Recent Tube

কুরআনিক থট প্রসেস (১১-১২); জিয়াউল হক।

 



      কুরনিক থট প্রসেস ;
             (১১-১২);
       

     উপস্থাপনা/প্রস্তাবনাটা (Propositions) আসলে কয়েকটি গুন ও বৈশিষ্ঠের সমষ্ঠি, সেই সব বৈশিষ্ঠের সামগ্রিক পদ্ধতি বা সিস্টেম; আদম আ: এঁর অস্তিত্তের অংশ হিসেবে পুরোমাত্রায় বিরাজমান ও সক্রিয় ছিল, সেটার প্রমাণ পাই সুরার ৩৩ নম্বর আয়াতে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত হয়ে আদম আ: সকল কিছুর নাম, পরিচিতি ফেরেশতাদের কাছে তুলে ধরছেন। 

    এতে পরিস্কার হয়ে যায়, ঐ পর্যায়ে আল্লাহ পাক আদম আ:কে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষাজ্ঞানও দিয়েছিলেন। ফলে তিনি আল্লাহর নির্দেশ তো বুঝেছিলেন, একই সাথে সে নির্দেশকে মানবিক ইনফরমেশন প্রসেসিং স্কিল (Information Processing Skill) ও সিস্টেমের ((Information processing,  Memory store and recall) মাধ্যমে প্রসেস করে নির্দেশের যথার্থতা ও নিজের করণীয়ও বুঝে নিতে পেরেছিলেন। 

     আধুনিক মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাই কগনিশন (Cognition)। যে মনোদৈহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কগনিশন ব্যক্তিমানসে তৈরি হয় তাকেই হিউম্যান কগনিটিভ প্রসেস (Human Cognitive Process) বা সংক্ষেপে কগনিটিভ প্রসেস (Cognitive Process) বলা হয়। কগনিশনের সবচেয়ে সহজ সঙ্গায় বলা হয়েছে; 

    Cognition is the mental process of acquiring knowledge and understanding through thought, experience and the senses.

   অর্থাৎ: চিন্তা ভাবনা, অভিজ্ঞতা এবং ইন্দ্রিয়শক্তির দ্বারা অর্জিত উপলব্ধিকে ভিত্তি করে যে মনস্তাত্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন ও বোধশক্তি জন্মে, তারই নাম হলো কগনিশন। 

   তার মানে হলো, আদম আ: এর মধ্যে চিন্তা-ভাবনা, অভিজ্ঞতা এবং ইন্দ্রিয়শক্তির দ্বারা অর্জিত উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে বোধশক্তি জন্ম দেবার বা উপলব্ধি করার একটি পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা; কগনিটিভ প্রসেস বিদ্যমান ছিল। 

   এই কগনিটিভ প্রসেসের মাধ্যমেই ব্যক্তি চরিত্রে তৈরি হয় আকল বা ইন্টেলেক্ট (Intelect)। অর্থাৎ সৃষ্টির প্রথম মানুষ হিসেবেই আদম আ: (এবং বিবি হাওয়া’ও বটে) এঁর মানসপেিট একটি কার্যকর আকল ইন্টেলেক্ট (Intelect) বিদ্যমান ছিল। এটি তাঁদের সৃষ্টির মৌলিক অনুষঙ্গ হিসেবে দেয়া হয়েছে। 

    আকল বা ইন্টেলেক্ট (Intelect) ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এবং এটি একটা মানসিক ক্ষমতা ও যোগ্যতা। এর সঙ্গা হিসেবে বলা হয়েছে;  Intelligence is the ability to easily learn or understand things and to deal with new or difficult situations.

    অর্থাৎ: খুব সহজে কিছু শিখতে বা উপলব্ধী করতে পারা এবং উদ্ভূত নতুন বা জটিল কোন পরিস্থিতিকে মোকাবেল করতে পারার নামই হলো ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিমত্তা। অন্যত্র এটাকেই আরও একটু ভিন্নভাবে সঙ্গায়িত করা হয়েছে এভাবে;

    Intelligence is the application of cognitive skills and knowledge to learn, solve problems, and obtain ends that are valued by an individual and culture. (সুত্র: Psychology Mind, Brain & Culture. Frew Westen. John Wiley & Sons, 1996. Canada, পৃ: ৩২৮)

    এই ইন্টেলেক্ট (Intelect) তৈরির শারিরিক ও মানসিক, তথা, মনোদৈহিক সিস্টেম হলো Information Processing System, প্রতিটি মানবসন্তানের অস্তিত্তের অবিচ্ছেদ্দ মৌলিক উপাদান। 

     আধুনিক মনোবিজ্ঞানী ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, আমাদের সেন্স অর্গান, বোধক্ষমতা, মস্তিস্কের ব্রেনকোষ এবং শরিরের বেশকিছু হরমোনের জটিল যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে Information processing, Memory store and recall অর্থাৎ তথ্য ও স্মৃতি যাচাই, বিশ্লেষণ ও  পর্যালোচনা, সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনের মহুর্তে পূন:স্মরণের জটিল প্রক্রিয়া, ক্ষমতা ও দক্ষতা বিদ্যমান রয়েছে। এটাই আধুনিক পরিভাষায় Information Processing System / skill|  

     অত্যন্ত জটিল ও চমৎকার শারিরিক ও মানসিক, তথা, মনোদৈহিক এই সিস্টেম, আদম আ: এঁর মধ্যে আমরা পরিপূর্ণভাবেই বিদ্যমান দেখতে পাচ্ছি ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বের যাবতীয় বস্তুর নাম পরিচয় প্রকাশের ঘটনায়।  

     বলাই বাহুল্য, এটি প্রতিটি আদম সন্তানের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্দ অংশ এবং তা তার ভেতরে জন্মলগ্ন থেকে, তথা, সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই কোন না কোন মাত্রায় সক্রিয় থাকে।

     এই যে আমরা কগনিশন ও ইন্টেলেক্টেও কথা বললাম, এটাই হলো ‘আকল’। এই কগনিশন (Cognition) ও ইন্টেলেক্টের (Intelect) উপর নির্ভর করে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে ফেরেশতাদের সামনে বিশ্বের সকল কিছুর নাম ও পরিচয়সহ তাদের ব্যাপারে যাবতীয় তথ্যাদি তুলে ধরেছিলেন। ফেরেশতারাও তাঁর সে ভাষা বুঝেছিলেন। অর্থাৎ তাঁর মাঝে পুরো মাত্রায় ল্যাংগুয়েজ স্কিল’ও (Language Skill) বিদ্যমান ছিল। 

    বাকশক্তি, কথা বলার ক্ষমতা, নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে দেয়া এক বিষ্ময়কর শক্তি ও যোগ্যতা। সে ক্ষমতার প্রকাশ বাহন হিসেবে ভাষাও আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে এক অনুপম উপহার, এক নিয়ামত। আল্লাহ পাক ভাষা ও ভাষার ব্যবহারে বাকশক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে নিজেই আল কুরআনে বর্ণনা করেছেন এভাবে;

    তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সুরা রূম: ২২)

    ভাষা হলো জ্ঞানের অন্যতম প্রধান বাহন। ভাষাকে ভিত্তি করেই জ্ঞান তার প্রকাশ ঘটায়। মানুষ তার মনে যা ভাবে তা প্রকাশ করার একমাত্র মাধ্যমই হলো ভাষা। তাই চিন্তাধারা বা থটপ্রসেসের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো; ভাষা।

    ভাষা সরাসরি চিন্তা বা ধারনা তৈরি করে না, তবে ব্যক্তিমানসে তৈরি হওয়া চিন্তা (Thought) ও ধারনা (Perception) কে সে আকার দেয়, প্রকাশ করে। শ্রবণযোগ্য বা অনুধাবন যোগ্য হিসেবে অপরের কাছে তুলে ধরে। মানুষের মনে যে চিন্তা বা ধারনার উপস্থিতি রয়েছে বা যা তারা প্রকাশ করছে প্রতিনিয়তই, সেটাকে সকলের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমও এই ভাষা’ই। উপলব্ধী ও হৃদয়ংগমের মাধ্যমও এই ভাষা। তাই ভাষা থট প্রসেসের অবিচ্ছেদ্দ একটি উপাদান। (সংক্ষেপকৃত)
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক ও দাঈ। 

Post a Comment

0 Comments