত্রে মিথ্যা বলেছিল (অর্থাৎ মাত্র একটি ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উপর মিথ্যারোপ করেছিল), এরপর সে তাওবা করেছে এবং মিথ্যা বলা পরিত্যাগ করেছে, তার বিষয়ে কী করণীয়? তিনি বলেন: তার তাওবা তার ও আল্লাহর মাঝে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে কবুল করতে পারেন। তবে তার বর্ণিত কোনো হাদীস আর কখনোই সঠিক বলে গ্রহণ করা যাবে না বা কখনোই তার বর্ণনার উপর নির্ভর করা যাবে না। ইমাম সুফিয়ান সাওরী (১৬১ হি), আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক (১৮১ হি) ও অন্যান্য ইমামও অনুরূপ কথা বলেছেন।" (খতীব বাগদাদী, আল-কিফাইয়াতু ফী ইলমির রিওয়াইয়া, পৃ: ১১৭-১১৮),
---------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ আলোচক গ্রন্থপ্রনেতা ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
0 Comments